পোস্টগুলি

2017 থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

এলোকথন (মৃগশিরা ২৪:১)

ছবি
শীতটুকু নামেমাত্র হলেও, এইসব শীতের রাতে আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে। আমি ঠিক ব্যাখ্যা করতে পারি না, কারণ কাক-না-ডাকা ভোরে উঠে যখন কাক-ডাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে আমাকে একটা দিন পার করতে হয়, এবং এরপর আরামবাগের বিপরীতে প্রচণ্ড চায়ের তৃষ্ণা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, এবং এরও পর, আমাকে যথাক্রমে ও বিপরীতক্রমে হাঁটতে ও দাঁড়াতে হয়—তখন আমি ব্যাখ্যা করতে পারি না—কেন এইসব শীতের রাতে (কিংবা সন্ধ্যায়) আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে। ভাগ্যে তিনি ছিলেন। নয়তো হয়তো জোর গলায় এটুকুও বলতে পারতাম না যে, আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে। বড়জোর ‘ক্যাঙ্কা লাগতিসে গে বা’ বলেই থেমে যেতে হত, কিংবা আরেকটু স্পষ্ট করে বললে—আমাকে থমকে যেতে হত, প্রচণ্ড শক্তিতে নিজেকে প্রকাশ করার চেষ্টা করতাম, আমি চিৎকার করতে চাইতাম, এবং শেষপর্যন্ত, ‘ক্যাঙ্কা জানি লাগতিসে’-তে এসেই থমকে যেতাম। এই মৃত্যুর কারণ কি কেবল এই যে, আমরা ক্লান্তিটুকু, আমাদের বিষণ্নতাটুকু রাখার জন্য একটা ছায়া খুঁজে বেড়াই? কিংবা, ছায়ার আশ্রয়টুকুতে আসার ঠিক পরমুহূর্তেই কি এক ধরনের বিষণ্নতাবোধ আমাদের আক্রান্ত করে? আমাদের ক্লান্ত, ক্লান্ত করে? আমি ঠিক ব্যাখ্যা করতে পারি না, কা

চেঁচামেচি দিবস

ছবি
অনেক অনেককাল আগে, একটা সুন্দর দিন ছিল। যেদিন কিছু হয়নি। যেদিন কেউ জানত না যে, দিনটা সুন্দর ছিল। অথচ দিনটা সুন্দর ছিল। অনেক অনেককাল আগে, এক বিকেলে আমি বসে ছিলাম। এমনিই বসে ছিলাম। সেই বিকেলে কিছু হয়নি। কিছু যে হয়নি তার প্রমাণ, সেই বিকেলের কথা কেউ জানে না। অসংখ্য শব্দেভর্তি আমার ডায়েরিটাও তার খোঁজ জানে না। বিকেলটা সুন্দর ছিল। আজ থেকে অন্তত এক কোটি বছর আগে, অচেনা নম্বর থেকে একটা ফোন এসেছিল। এমনিই ফোন এসেছিল, কোন কারণ ছিল না। কারণ যে ছিল না তার প্রমাণ, সেই যদি ফোন আমি না ধরতাম, তবে গোটা জীবনে দ্বিতীয়বার আর সেই ফোন আসত না। তাতে কিছু এসে যেত না, কারণ আমি কখনই জানতে পারতাম না সেই ফোনের কথা—যেটা জীবনে একবার আসে। কিছু এসে যেত না বটে। যেই মানুষটা সারাটা জীবন একটা অন্ধকার ঘরে কাটিয়ে দেয়, সে নিশ্চয়ই আলোর অভাবে হাঁসফাঁস করে মরবে না? সুতরাং, স্পষ্টতই আমি বেঁচে থাকতাম। জোর গলায় ঘোষণা দিতাম, আমি পৃথিবীর স্পর্শ চিনি। এবং প্রাণভরে শব্দগুলো শুনতাম। বলতাম, they slither while they pass, they slip away across the universe. অথচ আমি জানতে পারতাম না—ইউনিভার্স দেখা আমার বাকিই রয়ে গে

