পোস্টগুলি

জুলাই, ২০১৭ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ছাদ

ছবি
এক. ফারহাদের বাসাটা তিনতলা। একতলাটা গত দু মাস ধরে ফাঁকা পড়ে আছে। আর দোতলায় গত বিশ বছর ধরে এক বুড়ো পড়ে আছে। রিটায়ার্ড বুড়ো। বিশ বছর আগে লোকটা যখন এই বাড়িতে উঠেছিল, তখনও নাকি এমনই বুড়ো-বুড়ো চেহারা ছিল। একহাতে ছেঁড়া সুটকেস, আর অন্য হাতে একটা ভাঙা গীটার নিয়ে উঠে এসেছিল এই বাড়িতে। তবে আশ্চর্য এই যে, গত বিশ বছরে কেউ এই বুড়োকে গীটার বাজাতে শোনেনি। বুড়ো চিৎকার করে বাড়িওয়ালার সাথে ঝগড়া করেছে, এলাকার ছোট বাচ্চাদের আদর করে চকলেট খাইয়েছে, রমজান মাসে সারারাত মসজিদে জেগে কেঁদেছে, শেষবিকেলে বাসার চারপাশে পায়চারী করেছে, কিন্তু কখনই তার গীটারটা বাজায়নি। অথবা, কেউ তাকে বাজাতে শোনেনি। ফারহার আম্মুর ধারণা, বুড়ো গীটার বাজাতে পারে না। কোথাও কুড়িয়ে পেয়েছে—তাই নিয়ে চলে এসেছে। চালচুলোহীন বুড়ো! ফারহার কেন যেন এটা বিশ্বাস হয় না। বুড়ো বড্ড গরীব—এটা ঠিক অবশ্য। তাই বলে খামোখা একটা ভাঙা গীটার নিয়ে বিশ বছর পার করে দিবে? সে মাঝেমধ্যেই ভাবে, একদিন সাহস করে বুড়োকে জিজ্ঞেস করবে, উনি গীটার বাজান না কেন। সাহস হয়ে ওঠে না। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় কখনো বুড়োর সাথে দেখা হয়ে যায়। বুড়ো গম্ভীর মুখে হুংকা

এলোকথন (শ্রবণা ৪)

ছবি
আমার মনে হচ্ছে আমরা কিছু একটা হারাচ্ছি। আমি, তুমি, সে—আমরা সবাই। আজ থেকে প্রায় বাইশ বছর আগে বিটিভি অসাধারণ একটা অনুষ্ঠান প্রচার করেছিল। নাম ‘জলসা’। উপস্থাপক ছিলেন আনিসুল হক। মেয়র সাহেব যে একসময় উপস্থাপনা করতেন—আমি জানতাম না। আর অতিথিদের মধ্যে ছিলেন…এহ্‌ম, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, শ্রদ্ধেয় মুস্তাফা মনোয়ার, খান আতাউর রহমান, কলিম শরাফী, নীলুফার ইয়াসমিন, সোল্‌স, মাইল্‌স ব্যান্ডের সদস্যরা—সে এক দীর্ঘ তালিকা! অনুষ্ঠানটা দেখে আমার এত ভালো লাগলো, কী বলব। বাইশ বছর আগের মানুষগুলো এত ভালো ছিল? মাত্র বাইশ বছরেই এত পরিবর্তন হয়ে যায়? ওরা একেকজন কথাবার্তা বলছে, মুস্তাফা মনোয়ার স্যার থেকে শুরু করে সে সময়ের ‘পিচ্চি’ পার্থ বড়ুয়া পর্যন্ত—একেকজন কী গভীর থেকে একেকটা বাক্য উচ্চারণ করছে! বাইশ বছর আগে বোধহয় মানুষগুলোর মধ্যে অনেকখানি গভীরতা ছিল। সে সময়ের গানগুলোই দেখ, আজকের হৃদয় খানের ‘আমি যে তোমার, প্লিজ প্লিজ আমি তোমার, এখন দুইজন মিলে নাচি চলো’—এইসব গানের সাথে সেই সময়ের ‘নিউক্লিয়ার স্বাধীনতা’-র তুলনা হয়? গানের নামটাই তো অসম্ভম রকমের সুন্দর—নিউক্লিয়ার স্বাধীনতা! এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলে ফেলার লো

এলোকথন (শ্রবণা ২)

