পোস্টগুলি

জুন, ২০১৭ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

আগুনের পরশমণি

ছবি
আমার ধারণা, পৃথিবীর প্রতিটা মহৎ কাজের জন্ম হয় গভীর দুঃখ থেকে। বছরদুয়েক আগে এই শহরটা ভুতুড়ে একটা সময় পার করছিল। রাজনীতির সবচেয়ে অন্ধকার অংশটুকু সেই সময় প্রথমবারের মত আমাকে সামনাসামনি দেখতে হয়েছে। মাত্রই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি তখন। ক্লাস শুরু হয়নি, কাজেই হাতে কাজকর্ম নেই। প্রচুর গান শুনতাম। আর দিনরাত ছবি আঁকতাম। প্রায় প্রতিদিনই মেসালদের সাথে আড্ডা দিতাম। আর প্রায় প্রতিদিনই এই শহরের মানুষেরা পুড়ে মরত। মানুষ বড় সস্তা ছিল তখন, চাইলেই একসাথে দু-দশজনকে পুড়িয়ে মারা যেত। আমার বয়সী একটা ছেলে একদিন তার বাবার ট্রাকে বসে ছিল। ঘুমাচ্ছিল। সেই বাসে আগুন দেয়া হল, ছেলেটার পঁচানব্বই ভাগ পুড়ে শেষ। সেই অবস্থায় সে দুদিন বাঁচলোও। কী কষ্ট! পোড়ার যে কষ্ট—সেটা যার কখনো হয়নি তার জন্য বোঝা কঠিন। (এই প্রসঙ্গে আরেকটা কথা বলে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে। এই ব্যাপারটা কিছুটা লিখেছিলেন নোবেলজয়ী স্ভেতলানা আলেক্সিয়েভিচ, তাঁর ভয়েসেস ফ্রম চেরনোবিল বইটাতে। চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর আশেপাশের অনেক লোক রেডিয়েশনে পুড়ে গিয়েছিল, মানুষগুলো কীভাবে হাসপাতালে ধীরে ধীরে মরে গেল—সেই ভয়ংকর কষ্টের বর্ণনা বইটাতে আছে। আমি যখন দিনাজপুরের স

Eleanor Rigby

ছবি
আজকের রাতটা তাৎপর্যপূর্ণ একটা রাত। শেষ রাতের বৃষ্টিতে আমার শহরটা ভেসে যাচ্ছে। অথচ গতকাল ঠিক এই সময়ে বৃষ্টির কণামাত্রও ছিল না। আকাশজুড়ে খুব হালকা একটা আলো ছিল। কৃষ্ণা পঞ্চমীর চাঁদ কি অতক্ষণ থাকে? জানি না, কিন্তু একটা যে আলো ছিল—সেটা তো মিথ্যে না, আর সেই আলোয় আলাদা করে মেঘগুলো দেখা যাচ্ছিল। এত পবিত্র একটা দৃশ্য! গতকাল রাতে ঘুমোতে গিয়েছিলাম একটা মুগ্ধতা নিয়ে। কারণ কিছুক্ষণ আগে আমি একজন অসাধারণ মানুষকে আবিষ্কার করেছি। এমনিই নেটে ঘোরাঘুরি করছিলাম, হঠাৎ করেই আমার মনে হল, সে অদ্ভুত ভালো একজন মানুষ। চেনাজানা মানুষের ভেতর থেকে যখন অসাধারণ একজন বের হয়ে আসে—এর চেয়ে অদ্ভুত সুন্দর ব্যাপার আর কী হতে পারে? নাকি আমাদের ম্যাথ অলিম্পিয়াড করা ছেলেমেয়েগুলো—ওরা কি এমনিতেই এত চমৎকার একেকজন মানুষ হয়? কে জানে! কিন্তু আজকের রাতটা গতকালকেও ছাড়িয়ে যাবে দেখছি। শুরু হয়েছিল খুবই সাধারণভাবে। কাজ করছিলাম, এমন সময় তটিনী ফোন দিল। মানুষজনের যে বকা খাওয়ার এত আগ্রহ থাকতে পারে—সেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। টাকা খরচ করে কেন মেয়েটা বকা খায়, কে জানে। কিন্তু কোন কোন দিন একটু অন্যরকম হতে বাধ্য। আম

