পোস্টগুলি

এলোকথন লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

এলোকথন (জ্যেষ্ঠা ২৬:৩)

ছবি
“A human being is essentially a spirit-eye. Whatever you really see, you are that.” তাই যদি হয়, এবং যদি আমি চোখে কেবল অন্ধকারই দেখি— তাহলে আমি কী? আমার মাঝেমধ্যে মনে হয়—একেকটা কথা আমার দিকে আঙুল তুলে কী নির্মম অট্টহাস্য করে! ইউ আর দ্যাট, ইউ আর দ্যাট। একটা ইটালিক ধাঁচে লেখা শব্দ এভাবে আঙুল তাক করে থাকতে পারে? এতখানি নির্দয়ভাবে একটা মানুষকে বিদ্ধ করতে পারে? এইসব মুহূর্তে আমার কানে বৃষ্টির শব্দ আসে। এটা কি একটা রোগ? আমার কেবল দুটা জিনিস মনে হতে থাকে। এক, আমি বৃষ্টির শব্দ শুনতে পাচ্ছি। এবং দুই, আমি একটা সমুদ্রে আছি। লিখেছিলাম, কোথায় কোথায় যেন। বহুবার। আমি মরে যাওয়ার পর কাগজপত্তর ঘাঁটতে গেলে ওসব বের হবার কথা। এই পাগলডা—হ্যায় গভীর আন্ধারে ডুইবা গ্যালে বৃষ্টির শব্দ শুনতে পাইতো, আর হালায় ভাবতো হ্যায় সমুদ্দুরে ভাইসা আছে। একডা নৌকায় কইরা ভাসতেসে। হেই নৌকার পাশ দিয়া পড়তেসে গা বৃষ্টি। ইউ আর দ্যাট। আমার বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আর দশটা মানুষের মতই আমি জানি, মানুষ বাঁচে না। তখন আমার ইচ্ছা করে, নিজেরে বৃষ্টির মত, সমুদ্রের ঢেউয়ের মত একখানে...

এলোকথন (জ্যেষ্ঠা ২৬:২)

ছবি
“Breathe, breathe in the air Don’t be afraid to care Leave, but don’t leave me Look around, choose your own ground. Home, home again I like to be here when I can.”  কে যেন কবে বলেছিল, আর কবে যেন কোথায় পড়েছিলাম—ঘর হচ্ছে এমন একটা জায়গা—তুমি যখনই সেখানে যাবে—তারা তোমাকে গ্রহণ করে নিবে।  কিন্তু, আমি ভাবি—এই গ্রহণটা কি কেবল একপাক্ষিক? একটা জায়গা তোমাকে গ্রহণ করলো, কিন্তু তুমি তাকে নিতে পারলে না। তাহলে কি সেই জায়গাটাকে ঘর বলা যাবে?  আমার তো মনে হয় না।  আমার কাছে ঘর হচ্ছে এমন একটা জায়গা—যেখানে দিনের যেকোনো সময় তুমি নিশ্বাস নিতে পারবে।  যদি মুহূর্তের জন্যেও দম আটকে আসে—তখনই আমার মনে সন্দেহ দানা বাঁধবে। ওটা কি ঘর?  আর যদি প্রতিনিয়ত দম আটকায়—তখন আমি নিঃসন্দেহ হব। ওটা ঘর না।  আমার কাছে ঘর আর আশ্রয়—এই দুটা প্রায় প্রতিশব্দ। প্রায়ই একটার পরিবর্তে আমি অন্যটা ব্যবহার করতে পারি।  একবার গভীর রাতে আমি শেরেবাংলা হলে ঢুকেছিলাম। প্রথম যেই রাতে আমি হলে থাকি। সে রাতে ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে কেবলই ভাবছিলাম, কোথায় যাই, কোথায় যাই। শেষে হলে ...

