পোস্টগুলি

2016 থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

আদ্যিকালের বদ্যি বুড়ো

ছবি
আমি বুড়ো। আদ্যিকালের বদ্যি বুড়ো। এই কথাটা অবশ্য আমি প্রায়ই বলি। মজা করেই মানুষজনকে বলি, আমি কিন্তু বুড়ো হয়ে গেছি। তার বেশ কিছু লক্ষণও দেখা যাচ্ছে বটে। আজকাল বুড়োদের সাথে বড় বকবক করি। আগে যখন দেখা হত, নদীর সাথে দুষ্টুমি করতাম, চাচী বসে বসে হাসতো। আর এখন চাচীর সাথে তুমুল আড্ডা দেই, নদী বেচারা হতাশ চোখে তাকিয়ে থাকে। কী আর করা, আমি আদ্যিকালে ফিরে যাচ্ছি। ফেসবুক একাউন্ট বন্ধ করে ফেলাটা বড় কাজে দিয়েছে। কয়েকশো মানুষের খোঁজ রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না, ওটা মহামানবেরা পারেন। আমি নিতান্তই সাদাসিধে একটা মানুষ। আমি যেটা পারি সেটা হল, আমার আশেপাশের মানুষগুলোর খোঁজ রাখা। এই তো, অনিমেষ স্যার কেমন আছে সেটা একটু দেখা। তামান্নার সাথে একটা আইসক্রিম খাওয়া। আবির ভাইয়ের মাথার পোকাগুলো আবারও নড়েচড়ে বসলো কিনা, একটু খেয়াল রাখা। তটিনী পিচ্চিটাকে একটু বকা দেয়া, পড়াশোনার জন্য। পাশের বাসায় গিয়ে অলিন্দর সাথে গম্ভীর ফিজিক্সের তত্ত্ব আলোচনা করা। আর.... হুম, আর একটু মন খারাপ করা। বেশি না, অল্প কয়েকজনের কথা ভেবেই। যাকগে, একটু আগে এক পিচ্চির সাথে কথা বলছিলাম। আমাদের পিচ্চিগুলো

পেত্নী

ছবি
১০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ঢাকা, বাংলাদেশ। প্রিয় নিঝুম, থাপ্পড় দেয়া দরকার তোকে। চিঠিটা আরেকটু নরমভাবে শুরু করা যেত, স্বীকার করছি। সত্যি বলতে কী, প্রথমে ভেবেছিলাম তোকে কিছুই বলব না জন্মদিনে। রাত সাড়ে এগারোটায় এসে মনে হল, নাহ, কিছু বলে ফেলা যায়। মানুষ হয়ে জন্ম নেয়ার এটা একটা অসুবিধা। তুই নিজেও নিশ্চিতভাবে বলতে পারবি না তুই কী চাস। আচ্ছা, তুই কী চাস? মাসকয়েক আগে একটা কথা বলেছিলি। খুব সম্ভবত আর্ট সামিটের সময়। তুই নাকি সলিচিউডের ভেতরে পরম শান্তি খুঁজে পেয়েছিস, এবং শাফিন ভাই নাকি এই নিয়ে যথেষ্ট মনটন খারাপ করছে। কথাটা যদি সত্যি হয়, শাফিন ভাইকে ঠিক দোষ দিতে পারবো না। আবার তোকেও দোষ দিতে পারবো না। তুই যেমন টুইস্ট করে সলিচিউডে গেছিস, আমি ঠিক তেমনই টুইস্ট করে সলিচিউড থেকে বের হয়ে এসেছি। এটাকে তুই কী নামে ডাকিস? আমি এটাকে জন্ম বলি। আমার অসংখ্যবার জন্ম হয়েছে। জন্মের প্রক্রিয়াটা কখনই খুব একটা আনন্দদায়ক কোনো ব্যাপার না। অসম্ভব কষ্টের ভেতর দিয়ে একেকটা জন্ম হয় এই পৃথিবীতে—সেটা যে ধরনের জন্মের কথাই বলিস না কেন। কাজেই আমার প্রতিটা জন্মই হয়েছে একেকটা ধাক্কার মধ্য দিয়ে। সেই ধাক্কায় চারপাশের

