পোস্টগুলি

আগস্ট, ২০১৭ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

সালভাদরের ভাঙতি

ছবি
[এই লেখাটা সুরভী আন্টির জন্য নিষিদ্ধ। দেখুন আন্টিই, আজকাল আপনার মত থুড়থুড়ে শতবর্ষী বুড়োদের জন্যও লেখা নিষিদ্ধ করা শুরু করেছি। দয়া করে এটা পড়বেন না, আমি সিরিয়াস। আপনাকে টনসিলের ঝুঁকি নিয়ে আইসক্রিম খাওয়াতে রাজি আছি আমি, এই যে লিখে দিলাম।] অন্ধ প্যাঁচা আর স্থবির ব্যাঙ ছাড়াও সুররিয়েলিজম হয় বটে। প্রায় দুদিন হল, আমার পৃথিবীটা সুররিয়েলিস্টিক হয়ে যেতে শুরু করেছে। পদ্মর নানাভাইকে মাটি দিয়ে আসার পর থেকেই এই অনুভূতিটা হচ্ছে। ওনাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম না, কাজেই খুব একটা মন খারাপ করার সুযোগও ছিল না। সেকারণেই কিনা কে জানে, অনুভূতিটা ‘মন খারাপ’ না হয়ে ‘সুররিয়েলিস্টিক’ হয়ে যাচ্ছে। এই যে লিখছি, মাথার ওপর যে ফ্যানটা ঘুরছে, সেই ফ্যানের শব্দেও একটা পরাবাস্তব টান পাওয়া যাচ্ছে। আমার একটা সমস্যা আছে, কেউ মারা গেলে আমি তার চেহারা দেখতে পারি না। বছর দেড়েক আগে ফুপী মারা গেল। মাটি দেয়ার আগে সবাই শেষবারের মত ফুপীকে দেখতে গেল। আমি গেলাম না। দীর্ঘ তিনমাস কোমায় থাকলে কি মানুষের চেহারা পাল্টে যায়? ভাইয়ার কাছে শুনেছি, মারা যাবার আগে ফুপীর চেহারা অনেক পাল্টে গিয়েছিল। বড় হওয়ার পর ভাইয়াকে ক

এলোকথন (উলট-পুরাণ)

ছবি
প্রথমেই বলে নিতে হবে, এটা আকিবের গল্প না। গত এক মাসে আকিব ছেলেটার সাথে দীর্ঘ বকবক করতে হয়েছে। ছেলেটা পারে বটে, দীর্ঘসময় কাজ করেও সে প্রাণখুলে হাসতে থাকে, হুড়মুড় করে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে না। কিন্তু খোলসের বাইরের এবং ভেতরের গল্প—দুটোই আমার কানে আসে, কাজেই এই ছেলেটার সাথে কাজ করে আমি এক ধরনের শান্তি পাই। তবু, এই গল্পটা আকিবের না। অথবা, হতেই পারতো এটা রিয়ার গল্প। বেচারার জন্মদিন আজ। আমি বললাম, আমি যাবো না, ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্নাকাটি করতে। সেটাও শুনবে না, আমি না গেলে নাকি গুলিই করে দিবে। আচ্ছা দিক, তবু বেচারার জন্মদিন তো। হতেই পারতো এটা রিয়ার গল্প। তবু, এই গল্পটা রিয়ার না। এ্যানির সাথে গত কিছুদিন যথেষ্ট ঠাণ্ডা ব্যবহার করেছি, কিন্তু এই গল্পটা এ্যানিরও না। রিকশায় বসে দীর্ঘ আড্ডা দেয়ার পরেও এই গল্পটা ওমরের না, তামান্নার এক মাসের এক্সপেরিন্টের পরেও এই গল্পটা তামান্নার না। অথবা, আরেকটু স্পষ্ট করে বললে, এই গল্পটা নির্দিষ্ট কারো না। এই যেমন, এই গল্পটা নির্দিষ্টভাবে রিয়ার না। তবু, আমি যদি শপাঁচেক শব্দ লিখি, সেখানে কি দু-একবার রিয়ার নাম আসবে না? আসবে তো। কিংবা ধরো, আমি

