পোস্টগুলি

মার্চ, ২০১৭ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

চৈত্রের কাফন

ছবি
[তেরোই মে পর্যন্ত এই লেখাটা ময়মনসিংহ, আরামবাগ এবং জিগাতলার জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল।] একদিক দিয়ে দেখলে অবশ্য, বৃশ্চিকের মৃত্যুটা অবশ্যম্ভাবী ছিল। ওকে শুধু মরতে হত না, ওকে মরতেই হত। লিগ্যাসি তাই বলে। তবু, মরে যাওয়া মানে সবকিছুর শেষ তো, ওটা কষ্ট দেয়। মৃত্যুর শঙ্কাটা প্রথমে আমিই করেছিলাম। এই ধরনের লিগ্যাসি প্রায় প্রফেসির মত। ছাই, স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে কিনা কে জানে, কবে প্রথম কথাটা বলেছিলাম—ঠিক মনে নেই। সেটা শিল্পকলাতেও হতে পারে, বইমেলার সময় মুক্তমঞ্চেও হতে পারে, আবার সাদাসিধে ফোনালাপের সময়েও হতে পারে। তবে বলেছিলাম, ঠিক মনে আছে। ও ছিল আমার মতই। কিছুটা খ্যাপা, একটু আনমনা, কখনো দ্রোহী—এমনই। অনেকগুলো আমরা মিলে যখন একটা সত্তা ছিলাম, সেই সত্তার একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল বৃশ্চিক। আজ থেকে প্রায় দুইশো বছর আগে, যে সময়টায় আমি জন্ম নেই, তখন মৃত্যুতে তেমন একটা বিশ্বাস করতাম না। অন্তত বৃশ্চিকের মত উজ্জ্বল মণ্ডলীর ক্ষেত্রে তো কখনই না। মনেপ্রাণে বিশ্বাস হত, ওটা অনন্তকাল ধরে জ্বলবে! তবে…একটা খটকা ছিল বটে। লিগ্যাসি কি তবে টিকবে না? না টেকার মতও তো কিছু ঘটেনি! প্রফেসি ভেঙে ফেলার

অথৈ সমুদ্র

ছবি
এক. আঠারোই মার্চ নিয়ে যে লিখতে পারে—সে হয় দুঃসাহসী, নাহয় গাধা। নিঃসন্দেহে আমি দ্বিতীয় দলে। মেয়েটাকে আমি প্রথম দেখি বছর দুয়েক আগে। জগদীশ বসু ক্যাম্পে। তেমন কোন বিশেষভাবে না, যে মুহূর্তে সবাই প্রথমবারের মত তাকে খেয়াল করল, আমিও করলাম। (মুদ্দাসসেরকে কি এজন্য একটা সাধুবাদ জানানো উচিত? উচিত বোধহয়।) পনেরোর সেই সেপ্টেম্বরে আমি সমুদ্রের অনেক, অনেক উপর দিয়ে ঘুরে বেড়াতাম, সমুদ্রের গভীরে যে কিছু আছে—এই নিয়ে আমার ধারণা ছিল না। কাজেই আমার বিশ্বাস, মেয়েটার সাথে যদি প্রথমবার পরিচয় না হত, কখনই দ্বিতীয় পরিচয়টা হত না। এবং অবশ্যই তৃতীয়, চতুর্থ এবং অসংখ্যবারের মত পরিচয় হত না, অবশ্যই না। অনেক ওপর দিয়ে যারা উড়ে বেড়ায়, তাদের পক্ষে সমুদ্রের গভীরে থাকা মানুষগুলোর সাথে যোগাযোগ করা কঠিন। কাজেই মেয়েটার সাথে আমার কখনই কথা হয়নি। কেবল ক্যাম্পের শেষদিন, সেই ঘোরলাগা সকালে চলে আসার আগে বলে এসেছিলাম, ভালো থাকিস। এমনিই বলেছিলাম, সাদাসিধে ভদ্রতা যেটাকে বলে। সমস্যাটা শুরু হল… আগস্টে? সম্ভবত। পুরো একটা বছর পার করে, আগস্টের এক সকালে আমরা ক’জন একটা স্কুলের গেট পার করে ভেতরে ঢুকলাম, আর গেটের ঠিক সা