আমাদের নক্ষত্রগুলো

ছবি
এক. বছরের এই সময়টা আমাদের বড় ভালো কাটে। ‘আমাদের’ বলতে, আমরা যারা পাগল সমিতিতে কাজ করি—তাদের। অফিসিয়ালি আমাদের নাম অবশ্য পাগল সমিতি না। একটা গালভরা নামও আছে, কিন্তু আমরা নিজেদের পাগল ডাকতেই ভালোবাসি। এই পাগল অবশ্য রবীন্দ্রনাথের ‘পাগল’। যে দশের বাইরে থাকে, এবং একসময় ফিরে এসে দশকে এগারো বানিয়ে দেয়। আইজেএসও-র গল্পটা তাহলে এইবেলা বলে ফেলা যাক! দুই. গত বছর (২০১৫ সালে) আমরা যখন আইজেএসও-তে দল পাঠানো শুরু করি—খুবই যে বড় আশা নিয়ে ছিলাম—এমন কিন্তু না! ভেবেছিলাম, ম্যাথ অলিম্পিয়াডে একটা ব্রোঞ্জ পেতে অনেক বছর লেগেছে, ফিজিক্স অলিম্পিয়াডেও, কাজেই জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডেও একটু সময় লাগবে—এ আর এমন আশ্চর্য কী? তবু, আমাদের মানুষগুলোর তো মাথায় সমস্যা। কাজেই তারা আইজেএসও দলটার পেছনে লেগে থাকলো। মনে করল, আজকে লেগে থাকলে হয়তো একদিন কিছু একটা হবে! তো, এই আশায় পাগলগুলো চাঁদে পাওয়া মানুষের মতই খাটাখাটনি করা শুরু করল। কেউ টিউশনি বাদ দিয়ে দিল। কেউ শখের কাজগুলো করা ছেড়ে দিল। সকালবেলা পাগলগুলো ভার্সিটিতে যেত ক্লাস করতে। সারাদিন ক্লাস করে, ক্লান্ত হয়ে দৌঁড়ে যেত আইজেএসও ক্যাম্পে। ক্লাস

এলোকথন (মৃগশিরা ১)

ছবি
গতকাল শিল্পকলায় যেই প্রদর্শনীতে গিয়েছিলাম, তার নামটা বেশ গালভরা। দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ। পুরো প্রদর্শনীটা তিন তলা জুড়েই হচ্ছে—কাজেই বিশাল বড়! এবং এই তিন তলা ঘুরে মাত্র তিনটে জিনিস মনে ধরল, তবে সেটা পরের কথা। গতকালের সবচেয়ে চমৎকার অংশটা ছিল অন্য জায়গায়। ধরে নিই, আমার সাথে যে গিয়েছিল তার নাম বৃশ্চিক। কিংবা কৃত্তিকা। অনেক্ষণ ঘোরাঘুরি করে ক্লান্ত ছিলাম, আমরা দুজনেই। ভাবলাম, গতবারের মত শিল্পকলার ছাদ থেকে ঘুরে আসি। চতুর্থ তলায় উঠে অবশ্য হতাশ হলাম, ছাদের দরজা বন্ধ। নিচে চলে যাবো—ঠিক তখনই খেয়াল করলাম, ছাদের উপরে আরেকটা ছাদ আছে, এবং একটা ভাঙা সিঁড়ি বেয়ে সেই ছাদে ওঠা যায়! ভাগ্যিস খেয়াল করেছিলাম। ফাঁকা একটা ছাদ। এবং ছাদটা আকাশের কাছাকাছি। পাঁচতলার একটা ছাদকে আকাশের কাছাকাছি মনে হওয়ার কথা না। শিল্পকলার ব্যাপারটা অবশ্য আলাদা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওদিকে যেহেতু খুব বেশি বাড়িঘর নেই, শিল্পকলার সেই ছাদই আকাশের কাছাকাছি। আমরা যখন ছাদে পা রাখলাম, কালপুরুষ মাত্র আকাশে উঠেছে। কিছুক্ষণ নক্ষত্র দেখে, এলোমেলো কথাবার্তা বলে ফেরার কথা ভাবছি। ঠিক সেই মুহূর্তে বৃশ্