অন্তর্গত বিস্ময় – ২

ছবি
“God is a concept—by which we measure our pain.” কথাটা জন লেনন বলেছিলেন, কোন এক গানে। থুড়ি, ঠিক ‘কোন এক গানে’ বলাটাও ঠিক হচ্ছে না, কারণ এটা যথেষ্ট বিখ্যাত একটা গান। সত্যি বলতে কী, এই গানের কথা যে আমি কতবার করে মানুষজনকে বলেছি, বলতে বলতে নিজেই আশ্চর্য হয়ে গেছি—কতবার এমন হয়েছে—আমি নিজেও জানি না। এবং ঠিক এই কথাটাই আমার লেখার কথা সপ্তাহদুয়েক আগে। আবারও রিয়ার বকা খেয়ে লিখতে বসলাম—এদ্দিন বাদে। ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত, কারণ যুক্তি বলে, রিয়ার বকায় কাজ হওয়ার কথা না। বিশেষ করে, নভেম্বরের এই ভুতুড়ে রাতে কোনক্রমেই হওয়ার কথা না। তবে কিনা, যুক্তির উপরে আরও কিছু একটা বাস করে, কাজেই যখন লিখতে বসার কথা না—ঠিক তখনই আমার মনে হয়, ঠিক সেই মুহূর্তেই আমার মনে পড়ে আরিফের অমর উক্তি—‘দামি লেখা পড়তে গেলে আমি নিশ্চয়ই পাবলিক লাইব্রেরিতেই যেতাম? আপনার কাছে সস্তা লেখাই পড়তে চাইসি, সুতরাং প্লিজ, লেখেন।’ আমি যে একেবারেই লিখছি না—ব্যাপারটা এমনও না। বছরের মাঝখানে ডায়েরি লেখা প্রায় ছেড়ে দিয়েও এই বছর প্রায় বিয়াল্লিশ হাজার শব্দের ডায়েরি লিখে ফেলেছি, ডিসেম্বর শেষ হতে হতে বোধকরি তা পঞ্চাশে গিয়েই ঠেকবে—এটাই

অন্তর্গত বিস্ময় – ১

ছবি
এক. হতে পারে, নভেম্বরের এই সময়টা মানুষের মধ্যে খানিকটা হলেও সাইকিডেলিয়া এনে দেয়। অবশ্য, ‘সাইকিডেলিয়া’ শব্দটা বলা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না, এটা অর্থ অনেকভাবেই করা যায়। এর চেয়ে অনুভূতিটাকে ‘পরাবাস্তব’ ডাকলেই বরং ভালো শোনায়। হেমন্তকাল না এটা? হেমন্তে যেই রহস্যময়তা আছে, এবং যেই রহস্যটুকু আছে হেমন্তকে পুনর্জন্ম দেয়া কবির ভেতরে—সেই রহস্য সম্ভবত আর কোথাও নেই। আমি মাঝেমধ্যেই ভাবি, জীবনানন্দ যদি এভাবে হেমন্তকে নতুন করে জন্ম দিয়ে না যেতেন, আমরা কীভাবে নিজেদেরকে ব্যাখ্যা করতাম? একটা ফর্সা চাদর, ফর্সা বিছানা, জানালার পাশের টেবিলটায় বসে, ঠিক রাত আটটায় দ্বাদশীর আলো দেখে যেই অনুভূতিটা হত—সেটার কারণ আমরা কীভাবে খুঁজে পেতাম? আমার ধারণা, আমরা বিভ্রান্ত হয়ে যেতাম, স্ট্যাটের মাঠে দিশেহারা হয়ে বসে থাকতাম, আমাদের হাত-পা কাঁপতে থাকত, আরও একবার মহাখালী থেকে বাসে উঠতে গিয়ে আমরা কেবল শূন্যতাই দেখতাম (অর্থাৎ ঢেউটুকু দেখতাম না)। এবং তিনি ছিলেন। তিনি ছিলেন, তাঁর ট্রাঙ্কটুকু ছিল—বড় সৌভাগ্য আমাদের—হেমন্তের মধ্যিখানে এসে আমরা আবিষ্কার করতে পারি যে, “জানি—তবু জানি নারীর হৃদয়—প্রেম—শি