এলোকথন (জ্যেষ্ঠা ২৬:১)

ছবি
“There is but one truly serious philosophical problem, and that is suicide. Judging whether life is or is not worth living amounts to answering the fundamental question of philosophy. All the rest—whether or not the world has three dimensions, whether the mind has nine or twelve categories—comes afterwards.” আলবেয়ার কামু তাঁর বিখ্যাত দাঁতভাঙা প্রবন্ধটা শুরু করেছেন এই কথাগুলো দিয়ে। সেই প্রবন্ধ আমি পুরো পড়িনি। কিন্তু, বেঁচে থাকাটা আদৌ অর্থবহ কিনা—এটা আমি প্রায়ই ভাবি। একেকটা সময় আসে—যখন এই একটা চিন্তা আমাকে চিরে ফালাফালা করে দিতে থাকে। আমি টুকরো টুকরো হয়ে ঘরময় ছড়িয়ে পড়ি। টেবিলের তলে, বিছানার ওপরে, বুকশেলফের কোণায়, আমার ঘরের ফ্যানের ঢেউয়ে আমার টুকরো ভাসতে থাকে। আমি মুখ্যু মানুষ। নির্বাণ পেতে এখনো অনেক দেরি। মানুষ কেন বেঁচে থাকে, মরে যাওয়ার আগে তার কী কী করে যাওয়া উচিত—এর কিছুই আমি স্পষ্ট করে বলতে পারবো না। তবে হ্যাঁ, আমি জানি—আমি কীসের আশায় বেঁচে থাকি। আমি যখন ছোট—তখন একজন লিখেছিল—নোবেল ছেলেটা ভালোবাসার কাঙাল। একটু ভালোবাসা পাইলে সে নিজেরে বিক্রি করে দেয়। সেই বয়সে...

অবশ আকাশ

ছবি
গত রাতে আমার মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা ভর করেছিল। I thought a lot about life and death. খলিল নানাভাইয়ের কথা আমার মনে পড়ে। ফুলবাড়ির গ্রামে ওনাকে শেষবারের মত যখন দেখি—তখন বিকেল প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। উঠানের উল্টো দিকে গোয়ালঘর ছিলো, ঠিক সেই গোয়ালঘরের মাথায় সন্ধ্যা নামতো। প্রথমে এক টুকরো ঘন অন্ধকার দেখা যেতো, এরপর সারা আকাশ ঐ অন্ধকারে ঢাকা পড়তো। বারান্দার কোণায় একটা খাটিয়ার ওপর খলিল নানাভাই বসে থাকতেন। সেই খাটিয়ায় বসে আমরা হিসাব করেছিলাম, কত বয়স হল ওনার। প্রায় আটানব্বই বছর হয়েছিল। একই বারান্দার একই কোণায়, একই খাটিয়ায় বসে বসে উনি আটানব্বই বছরের জীবন দর্শন করছিলেন। ওনার চেহারা আমার মনে পড়ে না। তবু চোখের শূন্যদৃষ্টির কথা মনে পড়ে। দেখছেন, তবু দেখছেন না। অথবা সব দিকেই শুধু আকাশ দেখছেন, তাই বুঝি কেবল দূরে দূরে তাকাতে হয়। Now, there’s a look in your eyes Like blackhole in the sky তোমার চোখে দূরের আকাশ মিশে থাকে রূপক হয়ে, সিড ব্যারেট হয়ে। আমার আকাশ দেখার কথা মনে পড়ে, আকাশ আমাকে পাগল করে দেয়। এইটুকু একটা মানুষ, এইটুকু একটা জায়গায় বসে চারিদিকে কেবল আকাশ দেখে, এইটুকু একটা ...

