সাকরাইন

হয়তো কোনোকিছুই আশ্চর্যের না। তবু সবকিছু ম্যাজিকাল। 

এবং শান্তা যখন ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে দাঁড়ায়ে শেষ বিকালের আকাশের দিকে তাকায়ে থাকে, তখনও সে তার সংকটের ব্যাপারটা অনুমান করতে পারে নাই। তবু তার মধ্যে কেমন একটা ভাব জন্ম নেয়, সে কেমন একটু বিভ্রান্ত বোধ করে, কেননা সন্ধ্যা নামার আগে আগে পূর্ব আকাশটারে সে কালো হয়ে আসতে দেখে। একটা ঠাণ্ডা বাতাস তারে কাঁপায়ে দিয়ে যায়, এবং তার একবার মনে হয় এই বাতাসটা বুঝি কালবৈশাখীর! কিন্তু পরমুহূর্তেই তারে ঝড়ের লোভটা সংবরণ করা লাগে, কেননা জানুয়ারি মাসে এই শহরে অতীতে কবে কালবৈশাখী দেখা গেছে—সেই কথা কেউ স্মরণ করতে পারে না। সুতরাং ঠাণ্ডা বাতাসটা শীতের, কিন্তু তবু এই শালার আকাশ সন্ধ্যার আগে এমন করে কালো হয়ে আসে, একটা হিম হিম বাতাস চারদিকে এমন বাইরাবাইরি করে, মানুষগুলো এমন করে লক্ষ্মীবাজারের দিকে হনহনায়ে হাঁইট্টা যায়—শান্তার স্পষ্ট মনে হয়, আইজকা ঝড় আইতাসে, আইজকা ঝড় আয়া পড়লোগা! 

এরপরেও, এই নিয়ে কি তাকে, কিংবা কাউকেই কি আদৌ দোষ দেয়া যায়? কেননা জানুয়ারিতে জুন এবং জুনে জানুয়ারিকে স্মরণ করার অবধারিত নিয়তি থেকে বেরুবার ক্ষমতা তো তাদের দেয়া হয় নাই, ফলে সাকরাইন উৎসব দেখতে যায়া শান্তা তার জীবনের সংকটতম অধ্যায়টায় উপনীত হয়, কেননা সেই সন্ধ্যাটা যখন রাতের দিকে ঢলে পড়তে শুরু করে, আকাশে তখনও পুটুশ-ফুটুশ করে আতশবাজি ফুটতে দেখে শান্তার মনে হয়, ছাদে দাঁড়াইলে এই জিনিস আরও ভালো দেখা যাইতো! সামনে একখান অফিস-অফিস-হয়তো-অফিস বিল্ডিং দেখে তার হয়তো ধারণা হয়, এইখানেই উঠা যাবে, কেননা এইটা বাসা না, অফিস, আর অফিস কারো বাপের সম্পত্তি হয় না, কিন্তু শান্তার ধারণা ভুল না হলেও, একেবারে ঠিকও ছিল না, কেননা চারতলা ভেঙে ছাদে ওঠার পর সে বড়সড় একটা চিলেকোঠার ঘর দেখে, সেই ঘরে উজ্জ্বল সাদা আলো জ্বলতে দেখে, সেই আলোতে মানুষ দেখে, সেই মানুষদের পরনে সাদা, হয়তো গেরুয়া কাপড় দেখে। এবং তাদের জিকিরের ভঙ্গিতে সুর করে বলতে দেখে, ‘এটা পাপ, এই তো পাপ!’ 

তবু, সারাদিনের ক্লান্তি কি তার সামনে একটু হলেও মায়া তৈরি করে না? ক্লান্ত চোখটা কয়েকবার পিটপিট করে তার মনে হয়, মানুষগুলো সাদা, ঠিক সাদা আলখাল্লা পড়েনি যেন, হয়তো আরেকটু ছোট, হয়তো এইটা লম্বা শার্টই হবে বুঝি, গলার বোতামটা যেন আঁটানোই মনে হচ্ছে, এবং পায়ের দিকে তাকানোর আগেই শান্তা জানে, নিশ্চিতভাবেই জানে, সেই স্যান্ডেলের সামনের অংশটুকু হবে খোলা, তারা কথা বলে না, কেবল ডান হাতের দিকে তাকায়ে বুড়া আঙুলটা জিকিরের ভঙ্গিতে নড়ে, কেমন যেন একটা থাপ-থাপ শব্দ হয়। 