বাক্‌সো

ছবি
প্রায় এক যুগ পর অথৈ পিচ্চিটা ফোন দিল। এটা আশ্চর্য না, তবে আশ্চর্য এই যে, কিছুদিন ধরে ঘুরেফিরে বারবার পিচ্চিটার কথা মনে পড়ছিল। মোটামুটি ছোটবেলা থেকেই কুইন শুনি, কিন্তু আজকাল কুইন শুনতে গেলে প্রায়ই অথৈয়ের কথা মনে পড়ে যায়। আমার ধারণা, এর পেছনে ফ্রেডি মার্কারির একটা বিশাল ভূমিকা আছে। গল্পটা বলে ফেলতে ইচ্ছে করছে। একটা ব্লকে আটকে ছিলাম, লিখতে গেলেই হাত আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। পিচ্চিটা ফোন দিয়ে এক ধাক্কায় ব্লক ভেঙে দিল! ফ্রেডি মারা যাবার আগের দিনগুলোতে বারবার করে বলছিল, “Write me more. Write me stuff. I want to just sing this and do it and when I am gone you can finish it off.” মৃত্যুর মাসকয়েক আগে ছেলেটা অসাধারণ কিছু গানও গেয়ে গেছে। সেই গানগুলো শুনলে মিশ্র একটা অনুভূতি হয়। একজন মানুষ যখন জানে যে সে মারা যাবে, আরেকটু স্পষ্ট করে বললে, রক ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ কিংবদন্তিদের একজন যখন জেনে ফেলে যে, সে কিছুদিনের মাঝেই মারা যাচ্ছে—তখন সে যা যা করতে পারে—সেটা আর দশটা মানুষের পক্ষে করা প্রায় অসম্ভব। গতকাল কুইনের শেষদিকের একটা গান হঠাৎ চোখে পড়লো, এদ্দিন পড়েনি। না পড়ে খুবই ভালো হয়েছে। গত কয়েক বছর ধর

দেবতার গ্রাস

ছবি
এক. শেষবিকেল। এই সময়ে কার্জনের পুকুরপাড়ে অনেক ছেলেমেয়ে থাকার কথা। আজ বোধহয় রোদটা একটু চড়া দেখেই খুব বেশি মানুষ দেখা যাচ্ছে না। কেবল তিনটে ছেলেমেয়ে বিধ্বস্ত ভঙ্গিতে বসে আছে। বামদিকের ছেলেটার নাম শাফিন। বয়স বাইশ বছর হয়ে গেলেও তাকে দেখে সতেরোর বেশি মনে হয় না। বাইশ বছরের যেই ছেলেকে সতেরো বলে মনে হয়—তাকে সবাই খুব আদর করে। কাজেই শাফিন থার্ড ইয়ারে উঠেও ভার্সিটিতে আদুরে বেড়ালের মতই ঘুরে বেড়ায়। বড় ভাইদের সাথে দেখা হলে ম্যাঁও ম্যাঁও জাতীয় শব্দ করে আদর নেয়ার চেষ্টা করে। আদর সে পায়ও বটে। শোনা যায়, মাস্টার্সের কোন এক বড়ভাইয়ের সাথে তার খুবই খাতির। দুজন মিলে নাকি রাঙামাটির কোন এক জঙ্গলে…আচ্ছা, সে কথা থাক। সব রহস্য সবখানে ফাঁস করতে নেই। শাফিনের ডানদিকে নোবেল আর শাওন বসে আছে। নোবেল কিছুক্ষণ পরপর ফিক করে হেসে ফেলছে। হাসির শব্দ শুনে শাওন বারবার বিষদৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। মেয়েরা সাধারণত হাসিখুশি হয়। মোটা মেয়েরা আরও বেশি হাসিখুশি হয়। আর প্রস্তরযুগের হাতির মত মোটা মেয়েরা খুবইইই বেশি হাসিখুশি হয়। শাওন প্রস্তরযুগের হাতির মত মোটা। কাজেই সে খুবই হাসিখুশি থাকে। তবে আজ বোধহয় তার মন একটু খারাপ। চোখের দৃষ্টি

