পোস্টগুলি

ডিসেম্বর, ২০১৬ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

আদ্যিকালের বদ্যি বুড়ো

ছবি
আমি বুড়ো। আদ্যিকালের বদ্যি বুড়ো। এই কথাটা অবশ্য আমি প্রায়ই বলি। মজা করেই মানুষজনকে বলি, আমি কিন্তু বুড়ো হয়ে গেছি। তার বেশ কিছু লক্ষণও দেখা যাচ্ছে বটে। আজকাল বুড়োদের সাথে বড় বকবক করি। আগে যখন দেখা হত, নদীর সাথে দুষ্টুমি করতাম, চাচী বসে বসে হাসতো। আর এখন চাচীর সাথে তুমুল আড্ডা দেই, নদী বেচারা হতাশ চোখে তাকিয়ে থাকে। কী আর করা, আমি আদ্যিকালে ফিরে যাচ্ছি। ফেসবুক একাউন্ট বন্ধ করে ফেলাটা বড় কাজে দিয়েছে। কয়েকশো মানুষের খোঁজ রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না, ওটা মহামানবেরা পারেন। আমি নিতান্তই সাদাসিধে একটা মানুষ। আমি যেটা পারি সেটা হল, আমার আশেপাশের মানুষগুলোর খোঁজ রাখা। এই তো, অনিমেষ স্যার কেমন আছে সেটা একটু দেখা। তামান্নার সাথে একটা আইসক্রিম খাওয়া। আবির ভাইয়ের মাথার পোকাগুলো আবারও নড়েচড়ে বসলো কিনা, একটু খেয়াল রাখা। তটিনী পিচ্চিটাকে একটু বকা দেয়া, পড়াশোনার জন্য। পাশের বাসায় গিয়ে অলিন্দর সাথে গম্ভীর ফিজিক্সের তত্ত্ব আলোচনা করা। আর.... হুম, আর একটু মন খারাপ করা। বেশি না, অল্প কয়েকজনের কথা ভেবেই। যাকগে, একটু আগে এক পিচ্চির সাথে কথা বলছিলাম। আমাদের পিচ্চিগুলো

পেত্নী

ছবি
১০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ঢাকা, বাংলাদেশ। প্রিয় নিঝুম, থাপ্পড় দেয়া দরকার তোকে। চিঠিটা আরেকটু নরমভাবে শুরু করা যেত, স্বীকার করছি। সত্যি বলতে কী, প্রথমে ভেবেছিলাম তোকে কিছুই বলব না জন্মদিনে। রাত সাড়ে এগারোটায় এসে মনে হল, নাহ, কিছু বলে ফেলা যায়। মানুষ হয়ে জন্ম নেয়ার এটা একটা অসুবিধা। তুই নিজেও নিশ্চিতভাবে বলতে পারবি না তুই কী চাস। আচ্ছা, তুই কী চাস? মাসকয়েক আগে একটা কথা বলেছিলি। খুব সম্ভবত আর্ট সামিটের সময়। তুই নাকি সলিচিউডের ভেতরে পরম শান্তি খুঁজে পেয়েছিস, এবং শাফিন ভাই নাকি এই নিয়ে যথেষ্ট মনটন খারাপ করছে। কথাটা যদি সত্যি হয়, শাফিন ভাইকে ঠিক দোষ দিতে পারবো না। আবার তোকেও দোষ দিতে পারবো না। তুই যেমন টুইস্ট করে সলিচিউডে গেছিস, আমি ঠিক তেমনই টুইস্ট করে সলিচিউড থেকে বের হয়ে এসেছি। এটাকে তুই কী নামে ডাকিস? আমি এটাকে জন্ম বলি। আমার অসংখ্যবার জন্ম হয়েছে। জন্মের প্রক্রিয়াটা কখনই খুব একটা আনন্দদায়ক কোনো ব্যাপার না। অসম্ভব কষ্টের ভেতর দিয়ে একেকটা জন্ম হয় এই পৃথিবীতে—সেটা যে ধরনের জন্মের কথাই বলিস না কেন। কাজেই আমার প্রতিটা জন্মই হয়েছে একেকটা ধাক্কার মধ্য দিয়ে। সেই ধাক্কায় চারপাশের

