উইন্টার স্কুল ২০১৫

এবার আমি শুরু করি! আমার এইটা প্রায় রীতিই হয়ে যাচ্ছে, ক্যাম্প শেষে সবার হাউকাউ থামার পর আমার বকবক করার ইচ্ছে হয়। যাকগে, ক্যাম্পের ভিতরের ঘটনা তো মোটামুটি সবাই জানিস, আমি একটু বাইরে দিয়ে, এদিক-ওদিক দিয়ে গল্পগুলো বলি।

মাসদেড়েক আগে, কারওয়ান বাজারে একটা ভ্যানগাড়ির উপর বসে চা খেতে খেতে আমরা এই ক্যাম্পের একটা খসড়া পরিকল্পনা বানাচ্ছিলাম। তো, আমি তখন একটু হতাশ ছিলাম, যেহেতু আমরা এই ধরনের ক্যাম্প আগে করি নি। “এই ধরনের ক্যাম্প”! আমি ভেবেছিলাম, এই ক্যাম্পে আমাদের মত পিচ্চিগুলো আসবে না, যারা আসবে তাদের চোখ হবে মৃত, আর চুল হবে ধূসর। (আমার আশেপাশে যেসব পিচ্চি আছিস তোদের হয়তো ব্যাপারটা আশ্চর্য লাগতে পারে, কিন্তু সত্যি, আমি মাঝেমধ্যেই মৃত পিচ্চি দেখেছি। তাদের আত্মা মারা গেছে তো, ওরা তোদের মত এত হাসে না। নির্বিকার মুখে বসে থাকে। আমার মৃত পিচ্চি ভালো লাগে না।) তো, ক্যাম্পের প্রথমদিন আমি যখন ভার্সিটি থেকে এসে ক্যাম্পে ঢুকলাম, রীতিমত বেকুব হয়ে গেলাম! আরে জোস, এসব তো দেখি আমাদের পিচ্চি। এই যে এখানে অরিত্র হাত নাড়ছে, ওদিকে হৃদি বসে মুচকি হাসছে, পিছনে রাহাত বাচ্চা-বাচ্চা চেহারা করে বসে আছে। আর সব পিচ্চি চোখ বড়-বড় করে তাকাচ্ছে, পুরো পৃথিবীটাই দেখে ফেলবে একেবারে! আমার মন পুরোই ভালো হয়ে গেল।

আমার মন দ্বিতীয়বারের মত ভালো হল, পুরো দুম করে, বহেমিয়ান র‍্যাপসডির গিটার রিফটা বাজানোর সময় যেমন দুম করে সবকিছু ভেঙে পড়ে, আমারও ওরকম একটা অনুভূতি হল, যখন আমি বিজ্ঞান জাদুঘরে ঢুকলাম! বিশ্বাস না হয় তো শহীদ মিনারের আট টাকার চা নিয়ে আয়, আমি সেটা স্পর্শ করে বলে দিচ্ছি, এক মুহূর্ত লাগে নি, আমি বুঝে গেলাম ক্লু হান্ট গেমটা দাঁড়িয়ে গেছে, আমি ঢুকেই দেখলাম তোরা দৌঁড়ে বেড়াচ্ছিস, তোরা উত্তেজিত হয়ে চারদিক দেখছিস, জুনায়েদ ভাইয়া হাসছে, আর আমি, আমি তখন দুই হাত উপরে তুলে বিজয়ীর একটা ভঙ্গি করলাম, আমরা কাজটা করে ফেলেছি! (আচ্ছা তোরা কয়জন শাওনের কথা মনে করেছিস? শাওন যে রাতের পর রাত খাটাখাটনি করে এই গেমটা দাঁড় করিয়েছে, এটা জানিস? ওর আম্মু অসুস্থ দেখে ক্যাম্পের পুরো সময়টা সে থাকতে পারে নি। এরপরেরবার শাওনের সাথে দেখা হলে ওকে একটা চকলেট খাওয়াতে পারিস।)

আর আমার মন তৃতীয়, চতুর্থ, এবং অসংখ্যবারের মত ভালো হল, তোদের একেকজনের সাথে কথা বলতে গিয়ে। তোদের কোনো ধারণাই নেই তোরা কী পরিমাণ জোস একেকজন। প্রতিবার, প্রতিটা ক্যাম্প থেকে আমি যেই পরিমাণ ভালোবাসা নিয়ে ফিরেছি, সেটা দিয়ে হয়তো পুরো শহরটাই ভাসিয়ে দেয়া যাবে। আর বুড়োদের দল, দশ থেকে পনেরো ব্যাচের বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা, আপনারা অবশ্য জানেন আপনারা জোস। আপনাদের সাথে আমার আত্মিক কথাবার্তা এত বেশি পরিমাণে হয় যে, মুখে কিছু না বললেও চলে।

এই যে, এইবার আসছে আমার পুরনো উক্তি।

এত মুগ্ধতা নিয়ে কী করব বুঝতেসি না!

পিচ্চিরা, তোদের জন্য ভালোবাসা।