আমার খসড়া

ছবি
কিন্তু দিনে দিনে যে একটা জাদুবাস্তবতার পৃথিবীতে ঢুকে পড়ছি—তার কী হবে! পৃথিবীর প্রায় সবাইকে বোধহয় বলে ফেলেছি, তোহফা আমাকে একটা মেইল দিয়েছে। আর পৃথিবীর সবাইকে বলে ফেলেছি, তানভীর ভাইয়ের সাথে একদিন আড্ডা দিয়েছি। হঠাৎ একটা মেইল, অকারণ একটা আড্ডায় কী সুন্দর একেকটা কথা চলে আসে না? জানি, তবু যেন জানতাম না, তবু যেন ভালো লাগে। আমি ভাবছি ব্লগটায় আবার লেখালেখি শুরু করবো। গভীর গল্প লিখে বুকশেলফে ফেলে রাখার মজা আছে বটে, কিন্তু সরল আটপৌরে কথার আনন্দও কি একেবারে কম? “অর্থপূর্ণ আনন্দের পাশাপাশি অর্থহীন আনন্দের সমষ্টিও কি জীবনে গুরুত্বপূর্ণ? মানুষ পরম সত্যের সন্ধান করে পরম আনন্দের জন্য—এই পরম আনন্দ কি কেবল মহৎ শৈল্পিক আনন্দের মধ্যেই থাকে, নাকি অসংখ্য ক্ষুদ্র বাল্য আনন্দের সমন্বিত রূপেও একে পাওয়া যায়?” হয়তো যায়। কিছুদিন আগে আমি, আরিফ আর আমানুল্লাহ আমান টিএসসিতে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এ্যানির প্রসঙ্গ ওঠায় আমানুল্লাহ আমান আকাশ থেকে পড়লো, “এ্যানি আপু সত্যিই exist করেন? আমি তো ভাবতাম উনি একজন fictional character !” আমার ভালো লাগে, নিজেদের এমন উপন্যাসের চরিত্র ভাবতে। আমার ভালো লাগ...

কাকচক্ষু বুড়িগঙ্গা

ছবি
আমার মাঝেমধ্যে সমুদ্রে ডুবে যেতে ইচ্ছে করে।  আমি বৃষ্টির শব্দ শুনতে পাই। অন্ধকার ঘরে বসে, রৌদ্রোজ্জ্বল রাজপথে দাঁড়িয়ে, দুঃখতম দুঃখের ভেতরে আমি প্রবল বৃষ্টির শব্দ শুনতে পাই।  এবং আমার ইচ্ছে করে সমুদ্রে ডুবে যেতে। সমুদ্রের গভীর, সুস্বাদু অন্ধকারে এক ঘাস হয়ে জন্মাতে।  আমি রক্তের কথা শুনি। আমি রক্ত দেখি। একসময় আমি অন্ধ হয়ে যাই, পুরো পৃথিবীর গায়ে লেগে থাকা ছোপ ছোপ রক্ত আমাকে অন্ধ করে দেয়, আমি চিৎকার করে চোখ থেকে রক্ত মোছার চেষ্টা করি।  আমি গাড়লদের রাস্তার ড্রেনের পাশে বসে মাথার খুলিটা খুলে ফেলতে দেখি। ড্রেন থেকে আবর্জনা তুলে তুলে মাথায় ভরতে দেখি। আমি দেখি তাদের হা হা করে মানুষের দিকে তেড়ে যাইতে, মানুষের বাচ্চার দিকে তেড়ে যাইতে। আমি দেখি তাদের মানুষ চাবায়ে খায়ে ফেলতে, আমি শুনি তাদের—  না, এরপর আমি আর শুনতেও পারি না, কেননা আমার মনে হয় আমার সারা গায়ে কালি লেগে গেসে।  স্কুলব্যাগ ঘাড়ে একটা পিচ্চিকে দেখলে আমার অথৈয়ের কথা মনে পড়ে, কিংবা কে জানে, হয়তো ফারহার কথাই মনে হয়, কিংবা হতে পারে সেটা রাহাত, হয়তো সৌমিক। ফলে বছরের একেকটা সময় পত্রিকা খুলে আ...