তামান্নার কাছে চিঠি

ছবি
৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ ঢাকা, বাংলাদেশ। ঐ, ​​বুঝছিস, আমার না, লিখতে অনেক ভালো লাগে। প্রতিটা দিন বসে বসে লিখতে ইচ্ছে করে। আর বই পড়তে ইচ্ছে করে। অবশ্য, লেখাকে পেশা হিসেবে নেয়ার ইচ্ছে কোনোকালেই ছিল না, এখনও নেই। তবু, যদি লিখতে পারতাম, মনে হয় ভালো হত। মানে, আমার ভালো লাগত আরকি।​ এবং আমার কাছে এখন মনে হয়, আমি কিছু ভুল করেছি। সবকিছু বাদ দিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে। সবকিছু বাদ দিয়েছিলাম। বন্ধু, প্রেম, জীবন, অভিজ্ঞতা—সবকিছুই। পড়াশোনাটা ছিল প্রথম প্রায়োরিটি। তোদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, আমার মত একজন মানুষের বন্ধু থাকার কথা ছিল না। তবু, তোরা ছিলি। এসএসসির পরের সময়টা, পুরো কলেজ জীবনটাই তোরা আমাকে সাপোর্ট দিয়েছিলি। অদ্ভুত একটা সময় ছিল সেটা। মনে আছে, সারাক্ষণ তোদের সাথে কথা বলতাম? দিনের একবেলা কেউ কথা না বললেই রীতিমত ঝগড়া হয়ে যেত! যেকোন দুজনের মাঝে ঝগড়া হলে তখন অন্য দুজনকে এগিয়ে আসতে হত সেই ঝগড়া থামানোর জন্য। একটা ঘটনা খুব মনে পড়ে। আমি দাদুবাড়ি যাচ্ছিলাম। আমার তো সবসময়ই মরবিড চিন্তাভাবনা। নানু মারা যাওয়ার পর থেকে সেটা আরও বেড়ে গিয়েছিল (অথবা শুরু হয়েছিল)। প্রতিবার দাদুবাড়ি যাওয়ার আগে ত

না দেখা বৃষ্টি

ছবি
আচ্ছা, আমার চারপাশের সবাই কি পাগল? অথবা আমার চারপাশের সবাই অসাধারণ একেকজন মানুষ। সম্ভবত দুটোই সত্যি। গতকাল সকালে অসম্ভব সুন্দর একটা মেইল পেলাম। কে লিখেছে সেটা বলতে ইচ্ছে করছে না, তবে কী লিখেছে সেটা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। “সকাল কিংবা বিকেলবেলা। আমি বাস স্টপে বসে... এক কোণায়। সামনের রাস্তাটা সুন্দর প্রশস্ত। অনেক্ষণ, রাস্তায় কেউ নেই... ফাঁকা। হঠাৎ দেখি দুজন হেঁটে এদিকটায় আসছে। -আরে! বাঁ পাশেরটা নোবেল ভাইয়া না?(!)  হ্যাঁ! ওটা তুমিই। তোমার পাশে সবুজ শাড়ি পড়া একটা মেয়ে। মাথায় খোঁপা তবে চুল উশকো খুশকো, হাতে ছোট্ট হলুদ রঙা ফুল। তোমার মত একদম শুকনা তবে অনেক সুন্দর। দুজনকে দেখতে যে কি ভালো লাগছিল! হঠাৎ বৃষ্টি। তোমার হাতের ফাইলটা তুমি মাথায় চেপে আপুর হাত ধরে দৌড়ে বাস স্টপে এসে দাঁড়ালা। তোমরা বৃষ্টি দেখছো। আমি আর বৃষ্টি তোমাদের দেখছি, মিষ্টি মিষ্টি হাসছি।  তোমরা অপেক্ষা করছো, বৃষ্টি থামার নাহয় বাস আসার। তাই দেখার জন্য অপেক্ষা করছি... আমি আর বৃষ্টি!” রোলিং স্টোন্‌সের ঐ গানটা মনে পড়ে গেল। খুব ইচ্ছে করে, বিকেলবেলা যখন বৃষ্টি হয়, জানালার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে টুংটাং করে গানটা বাজাই। বহু