শান্তার কাছে কখনই দুনিয়াটা আশ্চর্যের মনে হয় নাই, তবু সে মন্ত্রমুগ্ধ হয়া পড়ে, স্থাণুর মতন খাড়ায়া থাকে। এবং সেই মুহূর্তে সে আবারও বিভ্রান্ত বোধ করে এই ভেবে যে, এইটা কি আদৌ গ্রীষ্মকাল, নাকি শীত। 

কিন্তু সে কি এই বিভ্রান্তি থেকে বের হতে চায়? কিংবা, মানুষ চাইলেই কি বিভ্রান্তি থেকে বের হতে পারে? 

কেননা, শান্তা, শান্তা, শান্তা, এবং শান্তা, হয়তো শান্তা নিশ্চিতভাবেই জানে, এই সাকরাইনের সন্ধ্যায় সারা পুরান ঢাকার আকাশ আতশবাজির ছটায় ঢেকে গেছে, একডা ফোডা ফাঁকা জায়গা নাইক্কা, খালি ফানুস আর ফানুস! আলোর এই মাদকতা তারে উন্মত্ত করে, বাতাসে তার খোলা চুল উড়তে থাকে, সে বিড়বিড়ায়া আবৃত্তি করে, টিমটিমে আলো আমার সহ্য হয় না, আই ওয়ান্ট গ্লোরিয়াস সানশাইন অলসো এ্যাট নাইট। 

এবং একইসাথে শান্তা এটাও জানতে পারে, বস্তুত এই আকাশে দু-চারটার বেশি ফানুস দেখা যায় না, হঠাৎ হয়তো এক কোণায় আতশবাজি! সে জানে না ক্যান, আলোর এই র‍্যান্ডমতা তারে একটা স্বস্তি দেয়, একটা বাতাস ভিক্টোরিয়া পার্কের গাছ থেকে গাছে চক্কর খায়া তার কাছে আইসা পৌঁছায়, এবং যদিও সম্ভাবনা আছে যে, বাতাসটা কালবৈশাখীর না হয়ে উত্তুরে মাঘেরই হবে, সেইটা শান্তার ভালো লাগে, কোনো এক গভীরে সে গভীর প্রশান্তি বোধ করে। অনেক্ষণ বদ্ধ ঘরে আটকে থাকার পর খোলা বাতাসে নিশ্বাস নেয়ার মতন একটা প্রশান্তি। 

কিন্তু এইটা তো সত্য যে, সম্ভাবনা এবং কল্পিত-সম্ভাবনার চক্রটা ভেদ করা তার পক্ষে সম্ভব হয় না! একবার চোখ খুললে তার মনে হয় গোটা আকাশটা আলোয় ভাইসসা যাইতেসে, আবার পরমুহূর্তেই মনে হয় এটা সত্য না, কেননা, কেননা— 

ফলে সে বুঝতে পারে, সে এক ধরনের সংকটে পড়ে গেছে। 

এবং সে বুঝতে পারে, এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। 

এবং, 

যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ তার জানা থাকে না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু শান্তা এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে, পথ, খুঁজে পায় না, এবং, যেহেতু, সে, সংকট, উত্তরণের পথ খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু, অবশ্যই, সে সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পাওয়া শান্তার পক্ষে সম্ভব হয় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ, না, খুঁজে পাওয়া যায় না, যায় না, এবং সে তো এক সংকটে পড়ে, এবং এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে, পায়, না, কোনোভাবেই, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়তে বাধ্য হয়, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু সে এই সংকটে পড়ে, এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ সে খুঁজে পায় না, এবং যেহেতু 

সে এই সংকটে পড়ে, 

এবং যেহেতু এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ 

সে খুঁজে পায় না, 

এবং যেহেতু 

সে 

এই 

সংকট 

উত্তরণ 

পথ 

এবং 

সে 

উত্তরণের পথ খুঁজে পায় না, 

এবং 

সংকট 

সে 

উত্তরণ 

পথ