এলোকথন (আষাঢ়া ২৫:২)

ছবি
শেষবিকেলে, সন্ধ্যে নামার আগে আগে রাস্তায় হাঁটছিলাম। এক চাচাকে বাসে তুলে দিয়ে ঘরমুখো হতেই আবিষ্কার করলাম, বিকেলটা অসম্ভব সুন্দর। এই বাতাসে যতখানি জল ধরার কথা তার চাইতে ইকটুউ বেশি আছে, সুতরাং এদিক-ওদিক জলের কণা হঠাৎ বৃষ্টি হয়ে এর-ওর গায়ে পড়ছে। মানুষজন এতে বিরক্ত হচ্ছে না, বরং বেশ আরামই পাচ্ছে মনে হয়।  বিকেলে স্নান করে বেরিয়েছিলাম, হয়তো একারণেই পবিত্র একটা অনুভূতি হচ্ছিল। বাসার ঢিলেঢালা জামা পড়ে বেরিয়ে পড়ায় ফুরফুরে একটা ভাব কাজ করছিল। আপনমনেই এলাকার রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। চমৎকার কিছু ফাঁকা রাস্তা আছে আমাদের এদিকে—খেয়াল করিনি আগে। কী মিষ্টি গন্ধ তার ফুটপাথে, মধ্যিখানে, প্রতিটা মোড়ে!  আমি বোধহয় পাগল—কেননা আমার রাস্তা ভালো লাগে। রাস্তার এক কোণে চায়ের দোকানে বসে থাকা প্রৌঢ় লোকটাকে দেখে আমার মনে বিচিত্র কিছু বোধ কাজ করে। কোলাহলপূর্ণ রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ নিজেকে জনশূন্য অন্য কোনো রাস্তায় আবিষ্কার করে আমি বিস্মিত হই। কখনো দু হাত পেছনে জড় করে, কখনো এক হাতে বই ধরে, কখনো অন্য হাতে হাত ধরে হাঁটতে গিয়ে আমার নিজেকে পরম সৌভাগ্যবান মনে হয়।  ফলে এইসব মুহূর্তের ঝোড়ো...

এলোকথন (আষাঢ়া ২৫:১)

ছবি
আমি জানি, এইসব এলোকথন একদিন ছাই হয়ে উড়ে যাবে, আর সেই ছাই থেকে জন্মাবে আরো এক রাশ ছাই। ছাইয়ের ধুলা, আমার প্রতিটা দীর্ঘনিশ্বাসের ধুলা, চোখের অজান্তে ভেতরে ঢুকে যাওয়া ধুলা—সকল ধুলা উড়ে বেড়াবে ধুলাময় এই শহরের আকাশে। দেহহীন মাথাগুলো গোলটেবিলের দশপাশে জড় হয়ে ভাবতে বসবে এ থেকে মুক্তি কোথায়, অন্যদিকে মাথাহীন দেহগুলো ধুলারে মেরে মেরে কাদা করে দিতে থাকবে, প্যাঁচপেঁচে সেই কাদায় ডুবে দেহরা চিৎকার করবে, প্যাঁচপেঁচে সেই কাদায় না-ডুবে মাথারা চিৎকার করবে, ফলে নিশ্চিতভাবেই তারা কাদা-সমস্যায় আক্রান্ত হবে।  কেননা এইসব এলোকথন একদিন ছাই হয়ে উড়ে যাবে, আর কে না জানে, ছাই থেকে কেবল ফিনিক্সই জন্মায় না, কখনো জন্মায় কেবল আরেক রাশ ছাই।  তখন সেক্রেটারিয়েটে কার্পেট বিছানো অফিসে বসে দেহহীন মাথার মনে পড়বে, বস্তুত ছাই থেকে ফিনিক্স জন্মায় না, ফিনিক্সই খানিকক্ষণের জন্যে ছাই হয়ে যায়। এবং ক্রমান্বয়ে সে মাথা তুলে উঁকি দেয়, পাখা তুলে ঝাপটা দেয়, একসময় উড়ে যায়, পেছনে পড়ে থাকে তার ছাইটুকু।  সেক্রেটারিয়েটের সুগন্ধ-কফিতে চুমুকের পর চুমুক দিয়ে দেহহীন মাথা হিসাব মিলাতে থাকবে, কিন্তু ধুলোময় শহরে উজ্জ্বল ...