এলোকথন (শ্রবণা ৬)

ছবি
আজ কি পূর্ণিমা? আজ সম্ভবত পূর্ণিমা। তটিনীটা জেগে থাকলে জিজ্ঞেস করা যেতো। কোনদিন কৃষ্ণা দ্বাদশী কিংবা কবে শুক্লপক্ষ শুরু হচ্ছে—এইসব হিসাব মেয়েটা চোখের পলকে করে দিতে পারে। অবশ্য মার্ফির ল থেকে সহজেই বলা যায়, রাতটা পেরোলেই যেহেতু আমার ডাটাকম পরীক্ষা—আজ পূর্ণিমা হতে বাধ্য। শুধু তাই না, আজকের পূর্ণিমাটা বেশ অনেকখানি সুন্দর হতেও বাধ্য। আম্মুর ঘর দিয়ে যেই আকাশটা দেখলাম, তাতে আর ছাদে যাওয়ার সাহস হল না। পরীক্ষার আগেরদিন মাথা এলোমেলো করতে নেই। অবশ্য, আরেকটু এলোমেলো হলেই বা কী এসে যায়। ওয়ার্ডস আর ফ্লোয়িং আউট লাইক এন্ডলেস রেইন ইনটু আ পেইপার কাপ। মাথাটা আরেকটু এলোমেলো হলে কি খুব বেশি কিছু এসে যাবে? মনে হয় না। আশ্রয়, আশ্রয়। আজ সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাত দুটো পর্যন্ত যা যা ঘটেছে—তা বোধহয় অতীতের সব অভিজ্ঞতাকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অভিজ্ঞতা নতুনই বটে। একুশ বছরের জীবনের ঝুলিতে অনেককিছুই জমা হয়ে গেল। যা যা জীবনে দেখবো বলে স্বপ্নেও কল্পনা করিনি—তাও দেখতে হল। বাইরের খোলসটা অবশ্য একেবারেই স্বাভাবিক আছে। আম্মু-আব্বুর সাথে রাতের খাবার খাচ্ছি। আব্বু গল্প করছে। শুনছি। রিয়াকে বকা দিচ্ছ

এলোকথন (শ্রবণা ৫)

ছবি
নাহ, কোনোভাবেই পড়ায় মন বসাতে পারছি না। আমার ধারণা, গত কিছুদিনে খানিকটা ওভারলোড হয়ে গেছে। কতখানিই বা ব্রেইন আমার মাথায়, বড়জোর সিকি চামচ হবে—ও বেচারার পক্ষেও তো এতখানি চাপ নেয়া কঠিন। কাল ডাটাকম পরীক্ষা আমার। কোর্সটার আসল নাম ডাটা কমিউনিকেশন ওয়ান। সবাই আদর করে ডাটাকম বলে ডাকে। যেই স্যার আমাদের ক্লাস নিতেন, ওনার সাথে আমার একটা মজার কাহিনী আছে। কোনো এক টার্মে ওনাকে অফলাইন দেখাতে গিয়েছি। স্যার কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমি ছবি আঁকো?’ আমি থতমত খেয়ে গেলাম। বললাম, ‘জ্বী স্যার।’ স্যার আমার কোড দেখতে দেখতে বিড়বিড় করে বললেন, ‘চুল দেখে বুঝছি। যারা ছবি আঁকে তারা সাধারণত কোডিং-এ ভালো করে না!’ মনে আছে, সেদিনের স্যারের সামনে অনেক কিছুই কনফেস করেছিলাম। আমি চলে আসার আগে স্যার বলেছিলেন, ছবি আঁকতে ভালো লাগলে অবশ্যই আঁকবা। কিন্তু পড়াশোনায় মন রেখো, একেবারে সন্ন্যাসী হয়ে যেয়ো না। জানি না কেন, একটু আশ্চর্যই বলতে হবে ব্যাপারটাকে, সেদিনের পর থেকে স্যাররা আমাকে খুব একটা বকাটকা দেননি। অন্তত সেই কোর্সের স্যাররা। তানভীর স্যার, খালেদ স্যার তো ইচ্ছেমত সবাইকে বাঁশ দিতেন। শুধু আমাক