এ্যালানার গল্প এবং একটুখানি বরিশাল

ছবি
আমার সমবয়সী বন্ধুদের মধ্যে কেমন যেন একটা অভিভাবক-টাইপ ভাব থাকে। অবশ্য, সমবয়সী বা আছে ক’জন। আঙুলে গুণে ফেলা যাবে, এবং সেটা হাতের আঙুল ছাড়িয়ে পা পর্যন্ত যাওয়ার কথা না। তাদের একজনের নাম এ্যালানা। এবার বরিশালে গিয়ে এ্যালানার সাথে দেখা করেছিলাম, অনেকদিন পর। এবং কোন এক অদ্ভুত কারণে, বরিশালের গল্প অনেকের কাছে করলেও এ্যালানা মেয়েটার প্রসঙ্গ আসেনি। ঘুরেফিরে আমরা বরিশালের স্কুলগুলো, সেখান থেকে কীর্তনখোলা, সেখান থেকে আবারও বরিশালের রাস্তা—এই গল্পগুলোতেই ফিরে এসেছি, কিন্তু এ্যালানার কথা বলার সময়টুকু হয়নি। আমার খুব ইচ্ছে ছিল, ওদের শহরে গিয়ে মেয়েটাকে ভড়কে দিব। কাজেই আগে থেকে কিছু বলিনি। ভুলেও যাচ্ছিলাম অবশ্য ওর কথা। আমরা যেই সকালে বরিশালের মাটিতে পা রাখলাম, সেদিন বড় বৃষ্টি হচ্ছিল। লঞ্চে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে ছিলাম সবাই। কাজকর্ম করছিলাম। আমার ইচ্ছে ছিল আরেকটু কাজ করানোর, কিন্তু রাত তিনটার দিকে বাকি তিনজন বিদ্রোহ ঘোষণা করল। এখন নাকি এক কাপ চা না হলে কোনভাবেই চলছে না। কাজেই আমরা কেবিন ছেড়ে বাইরে বের হলাম, এবং আবিষ্কার করলাম মোটামুটি সারা লঞ্চ চুপচাপ, শান্ত, সবাই গভীর ঘুমে। কাজেই চ

এলোকথন (কৃত্তিকা ২৪:২)

ছবি
এই পৃথিবীর কেবল দুটো মানুষের সাথে আমি ঝগড়া করি।  কিছুক্ষণ আগে ব্যাপারটা খেয়াল করলাম। এমনিই।  আবার হয়তোবা, এমনিই না। হয়তোবা কোন কারণ ছিল ব্যাপারটা খেয়াল করার পেছনে।  ক্লাস বন্ধ, বাসাতেই বসে ছিলাম সকাল থেকে। দুপুরে কী মনে করে শহীদুল জহিরের বইটা হাতে নিলাম।  এই বইটার কথা আমি প্রথম শুনি একটা ভুতুড়ে দিনে, ময়মনসিংহের একটা মানুষের কাছ থেকে। এবং আমি এই বইটা পড়া শুরু করি আরেক ভুতুড়ে দিনে, জ্বরের প্রবল ঘোরে বিভ্রান্ত হয়ে বসে থাকার দিনে।  এ কথাটা অদ্ভুত যে, আমি কেন আজকেই এই বইটা শুরু করলাম, একটা সাধারণ দিনেও এই বই অসাধারণ বিভ্রম তৈরি করতে পারত, আর আজকের দিনটা বেছে বেছে আলাদাভাবে সুররিয়েলিস্টিক একটা দিন।  এবং এ কথাটাও অদ্ভুত যে, বইয়ের প্রথম গল্পটাই শুরু হল ভূতের গলি থেকে, যে গলির একটা মানুষ ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য রীতিমত খেপে আছে।  হতে পারত না অন্যকিছু? হতে পারত গল্পটা শুরু হয়েছে একেবারেই নিরস কোন জায়গা থেকে, এই ধর, শ্যামলী থেকেই, আর এরপর, হতেই পারত, শ্যামলীর সেই মানুষটা খেপে আছে ততোধিক সাধারণ কোন জায়গায় যাওয়ার জন্য, হয়তোবা সেটা গাজীপুর—এতে কি কিছু এসে যেত?  আমার ধার

এলোকথন (কৃত্তিকা ২৪:১)