এলোকথন (চিত্রা ২৪:২)

ছবি
আমি আজকাল লিখতে পারি না।  এতে আশ্চর্য হবার তেমন কিছু নেই। সত্যিকারের লেখক লিখবে, ভণ্ডরা লিখবে না—এটাই স্বাভাবিক। পুরো স্বাভাবিকতার মাঝে একমাত্র সমস্যা হল, আমার লিখতে না পারলে খারাপ লাগে। আর কিছু না হোক, পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ভরে আমার ডায়েরি লিখতে হয়। এলোকথন শিরোনামে এলোমেলো কথাবার্তা লিখতে হয়। কখনো হালকা গল্প, কখনো ভারী গল্প বানাতে হয়। তবেই আমি শান্ত থাকি। রাত্রিবেলা ঘুমোতে পারি, সারাদিন শরীরটা ঝরঝরে থাকে।  ক’মাস হল, এর কোনোটাই ঠিকমত হচ্ছে না। খ্যাপার মত দিনরাত বই পড়ছি, শহরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি, আড্ডা দিচ্ছি—কিছুই কাজ করছে না। ঘুরছি শহরের বাইরেও। কেবল গত তিন মাসে যত ঘুরেছি—সারা জীবন অতখানি ঘুরেছি কিনা সন্দেহ আছে। কখনো মন ভালো করছি, হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দিচ্ছি, আবার তীব্র বিষাদে আক্রান্ত হয়ে চুপ করেও বসে থাকছি।  কাজ হচ্ছে না কিছুতেই।  অর্থাৎ আমি লিখতে পারছি না। অথচ এ ব্যাপারটা এখন সবচেয়ে বেশি ঘটার কথা। এই গত বছরেও, প্রতিটা নতুন বোধের সাথে কিছু না কিছু লিখে ফেলতাম—বাচ্চাদের মত করে হলেও। সে হিসেবে গত তিন মাসে যতখানি ঘাত-অভিঘাত পার করেছি—ওতে তো লিখে কূল পা...

এলোকথন (চিত্রা ২৪:১)

ছবি
চৈত্রের প্রাকমুহূর্তটা সময়ে সময়ে খুব নির্মম হয়ে দাঁড়ায়। হয়তো আমরা শহরের চেনা পথটা ধরে হাঁটি, হয়তো প্রেসক্লাবের সামনের একটা বাসে ঝুলতে থাকি, কিংবা ব্যস্ততম রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করি, এবং ঠিক তখনই চৈত্রের বাতাস এসে একটা ঝাপ্টা দিয়ে যায়।  কখনো মুহূর্তের জন্য, কখনো দীর্ঘক্ষণের জন্য।  এতে কিছু এসে যায় না, কারণ বাতাসের প্রথম স্পর্শেই আমরা আনমনা হয়ে যাই। পুরো পৃথিবীটা জলরঙে আঁকা একটা ছবির মত মনে হয়। আফ্রেমভের উজ্জ্বল রঙ না, তোহফার দুঃখ-মেশানো হালকা রঙ।  হাতে থাকা বইটাতে চোখ বোলানোর চেষ্টা করি। শব্দগুলো আমাদের চোখ পর্যন্ত আসে, মর্মে পৌঁছে না। হেডফোনজুড়ে হ্যারিসন অলৌকিক কিছু কথা আওড়াতে থাকে। শব্দগুলো আমাদের কান পর্যন্ত আসে, মর্মে পৌঁছে না।  অর্থাৎ আমরা একটু আনমনা হয়ে যাই।  এবং এইসব মুহূর্তে আমার অনিকের কথা মনে পড়ে। কলেজ-পরবর্তী জীবনে তার প্রতি আমার নির্বিকারত্বের কথা আমার মনে পড়ে।  এবং অমন নির্বিকারত্ব সন্দেহাতীতভাবে ছিল একটা পাপ। এই পাপের প্রতিফল কীভাবে আসবে—সে কথাও আমার ভাবতে ইচ্ছে করে।  যদিও ভয় লাগে। ইচ্ছে করে...

