কুটুস!!

হাই!! আমি একজন মশা। আমার নাম মিস পিনপিন। আজ রাতে আমি মুবিনের বাসায় যাচ্ছি। লোকমুখে শুনেছি তার রক্ত নাকি বড়ই সুস্বাদু। একবার না খেলে জীবনই বৃথা। তাই ভাবলাম, একবার খেয়েই আসা যাক মুবিনের রক্ত!

শুরুতেই এই ছেলেটার পরিচয় দিয়ে নেই। ইয়াআআআ মোটা একটা ছেলে। মানে, একটা ছেলে যতটুকু মোটা হলে তাকে দেখে রাস্তায় মেয়েরা খিল খিল করে হাসতে শুরু করে— ঠিক ততটুকুই মোটা! মুবিন থাকে জাপান গার্ডেন সিটিতে। আমি আমার ছোট বোনের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে এসেছি। ও গত পরশু রাতেই মুবিনের রক্ত আস্বাদন করে এসেছে তার এক বান্ধবীকে নিয়ে। এখন দুই বান্ধবীই মুবিন বলতে অজ্ঞান! ছেলেটা নাকি পুরাই অস্থির। আমার তো একটু ভয়ই হচ্ছে, আমার ছোট বোনটা মুবিনের প্রেমে পড়ে গেল কিনা! ওর রুচি অবশ্য বরাবরই জঘন্য।

যাই হোক, জাপান গার্ডেনের গেট দিয়ে ঢুকে আমি পুরাই থ! সারি সারি বাড়ি। ইঁটের পরে ইঁট, মাঝে মানুষ কীট। এখন মুবিনকে পাই ক্যামনে? এক গার্ড বসে ঝিমাচ্ছিল। ওকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, excuse me, রক্তে ভরপুর মুবিন মোটকুর বাসা কোনটা, একটু দেখিয়ে দিবেন? গার্ড ব্যাটা বড় বেয়াদব! বাসা তো দেখিয়ে দিলই না, উলটা বলল, শালার মশা বহুত জ্বালায়! সারারাত ধইরা কানের সামনে পিনপিন। দেখ তো ভাইসব, আমি কি শালার মশা? এই গার্ড ব্যাটা তো সেদিনের পিচ্চি, আমি তার দাদারও রক্ত খেয়েছি। আর আমাকে বলে শালার মশা। আমার তো উঠে গেল রাগ! ভাবলাম, হতচ্ছাড়াকে দিব নাকি এক কামড়! কিন্তু আজকে রাতটা শুধুই মুবিনের জন্য! রক্ত খাওয়ার জন্য পেটে জায়গা খালি রাখতে হবে। কাজেই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও গার্ডকে কামড়াতে পারলাম না। শুধু মনে মনে বললাম, যা ব্যাটা, আজকে তুই পার পেয়ে গেলি।

হঠাৎ শুনি একটা বাড়ি থেকে খুব ধুমধাম শব্দ আসছে। কে যেন চেঁচাচ্ছে, উফ বাঁচাও আমাকে মেরে ফেলল!! ছেড়ে দাও প্লিজ! এত মের না, ব্যথা লাগছে! আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম। চুপি চুপি বাসাটার জানালা দিয়ে উঁকি দিলাম। দেখি যে, মুবিন তার ছোট ভাইয়ের হাতে মাইর খাচ্ছে। একেবারে পয়জার পেটা। পয়জার লাভ শেষ হলে মুবিন নিরাপদ দূরত্বে সরে গিয়ে কাঁদোকাঁদো গলায় বলল, কাঁয় মারতা থা? হাম নালিশ কারেগা! এই কথা শুনে ছোট ভাই আবারও জুতা নিয়ে তার দিকে তেড়ে গেল। আর মুবিন এক দৌঁড়ে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। আমিও দরজার ফাঁক দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম।

ঢুকে দেখি, মুবিন ফিঁচফিঁচ করে কাঁদছে। পাশে একটা নীল রঙের কেমিস্ট্রি খাতা, উপরে নাম লেখা— হাসান নাহিয়ান। বুঝলাম, এ হল সেই খাতা, যেটা নাহিয়ানের কাছ থেকে মুবিন দেড় বছর আগে মেরে দিয়েছে। আর ফেরত দেয়নি। আমি slow motion-এ মুবিনের দিকে উড়ে গেলাম। রক্ত খাওয়ার জন্য আর তর সইছে না। হঠাৎ দেখি ঘরের কোণা থেকে একটা তেলাপোকা উড়ে এলো। আর সেই তেলাপোকা দেখে একটা মেয়ে চিৎকার করে উঠল! আমি তো হতবাক। মুবিনের ঘরের দরজা তো বন্ধ, এখানে আবার মেয়ে আসলো কোথা থেকে! ভাবভঙ্গি তো ভাল ঠেকছে না। রক্ত খেতে এসে এ কী বিব্রতকর অবস্থায় পড়লাম। দেখ ভাই, আমি মশা হতে পারি, কিন্তু সভ্য মশা। এসব আমি একদমই পছন্দ করি না। আবার শুনি মেয়েটা চিৎকার করছে। যেদিক থেকে চিৎকারটা এলো, সেদিকে তাকালাম। দেখি মুবিনই চিৎকার করছে! তখন বুঝলাম কী কাহিনী। মুবিন যখন সপ্তম সুরে চেঁচায় তখন তার নারীত্ব পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়। অর্থাৎ গলা থেকে মেয়েদের আওয়াজ বের হয়। আমি হেসে ফেললাম!! হি হি হি...এই ছেলের চামড়াও নিশ্চয়ই নরম হবে। ফুটা করে বেশ আরাম পাওয়া যাবে। কয়েকদিন আগে রেসিডেন্সিয়ালের গেটের এক দারোয়ানকে কামড় দিয়েছিলাম। সেই লোকের চামড়া এতই শক্ত, আমার শুঁড় আরেকটু হলে ভেঙেই যাচ্ছিল। রীতিমত গণ্ডারের চামড়া। সেই থেকে আমি রেসিডেন্সিয়ালের দারোয়ানদের আশেপাশে যাই না।

যাই হোক, মুবিনকে কামড়ানোর জন্য প্রথমেই স্থান নির্বাচন করা দরকার। আমি সাধারণত মাথার চুলের ভিতরে লুকিয়ে থেকে কামড় দিতে পছন্দ করি। কিন্তু এই ছেলের মাথায় তো চুলই দেখছি না। ভুরুর অবশ্য অভাব নেই। কিন্তু ভুরুতে তো আর কামড় দেয়া যায় না। মুবিনের ইয়া গাবদা হাত দিয়ে যদি চাপড় মারে তাহলে এখানেই আমার জীবনের সমাপ্তি। শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম মাথাতেই কামড় দিব। যদিও চুলের সংখ্যা নিতান্তই কম!! লুকিয়ে থাকতে পারব না আরকি। আমি আস্তে করে উড়ে গিয়ে তার মাথায় বসলাম। আনন্দে বুকটা ধুকপুক করছে। না জানি রক্তটা কত লালচে, উষ্ণ, ঈষৎ লবণাক্ত...এবং pH 7.5!

Moral: রক্ত এক ধরনের লাল বর্ণের ঈষৎ ক্ষারীয় তরল যোজক কলা।