ইমপ্রেশন: স্বপ্ন (শ্রবণা ২৫:১)

এবং তার মনে হয়, সে যেন স্বপ্নের মাঝে সন্ধ্যা দ্যাখে। বাসার বারান্দায় দাঁড়ায়ে সে ঘন নীল সন্ধ্যা নেমে আসতে দ্যাখে, বিষণ্ন সেই সন্ধ্যায় টুপুরটাপুর বৃষ্টি নামতেও দ্যাখে। হয়তো পাশের বাসার জানালা দিয়ে আসা হলুদ আলো সেই নীল সন্ধ্যার বিপরীতে তার মনে এক ধরনের চিত্রময়তার জন্ম দেয়, এবং তার মনে হয়, যেন পাশের বাসায় কেউ একজন মরে গেছে। 

এবং মৃত মানুষটার পরিচয়ও সে তৎক্ষণাৎ জানতে পারে। ফলে তার ভেতরে এক গভীর হাহাকার জন্ম নেয়, কান্নায় রীতিমত কাঁপতে কাঁপতে সে জেগে ওঠে। 

অথবা এর সবই হয়তো মিথ্যা—বস্তুত সে কখনই জেগে ওঠে নাই—কেননা কান্নার ভেতরে জাগরণটাও হয়তো স্বপ্নের অংশ। সুতরাং সে স্বপ্নের গভীর থেকে গভীরে ডুবতে শুরু করে, এবং সে বুঝতে পারে, এই নীল সন্ধ্যায় পাশের বাসার হলুদ আলোর ভেতরে কেউ মরে গেছে, এবং সেখানে যেতে চাইলে এই বৃষ্টির মাঝে বাসার পিচ্ছিল দেয়াল বেয়ে উঠতে হবে। 

অদ্ভুত—জেগে ওঠার পর সে ভাবে—সিঁড়ি-সিঁড়ি বাসায় কেন তারে দেয়াল বেয়ে উঠতে হবে? 

কখনো ধুলাময় গ্রিল ধরে ঝুলে, কখনো শ্যাওলাময় সানশেডে পা হড়কাতে-হড়কাতে, কালিঝুলমাখা নব্বই দশকের সরকারি কলোনির নোনা দেয়াল বেয়ে ওঠার কাজটা বাস্তবে যেমন অসম্ভব—স্বপ্নেও ঠিক অতখানিই অসম্ভব মনে হয় তার। 

কিন্তু সে তো একসময় (হয়তো দেয়াল বেয়ে ওঠার, কিংবা না-ওঠার অনেক অনেক পরে একসময়) জেগে ওঠে, এবং পূর্ব-অভিজ্ঞতার সাথে এই স্বপ্ন সম্পর্কিত করতে পারে—তার মনে পড়ে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন সেই দিনের কথা, শ্রাবণের যেই দুপুরে এই শহরে শীতের কুয়াশা নেমে এসেছিল, এবং কোনো পূর্বসংকেত ছাড়াই সে দেখেছিল, মানুষ রাক্ষস হয়ে যায়, চোখ তাদের তিনগুণ বড় হয়ে যায়, আঙুলগুলো হয় ছুরির মত ধারালো, তারা তেড়ে আসে, তারা ফুঁড়ে আসে, কুয়াশার পর কুয়াশায় তারা সূর্যের আলোরে তাড়ায়ে নিয়ে যায়। 

এবং, যেহেতু সে একসময় জেগে ওঠে, তার মনে পড়ে, কুয়াশার সেই দিনে মহল্লার পুরনো বান্দরের মত দেয়াল বেয়ে সে উঠেছিল বটে—কখনো ধুলাময় গ্রিল ধরে ঝুলে, কখনো শ্যাওলাময় সানশেডে পা হড়কাতে-হড়কাতে। 

সে স্বপ্নে ডুবতে থাকে। সদ্য মরে যাওয়া মানুষটার মুখ তার মনে পড়ে, ফলে নীল সন্ধ্যার টাপুরটুপুর বৃষ্টির মাঝে সে অশ্রুবর্ষণ করতে থাকে। 

এবং জেগে ওঠার পর তার মনে এই বিভ্রম জন্ম নেয় যে, বস্তুত বৃষ্টিকে সে নিদ্রিত অবস্থায় এবং অশ্রুকে জাগ্রত অবস্থায় পড়তে দ্যাখে।