স্বপ্নগুলো স্বপ্ন হয়েই রয়

ছবি
এক. সম্ভবত, প্রতিটা মানুষই আশ্চর্য একেকটা চরিত্র। দুই-একদিন আগে পদ্মদের বাসায় আড্ডা দিতে দিতে আরেকবার ধাক্কাটা খেলাম। হঠাৎ করেই ওদের বাসায় গিয়েছিলাম। মাসখানেকেরও বেশি হয়ে গেল, পিচ্চিটার সাথে দেখা হয় না। ফোন দেয় প্রায়ই, ব্যস্ততার কারণে ধরি না। পরে নিজেরই মন খারাপ হয়। আইজেএসও ক্যাম্পে শাওন (জেনেটিক্স ডিপার্টমেন্টের মেয়েটা) ক্লাস নিচ্ছিল সেদিন। শাওনের ক্লাসে যেহেতু আমার দাঁত ফোটানো কঠিন, চুপ করে শোনা ছাড়া অন্য কোন গতি নেই। তাই ভাবলাম, শাওন ক্লাস নিক, এই ফাঁকে আমি পদ্মদের বাসা থেকে ঘুরে আসি! দুই. পদ্মদের বাসার বেল চেপে দাঁড়িয়ে আছি। আন্টি এসে দরজা খুললেন। দরজাটা একটু ফাঁক করে হাসতে হাসতে নাটকীয় ভঙ্গিতে বললেন, কে?! এই পদ্ম, লাঠিটা নিয়ে আয় তো! সাথে একটা রাবার ব্যান্ডও নিয়ে আসিস, ও চুল বাঁধবে! আমিও হাসতে হাসতে ঢুকলাম। পদ্মদের বাসায় বিশাল একটা বুকশেলফ, সেই বুকশেলফের পাশে মেঝেতে বসে আমি আর পদ্ম দুষ্টুমি করছিলাম। পদ্ম সবকিছু খেয়ে ফেলে তো, তাই সে হচ্ছে ভোক্কস। তাই শুনে পিচ্চিটা আমার নাম দিয়েছে খোক্কস। তো, আমি আমার ভোক্কস বোনটার আঁকা জিনিসপত্র দেখছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে

