এলোকথন (মৃগশিরা ২৪:১)

শীতটুকু নামেমাত্র হলেও, এইসব শীতের রাতে আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে।

আমি ঠিক ব্যাখ্যা করতে পারি না, কারণ কাক-না-ডাকা ভোরে উঠে যখন কাক-ডাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে আমাকে একটা দিন পার করতে হয়, এবং এরপর আরামবাগের বিপরীতে প্রচণ্ড চায়ের তৃষ্ণা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, এবং এরও পর, আমাকে যথাক্রমে ও বিপরীতক্রমে হাঁটতে ও দাঁড়াতে হয়—তখন আমি ব্যাখ্যা করতে পারি না—কেন এইসব শীতের রাতে (কিংবা সন্ধ্যায়) আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে।

ভাগ্যে তিনি ছিলেন। নয়তো হয়তো জোর গলায় এটুকুও বলতে পারতাম না যে, আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে। বড়জোর ‘ক্যাঙ্কা লাগতিসে গে বা’ বলেই থেমে যেতে হত, কিংবা আরেকটু স্পষ্ট করে বললে—আমাকে থমকে যেতে হত, প্রচণ্ড শক্তিতে নিজেকে প্রকাশ করার চেষ্টা করতাম, আমি চিৎকার করতে চাইতাম, এবং শেষপর্যন্ত, ‘ক্যাঙ্কা জানি লাগতিসে’-তে এসেই থমকে যেতাম।

এই মৃত্যুর কারণ কি কেবল এই যে, আমরা ক্লান্তিটুকু, আমাদের বিষণ্নতাটুকু রাখার জন্য একটা ছায়া খুঁজে বেড়াই?

কিংবা, ছায়ার আশ্রয়টুকুতে আসার ঠিক পরমুহূর্তেই কি এক ধরনের বিষণ্নতাবোধ আমাদের আক্রান্ত করে? আমাদের ক্লান্ত, ক্লান্ত করে?

আমি ঠিক ব্যাখ্যা করতে পারি না, কারণ এই শহরের না-দুপুর-রোদে বের হয়ে যখন দুপুর-রোদে আমাকে পাঁচটা টাকা বাঁচাতে হয়, এবং এরপর নানুর বিপরীতে প্রচণ্ড কথার তৃষ্ণা নিয়ে বসে থাকতে হয়, এবং এরও পর, আমাকে যথাক্রমে ও বিপরীতক্রমে দুধ-চা ও দুধ-চা খেতে হয়—তখন আমি ব্যাখ্যা করতে পারি না—কেন এই ক্লান্তিটুকু আমি রাজপথের মাঝে (কিংবা চৌরাস্তার মোড়ে) বয়ে বেড়াই।

ভাগ্যে তিনি ছিলেন। নাহলে হয়তো জোর গলায় এটুকুও বলতে পারতাম না যে, তোমার প্রিয় ছায়ার তলে ক্লান্তিটুকু রাখি। বড়জোর ‘একটা বাক্য আছে’ বলেই খেলা শেষ করতে হত, কিংবা আরেকটু স্পষ্ট করে বললে—আমাকে থমকে যেতে হত, তীব্র কামনায় আমি নিজেকে প্রকাশ করার চেষ্টা করতাম, আকাশ-কাঁপানো চিৎকারে চারিদিক বিদীর্ণ হয়ে যেত, এবং শেষপর্যন্ত, ‘এই তো, আর একটা কথা’-তে এসেই থমকে যেতাম।

এই ক্লান্তির কারণ কি কেবল এই যে, এইসব শীতের রাতে আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে?

শীতটুকু নামেমাত্র হলেও, এইসব শীতের রাতে আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে।