পোস্টগুলি

2019 থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

সাকরাইন

ছবি
হয়তো কোনোকিছুই আশ্চর্যের না। তবু সবকিছু ম্যাজিকাল।  এবং শান্তা যখন ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে দাঁড়ায়ে শেষ বিকালের আকাশের দিকে তাকায়ে থাকে, তখনও সে তার সংকটের ব্যাপারটা অনুমান করতে পারে নাই। তবু তার মধ্যে কেমন একটা ভাব জন্ম নেয়, সে কেমন একটু বিভ্রান্ত বোধ করে, কেননা সন্ধ্যা নামার আগে আগে পূর্ব আকাশটারে সে কালো হয়ে আসতে দেখে। একটা ঠাণ্ডা বাতাস তারে কাঁপায়ে দিয়ে যায়, এবং তার একবার মনে হয় এই বাতাসটা বুঝি কালবৈশাখীর! কিন্তু পরমুহূর্তেই তারে ঝড়ের লোভটা সংবরণ করা লাগে, কেননা জানুয়ারি মাসে এই শহরে অতীতে কবে কালবৈশাখী দেখা গেছে—সেই কথা কেউ স্মরণ করতে পারে না। সুতরাং ঠাণ্ডা বাতাসটা শীতের, কিন্তু তবু এই শালার আকাশ সন্ধ্যার আগে এমন করে কালো হয়ে আসে, একটা হিম হিম বাতাস চারদিকে এমন বাইরাবাইরি করে, মানুষগুলো এমন করে লক্ষ্মীবাজারের দিকে হনহনায়ে হাঁইট্টা যায়—শান্তার স্পষ্ট মনে হয়, আইজকা ঝড় আইতাসে, আইজকা ঝড় আয়া পড়লোগা!  এরপরেও, এই নিয়ে কি তাকে, কিংবা কাউকেই কি আদৌ দোষ দেয়া যায়? কেননা জানুয়ারিতে জুন এবং জুনে জানুয়ারিকে স্মরণ করার অবধারিত নিয়তি থেকে বেরুবার ক্ষমতা তো তাদের দেয়া হয় নাই, ফলে সাকরাইন

এলোকথন (জ্যেষ্ঠা ২৬:৩)

ছবি
“A human being is essentially a spirit-eye. Whatever you really see, you are that.” তাই যদি হয়, এবং যদি আমি চোখে কেবল অন্ধকারই দেখি— তাহলে আমি কী? আমার মাঝেমধ্যে মনে হয়—একেকটা কথা আমার দিকে আঙুল তুলে কী নির্মম অট্টহাস্য করে! ইউ আর দ্যাট, ইউ আর দ্যাট। একটা ইটালিক ধাঁচে লেখা শব্দ এভাবে আঙুল তাক করে থাকতে পারে? এতখানি নির্দয়ভাবে একটা মানুষকে বিদ্ধ করতে পারে? এইসব মুহূর্তে আমার কানে বৃষ্টির শব্দ আসে। এটা কি একটা রোগ? আমার কেবল দুটা জিনিস মনে হতে থাকে। এক, আমি বৃষ্টির শব্দ শুনতে পাচ্ছি। এবং দুই, আমি একটা সমুদ্রে আছি। লিখেছিলাম, কোথায় কোথায় যেন। বহুবার। আমি মরে যাওয়ার পর কাগজপত্তর ঘাঁটতে গেলে ওসব বের হবার কথা। এই পাগলডা—হ্যায় গভীর আন্ধারে ডুইবা গ্যালে বৃষ্টির শব্দ শুনতে পাইতো, আর হালায় ভাবতো হ্যায় সমুদ্দুরে ভাইসা আছে। একডা নৌকায় কইরা ভাসতেসে। হেই নৌকার পাশ দিয়া পড়তেসে গা বৃষ্টি। ইউ আর দ্যাট। আমার বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আর দশটা মানুষের মতই আমি জানি, মানুষ বাঁচে না। তখন আমার ইচ্ছা করে, নিজেরে বৃষ্টির মত, সমুদ্রের ঢেউয়ের মত একখানে

এলোকথন (জ্যেষ্ঠা ২৬:২)