So, so you think you can tell

ছবি
এক. জগদীশ বসু ক্যাম্প, এক, দুই, ছাড়াছাড়া, মানুষ ধরে ধরে বলা— নাহ, এভাবে আর হচ্ছে না। সবকিছু লিখে ফেলতে পারলে ভালো হত। অথৈ বলেছিল, ক্যাম্প থেকে ফেরার পর সে নাকি ক্যাম্পের স-অ-ব গল্প শুনবে! অন্তত পিচ্চিটার জন্য হলেও তো আমাকে লেখা লাগবে। সন্ধ্যার একটু পর চুপ করে বসে ছিলাম। বাইরের বাতাসটা মোটামুটি অবিশ্বাস্য লাগছিল। বাতাসে শীত-শীত ভাব নাহয় থাকতে পারে, কিন্তু এতখানি নস্টালজিয়া কীভাবে থাকে আমি জানি না। এমন সময় নদী ফোন দিল। আজকাল কী যেন মনে হয়, কারো সাথে কথা বলার সময় টুংটাং করে বাজাতে ইচ্ছে করে। নদীর বকবক শুনতে শুনতে wish you were here তোলার চেষ্টা করছিলাম। আমি টুংটাং করতেই পিচ্চিটা ওপাশ থেকে মোটামুটি চেঁচিয়ে উঠলো, ভাইয়া ভাইয়া, এইটা so you think you can tell না?? আর ঠিক এই কথাতেই আমার হিল্লোলকে মনে পড়ে গেল। হিল্লোল রায়, দিনাজপুর, এবং আরো অনেক কথা। আমি দিনাজপুরের মাটিতে শেষবার যখন দাঁড়িয়েছিলাম, সেবারও উপন্যাসটা একইভাবে আগাচ্ছিল। আমার মনে আছে, সোহান আর পুণ্য (অথবা মীমও হতে পারে) যখন আমাকে বলল, ভাইয়া ভালো থেকো, বাসায় যাচ্ছি— ঠিক সেই মুহূর্তে আমার মনে হল, আ

রিটার্ন জার্নি: আইসিইউ টু দিনাজপুর

ছবি
ওরা ঠাট্টা করে নিজেদের DMC বলে ডাকে। দিনাজপুর ম্যাথ ক্লাব। দিনাজপুরে যাওয়ার আগেরদিন আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম। রুদ্রর সাথে হাটখোলায় গিয়ে গোটাদশেক থার্মো কিনলাম, এরপর যখন ক্যাম্পাসে ফিরছি, তখন মনে হল নওরীণটাকে ফোন দিই, অনেকদিন চেহারা দেখা হয় না। ফোন দিলাম, নওরীণ চেঁচামেচি করে বলল, হলের সামনে আয়! আমি যখন ওদের হলের দিকে আগাচ্ছি, তখন আকাশ অন্ধকার করে মেঘ জমছে। ঠিক যেই মুহূর্তে আমি হলের ভাস্কর্যটার পাশে দাঁড়ালাম, তখনই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো, তুমুল বৃষ্টি, আর সেই বৃষ্টির মধ্যে একটা আইসক্রিমের দোকানের ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে নওরীণ বলল, আব্বু একসিডেন্ট করসে। Period. একসিডেন্টের খবরটা কে দিয়েছিল? চাচী সম্ভবত, আমার ঠিক মনে নেই। উনি বিস্তারিত বলে নি, একসিডেন্টটা কতটা সিরিয়াস, নওরীণ তখনও বোঝেও নি। আমরা এসব বলি না, অন্তত ফোনে, সিরিয়াস একসিডেন্টের পরেও বলি, একটু আঘাত, অল্প একটু কষ্ট, আসছি, ঢাকায়, এ্যাম্বুলেন্স, না সিরিয়াস না— আমরা এভাবে বলি…. জানি না কেন। হয়তো কষ্টের ব্যাপারটা নিজের কাছেই লুকাতে চাই। অথবা, হয়তো ওপাশের মানুষটাকে শান্ত রাখতে চাই— যতটা বেশি সময় সম্ভব। এরপ

