আমার খসড়া

কিন্তু দিনে দিনে যে একটা জাদুবাস্তবতার পৃথিবীতে ঢুকে পড়ছি—তার কী হবে!

পৃথিবীর প্রায় সবাইকে বোধহয় বলে ফেলেছি, তোহফা আমাকে একটা মেইল দিয়েছে।

আর পৃথিবীর সবাইকে বলে ফেলেছি, তানভীর ভাইয়ের সাথে একদিন আড্ডা দিয়েছি।

হঠাৎ একটা মেইল, অকারণ একটা আড্ডায় কী সুন্দর একেকটা কথা চলে আসে না? জানি, তবু যেন জানতাম না, তবু যেন ভালো লাগে।

আমি ভাবছি ব্লগটায় আবার লেখালেখি শুরু করবো। গভীর গল্প লিখে বুকশেলফে ফেলে রাখার মজা আছে বটে, কিন্তু সরল আটপৌরে কথার আনন্দও কি একেবারে কম?

“অর্থপূর্ণ আনন্দের পাশাপাশি অর্থহীন আনন্দের সমষ্টিও কি জীবনে গুরুত্বপূর্ণ? মানুষ পরম সত্যের সন্ধান করে পরম আনন্দের জন্য—এই পরম আনন্দ কি কেবল মহৎ শৈল্পিক আনন্দের মধ্যেই থাকে, নাকি অসংখ্য ক্ষুদ্র বাল্য আনন্দের সমন্বিত রূপেও একে পাওয়া যায়?”

হয়তো যায়। কিছুদিন আগে আমি, আরিফ আর আমানুল্লাহ আমান টিএসসিতে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এ্যানির প্রসঙ্গ ওঠায় আমানুল্লাহ আমান আকাশ থেকে পড়লো, “এ্যানি আপু সত্যিই exist করেন? আমি তো ভাবতাম উনি একজন fictional character!”

আমার ভালো লাগে, নিজেদের এমন উপন্যাসের চরিত্র ভাবতে।

আমার ভালো লাগে রাত সাড়ে দশটায় বাজারের ব্যাগ হাতে করে আলো-ঝলমলে একটা বাজারে দাঁড়িয়ে থাকতে, কেননা ঐসব ঘোরলাগা সময়ে চারপাশের প্রতিটা মানুষকে উপন্যাসের একেকটা চরিত্র মনে হয়।

আর আমি হারিয়ে যাই। চৈত্রের প্রথম বাতাসের মত একটা মমতার বন্যা এসে আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ছেলেবেলার লাল টেপ-টেনিস বল, আমার হারানো ধানমণ্ডি দশ, মেগাসিটির বাস, আম্মুর পনিটেল, স্কুলের ঘাসের ঘ্রাণ—ওরা আমার সামনে এসে দাঁড়ায়—চায়ের কাপ-হাতে শাওনের রূপ নিয়ে, স্কয়ারের আইসিইউতে নামা মৃত্যুর রূপ নিয়ে, সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার আগে উদ্দাম বৃষ্টিতে মুখ তুলে ভেজা আনন্দের রূপ নিয়ে।

গত এক বছরে যদি কিছু শিখে থাকি সেটা হল—সবকিছু একেকটা ডায়নামিক প্রসেস। পিকাসো বদলাবে, স্বাধীনতার সংজ্ঞা বদলাবে।

তুমিও তো বদলাবে! যা যা চাই—ঠিক তাই তাই হয়তো হবে না।

“But, that’s okay. Love is better.”

আমার মনে হয়, নিজেকে উপলব্ধি করার জন্য এই ডায়নামিক প্রসেসটা বোঝা দরকার। আর কিছু না হোক, সপ্তাহে একদিন এইসব খসড়া লিখে ফুস করে বাতাসে ছেড়ে দেই! এদিক-ওদিক বাতাসে টুকরো লেখা ভাসবে, মরিসিও ব্যাবিলোনিয়ার সেই রোদ্দুরে হলুদ প্রজাপতির মত!