ছবি
“Breathe, breathe in the air Don’t be afraid to care Leave, but don’t leave me Look around, choose your own ground. Home, home again I like to be here when I can.”  কে যেন কবে বলেছিল, আর কবে যেন কোথায় পড়েছিলাম—ঘর হচ্ছে এমন একটা জায়গা—তুমি যখনই সেখানে যাবে—তারা তোমাকে গ্রহণ করে নিবে।  কিন্তু, আমি ভাবি—এই গ্রহণটা কি কেবল একপাক্ষিক? একটা জায়গা তোমাকে গ্রহণ করলো, কিন্তু তুমি তাকে নিতে পারলে না। তাহলে কি সেই জায়গাটাকে ঘর বলা যাবে?  আমার তো মনে হয় না।  আমার কাছে ঘর হচ্ছে এমন একটা জায়গা—যেখানে দিনের যেকোনো সময় তুমি নিশ্বাস নিতে পারবে।  যদি মুহূর্তের জন্যেও দম আটকে আসে—তখনই আমার মনে সন্দেহ দানা বাঁধবে। ওটা কি ঘর?  আর যদি প্রতিনিয়ত দম আটকায়—তখন আমি নিঃসন্দেহ হব। ওটা ঘর না।  আমার কাছে ঘর আর আশ্রয়—এই দুটা প্রায় প্রতিশব্দ। প্রায়ই একটার পরিবর্তে আমি অন্যটা ব্যবহার করতে পারি।  একবার গভীর রাতে আমি শেরেবাংলা হলে ঢুকেছিলাম। প্রথম যেই রাতে আমি হলে থাকি। সে রাতে ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে কেবলই ভাবছিলাম, কোথায় যাই, কোথায় যাই। শেষে হলে গিয়েই ঢুকলাম। কনকের ঘরে একটা বিছানা খাল

এলোকথন (জ্যেষ্ঠা ২৬:১)

ছবি
“There is but one truly serious philosophical problem, and that is suicide. Judging whether life is or is not worth living amounts to answering the fundamental question of philosophy. All the rest—whether or not the world has three dimensions, whether the mind has nine or twelve categories—comes afterwards.” আলবেয়ার কামু তাঁর বিখ্যাত দাঁতভাঙা প্রবন্ধটা শুরু করেছেন এই কথাগুলো দিয়ে। সেই প্রবন্ধ আমি পুরো পড়িনি। কিন্তু, বেঁচে থাকাটা আদৌ অর্থবহ কিনা—এটা আমি প্রায়ই ভাবি। একেকটা সময় আসে—যখন এই একটা চিন্তা আমাকে চিরে ফালাফালা করে দিতে থাকে। আমি টুকরো টুকরো হয়ে ঘরময় ছড়িয়ে পড়ি। টেবিলের তলে, বিছানার ওপরে, বুকশেলফের কোণায়, আমার ঘরের ফ্যানের ঢেউয়ে আমার টুকরো ভাসতে থাকে। আমি মুখ্যু মানুষ। নির্বাণ পেতে এখনো অনেক দেরি। মানুষ কেন বেঁচে থাকে, মরে যাওয়ার আগে তার কী কী করে যাওয়া উচিত—এর কিছুই আমি স্পষ্ট করে বলতে পারবো না। তবে হ্যাঁ, আমি জানি—আমি কীসের আশায় বেঁচে থাকি। আমি যখন ছোট—তখন একজন লিখেছিল—নোবেল ছেলেটা ভালোবাসার কাঙাল। একটু ভালোবাসা পাইলে সে নিজেরে বিক্রি করে দেয়। সেই বয়সে

অর্থহীন গপ্পো (এক্সারসাইজ ২০১৯০৪.০১)

ছবি
যতদিন ইসরাতকে চিনতাম ততদিন কোনো সংশয় আমার মধ্যে কাজ করেনি। কেননা, তার একটা পরিচয় ছিল। সে ছিল ইসরাত। যার কপালে রক্তের ছোপের মত টিপ লেগে থাকে। ইসরাত ছিল পৃথিবীর প্রথম মানুষ—যার চোখের দিকে দেখার আগে আমি টিপের দিকে দেখেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল—সেটাও বুঝি একটা চোখ। সেই চোখের দিকে তাকিয়ে যুগ-যুগান্তরের কথা পড়ে ফেলা যাবে। ভদ্রসমাজ প্রথম দেখাতেই যুগ-যুগান্তরের কথা পড়ে ফেলাকে সমর্থন দেয় না। তাই ভদ্রতাবশত আমি তার পায়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমার কাঁচুমাচু ভঙ্গি দেখে হয়তো রাস্তার পাশের সোনালু গাছটার একটু দয়া হয়—সে একটু এদিক-ওদিক গা-ঝাড়া দিয়ে ইসরাতের পায়ে হলদে ফুলের পাঁপড়ি ফেলে দেয়। তখন আমার মনে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়, কেননা তার পায়ে পড়ে থাকা সোনালুর পাঁপড়িকে আমার আরেকটা চোখ বলে ভ্রম হতে শুরু করে, এবং আমি তার হাতের দিকে দেখি, সেই হাত এমন একটা ভঙ্গিতে মুদ্রা করা ছিল যে, আমার নটরাজের মূর্তিতে দাঁড়িয়ে থাকা শিবের কথা মনে পড়ে যায়, হাতের দিকে তাকিয়ে আমার শিবের উজ্জ্বল চোখের কথা মনে পড়ে, আমি পাগল হয়ে যাই, অমানুষিক এক প্রকার অস্থিরতায় ছটফট করতে করতে আমি প্রথমবারের মত ইসরাতের চোখের দিকে দেখি। ইসরাতের এ