চাঁদ নেমে আসে

ছবি
“Everybody had a hard year Everybody had a good time Everybody had a wet dream Everybody saw the sunshine Oh yeah, oh yeah, oh yeah!” গানটা হঠাৎ করে মাথায় ঢুকে গেছে। অবশ্য, গান মাথায় ঢোকে হঠাৎ করেই। অন্যদের ব্যাপারটা জানি না, আমার ক্ষেত্রে একেকটা গান মাথায় ঘুরতে শুরু করে, আর আশেপাশের সকল কিছুর সাথে সেটার একটা সম্পর্ক দাঁড়িয়ে যায়। যেমন, আজকে! আজ দুপুরে (কিংবা সকালেও হতে পারে) মাথায় একটা বাক্য এসেছিল। কোথাও লিখে রেখেছিলাম, ‘সেই জানালা দিয়ে রাত্রিবেলা চাঁদ নেমে আসতো।’ এই একটা বাক্যই। এবং কী সুন্দর, এই বাক্যটার সাথেই গানটার সম্পর্ক দাঁড়িয়ে গেল। Everybody had a hard year, everybody had a good time …। ধরো, জৈষ্ঠ্যের মাঝামাঝি কোনো এক সময়। বেশ গরম, মাথার ওপরে ঘোরলাগা বনবন শব্দে ফ্যানটা ঘুরছে। মাত্রই সন্ধ্যে পার হয়ে রাত নেমেছে। তুমি ঘুমিয়ে ছিলে, কিছুক্ষণ আগে জেগে উঠেছো। ঘুম ভেঙে দেখলে, ঘরটা এলোমেলো, ঘুটঘুটে অন্ধকার। খোলা জানালা দিয়ে চাঁদ নেমে আসছে। তার আলো পড়ছে তোমার চোখেমুখে, সারা বিছানায়… ঠিক সেই মুহূর্তে একটা মানুষের কেমন অনুভূতি হয়? আমি জানি না। তবে দ...

এলোকথন (কৃত্তিকা ২৪:২)

ছবি
এই পৃথিবীর কেবল দুটো মানুষের সাথে আমি ঝগড়া করি।  কিছুক্ষণ আগে ব্যাপারটা খেয়াল করলাম। এমনিই।  আবার হয়তোবা, এমনিই না। হয়তোবা কোন কারণ ছিল ব্যাপারটা খেয়াল করার পেছনে।  ক্লাস বন্ধ, বাসাতেই বসে ছিলাম সকাল থেকে। দুপুরে কী মনে করে শহীদুল জহিরের বইটা হাতে নিলাম।  এই বইটার কথা আমি প্রথম শুনি একটা ভুতুড়ে দিনে, ময়মনসিংহের একটা মানুষের কাছ থেকে। এবং আমি এই বইটা পড়া শুরু করি আরেক ভুতুড়ে দিনে, জ্বরের প্রবল ঘোরে বিভ্রান্ত হয়ে বসে থাকার দিনে।  এ কথাটা অদ্ভুত যে, আমি কেন আজকেই এই বইটা শুরু করলাম, একটা সাধারণ দিনেও এই বই অসাধারণ বিভ্রম তৈরি করতে পারত, আর আজকের দিনটা বেছে বেছে আলাদাভাবে সুররিয়েলিস্টিক একটা দিন।  এবং এ কথাটাও অদ্ভুত যে, বইয়ের প্রথম গল্পটাই শুরু হল ভূতের গলি থেকে, যে গলির একটা মানুষ ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য রীতিমত খেপে আছে।  হতে পারত না অন্যকিছু? হতে পারত গল্পটা শুরু হয়েছে একেবারেই নিরস কোন জায়গা থেকে, এই ধর, শ্যামলী থেকেই, আর এরপর, হতেই পারত, শ্যামলীর সেই মানুষটা খেপে আছে ততোধিক সাধারণ কোন জায়গায় যাওয়ার জন্য, হয়তোবা সেটা গাজীপুর—...