ফারহার সন্ধ্যা

ছবি
৬ জুন, ২০২৩ আজকের সন্ধ্যেটা কি একটু বেশি নীল ছিল? হয়তোবা। সারাদিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টি হওয়ার পর সন্ধ্যেটা একটু বেশি সুন্দর দেখাবে—এটা অস্বাভাবিক কিছু না। শেষবিকেলে নিজের ঘরে ঢুকে নিজেই মুগ্ধ হলাম। খোলা জানালা দিয়ে নীল আলো আসছে, সারা ঘর ভেসে যাচ্ছে সেই আলোয়। ধবধবে বিছানার চাদর বাতাসে উড়ছে—এত সুন্দর একটা দৃশ্য! অবশ্য মন খারাপ হতেও খুব বেশি সময় লাগলো না। এমন সুন্দর একটা সন্ধ্যা, অথচ ভাইয়া দেখবে না। ভাইয়া যেদিন মারা যায়, সেই সন্ধ্যেটা আরও গাঢ় নীল ছিল। ময়মনসিংহ শহরটা ভেসে যাচ্ছিল বৃষ্টিতে। আর আমি চুপ করে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। মাথা ঝিমঝিম করছিল, বেশ বুঝতে পারছিলাম জ্বর আসছে। তবু জানালা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছিল না। আমি তখন ক্লাস টেনে। আর ভাইয়া পড়ত বুয়েটে থার্ড ইয়ারে। ভার্সিটিতে ওঠার পর প্রথম যেদিন ময়মনসিংহ ছেড়ে যায় ভাইয়া, আমাকে হাসতে হাসতে বলেছিল, ‘এই যে যাচ্ছি, বছর শেষ হওয়ার আগে আর আসবো না।’ তাই শুনে আমার সে কী কান্না! ভাইয়া বরাবরের মতই আমাকে পাত্তা না দিয়ে বের হয়ে গেল। আমি রাগ করে সেদিন ভাত খেলাম না। রাতে সে ফোন দিলো, আমি কথাও বললাম না। ওমা, সপ্তাহখানেক পরেই এক দ

আশ্রয়

এটা খুবই আশ্চর্য, কেন কেবলমাত্র মেলানকোলিয়ায় ডুবে গেলেই ছবি আঁকতে ইচ্ছে করে। পৃথিবীর মানুষগুলো রুদ্ধশ্বাসে দৌঁড়াচ্ছে, এই সময়ে ফ্লয়েডেড অবস্থায় আরেকটা ছবি আঁকতে বসার অর্থ—সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখানো। যে বুড়ো আঙুল দেখায়, সে বোকা। আর বোকারা সবসময়ই একা। রবির ভাষায়, সবার মাঝে আমি ফিরি একেলা। গিলমোরের ভাষায়, আর্থ বাউন্ড মিসফিট। ঠিক এই মুহূর্তে এসে মানুষ কিছু একটা করে ফেলে। কেউ সিদ্ধার্থের মত গৃহত্যাগী হয়। কেউ জন লেননের মত অবিশ্বাস্য একটা গানের দল বানিয়ে ফেলে। কেউ জীবনের প্রথমবারের মত একটা ছবি আঁকতে পারে। শেষ পর্যন্ত সবাই জীবনের অর্থটুকু খোঁজে। সিদ্ধার্থ খুঁজেছিলেন সন্ন্যাসের মধ্য দিয়ে। জন লেনন খুঁজেছিলেন তাঁর লেখা অসাধারণ গানগুলোর মধ্য দিয়ে। কে জানে, হয়তো এর ভেতর দিয়েই চূড়ান্ত পরিত্রাণ আসে, তাই মানুষ অর্থটুকু খুঁজে বেড়ায়। আর খুঁজে বেড়ায় আশ্রয়। দিনশেষে প্রতিটা মানুষই আশ্রয় খোঁজে। সাদাসিধে একজন মানুষ। দিনশেষে দুটো কথা। কেবল অকাজের কথা। এই কথায় শাহবাগের মিছিলের প্রসঙ্গ আসবে না। এই কথায় ইলেকট্রন-প্রোটনের গুরুতর রহস্য যাচাই করা হবে না। চুলোয় যাক ভয়েজার স্পেসশিপ, আকাশে দুবার উল্ট