ডগ্গো‌

ছবি
লিনুর মধ্যে এই অপরাধবোধটা কাজ করে—কেননা সারা দুপুর ল্যাব করে বিকালবেলা তার ক্লান্ত লাগে, এবং সে টিএসসিতে যায় চা-বিস্কুট খেতে, তখন হয়তো একটা বাদামি কুকুর এসে ঘুরঘুর করে, বারবার লেজ নাড়ায়, মুখ তুলে লিনুর দিকে দেখে, ফলে লিনুর মনে হয় কুকুরটা হয়তো খাবারের ভাগ চায়, তখন সে প্রথমে হাসে, এরপর প্রশ্রয়ের ভঙ্গিতে বলে, দাঁড়া দিতেসি তোরে বিস্কুট—এবং এর ফলে যেই দুর্ঘটনাটা ঘটে—সেটার জন্য আজীবন লিনু নিজেকেই দায়ী করে, এবং তার মধ্যে এই অপরাধবোধটা কাজ করে যে, এক ক্লান্ত বিকালে সে একটা কুকুরকে বিস্কুট খাওয়ার জন্য দাঁড়াতে বলে। বস্তুত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা কেউই এই ঘটনার সাথে লিনুর সম্পৃক্ততার কথা স্মরণ করতে পারে না—কেননা যারা সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিল কিংবা ছিল না—তারা ঘটনার কার্যকারণের চেয়ে ফলাফল সংক্রান্ত আলোচনাতেই বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে। সেই বিকালে লিনু যখন এক হাতে চায়ের কাপ এবং অন্য হাতে বিস্কুট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তখন বাদামি কুকুরটা এসে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আহ্লাদ প্রকাশ করে, এবং লিনু যখন বলে, দাঁড়া তোরে দিতেসি বিস্কুট—তখন কুকুরটা সামনের দুই পা তুলে আক্ষরিক অর্থেই দাঁড়িয়ে পড়ে। দু-একজন এই বিষয়টা ল

অবশ আকাশ

ছবি
গত রাতে আমার মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা ভর করেছিল। I thought a lot about life and death. খলিল নানাভাইয়ের কথা আমার মনে পড়ে। ফুলবাড়ির গ্রামে ওনাকে শেষবারের মত যখন দেখি—তখন বিকেল প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। উঠানের উল্টো দিকে গোয়ালঘর ছিলো, ঠিক সেই গোয়ালঘরের মাথায় সন্ধ্যা নামতো। প্রথমে এক টুকরো ঘন অন্ধকার দেখা যেতো, এরপর সারা আকাশ ঐ অন্ধকারে ঢাকা পড়তো। বারান্দার কোণায় একটা খাটিয়ার ওপর খলিল নানাভাই বসে থাকতেন। সেই খাটিয়ায় বসে আমরা হিসাব করেছিলাম, কত বয়স হল ওনার। প্রায় আটানব্বই বছর হয়েছিল। একই বারান্দার একই কোণায়, একই খাটিয়ায় বসে বসে উনি আটানব্বই বছরের জীবন দর্শন করছিলেন। ওনার চেহারা আমার মনে পড়ে না। তবু চোখের শূন্যদৃষ্টির কথা মনে পড়ে। দেখছেন, তবু দেখছেন না। অথবা সব দিকেই শুধু আকাশ দেখছেন, তাই বুঝি কেবল দূরে দূরে তাকাতে হয়। Now, there’s a look in your eyes Like blackhole in the sky তোমার চোখে দূরের আকাশ মিশে থাকে রূপক হয়ে, সিড ব্যারেট হয়ে। আমার আকাশ দেখার কথা মনে পড়ে, আকাশ আমাকে পাগল করে দেয়। এইটুকু একটা মানুষ, এইটুকু একটা জায়গায় বসে চারিদিকে কেবল আকাশ দেখে, এইটুকু একটা