ছবি
এক. কিছুক্ষণ আগে একটা হুমকি পেয়েছি। চুপচাপ বসে ছিলাম। হঠাৎ করেই ধমকটা খেলাম। আজ রাতেই কিছু একটা না লিখলে আমি নাকি শেষ! শ’খানেক মাইল দূরে বসে এত সহজে হুমকি দেয়া যায়—কে জানতো। কী আর করা। যা মনে আসে, লিখে ফেলি। সমস্যাটা হল যে, মনে অনেক কিছুই আসে। সেই যে, words are flowing out like endless rain into a paper cup. কাজেই লিখতে গিয়ে বারবার দ্বিধায় পড়তে হয় আমাকে। গত কয়েক সপ্তাহে খুব অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমার আফসোস হচ্ছে যে, আবারও ডায়েরি লেখার অভ্যাসটা নষ্ট হয়ে গেছে আমার। যদি থাকতো, তবে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ভরে যেত। এমনও তো দিন গেছে, লেখার তোড়ে রীতিমত আমার হাত কাঁপতে শুরু করেছে—শব্দগুলো যেন মাথাতেও আনার দরকার হচ্ছে না—চিন্তা থেকে সরাসরি আমার আঙুলে চলে যাচ্ছে, আর আমি লিখে ফেলছি। কে জানে, হয়তো সামনেই অমন দিন আবার আসবে। আজ অথৈ ফোন দিয়েছিল, অনেকদিন পর। প্রায় প্রতিদিনই ভাবি, পিচ্চিটাকে ফোন দিব। সেই কবে একবার সঞ্জীবের একটা গান শুনতে বলেছিল, সেই কথাটুকুর উত্তর না দিয়ে আমি যে ডুব দিলাম, আর খোঁজ নেই। অথৈ ফোন দিয়ে প্রথমে এই কথাটাই জিজ্ঞেস করল, আমি কোথায় হারিয়ে গেছি। আম

এলোকথন (অশ্বিনী ২৪:৪)

ছবি
আজ বেশ ক’দিন হল, আব্বু বাসায় নেই। আব্বু বাইরে গেলে আমরা বড় একটা টের পাই না। ছোটবেলা থেকেই এমনটা হয়ে আসছে। ব্যাপারটা মোটেও আশ্চর্যের না, কারণ আব্বু যখন দেশে থাকে, তখনও তার সাথে খুব একটা দেখা হয়—এমনটা দাবি করা যাচ্ছে না। একই বাসায়, একইসাথে থেকে কেন আব্বুর সাথে নিয়মিত দেখা হয় না—এটাই বরং আশ্চর্যের। সেই ছোটবেলা থেকে দেখি, সকালবেলা উঠে আব্বু দৌঁড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়, অফিস আছে। কিছু মানুষ থাকে না, কাজপাগল ধরনের? অমন একটা মানুষ। অফিসে গিয়ে সে জ্যান্ত মানুষের মতই কাজ করতে থাকে, ঝিমায় না। বরং আমি আস্তে হাঁটলেই উল্টো ধমক দেয়, ‘আই এ্যাম সিক্সটি ইয়ার্স ওল্ড, আমি পারলে তুমি পারবা না কেন?’ সক্কালবেলা বেরিয়ে ফেরে বিকেলবেলা। (ঘুমটা কি বেশি পেয়েছে? আসলে আব্বু তো ফেরে রাত এগারোটায়। একটা ঘোরের মধ্যে লিখতে গিয়ে ‘বিকেল’ লিখে ফেললাম।) যাকগে, আব্বু ফেরে রাত এগারোটায়। এবং তখনও জ্যান্ত মানুষের মতই বাসায় ঢোকে, আর যদি বাসায় দাদু থাকে, তবে তো কথাই নেই, কে বলবে রাত এগারোটার বেশি বাজে, এবং এই বাসায় সবচেয়ে ছোট মানুষটার বয়স বাইশ? আব্বু আর দাদু মিলেই ছোটদের অভাব পূরণ করে দেয়—রীতিমত উৎফুল্ল ভঙ্গিতে দুজন

এলোকথন (অশ্বিনী ২৪:৩)