এলোকথন (কৃত্তিকা ২৪:১)

ছবি
এক. কিছুক্ষণ আগে একটা হুমকি পেয়েছি। চুপচাপ বসে ছিলাম। হঠাৎ করেই ধমকটা খেলাম। আজ রাতেই কিছু একটা না লিখলে আমি নাকি শেষ! শ’খানেক মাইল দূরে বসে এত সহজে হুমকি দেয়া যায়—কে জানতো। কী আর করা। যা মনে আসে, লিখে ফেলি। সমস্যাটা হল যে, মনে অনেক কিছুই আসে। সেই যে, words are flowing out like endless rain into a paper cup. কাজেই লিখতে গিয়ে বারবার দ্বিধায় পড়তে হয় আমাকে। গত কয়েক সপ্তাহে খুব অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমার আফসোস হচ্ছে যে, আবারও ডায়েরি লেখার অভ্যাসটা নষ্ট হয়ে গেছে আমার। যদি থাকতো, তবে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ভরে যেত। এমনও তো দিন গেছে, লেখার তোড়ে রীতিমত আমার হাত কাঁপতে শুরু করেছে—শব্দগুলো যেন মাথাতেও আনার দরকার হচ্ছে না—চিন্তা থেকে সরাসরি আমার আঙুলে চলে যাচ্ছে, আর আমি লিখে ফেলছি। কে জানে, হয়তো সামনেই অমন দিন আবার আসবে। আজ অথৈ ফোন দিয়েছিল, অনেকদিন পর। প্রায় প্রতিদিনই ভাবি, পিচ্চিটাকে ফোন দিব। সেই কবে একবার সঞ্জীবের একটা গান শুনতে বলেছিল, সেই কথাটুকুর উত্তর না দিয়ে আমি যে ডুব দিলাম, আর খোঁজ নেই। অথৈ ফোন দিয়ে প্রথমে এই কথাটাই জিজ্ঞেস করল, আমি কোথায় হারিয়ে গেছি। আম...

এলোকথন (অশ্বিনী ২৪:৪)

ছবি
আজ বেশ ক’দিন হল, আব্বু বাসায় নেই। আব্বু বাইরে গেলে আমরা বড় একটা টের পাই না। ছোটবেলা থেকেই এমনটা হয়ে আসছে। ব্যাপারটা মোটেও আশ্চর্যের না, কারণ আব্বু যখন দেশে থাকে, তখনও তার সাথে খুব একটা দেখা হয়—এমনটা দাবি করা যাচ্ছে না। একই বাসায়, একইসাথে থেকে কেন আব্বুর সাথে নিয়মিত দেখা হয় না—এটাই বরং আশ্চর্যের। সেই ছোটবেলা থেকে দেখি, সকালবেলা উঠে আব্বু দৌঁড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়, অফিস আছে। কিছু মানুষ থাকে না, কাজপাগল ধরনের? অমন একটা মানুষ। অফিসে গিয়ে সে জ্যান্ত মানুষের মতই কাজ করতে থাকে, ঝিমায় না। বরং আমি আস্তে হাঁটলেই উল্টো ধমক দেয়, ‘আই এ্যাম সিক্সটি ইয়ার্স ওল্ড, আমি পারলে তুমি পারবা না কেন?’ সক্কালবেলা বেরিয়ে ফেরে বিকেলবেলা। (ঘুমটা কি বেশি পেয়েছে? আসলে আব্বু তো ফেরে রাত এগারোটায়। একটা ঘোরের মধ্যে লিখতে গিয়ে ‘বিকেল’ লিখে ফেললাম।) যাকগে, আব্বু ফেরে রাত এগারোটায়। এবং তখনও জ্যান্ত মানুষের মতই বাসায় ঢোকে, আর যদি বাসায় দাদু থাকে, তবে তো কথাই নেই, কে বলবে রাত এগারোটার বেশি বাজে, এবং এই বাসায় সবচেয়ে ছোট মানুষটার বয়স বাইশ? আব্বু আর দাদু মিলেই ছোটদের অভাব পূরণ করে দেয়—রীতিমত উৎফুল্ল ভঙ্গিতে দুজন...

