আষাঢ়ে!

টুনিইইইই তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো নাআআআ!!

পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত টুনিকে কথাটা বলেই ফেলল মন্তু।

টুনি বিব্রত।

হঠাৎ পুকুরপাড়ে মকবুল বুড়ার আবির্ভাব! দু হাত কোমরে দিয়ে কঠিন দৃষ্টিতে সে মন্তুর দিকে তাকিয়ে। মন্তুর আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার উপক্রম।

আইজকা তরে মাইরাই ফালামু!! মকবুল হুংকার ছাড়ে। হুংকার দিতে দিতেই লুঙ্গির ভিতর থেকে বের করে আনে একটা বন্দুক! বন্দুকটা মন্তুর দিকে তাক করে বলে, ছেড়ে দে শয়তান, ছেড়ে দে আমার টুনিকে। তোর বাসায় মা বোন নেই? বউ নেই!

মা বোন থাকলে কি আর টুনির সাথে ইটিস পিটিস করি? মন্তু মনে মনে ভাবে। আর মুখে বলে, ছরি ছার। আমার কুনো দোষ নাই। সব দোষ টুনির!

এইবার মকবুলের বন্দুক তাক হয় টুনির দিকে! টুনিইইই খাইসি তোরে!!

টুনির মুখটা করুণ হয়ে যায়। মকবুলের দিকে তাকিয়ে দুঃখভরা গলায় সে বলে, ওগো, গুলি করবা কর কিন্তু একটু আস্তে কর। বেশি জোরে করলে আমার ব্যথা লাগে।

মকবুলের কি আর অত কথা শোনার সময় আছে! সে এর মধ্যেই বন্দুকের ট্রিগার টিপে দিয়েছে। কাজেই একটা গুলি বের হয়ে ছুটে যেতে শুরু করল টুনির দিকে।

মন্তু বিস্ফোরিত চোখে টুনির দিকে তাকিয়ে।

টুনি নির্বিকার।

বাতাস হঠাৎ থেমে যায়।

একখণ্ড মেঘ এসে ঢেকে দেয় সূর্যকে।

তারপর।

তারপর টুনি ফিক করে হেসে ফেলে! আর বুলেটটা সোজা তার দাঁতে বাড়ি খেয়ে পড়ে যায় পুকুরে।

মকবুল চোখ বড় বড় করে টুনির দিকে তাকিয়ে। বিস্ময়ে সে তখন তোতলাচ্ছে। গু-গু-গুলি খেয়েও তো-তো-তোমার দাঁত ভাঙলো না কেন?!

ভাঙলো না কারণ আমি পেপসোডেন্ট দিয়ে ব্রাশ করি। যা আমাকে দেয় সতেজ নিশ্বাসের confidence—পুরো বারো ঘণ্টা। আর আমার দাঁতকে করে মাখনের চেয়েও মজবুত।

এমন সময় আকাশ থেকে প্যারাশুটে করে হোসেন মিয়া নেমে এলো। ল্যান্ড করে মৃদু মৃদু হেসে দাড়িতে হাত বুলিয়ে সে বলল, আমি বিয়ার গ্রিল্‌স। আমি আপনাদের দেখাব কী করে দুর্গম জায়গায় কঠিন পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে হয়। টিকে থাকার লড়াইয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পানি। কাজেই আমি প্রথমে যতটা সম্ভব পানি খেয়ে নিচ্ছি— এই বলেই সে এক চুমুকে পুরো পুকুরের পানি খেয়ে নিল।

মকবুল চিৎকার করে উঠলো, হোসেন মিয়াআআ!! তুমি নিজের উপন্যাস ছাইড়া আমাদের উপন্যাসে চইলা আইলা ক্যান? আইসা আবার আমার পুকুরের পানিও খায়া ফালাইতেসো! এইটা কিন্তু ঠিক অইতেসে না!

ঠিক অইব না ক্যান! everything is fair in love and war!

মানে??

মানে আমিও আম্বিয়ার প্রেমে পড়সি। শুধু আম্বিয়া না, টুনি-আমেনা-ফাতেমা— সবার প্রেমে পড়সি! ওদের সবাইরে নিকা কইরা আমি ময়নাদ্বীপি নিয়া যামু।

কী?? আমার বউরে নিয়া যাবা মানে!!

চুপ কর বুইড়া। টিকে থাকার লড়াইয়ে প্রোটিনও খুব গুরুত্বপূর্ণ। বেশি বকবক করলে তোরে প্রোটিন হিসেবে খায়া ফালামু কিন্তু কইলাম।

এই কথা শুনে মকবুলের মাথায় জ্বলে উঠল আগুন! আর তার বুকে খেলে গেল তারুণ্যের ফাগুন। সেই ফাগুনে উদ্দীপ্ত হয়ে সে বন্দুক তাক করল হোসেন মিয়ার দিকে। ট্রিগারে চাপ দিতে যাবে— এমন সময় হোসেন মিয়ার পকেট থেকে একটা জাদুর কাঠি বের হয়ে এলো!

উইংগারডিয়াম লেভিওসা! হোসেন মিয়া হাসতে হাসতে বলল। কাজেই মকবুল বুড়া আকাশে উঠে গেল!

আর তখনই কে যেন হুংকার দিল, এক্সপেলিআর্মাস!

সাথে সাথে হোসেন মিয়ার জাদুর কাঠিটা ছিটকে চলে গেল, আর মকবুল বুড়া ধপাস করে পড়ল নিচে। নিচে পড়েই সে কেঁদে উঠলো, কোন হালা আমারে ফালাইলো রে!

আমি। গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে গম্ভীর কণ্ঠে একটা লোক বলল।

ধনঞ্জয়!! সবাই একসাথে চিৎকার করে উঠলো। আর মকবুল দিল ধনঞ্জয়কে ঝাড়ি, তোরা সবাই নিজের উপন্যাস ছাইড়া আমার এইখানে ঢুকতেসিশ ক্যান ক দেহি!

dear মকবুল বুড়া, আমি উপন্যাসের ধনঞ্জয় না। আমি IMO-র ধনঞ্জয়। সিলভার পাইসিলাম!

ঠিক সেই মুহূর্তে আকাশ থেকে দৈববাণী উচ্চারিত হল— কিন্তু বুয়েটে তো চান্স পাও নাই!

সাথে সাথে চারদিকে একটা হাসির রোল পড়ে গেল!

moral of the tale: প্রতিভাবানরা বুয়েটে চান্স পায় না।