ছবি
লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে আজ। আজকাল লেখার ইচ্ছেটা আসে ছাড়াছাড়াভাবে। ব্যাপারটা মোটেও অস্বাভাবিক না, কারণ আমি কাজ করতে করতে মারা যাচ্ছি। জানি না, হয়তো সাতসকালে উঠে দৌঁড়ে বাসা থেকে বের হই। ভার্সিটিতে যতক্ষণ পারি ক্লাসনোট তুলি। যেদিন টানা পাঁচটা ক্লাস থাকে সেদিন শেষ ক্লাসটুকুতে সবাই কলাপ্‌স করে। মাথা আছড়ে বেঞ্চে পড়ে যায়। আমি চারদিকে তাকাই, দেখি সবাই মরে যাচ্ছে, অথবা গেছে, সেই কবে! কনকের মত দু-একজন তবু বেঁচে থাকে, নিলয়ের মত দু-একটা পাগল এখনো স্বপ্ন দেখে, তবু বাকিরা তো মরে গেছে। আমি নিজেও কলাপ্‌স করি কখনো, বেঞ্চে মাথা রেখে আক্ষরিক অর্থেই স্বপ্ন দেখি। গত কিছুদিন যেসব স্বপ্ন দেখেছি—তার মাথামুণ্ডু কিছুই নেই। একদিন দেখলাম, মুনির স্যার এসে কংগ্রেসের এক্সপেরিমেন্টের জিনিসপত্র সব ফেলে দিয়েছেন। আমার বড় ভয় হয়, আমি একদিন এসব স্বপ্ন দেখে ক্লাসেই চিৎকার করে জেগে উঠবো। কায়কোবাদ স্যার এসে চশমার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে বলবেন, ‘ইউ আর সো স্মার্ট, ক্লাসে ঘুমোলেই তোমার পড়া হয়ে যায় তাই না?’ ক্লাস থেকে বেরিয়ে দৌঁড়ে অফিসে যাই, এবং আবারও কাজ শুরু করে দেই। আগ্রহের সাথেই করি, সুতরাং কাজের মাঝে ডুবে থাকলে টের পাই না চারপা

এলোকথন (অশ্বিনী ২৪:১)

ছবি
এক. আমার একটা ফ্যান্টাসি আছে। আমি মানুষজনকে পকেটে করে ঘুরি। মানে, আক্ষরিক অর্থে তো আর একটা মানুষকে পকেটে পুরে ফেলা যায় না, তবে কেউ যখন ফোনে খুদেবার্তা/মেইল দেয়, সেটা না পড়েই পকেটে নিয়ে ঘুরতে থাকি। ধর, সকালবেলা এ্যানি একটা মেইল দিল। ফোনের পর্দায় ওর একটা ছবি আসবে, মেইলের খানিকটা অংশ আসবে। আমি মেইলটা আর খুলি না, ওভাবেই ভার্সিটি চলে যাই। দু-এক ক্লাস পরে হয়তো কোন কাজে ফোনটা পকেট থেকে বের করি। আবার এ্যানির মুখ দেখা যায়, সেটাকে আনমনে একটু ঝাড়ি দিয়ে আবার পকেটে রেখে দেই। দুপুরে খাবার সময় হয়তো অকারণেই ফোনটা বের করি, এবং আবার অবাক হয়ে যাই, আরে, এ যে এ্যানির মুখ দেখা যাচ্ছে, মেইল এসেছে। আবার ফোনটা পকেটে রেখে দেই, মেইল না খুলেই। সে নাহয় খোলা যাবে এক সময়—অত তাড়াহুড়োর কী আছে। গত দুদিন ধরে রিয়াকে পকেটে নিয়ে ঘুরছি। এই উত্তর দিবো-দিবো করে খেয়াল করলাম, এখনও দেইনি। থাকগে। তাড়াহুড়োর তো কিছু নেই, একসময় ফোন দিয়ে বকে দিলেই হয়ে যাবে। অবশ্য, ছেলেদের সাথে এই ফ্যান্টাসিটুকু করা কঠিন। মেইল দেয়ার সাথে সাথে উত্তর না পেলে আরিফ-আকিবের মাথা এলোমেলো হয়ে যায়, বুক ধড়ফড় করতে থাকে। পানির পিপাসা পায়। মনে হয়,

