পোস্টগুলি

সেপ্টেম্বর, ২০১৮ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

সন্ধ্যাপ্রদীপ

ছবি
সেঁজুতি কোথায়, কে জানে। আমি জানি না।  মেয়েটা কেমন আছে, সেটাই বা কে জানে! আমি জানি না।  শেষ কবে বেচারার সাথে ঠিকমত কথা বলেছি মনে পড়ে না। তবে প্রথম যেদিন বলেছিলাম, বেশ মনে আছে সেই কথা। অত্যন্ত বিরক্ত হয়েছিলাম বাচ্চাটার ওপর। মনে হচ্ছিল, এমন নেকু নেকু বাচ্চাদের সাথে কাজ করা বড় মুশকিল। পরে জেনেছি, এই বিরক্তিটা ছিল দ্বিপাক্ষিক। সেঁজুতিও ভেবেছিল, এইসব আঁতেল-টাইপ ভাইদের সাথে কাজ করবো কীভাবে!  অনেক পরে, আমাদের যখন এই বিষয়টা নিয়ে কথা হয়, তদ্দিনে আমরা একটু করে বুড়ো হয়েছি, বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহে ঋদ্ধও হয়েছি, এবং আমরা গেছি অলৌকিক কিছু প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে, ফলে দ্বিপাক্ষিক বিরক্তির কথা শুনে আমি হেসে ফেলি, এবং সেঁজুতি হাসে তার ত্রিগুণ, হেসে কুটিকুটি হওয়ার আগ পর্যন্ত সে থামতে চায় না!  আমার মনে পড়ে না, যেই মেয়েটার ওপর আমি অত্যন্ত বিরক্ত ছিলাম, সে কীভাবে অত দ্রুত আমার ডান হাত হয়ে উঠেছিল। হিসেব কষে এসব বের করা যায় না, আমি বারবার বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু এই বিভ্রান্তির মাঝেও আমার বারবার মনে পড়ে সেইদিনের কথা, যে রাতে সেঁজুতি প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হয়ে একটা ঘোরের জগতে চলে যায়। আমি তাকে মেইল দি

নন হোমোজিনিটি ও আমাদের শহীদুল জহির

ছবি
কিছুদিন আগে নন-হোমোজিনিটি নামটা প্রস্তাব করতে গিয়ে লিখসিলাম, এ পর্যন্ত যত বইপত্র পড়সি সবই হোমোজিনিয়াস ধরনের। এবং আশ্চর্য এই যে, এই কথাটুকু লেখার পরদিনই আবিষ্কার করলাম আমি আসলে নন-হোমোজিনিয়াস লেখা পড়সি, এবং সেটা খোদ শহীদুল জহিরের উপন্যাসে!  শহীদুল মানুষটা মারা গেসেন অনেকটা অসময়েই, এবং লিখসেন সেই তুলনায় আরও সামান্য। বেঁচে থাকতে মোটে তিনটা উপন্যাস প্রকাশ করসিলেন, চতুর্থটা বের হয় উনি মারা যাবার পর।  আমি দেখার চেষ্টা করসি তার এই চার উপন্যাসে নন-হোমোজিনিটি কীভাবে ধীরে ধীরে প্রবেশ করসে, কিংবা আদৌ করসে কিনা।  ১. জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা (১৯৮৮)  এটা শহীদুলের লেখা প্রথম উপন্যাস। শাহাদুজ্জামান একবার জিজ্ঞেস করসিলেন তাকে, এত সুন্দর একটা উপন্যাসের এমন কাট্টাখোট্টা নাম কেন। শহীদুল এমন একটা উত্তর দিসিলেন—উপন্যাসটা যখন লেখা হয়, তখন দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি অত্যন্ত বিষণ্ন ও হতাশ ছিলেন, কাজেই উপন্যাসের নাম নিয়ে কাব্য করার মানসিকতা ছিল না।  এটা কেবল প্রথম উপন্যাসই না, এটা প্রথম কোনো লেখা—যেখানে আমরা শহীদুলকে শহীদুল হয়ে উঠতে দেখি। এর আগে লেখা গল্পগুলো সুন্দর ছিল, কিন্তু শহীদু

