অথবা...অলিম্পিয়াড!!

আমরা পাঁচজন।

পাঁচটা পাগল।

বাইরে থেকে অবশ্য বোঝা যায় না।

কারণ আমরা সবসময় পাগলামো করি না।

আমাদের মাথাটা বিগড়ে যায় শুধু তখনই, যখন......

বাতাসে অলিম্পিয়াডের গন্ধ ভাসে!

যখন বর্ষণ ভাইয়া গভীর রাতে ফোন দিয়ে বলে, আমাকে একটা প্রাইজ এনে দে না ভাই!

যখন চোখের সামনে দেখি কোন ম্যাথের প্রবলেম!

খায়া ফালামু!! আমরাও হুমকি দিই। না, কোন মানুষকে না। প্রবলেমকে।

পাঁচটা পাগল। কিংবা, অনেকের মতে, ছাগল।

শাওন।

boss লেভেলের পাগল।

একদিন পরপর তিনটা অলিম্পিয়াড দিয়ে সে মনমরা হয়ে বের হল।

কী হয়েছে রে? আমরা জিজ্ঞেস করি।

সে বলে, কিচ্ছু পারি নাই।

আহারে। এত ভাল ছেলেটা অলিম্পিয়াডে গিয়ে কিছুই পারলো না।

এরপর, একদিন প্রাইজ দিল।

তিনটা অলিম্পিয়াডের দুটোতে শাওন ফার্স্ট, অন্যটায় সেকেন্ড।

বিস্ময়ে মেসাল আর আজোয়াদের চোখ কপালে উঠেযায়!

কপালে ওঠার কারণেই কিনা কে জানে, চোখ পড়ে আকাশের দিকে।

গাঢ় নীল আকাশ।

ঐদিনও এমনই নীল ছিল না আকাশটা? যেদিন এই আকাশের তলে দাঁড়িয়ে আজোয়াদ কঠিন চোখে তাকিয়ে ছিল নোবেলের দিকে?

আর বলেছিল, আমরা জিতবো!

নৈরাশ্যবাদীরা বলে, তুই জীবনেও জিতবি না!

আর আজোয়াদ বলে, জীবনেও হারবো না!

আর তাই, একশোবার চেষ্টা করে ব্যার্থ হলেও আজোয়াদ আরো একবার চেষ্টা করে দেখে।

আর তাই, রহস্যজনকভাবে আমাদের বোকাসোকা আজোয়াদ আজ একটা গণিতবিদে পরিণত হয়েছে!!

অথবা তানজিম ফাইয়াদ। হিমেল।

যাদের আঙুলের মাঝে পড়লে রুবিক্স কিউবে প্রলয় ঘটে যায়!!

কিংবা আমার জীবনটাও!

অংক ভাল পারিনা বটে, তবে খু-উ-ব ভালবাসি।

তাই যখনই ম্যাথের প্রবলেম দেখি, হাতের তলোয়ারটা চালিয়ে দিই।

সাদা কাগজের বুক ছিঁড়ে কাল রক্ত বেরুতে থাকে!!

আর আমি হাসি। শালা তুই সলভ না হয়ে যাবি কই?!

আর সেই ছেলেটা, পরীক্ষায় নাম্বার পাওয়ার জন্য বই মুখস্থ করতে করতে যার আত্মাটা মারা গেছে, সে আরেকবার আমার দিকে তাকায়, মুখটা কিঞ্চিৎ বাঁকায়, এবং বলে, তুই পাগল হয়ে যাবি অংক করতে করতে!!

আমি তাকে আর মনে করিয়ে দিই না যে, গণিত আর জীবন কখনো কখনো সমার্থক হয়ে যায়!

তাই যদি না হত, তাহলে সজল ছেলেটা এই অল্প বয়সেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেত না! বেঁচে থাকতো তার ভাই কাজলও! আর সেই অভিমানী মেয়েটা, যার মা তাকে গণিতচর্চা করতে দেয়নি, সে আত্মহত্যার চেষ্টা করত না কখনই!

আর অলিম্পিয়াড?! এটা তো বিমূর্ত কোন ব্যাপার না!

অলিম্পিয়াড মানে এক কোনায় বসে থাকা সামিউর রহমান মীর, পেন্সিল চিবাতে চিবাতে পরীক্ষা দেয়া, নতুন দেখা স্কুলের মাঠটায় হাত পা ছড়িয়ে বসে থাকা, দুই একজনের হাতে ঘুরতে থাকা রুবিক্স কিউব, নীল আকাশ, আকাশে ঝকঝকে রোদ, এক টুকরো মেঘ, তাসফিনের হাসিমাখা মুখ, আর...স্বপ্নময় কিছু চোখ!

কী অদ্ভুত!

কী অদ্ভুত!!