এলোকথন (ভাদ্রপদ ২)

ছবি
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মানুষের সাথে আকাশের একটা সম্পর্ক আছে। সারা দুপুর বসার ঘরে কাজ করছিলাম। যেই ঘরের জানালাটা বহুকাল আগে মরে গেছে, খালা হয়তো মাসে একবার সবাইকে মনে করানোর চেষ্টা করে, জানালা মরে নাই, খালার অসামান্য চেষ্টার পর ফাঁকফোঁকর দিয়ে সামান্য একটু আলো ঢোকে, সেই আলোতে ঘর আলো হয় না, বরং অন্ধকারের কথাটাই নতুন করে মনে পড়ে যায়, খালা জোর গলায় দাবি করে, দু হাত তুলে চিৎকার করে, জানালা মরে নাই, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না, যে জানালা দিয়ে অন্ধকার আসে, সেটা আমার কাছে মরে গেছে, সেই বছর উনিশ আগে, সেই উনিশ বছর আগে যখন আপুর সাথে এই বাসায় ঢুকেছিলাম, তখন থেকেই… এইসব জানালা, ওরাও তো প্রতীকী বটে, কেন বসার ঘরের জানালাটাই অকালে মরে যাবে, কেনই বা আমার ঘরের জানালাটা অকালে বেঁচে থাকবে, জ্যান্ত জানালা, মৃত জানালা, সবাই মিলে আমার চিন্তাকে আক্রমণ করবে, বারবার করে বলবে, ওরাও নাকি প্রতীক, কী যেন ছাই, মেটাফোর, জানালাগুলো একেকটা মেটাফোর, শিকলদেবীর পূজার বেদী ভাঙতে আলোটুকু তো লাগবেই, ও-ঘরে দেবী জন্ম নেবে, আমার ঘরে এসে অপঘাতে মরে যাবে… কাজেই, চৌকো জানালার বাইরে যে চৌকো আকাশ, সেই আকাশের সাথে আমাদের সম্পর্ক

এলোকথন (ভাদ্রপদ ১)

ছবি
গোল্লায় যাক সব কাজকর্ম! এই কাজগুলোকে আকিব ঠাট্টা করে ‘বানাবিস’—বা এমন কোনো একটা নামে ডাকে। তা, দিনরাত ‘বানাবিস’-এর কাজ করলে মাথা গরম হবে না কেন। ওহ, মাথাটা যেন বনবন করে ঘুরছে, ভীষ্মলোচন শর্মা গান গেলে বোধ করি এমনটাই হত। আজ রাতের মত কাজকর্মকে গোল্লায় যেতে বলার কারণটা ছোট এবং খানিকটা অদ্ভুত। ঘরের সাদা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে হঠাতই একটা পুরনো গান মনে পড়ে গেল। আম্মু ছোটবেলায় অনেক গান শুনতো। মানে, আমি যখন ছোট, তখন। আমাদের বাসায় একটা উদ্ভট যন্ত্র ছিল। বিশাল দেহ, আর দুপাশে দুটো বিশাল সাউন্ডবক্স। রেডিও থেকে শুরু করে ক্যাসেট—সবই শোনা যেত সেটাতে। আমার সকালে ঘুম ভাঙতো ওটার রেডিও শুনে। আব্বু সকাল সাতটায় বিবিসি বাংলার খবর শুনতো। খবরগুলো তো মনে নেই, তবে প্রতিটা খবরের মাঝে ছোট্ট একটা সলো বাজতো—বেশ মনে আছে! আর সন্ধ্যেবেলা আম্মু ওখানে ক্যাসেট বাজিয়ে গান শুনতো। খুব সুন্দর কিছু ক্যাসেট ছিল আমাদের—ওসব কোথায় যে গেছে, কে জানে। আমার ছোটবেলার যত স্মৃতি মনে পড়ে, তার অর্ধেকেই আম্মু গান গাচ্ছে বা শুনছে—এমন একটা দৃশ্য চোখে ভাসে। আম্মু গানটান কখনো শিখেছে বলে জানি না, তবে গুনগুন করে যখন গাইতো, শুনতে ব