আধবুড়ো

ছবি
অরিত্র জেগে উঠলো একশো হাজার বছর পরে।  কোথা থেকে যেন একটা হালকা বাতাস আসছে। বাতাসের ঘ্রাণ নিলেই বলে দেয়া যায়, রাত্তির এতক্ষণে মেঘে ঢেকে গেছে। এই যেন বৃষ্টি নামবে, তবু নামবে না। তবু শহরের মানুষগুলো একটু দৌড়াবে—যদি বৃষ্টি নামে?  অরিত্র ছটফট করে উঠলো। কোথাও যাওয়ার কথা—কিন্তু কোথায়?  পাশের ঘরে কে যেন কাকে ধর্মকথা শুনিয়ে যাচ্ছে। কথাগুলো বোঝা যাচ্ছে না, কেমন যেন ছন্দে ছন্দে ভেসে ভেসে আসছে। কেমন একটা ঘুম ঘুম ছন্দ। ইচ্ছে হয়, আরও একবার ঘুমিয়ে পড়ি। বৃষ্টির নিচে শুয়ে একশো বছরের একটা ঘুম। অন্নপূর্ণা দেবীর নোটের মত বৃষ্টির ফোঁটাগুলো ছুটে আসবে, চার হাতে চার মুদ্রা করে নাচবে। অরিত্র ঘুমের মাঝে তার স্পর্শ শুনবে, অরিত্র স্বপ্নের মাঝে তার শব্দ দেখবে।  তবু, ঘুমানোর তো কথা না, কোথাও যাওয়ার কথা।  কিন্তু কোথায়?  হঠাৎ বিছানায় ফোনটা বেজে উঠতেই অরিত্র একেবারে ধড়মড় করে উঠে বসলো। মা ফোন দিচ্ছে নিশ্চয়ই। ফোন ধরলে নিশ্চয়ই জানতে চাইবে, একশো হাজার বছর একটা মানুষকে কেন ঘুমিয়ে থাকতে হয়?  অরিত্র তো এর উত্তর জানে না। তবু একটা আদিম ভালোবাসার কারণে কথা বলতে ইচ্ছে করছে।  ‘হ্যালো, আম্মু!’ 

আমার খসড়া

ছবি
কিন্তু দিনে দিনে যে একটা জাদুবাস্তবতার পৃথিবীতে ঢুকে পড়ছি—তার কী হবে! পৃথিবীর প্রায় সবাইকে বোধহয় বলে ফেলেছি, তোহফা আমাকে একটা মেইল দিয়েছে। আর পৃথিবীর সবাইকে বলে ফেলেছি, তানভীর ভাইয়ের সাথে একদিন আড্ডা দিয়েছি। হঠাৎ একটা মেইল, অকারণ একটা আড্ডায় কী সুন্দর একেকটা কথা চলে আসে না? জানি, তবু যেন জানতাম না, তবু যেন ভালো লাগে। আমি ভাবছি ব্লগটায় আবার লেখালেখি শুরু করবো। গভীর গল্প লিখে বুকশেলফে ফেলে রাখার মজা আছে বটে, কিন্তু সরল আটপৌরে কথার আনন্দও কি একেবারে কম? “অর্থপূর্ণ আনন্দের পাশাপাশি অর্থহীন আনন্দের সমষ্টিও কি জীবনে গুরুত্বপূর্ণ? মানুষ পরম সত্যের সন্ধান করে পরম আনন্দের জন্য—এই পরম আনন্দ কি কেবল মহৎ শৈল্পিক আনন্দের মধ্যেই থাকে, নাকি অসংখ্য ক্ষুদ্র বাল্য আনন্দের সমন্বিত রূপেও একে পাওয়া যায়?” হয়তো যায়। কিছুদিন আগে আমি, আরিফ আর আমানুল্লাহ আমান টিএসসিতে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এ্যানির প্রসঙ্গ ওঠায় আমানুল্লাহ আমান আকাশ থেকে পড়লো, “এ্যানি আপু সত্যিই exist করেন? আমি তো ভাবতাম উনি একজন fictional character !” আমার ভালো লাগে, নিজেদের এমন উপন্যাসের চরিত্র ভাবতে। আমার ভালো লাগ