ছবি
অল্প কিছুদিন হল, মাথায় নাইন্টিজের বাংলা ব্যান্ডগুলোর পোকা ঢুকেছে। এর দায় অবশ্য অনেকখানিই শাফিনের। আমি-শাফিন-খালিদব্রো-ইবরাহিম ভাই—আমরা চারজন লালবাগের একটা রেস্তোরাঁয় বসে ছিলাম। বসার কিছুক্ষণের মাঝেই নাটক নিয়ে আলোচনা শুরু হল, কাজেই আমি একেবারে চুপ মেরে গেলাম। নাটক-চলচ্চিত্র নিয়ে আমার যে জ্ঞান—তাতে মুখ খুললে আর মুখ লুকোনোর জায়গা পাবো না। আমি শুধু অপেক্ষা করছিলাম, কখন গানের প্রসঙ্গটা ওঠে! তখন ইবরাহিম ভাই মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকবে, আর আমি মঞ্চে নামবো! তা, প্রসঙ্গ উঠলো বটে। শাফিন একটা ভালো কাজ করেছে বোধহয়—নাইন্টিজের বাংলা ব্যান্ডগুলোর প্রায় সবই শুনে ফেলেছে। আমাদের দেশে পেপার রাইম কিংবা রকস্ট্রাটার মত এত অসাধারণ কিছু ব্যান্ড ছিল—আমি ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি আগে। গতকাল রাতে রকস্ট্রাটার প্রথম গানটা শুনতে গিয়ে রীতিমত বেকুব হয়ে গেলাম—১৯৯১ সালের ঢাকা শহরে বসে ছেলেগুলো এমন মেটাল গান গেয়েছে?! মাইরি, কী দুঃসাহস! [পরবর্তী অংশে অল্পকিছু সেন্টি আছে। ময়মনসিংহ এবং আরামবাগকে চার নম্বর মৃদুবিপদ্‌সংকেত দেখানো হচ্ছে। পরেরদিন ক্লাস বা পরীক্ষা থাকলে এখন ঘুমিয়ে পড়াটাই শ্রেয় হবে।] কিন্তু এদিকে আমি নিজে

এলোকথন (শ্রবণা ১)

ছবি
[রিয়ার জন্য নিষিদ্ধ, খবরদার। আমি না বলা পর্যন্ত।] ডাটাবেজ পড়তে পড়তে পাগল হয়ে যাচ্ছি। যদিও অস্বীকার করার উপায় নেই—জিনিসটা খুবই জোস। এই টার্মে কাজ করার জন্য কায়কোবাদরা প্রায় চারশো গিগাবাইট ডাটা খুঁজে বের করেছে। কোনো ছবি নেই, কিচ্ছু নেই, কেবল গুটিগুটি টেক্সট দিয়ে ভরা চারশো গিগাবাইট! ব্যাপারটা দেখে আমার আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড়। একটা জিপ ফাইলে এই বিশাল দৈত্যকে আটকে রাখা হয়েছে। পুরোটা আনজিপ করলেই চারশো গিগা বের হয়ে আসবে, হাউমাউ করে কম্পিউটারের মেমোরি খেতে শুরু করবে। আমি ছোট্ট একটু অংশ আনজিপ করে দেখেছি, লেখাগুলো পড়লে আসলেই ফিল আসে। সিএসই-জাতীয় ফিল না, কাব্যিক ফিল। সে যাক। কাল বিকালে ল্যাব ফাইনাল। রিয়াটা এসে ফোন দিচ্ছিল। সে যখন ফিরে যাবে তখন আমার পরীক্ষার হলে বসে কলম কামড়ানো লাগবে—কাজেই দেখাসাক্ষাত করার উপায় নেই। অবশ্য দেখা করারও তেমন কিছু নেই। পুতুল আমরা একেকজন, যেমনে নাচাও তেমনিই নাচি। রিয়া যে বলছে, ‘সবকিছু মিলায়ে জগাখিচুড়ি হয়ে গেসে’, তাতেই কি কিছু এসে যায়? ওটাও তো পুতুলনাচেরই অংশ। একটাই সমস্যা, পুতুলগুলো সময়ে সময়ে হাসতে বা কাঁদতে পারে। সময়ে সময়ে নাচের দৃশ্যে ঢুকতেও