এলোকথন (অশ্বিনী ২৪:৩)

ছবি
লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে আজ। আজকাল লেখার ইচ্ছেটা আসে ছাড়াছাড়াভাবে। ব্যাপারটা মোটেও অস্বাভাবিক না, কারণ আমি কাজ করতে করতে মারা যাচ্ছি। জানি না, হয়তো সাতসকালে উঠে দৌঁড়ে বাসা থেকে বের হই। ভার্সিটিতে যতক্ষণ পারি ক্লাসনোট তুলি। যেদিন টানা পাঁচটা ক্লাস থাকে সেদিন শেষ ক্লাসটুকুতে সবাই কলাপ্‌স করে। মাথা আছড়ে বেঞ্চে পড়ে যায়। আমি চারদিকে তাকাই, দেখি সবাই মরে যাচ্ছে, অথবা গেছে, সেই কবে! কনকের মত দু-একজন তবু বেঁচে থাকে, নিলয়ের মত দু-একটা পাগল এখনো স্বপ্ন দেখে, তবু বাকিরা তো মরে গেছে। আমি নিজেও কলাপ্‌স করি কখনো, বেঞ্চে মাথা রেখে আক্ষরিক অর্থেই স্বপ্ন দেখি। গত কিছুদিন যেসব স্বপ্ন দেখেছি—তার মাথামুণ্ডু কিছুই নেই। একদিন দেখলাম, মুনির স্যার এসে কংগ্রেসের এক্সপেরিমেন্টের জিনিসপত্র সব ফেলে দিয়েছেন। আমার বড় ভয় হয়, আমি একদিন এসব স্বপ্ন দেখে ক্লাসেই চিৎকার করে জেগে উঠবো। কায়কোবাদ স্যার এসে চশমার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে বলবেন, ‘ইউ আর সো স্মার্ট, ক্লাসে ঘুমোলেই তোমার পড়া হয়ে যায় তাই না?’ ক্লাস থেকে বেরিয়ে দৌঁড়ে অফিসে যাই, এবং আবারও কাজ শুরু করে দেই। আগ্রহের সাথেই করি, সুতরাং কাজের মাঝে ডুবে থাকলে টের পাই না চারপা...

এলোকথন (অশ্বিনী ২৪:১)

ছবি
এক. আমার একটা ফ্যান্টাসি আছে। আমি মানুষজনকে পকেটে করে ঘুরি। মানে, আক্ষরিক অর্থে তো আর একটা মানুষকে পকেটে পুরে ফেলা যায় না, তবে কেউ যখন ফোনে খুদেবার্তা/মেইল দেয়, সেটা না পড়েই পকেটে নিয়ে ঘুরতে থাকি। ধর, সকালবেলা এ্যানি একটা মেইল দিল। ফোনের পর্দায় ওর একটা ছবি আসবে, মেইলের খানিকটা অংশ আসবে। আমি মেইলটা আর খুলি না, ওভাবেই ভার্সিটি চলে যাই। দু-এক ক্লাস পরে হয়তো কোন কাজে ফোনটা পকেট থেকে বের করি। আবার এ্যানির মুখ দেখা যায়, সেটাকে আনমনে একটু ঝাড়ি দিয়ে আবার পকেটে রেখে দেই। দুপুরে খাবার সময় হয়তো অকারণেই ফোনটা বের করি, এবং আবার অবাক হয়ে যাই, আরে, এ যে এ্যানির মুখ দেখা যাচ্ছে, মেইল এসেছে। আবার ফোনটা পকেটে রেখে দেই, মেইল না খুলেই। সে নাহয় খোলা যাবে এক সময়—অত তাড়াহুড়োর কী আছে। গত দুদিন ধরে রিয়াকে পকেটে নিয়ে ঘুরছি। এই উত্তর দিবো-দিবো করে খেয়াল করলাম, এখনও দেইনি। থাকগে। তাড়াহুড়োর তো কিছু নেই, একসময় ফোন দিয়ে বকে দিলেই হয়ে যাবে। অবশ্য, ছেলেদের সাথে এই ফ্যান্টাসিটুকু করা কঠিন। মেইল দেয়ার সাথে সাথে উত্তর না পেলে আরিফ-আকিবের মাথা এলোমেলো হয়ে যায়, বুক ধড়ফড় করতে থাকে। পানির পিপাসা পায়। মনে হয়, ...