আমাদের নক্ষত্রগুলো

ছবি
এক. বছরের এই সময়টা আমাদের বড় ভালো কাটে। ‘আমাদের’ বলতে, আমরা যারা পাগল সমিতিতে কাজ করি—তাদের। অফিসিয়ালি আমাদের নাম অবশ্য পাগল সমিতি না। একটা গালভরা নামও আছে, কিন্তু আমরা নিজেদের পাগল ডাকতেই ভালোবাসি। এই পাগল অবশ্য রবীন্দ্রনাথের ‘পাগল’। যে দশের বাইরে থাকে, এবং একসময় ফিরে এসে দশকে এগারো বানিয়ে দেয়। আইজেএসও-র গল্পটা তাহলে এইবেলা বলে ফেলা যাক! দুই. গত বছর (২০১৫ সালে) আমরা যখন আইজেএসও-তে দল পাঠানো শুরু করি—খুবই যে বড় আশা নিয়ে ছিলাম—এমন কিন্তু না! ভেবেছিলাম, ম্যাথ অলিম্পিয়াডে একটা ব্রোঞ্জ পেতে অনেক বছর লেগেছে, ফিজিক্স অলিম্পিয়াডেও, কাজেই জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডেও একটু সময় লাগবে—এ আর এমন আশ্চর্য কী? তবু, আমাদের মানুষগুলোর তো মাথায় সমস্যা। কাজেই তারা আইজেএসও দলটার পেছনে লেগে থাকলো। মনে করল, আজকে লেগে থাকলে হয়তো একদিন কিছু একটা হবে! তো, এই আশায় পাগলগুলো চাঁদে পাওয়া মানুষের মতই খাটাখাটনি করা শুরু করল। কেউ টিউশনি বাদ দিয়ে দিল। কেউ শখের কাজগুলো করা ছেড়ে দিল। সকালবেলা পাগলগুলো ভার্সিটিতে যেত ক্লাস করতে। সারাদিন ক্লাস করে, ক্লান্ত হয়ে দৌঁড়ে যেত আইজেএসও ক্যাম্পে। ক্লাস

এলোকথন (মৃগশিরা ১)

ছবি
গতকাল শিল্পকলায় যেই প্রদর্শনীতে গিয়েছিলাম, তার নামটা বেশ গালভরা। দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ। পুরো প্রদর্শনীটা তিন তলা জুড়েই হচ্ছে—কাজেই বিশাল বড়! এবং এই তিন তলা ঘুরে মাত্র তিনটে জিনিস মনে ধরল, তবে সেটা পরের কথা। গতকালের সবচেয়ে চমৎকার অংশটা ছিল অন্য জায়গায়। ধরে নিই, আমার সাথে যে গিয়েছিল তার নাম বৃশ্চিক। কিংবা কৃত্তিকা। অনেক্ষণ ঘোরাঘুরি করে ক্লান্ত ছিলাম, আমরা দুজনেই। ভাবলাম, গতবারের মত শিল্পকলার ছাদ থেকে ঘুরে আসি। চতুর্থ তলায় উঠে অবশ্য হতাশ হলাম, ছাদের দরজা বন্ধ। নিচে চলে যাবো—ঠিক তখনই খেয়াল করলাম, ছাদের উপরে আরেকটা ছাদ আছে, এবং একটা ভাঙা সিঁড়ি বেয়ে সেই ছাদে ওঠা যায়! ভাগ্যিস খেয়াল করেছিলাম। ফাঁকা একটা ছাদ। এবং ছাদটা আকাশের কাছাকাছি। পাঁচতলার একটা ছাদকে আকাশের কাছাকাছি মনে হওয়ার কথা না। শিল্পকলার ব্যাপারটা অবশ্য আলাদা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওদিকে যেহেতু খুব বেশি বাড়িঘর নেই, শিল্পকলার সেই ছাদই আকাশের কাছাকাছি। আমরা যখন ছাদে পা রাখলাম, কালপুরুষ মাত্র আকাশে উঠেছে। কিছুক্ষণ নক্ষত্র দেখে, এলোমেলো কথাবার্তা বলে ফেরার কথা ভাবছি। ঠিক সেই মুহূর্তে বৃশ্

তামান্নার কাছে চিঠি

ছবি
৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ ঢাকা, বাংলাদেশ। ঐ, ​​বুঝছিস, আমার না, লিখতে অনেক ভালো লাগে। প্রতিটা দিন বসে বসে লিখতে ইচ্ছে করে। আর বই পড়তে ইচ্ছে করে। অবশ্য, লেখাকে পেশা হিসেবে নেয়ার ইচ্ছে কোনোকালেই ছিল না, এখনও নেই। তবু, যদি লিখতে পারতাম, মনে হয় ভালো হত। মানে, আমার ভালো লাগত আরকি।​ এবং আমার কাছে এখন মনে হয়, আমি কিছু ভুল করেছি। সবকিছু বাদ দিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে। সবকিছু বাদ দিয়েছিলাম। বন্ধু, প্রেম, জীবন, অভিজ্ঞতা—সবকিছুই। পড়াশোনাটা ছিল প্রথম প্রায়োরিটি। তোদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, আমার মত একজন মানুষের বন্ধু থাকার কথা ছিল না। তবু, তোরা ছিলি। এসএসসির পরের সময়টা, পুরো কলেজ জীবনটাই তোরা আমাকে সাপোর্ট দিয়েছিলি। অদ্ভুত একটা সময় ছিল সেটা। মনে আছে, সারাক্ষণ তোদের সাথে কথা বলতাম? দিনের একবেলা কেউ কথা না বললেই রীতিমত ঝগড়া হয়ে যেত! যেকোন দুজনের মাঝে ঝগড়া হলে তখন অন্য দুজনকে এগিয়ে আসতে হত সেই ঝগড়া থামানোর জন্য। একটা ঘটনা খুব মনে পড়ে। আমি দাদুবাড়ি যাচ্ছিলাম। আমার তো সবসময়ই মরবিড চিন্তাভাবনা। নানু মারা যাওয়ার পর থেকে সেটা আরও বেড়ে গিয়েছিল (অথবা শুরু হয়েছিল)। প্রতিবার দাদুবাড়ি যাওয়ার আগে ত