ক্ষুদ্র পুরাতন প্রশ্ন

ছবি
জর্জ হ্যারিসনের একটা গান ছিল, হোয়াট আই ফিল, আই ক্যান্ট সেই। (জর্জ ছেলেটা না, বেড়ে গাইতো। একদিন ওকে নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে।) আজকাল এই অনুভূতিটা প্রায়শই হচ্ছে আমার। হোয়াট আই ফিল, আই ক্যান্ট সেই। এই মাস দেড়েক আগেও, এক রাতে আকিব ছেলেটা বিশাল বিশাল মেসেজ দিচ্ছিল। সে কী ভাষা, একেকটা মেসেজের মধ্যে নেলসন ম্যান্ডেলা থেকে শুরু করে বাংলাদেশে ইতিহাসে সমাজতন্ত্রের ভূমিকা পর্যন্ত সবকিছুই লিখে ফেলছে। আমি পড়ে শেষ করতে পারি না, একটা শেষ করার আগেই আরেকটা বিশাল মেসেজ চলে আসে। (আজকাল ছেলেটা বুর্জোয়াদের স্বর্গভূমির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লিস্টেড হয়েছে দেখে বিপ্লবের স্বর্ণক্ষেত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘোরাফেরা করা মানুষদের পাত্তা দেয় না। তাতে খুব সমস্যা হয় না অবশ্য, কারণ আরামবাগ কিংবা ময়মনসিংহ হয়ে তার খবর আমার কাছে আসে।) যাকগে, সে রাতে আকিবের দুঃখভরা কথাগুলো শুনে আমার আবারও একই অনুভূতি হচ্ছিল। জীবনের অর্থ কী? আমাদের কাজগুলো শেষপর্যন্ত কোথায় পূর্ণতা পাচ্ছে? কিংবা, আদৌ কি পাচ্ছে? প্রশ্নগুলো কি আরজ আলী সাহেবের মত হয়ে যাচ্ছে? হা হা! হয়তোবা। কিন্তু শেষপর্যন্ত এই প্রশ্নগুলোই আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি

অবোধ

ছবি
এক. আমাদের পাশের বাসায় গতকাল একজন মারা গেছেন। দীর্ঘ উনিশ বছর ধরে একই এলাকায় আছি তো, অনেকগুলো জন্ম-মৃত্যু দেখতে হয়েছে আমাকে। আমার কেন যেন একটাও বিশ্বাস হয় না। এই ধরো, আপুর ঘর থেকে কোণাকুণি যে বাসাটা দেখা যায়—সেখানে একটা ছেলে থাকতো। সিক্স-সেভেনে পড়ে হয়তোবা। সারাদিন দৌঁড়াতো। আর ওর ছোট বোনটার সাথে দুষ্টুমি করতো। ওদের খিলখিল হাসি আমাদের বাসা থেকেও শোনা যেত। মন খারাপ থাকলে প্রায়ই আপুর ঘরের জানালা দিয়ে আকাশ দেখতাম, তখন ওদের দিকেও চোখ পড়ত। (উল্লেখ্য, আমার জানালা দিয়ে একটুখানি আকাশ দেখা যায়। আপুর জানালা দিয়ে দেখা যায় অনেকখানি। ছোটবেলায় আপুর ঘরের প্রতি আমার আলাদা একটা ভালোবাসা ছিল। সেটা জানালার জন্যও হতে পারে, আপুর আদরের জন্যও হতে পারে—কে জানে।) একদিন পাশের বাসার সেই ছেলেটা মারা গেল। হঠাৎ একিউট লিউকেমিয়া ধরা পড়ল, ঠিকঠাক চিকিৎসা শুরু করার আগেই সব শেষ। ব্যাপারটা আমি জানলাম কলেজে যাওয়ার সময়। সকালবেলা বাসা থেকে বের হয়েছি, এমন সময় হাউজিং-এর মাইকে ঘোষণা করা হল, ছেলেটা মারা গেছে। ওর ছোট বোনটা প্রায়ই বারান্দার জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকতো। চুপ করে। সেও দেখত দেখতে বড় হয়ে গেল। ছেলেটার বয়