শিউলী

ছবি
অনেকদিন বাদে অমলকান্তি ছেলেটার কথা মনে পড়লো। আচ্ছা ঐ প্রসঙ্গ নাহয় থাক। আম্মুর কথা বলি। ব্যাপারটা আমার নিজের কাছে চমৎকার লাগছে, আম্মুকে নিয়ে কথা বলতে গেলে সেখানে অবধারিতভবেই রবিবাবু চলে আসে। এসে গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে থাকে, মাঝেমধ্যে তার দাঁড়িগোঁফের আড়ালে মুচকি হাসিও দেখা যায়। আমি তো আধাপাগল, আর আম্মু ছিল সিকিপাগল। এই অল্প একটু। রংপুরে যখন মেডিকেল কলেজে পড়তো, পড়তে পড়তে হতাশ হয়ে আম্মু কাঁদতে কাঁদতে বাসায় চলে যেত। গিয়ে নানাভাইকে বলতো, আব্বা আমাকে দিয়ে আর পড়া হবে না। নানাভাইয়ের অনেকটা রবীন্দ্রনাথের মত চেহারা, সে হাসি আটকানোর চেষ্টা করতে করতে নির্বিকার মুখে বলতো, আচ্ছা সমস্যা নাই। আম্মু দুইদিন বাসায় বসে থাকতো, এরপর আবার কাঁদতে কাঁদতে মেডিকেলে ফিরে যেত, গিয়ে খালামণিদের সাথে (মানে, আম্মুর বান্ধবীদের সাথে) ঝগড়া করত, আমি বাসায় গেলাম আর তোরা সব পড়া পড়ে ফেললি!! নানাভাই ছিল জেলা স্কুলের শিক্ষক। হয়তো এই কারণেই, আম্মুর অসম্ভব চমৎকার একটা অভ্যাস ছিল— দিনরাত বই পড়া। মানিক-শরৎ থেকে শুরু করে আরো অনেকের বই, সবাইকে আমি চিনিও না। নানাভাই কিনে দিতো, আম্মু খালি পড়তো। একসময় বেচারা যখন বড় হল, তখন

বুড়ো

ছবি
ওদের দুজনের সাথে কবে পরিচয় হয় আমার মনে নেই। ভাইয়া আমার চেয়ে বয়সে পাঁচ মাসের বড়, জ্ঞান হওয়ার পর আবিষ্কার করেছি, আমি তাকে ভাইয়া বলে ডাকি। আর অলিন্দ আড়াই বছরের ছোট, জ্ঞান হওয়ার পর আবিষ্কার করলাম, আমি তাকে অলিন্দ বলে ডাকি (খুব একটা আশ্চর্যের ব্যাপার না এটা অবশ্য, স্বীকার করছি)। আমি যখন অনেক ছোট, আমরা একসাথে থাকতাম। ওদের আব্বু আবার সম্পর্কে আমার চাচা হয়। আপন চাচা। আমার আব্বু বড় ভাই, এরপর একজন সেকেন্ড হয়েছিল, আর ওদের আব্বু থার্ড হয়েছে। থার্ড হওয়ার কারণেই কিনা কে জানে, দাদু তার নাম রেখেছিল বাবু। তো, ধানমণ্ডির একটা দোতলা বাসায় বাবুচাচারা আর আমরা থাকতাম। সাথে থাকতো ভাড়াটিয়া, আর ভাড়াটিয়াদের বিশাল এক কুকুর। আমার জীবনটা শুরু হয়েছিল এভাবেই, ভাইয়া, অলিন্দ, আমাদের দুই পরিবার, বৃদ্ধা ভাড়াটিয়া, আর একটা কুকুর নিয়ে। তারপর, মনে হয় আমার বয়স তখন তিন বছর, আমরা বাসা পাল্টালাম। মোহাম্মাদপুরের এদিকে খুব শান্ত একটা জায়গা আছে। এখানে আমরা বাসা নিলাম, আর আমাদের দুই-এক বাসা পরেই বাসা নিল চাচারা। এরপর আমরা আরেকটু বড় হলাম, আমাদের আরেকটু জ্ঞান হল, আর আমরা তিন ভাই দিনরাত একসাথে হাউকাউ শুরু করলাম! সমবয়সী তিন ভাই