বৃত্তের ভেতরে

ছবি
“কোথাও নেই ঝুম ঝুম অন্ধকার, তক্ষক ডাকা নিশুতি রূপকথা শুনে শিউরে ওঠে না গা স্বপ্নে আমার শরীরে কেউ ছড়ায় না শিউলী ফুল আলোর আকাশ নুয়ে এসে ছোঁয় না কপাল; গোটা শহর বাতি জ্বেলে সতর্ক পায়ে পায়ে হারাবার জায়গা খুঁজে মরি…” আচ্ছা, এই শহরে কি হারানোর জায়গার সত্যিই অভাব? বেশ কিছুদিন হল, অলিগলিতে ঘুরতে ঘুরতে আমি হারিয়ে গেছি। এবং অবিশ্বাস্য লাগতে পারে, রাস্তা পাওয়ারও চেষ্টা করছি না আমি। কারণ আমার দৃঢ় বিশ্বাস, হারিয়ে যাওয়াই বরং কঠিন, আমি রাস্তা খুঁজে না পেলেও রাস্তা ঠিকই আমাকে খুঁজে নেবে। কাজেই সোডিয়াম আলোকে আড়ালে রেখে, একটা অন্ধকার গলিতে চুপ করে বসে আছি। মানুষের কণ্ঠ কানে এলে পালিয়ে অন্য একটা গলিতে ঢুকে পড়ছি। জানি, এভাবে খুব বেশিদিন চলবে না। কারো না কারো হাতে তো ধরা পড়তেই হবে, প্রজ্ঞা তো তাই বলে। দু-চারদিন আগে রিয়ার ব্লগে ঢুকে দেখি, পুঁচকে মেয়েটার বেশ উন্নতি হয়েছে। এদ্দিন আমিই কেবল একচেটিয়া নিষেধাজ্ঞা জারি করে যেতাম, আজকাল মেয়েটা উল্টো আমার জন্য লেখা নিষিদ্ধ করতে শুরু করেছে। কী আর করা। চোখ বড় বড় করে কিছুক্ষণ শিরোনামটা দেখে চলে এলাম। “বৃত্তের বাইরে”। মনে মনে বললাম, স

সালভাদরের ভাঙতি

ছবি
[এই লেখাটা সুরভী আন্টির জন্য নিষিদ্ধ। দেখুন আন্টিই, আজকাল আপনার মত থুড়থুড়ে শতবর্ষী বুড়োদের জন্যও লেখা নিষিদ্ধ করা শুরু করেছি। দয়া করে এটা পড়বেন না, আমি সিরিয়াস। আপনাকে টনসিলের ঝুঁকি নিয়ে আইসক্রিম খাওয়াতে রাজি আছি আমি, এই যে লিখে দিলাম।] অন্ধ প্যাঁচা আর স্থবির ব্যাঙ ছাড়াও সুররিয়েলিজম হয় বটে। প্রায় দুদিন হল, আমার পৃথিবীটা সুররিয়েলিস্টিক হয়ে যেতে শুরু করেছে। পদ্মর নানাভাইকে মাটি দিয়ে আসার পর থেকেই এই অনুভূতিটা হচ্ছে। ওনাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম না, কাজেই খুব একটা মন খারাপ করার সুযোগও ছিল না। সেকারণেই কিনা কে জানে, অনুভূতিটা ‘মন খারাপ’ না হয়ে ‘সুররিয়েলিস্টিক’ হয়ে যাচ্ছে। এই যে লিখছি, মাথার ওপর যে ফ্যানটা ঘুরছে, সেই ফ্যানের শব্দেও একটা পরাবাস্তব টান পাওয়া যাচ্ছে। আমার একটা সমস্যা আছে, কেউ মারা গেলে আমি তার চেহারা দেখতে পারি না। বছর দেড়েক আগে ফুপী মারা গেল। মাটি দেয়ার আগে সবাই শেষবারের মত ফুপীকে দেখতে গেল। আমি গেলাম না। দীর্ঘ তিনমাস কোমায় থাকলে কি মানুষের চেহারা পাল্টে যায়? ভাইয়ার কাছে শুনেছি, মারা যাবার আগে ফুপীর চেহারা অনেক পাল্টে গিয়েছিল। বড় হওয়ার পর ভাইয়াকে ক