না পিচ্চি - না বুড়ো

ছবি
জগদীশ বসু একটা গল্পের ফ্যাক্টরি। প্রতিবছর একগাদা গল্পের জন্ম হয় এই ক্যাম্পে, আর জন্ম হয় কয়েকজন মানুষের। গত জগদীশ ক্যাম্পে যাদের জন্ম হয়েছে তাদের একজন আজরা। মেয়েদের বয়স জিজ্ঞেস করতে নেই, তাই পৃথিবীর সাতশো কোটি মানুষের কেউ বলতে পারে না আজরার বয়স কত। তবে মেয়েটার সাথে পাঁচ মিনিট কাটালেই যে কেউ বলে ফেলতে পারবে, আজরার বয়স কমবেশি একশো বছর, কিংবা তারও বেশি। ক্যাম্পের এমন কোন বুড়ো নেই যে আজরার কাছে বকা খায়নি। বকা খাওয়ার কারণগুলোও বড় গুরুতর। শাফিন ভাই বকা খেয়েছে, কারণ সে জলের গান শোনে না। আমি খেয়েছি, কারণ মেকানিক্সের লেকচারটা কঠিন হয়ে গেছে। ইবরাহিম ভাই খেয়েছে, কারণ সে আজরার খাতা লুকিয়ে রেখেছিল। আমার এই বুড়ো বোনটা অবশ্য পড়ে ক্লাস সেভেনে। গার্লস ক্যাম্পের শেষদিনের লেকচারগুলো যখন আধ্যাত্মিক পর্যায়ে চলে যেতে শুরু করল, তখন বুড়োটা হতাশ হয়ে ক্লাসের পেছনের বেঞ্চে বসে পড়ল। আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম, জগদীশ বসুর কল্যাণেই কিনা কে জানে, স্পষ্ট বুঝতে পারলাম কী ভাবছে পিচ্চিটা। তার পাশে বসে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম, ক্লাস কি কিছুই বুঝতেসিশ না? পিচ্চিটা বিশাল চশমার ভেতর দিয়ে বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,

মিত্রশ্রীর তৃতীয় দিন

ছবি
আমার যে রাতে হার্ট ভেঙে গিয়েছিল তার পরেরদিন আমি সারাদিন ছবি এঁকেছিলাম। তার পরেরদিনও আমি সারাদিন ছবি এঁকেছিলাম। এবং তার পরেরদিনও আমি সারাদিন শুধু ছবিই এঁকেছিলাম। ভালো লাগছিল আঁকতে। স্কুলে যেতাম বটে, ক্লাস করতাম না। কী হবে ক্লাস করে? আমাদের স্কুলে খুব চমৎকার একটা জায়গা আছে। যেই ভবনে আমাদের ক্লাস হয়—সেটার ছাদ। ছাদের দরজা সবসময় বন্ধ থাকে তো, এখানে কেউ আসে না। আমরা কয়েক বন্ধু মিলে একদিন আবিষ্কার করলাম, দরজার একটা পাল্লা ভাঙা! সেটা সরিয়ে ছাদে উঠে আবার দরজাটা জায়গামত লাগিয়ে দেই, কাজেই বাইরে থেকে বোঝা যায় না ছাদে কেউ আছে। ছাদের ওপর উঠলে বিশাল একটা মাঠ দেখা যায়। আমাদের স্কুলের মাঠ। সবাই যখন ক্লাস করত, সেই ছাদটাতে উঠে আমি বসে থাকতাম। একাই। ফাঁকা মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকতেও ভালো লাগত। ছাদের দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে আমি একশোরকম চিন্তা করতাম। আর কী অদ্ভুত, আমি টানা তিনদিন ক্লাস না করে ছাদে বসে থাকলাম, আর সেই তিনদিন টানা বৃষ্টি হল। একটানা না অবশ্য, থেমে থেমে। যখন বৃষ্টি থামত, আমি ছাদের ঠিক মাঝখানটায় বসে ছবি আঁকা শুরু করতাম। আকাশ অবশ্য গুমগুম করে হুমকি দিত, যেকোনো মুহূর্তে বৃ