সংবিগ্ন মানুষজন ও আঁকাআঁকি বিষয়ক

ছবি
[আমি না বলা পর্যন্ত রিয়ার জন্য নিষিদ্ধ।] এক. তোহফার সাথে আমার প্রায়ই যে বিষয়টা নিয়ে তর্ক হয় সেটা হল, কে কাকে দেখে ইন্‌স্পায়ার্ড। ব্যক্তিগতভাবে আমার ধারণা, মেয়েটা অসাধারণ পেইন্টিং করে, কোন রঙটা কোথায় কতখানি গাঢ় করে মেরে দিলে কী ঘটে যেতে পারে—সেটা সে আসলেই ভালো বোঝে। আফ্রেমভের সাথে তুলনা করাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে নিশ্চয়ই, কিন্তু আমার আশেপাশের মানুষের মধ্যে যারা রঙ সবচেয়ে ভালো বোঝে—তোহফা নিঃসন্দেহে তাদের একজন। আমি মুখ্যুসুখ্যু মানুষ, পেনসিল দিয়ে নিরীহ শেড দেয়াতেই আমার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। এই শেডও আবার ইয়াফিজ সিদ্দিকীর হ্যাঁচকা টানের শেড না, অনেক সময় নিয়ে একের পর এক স্তরে দেয়া শেড। যেসব দিনে ভীষণ হাত কাঁপে, সেসব দিন সবচেয়ে গাঢ় অংশগুলোতেও আগে টু বি বসাই। এরপর একটু ভরসা পাই, তখন ফোর বি। হাত আরেকটু শান্ত হলে সিক্স বি, ভূমিকার চুল আঁকার সময় এভাবে নাইন বি পর্যন্ত উঠেছিলাম। (সেই দিনটা আবার বাড়াবাড়ি রকমের সুন্দর ছিল, ইসিই ভবনের বারান্দার গ্রিল খোলা থাকায় ক্লাসের সবাই মিলে জানালা দিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। সানশেডে লাইন দিয়ে বসে ছেলেমেয়েগুলো আড্ডা দিচ্ছিল। অন্তু খুব ভয় পাচ্ছিল—যদি নিচে পড়ে যায়! লাই

লং শট

ছবি
[ময়মনসিংহের জন্য নিষিদ্ধ। টানা তিনটা উইকলি না দেয়া পর্যন্ত।] “সেদিন বরষা ঝরঝর ঝরে কহিল কবির স্ত্রী, ‘রাশি রাশি মিল করিয়াছ জড়ো রচিতেছ বসি পুঁথি বড়ো বড়ো মাথার উপরে বাড়ি পড়ো-পড়ো, তার খোঁজ রাখ কি!” সোনার তরী কাব্যগ্রন্থে কবিতাটা ছিল। এদ্দিন বাদে হঠাৎ মনে পড়ল। সে এক সাংঘাতিক কবিতা, সাড়ে ছ’শো লাইন—সেই কবিতার ভেতরে আবার আরেকটা পুরো কবিতা! ঘটনাটা এমন—এক রাতে খুব বৃষ্টি হচ্ছে, তার মাঝে কবি কেবল লিখেই যাচ্ছে, আর তাই দেখে বেচারাকে তার স্ত্রী খুব করে বকে দিচ্ছে—দিনরাত কবিতা লিখলেই হবে? টাকার অভাবে বাড়িঘর যে ভেঙে পড়ছে! যাও না একবার রাজামশাইয়ের কাছে, উনি বড় দয়ালু, গুণী লোকদের নাকি কদর করেন। এই শুনে কবি বেচারা ভয়ে এতটুকু হয়ে গেল। স্ত্রীকে তার বড্ড ভয়, ওদিকে আবার রাজাকেও ভয়। কী আর করা, শেষপর্যন্ত স্ত্রীভয়ের কাছে রাজার ভয় হার মানলো, কবি রওনা দিলো রাজপ্রাসাদের দিকে। আর এদিকে কবির স্ত্রী কিন্তু কবিকে খুবই ভালোবাসে, বাইরে যতই বকাবকি করুক। কবি ঘোড়ায় চড়ে রাজপ্রাসাদে যাচ্ছে, আর কবির স্ত্রী মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। সে যাক, কয়েকশো লাইন পরের ঘটনা, কবি রাজার সামনে বসে আছে। কবিতাপাঠ