যারা বেঁচে আছে, যারা বেঁচে নেই

একগাদা কাজ ফেলে রেখে লিখতে বসলাম। এই ঘরে বসে লিখতে বড় ভালো লাগে। আমার ঘরটা বেশ ছোট, কিন্তু অনেক বছর ধরে অল্প অল্প করে গোছানো। দেয়াল থেকে ঘড়ি, ক্যালেন্ডার সবকিছু সরিয়ে দেয়াল সাদা করে ফেলেছি, বেশ ফাঁকা ফাঁকা লাগে। আপুর ঘরের বুকশেলফ থেকে ভালো ভালো বইগুলো এনে আমার বুকশেলফে রেখেছি, ছাদের সাথে লাগানো বুকশেলফজুড়ে শুধু বই আর বই, সেটাও দেখতে ভালো লাগে। স্ক্রু-ট্রু দিয়ে চেয়ারের হাতল খুলে ফেলেছি, চেয়ারে পা তুলে আরাম করে বসা যায়। আর আমার পড়ার টেবিলটা জানালার সাথে লাগানো, জানালার ওপাশে মোটামুটি বড় একটা ফাঁকা রাস্তা। তারও পরে একটা বিল্ডিং। আমার জানালা দিয়ে অনেকখানি আকাশ দেখা যায়। বৃষ্টি পড়লে বেশ ঠাণ্ডা বাতাসও আসে। আর দূরের বাসাটার কবুতরের মত খুপড়িগুলো দিয়ে দেখা যায়, ঢাকাশহরের দিবারাত্রির কাব্য। ও বাড়ির হাসিকান্না এ বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছায়। রাতে যখন সবকিছু চুপ হয়ে যায়, মেয়েটা মৃদু হাসলেও আমি শুনি, বুড়ো লোকটা হালকা কাশলেও আমি শুনি। আমার মাঝেমধ্যে বড় ভালো লাগে। এমন সময়, ওয়ারফেজের একটা পুরনো গান শুনতে শুনতে আমার মধ্যে নস্টালজিয়া ভর করল। কিংবা হিমশীতল বাতাসটাকেও এর দায় দেয়া যায়। আমার দাদু এখন

কীর্তনখোলা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, রাত ১১ টা এই মুহূর্তে আমি বরিশালের গ্র্যান্ড পার্ক হোটেলের একটা বিছানায় পদ্মাসন গেড়ে বসে আছি। সারা ঘরে হলুদ আলো, যতটুকু আলো থাকলে সবকিছু স্পষ্ট দেখা যায়, অথচ একটুও চোখে লাগে না—ঠিক ততটুকুই আলো। যেহেতু জীবনানন্দের শহরে বসে আছি, কাজেই তার একটা কথা বলে ফেলা যায়, কথাটা আমার বারবার বলতে হয়েছে, বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন কারণে। এইসব ভালো লাগে। আজ দুপুরে এই শহরে নেমেছি। লঞ্চে করে। আমি একা না, আমার সাথে পরিবারের বাকি তিনজন, সত্যি বলতে কী— সব মিলিয়ে প্রায় একশোজন, আব্বু-আম্মুর অফিসের একটা প্রোগ্রাম, বুড়ো-বুড়ো রাগী-রাগী চেহারার ডাক্তাররা তাদের পরিবার নিয়ে বেড়াতে চলে এসেছে। সবাই মিলে বড় হইচই করছে, ডাক্তারদের আনন্দের উপলক্ষগুলো হয়তো এভাবেই আসে, কালেভদ্রে। আমি যেহেতু পাগল, আমি তাদের সাথে ঠিক নিজেকে মেলাতে পারি না। দূরে দূরে থাকি, একটু একা। লঞ্চে আসার সময় ছাদে উঠে নদী দেখছিলাম। লঞ্চ পানি কেটে এগিয়ে যাচ্ছে, আহা, কী চমৎকার একেকটা নদী, আর কী অপূর্ব একেকটা নাম, বুড়িগঙ্গা থেকে ধলেশ্বরী, তার সাথে শীতলক্ষ্যা এসে মিশলো, সেই নদী গিয়ে পড়লো মেঘনায়, মেঘনা নদী থেকে কীভাবে যেন কীর্