বাংলা গদ্যসাহিত্যে নন-হোমোজিনিটি

ছবি
হোমোজিনিয়াস কী  “নোবেল, দয়া করে ওদের হাত-পা ধরে একটা জিনিসই বলবি, লেখাগুলো যেন হোমোজিনিয়াস হয়!”  ইবরাহিম ভাই এই কথাটা বলসিল, বেশ অনেকদিন আগে। যেহেতু হোমোজিনিয়াস লেখার জন্য সে হাত-পা পর্যন্ত ধরতে বলসে—কাজেই বোঝা যাচ্ছে জিনিসটা একটু গুরুত্বপূর্ণই হবে।  হোমোজিনিয়াস শব্দটা অনেক অর্থই বোঝাতে পারে। তবে সহজ করে বললে বলা যায়, লেখার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একইরকম হলে সেই লেখাটা হল হোমোজিনিয়াস লেখা।  একইরকম মানে কী!  এটার অর্থ বেশ ব্যাপক। যেমন,  আমি এই লেখায় করসি, গেসি, খাইসি -র মত শব্দ ব্যবহার করতেসি, অর্থাৎ আমি লিখতেসি কথ্যভাষায়। শেষ পর্যন্ত যদি আমি কথ্যভাষাতেই লিখতে থাকি—তাহলে এই লেখার শুরু থেকে শেষ একইরকম , অর্থাৎ হোমোজিনিয়াস।  আরেকটা উদাহরণ দেই—  ইংরেজি S-এর মত উচ্চারণ বোঝাতে আমরা ছ এবং স —দুটোই লিখি। আকিব লেখে ছ , আমার পছন্দ স । ফলে ওর আর আমার সংলাপগুলো হয় এমন— আকিব: ভাই আমার কাজ শেষ হইছে, ক্যাম্পাসে আসতেছি। কী করতেছেন? আমি: কিছু করতেসি না, একটু আগে পরীক্ষায় বাঁশ খাইসি। চলে আয়। আমি যেহেতু এই লেখায় আমার পছন্দমত করসি, গেসি, খাইসি বানানে লেখা শুরু করসি

আমাদের Die Verwandlung-এর ইতিহাস

ছবি
পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের লোকেরা সেই ভোরের কথা স্মরণ করে, যেদিন সকালে প্রথম রিকশার ক্রিরিং ক্রিরিং বেল শুনবার আগেই তারা কুত্তার ডাক শুনতে পায়, এবং পৃথিবীর সকল কুত্তার পূর্ববর্তী প্রজন্মের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করে তারা আবারও পাশ ফিরে শোয় এবং ঘুমিয়ে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে ভোরবেলা কুত্তার এই ডাক এবং এর বিপরীতে নাজিমউদ্দিন রোডের লোকের প্রতিক্রিয়া যথাক্রমে নাজিমউদ্দিন রোডের লোক এবং কুত্তার কাছে স্বাভাবিকতম ঘটনা বলে মনে হয়, ফলে রাস্তা বরাবর কার্জন হলের দিকে কুত্তা দৌড়াতে থাকে, লেজ গুটিয়ে, জিহ্বা বের করে হাঁপাতে হাঁপাতে শহীদুল্লাহ হলের গেটে এসে খানিকক্ষণ বিভ্রান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, পা দিয়ে কান চুলকায়, এবং পরমুহূর্তেই ভেতরে ঢুকে পড়ে, পুকুরঘাটে যেতে যেতে তার গতি ধীর হয়ে আসে, কেননা এই সময়ে তার গত রাতের কথা মনে পড়ে, এবং ভোরবেলা উঠে আরিফুজ্জামান আরিফ নিজেকে বাদামি রঙের কুত্তা হিসেবে আবিষ্কার করে।  সেই সকালে যারা শহীদুল্লাহ হলের পুকুরঘাটে আরিফুজ্জামানকে বসে লেজ নাড়াতে দেখে তারা বিষয়টাকে গুরুত্ব না দিয়ে এড়িয়ে যায়, এবং পরবর্তীতে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা বলে, এমনটা যে ঘটবে তারা আগ