এলোকথন (বিশাখা ১)
[আবারও নিষিদ্ধ! আরামবাগ-জিগাতলা-ময়মনসিংহের জন্য। পরীক্ষা শেষ কর আগে। গাধা।]
ইদানিং কী হয়েছে জানি না, যা মনে আসছে তাই লিখে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে। যা ইচ্ছে তাই লিখে ফেলা কোন কাজের কথা না, আনিসুল হকের মত একজন মানুষ এই করতে করতেই বখে গেলেন।
অবশ্য, আমি যাচ্ছেতাই লিখলে বড় কোন সমস্যা হওয়ার কথা না। আনিসুল হকের লেখার অর্থ বাংলা সাহিত্য। হেলাল হাফিজের লেখার অর্থ বাংলা কাব্য। ওনারা যা মনে আসে তাই ছাপিয়ে দিলে এই ভাষার গায়ে কালিমা লাগে। আমি নিতান্ত খেলো একজন মানুষ—এই যুক্তিতে আমি যাচ্ছেতাই লিখে যাই। এবং ইফরীতের ভাষায়, "নোবেলের সেসব লেখা তার ব্লগে ছাপাও হয়ে যায়"।
আচ্ছা হোক। তাতে খুব বেশি ক্ষতি নেই বুঝিবা।
খুব, খুব অদ্ভুত, একটু আগে বাসার সামনের রাস্তাটা ধরে হাঁটছিলাম। কিছুদূর আগানোর পরেই মাথা এলোমেলো হয়ে গেল—সারা রাস্তা জুড়ে খুব চেনা একটা ঘ্রাণ। ঘ্রাণটা চেনা, কারণ আমি প্রতিবার দাদুবাড়ি গেলে এই গন্ধটা পাই। পুরো ঠাকুরগাঁও শহরজুড়েই আমি আলাদা আলাদাভাবে এটা পাই। পোড়াকাঠের ঘ্রাণ থেকে শুরু করে মুদির দোকানের ঘ্রাণ—সবকিছুই আমাকে সেই ফেলে আসা শহরটার কথা মনে করিয়ে দিল।
এবং কয়েকটা মানুষের কথাও মনে করিয়ে দিল। এই ধরো, সুপ্তি। কী নিস্তরঙ্গ একটা শান্তির জীবন কাটাচ্ছে মেয়েটা! মাঝেমধ্যে ঠাকুরগাঁয় গেলে আমি সেটা একটু এলোমেলো করে দিয়ে আসি, দিনদুয়েক অস্বাভাবিক ব্যস্ততা যায়। একসময় আমি ফিরে আসি। এবং সুপ্তির জীবনটা আবারও শান্ত হয়ে যায়। মাঝেমধ্যেই ফোন দেয়, মেসেজ দেয়। আমি উত্তরও দেই না। এমন কিন্তু না যে, অবহেলা করে দেই না, মোটেই না। পরিবারের সবচেয়ে ছোট বোনকে অবহেলা করার কোন কারণ নেই। কিন্তু...দেই না উত্তর, এমনিই। মাঝেমধ্যে ভাবি, একদিন ফোন দিয়ে বকবক করব। এই ভাবনা পর্যন্তই, এর চেয়ে বেশি আর আগানো হয় না। আমরা শহুরে মানুষ, ব্যস্ত মানুষ। পুরো পৃথিবীটাই আমাদের শাসন করতে হয় তো, পৃথিবীর এক কোণে ছোট্ট যেই মানুষটা আমাদের ভালোবাসে আমরা তাকে সময় দিতে পারি না।
যত্তসব।
কিন্তু...তবু, মাঝেমধ্যে এই যে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আমার হারানো শহরটার ঘ্রাণ পাই, সেই শহরের মানুষগুলোর কথা মনে পড়ে যায়, দাদুর কথা, ওদের নিস্তরঙ্গ, শান্ত জীবনের কথা মনে পড়ে যায়, তখন মাথার ভেতরটা হঠাৎ করেই এলোমেলো হয়ে যায়। মানে...ধরো, ধরো—
"বুকের মধ্যে উথালপাথাল
ভাবনা-নেশায় চিন্তা মাতাল
ভাবনাগুলো জড়িয়ে যাচ্ছে যেন
এমনিতে নেই কারণ কোনো
চেষ্টা করেই বলছি শোনো
ভাবনাগুলো এমন হল কেন!
দৃষ্টিটা নয় স্বচ্ছ তেমন—
ঝাপসা কাঁচের চশমা যেমন
চোখের সামনে এমনি বসে থাকে
হাতের কাছে হয় না খবর,
কী দেখতে যাও দিল্লী লাহোর
হাসতে হাসতে লালন বলে রাখে।
দেখতে চেয়ে তোমার দৃষ্টি
নামলো কথায় সুরের বৃষ্টি
ভাবনা আমার ঝাপসা হল আরো
কোথায় তোমায় দেখবো ভাবি,
কোথায় স্বপ্নলোকের চাবি—
রবীন্দ্রনাথ বলেননি একবারও।"
আহা, কবীর সুমন! কীভাবে লেখে মানুষটা এত সুন্দর কথা?
এবং, কীভাবে লেখে মানুষটা এত সত্যি কথা? আসলেই তো, 'কোথায় স্বপ্নলোকের চাবি—রবীন্দ্রনাথ বলেননি একবারও'!
ভাবছি, খুব দ্রুতই সুপ্তির সাথে ফোনে বকবক করতে হবে। কবে খেলাটা শেষ হয়ে যায়, বলা যাচ্ছে না। শেষে পিচ্চিটা সারাজীবন আফসোস করবে, 'ভাইয়াটা গেল তো গেল, একবার কথাও বলে গেল না।' উঁহু, না, এমনটা হতে দেয়া যাবে না। এবং দ্রুতই আমাকে ঠাকুরগাঁও যেতে হবে। মামীকে আরেক কাপ চা বানাতে বলতে হবে, বাসার পেছনের ঐ বাঁশের চৌকিতে বসে আবারও সুপ্তির সাথে আড্ডা দিতে হবে।
My bad. আমাকে আসলে অনেক কিছুই করতে হবে। সব কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না—জানা কথা। যেসব শেষ হবে না সেগুলো শেষ করার দায়িত্বটা আরেকজনের ঘাড়ে চাপানোর কথা ছিল। এবং সবচেয়ে হাস্যকর ব্যাপারটা হচ্ছে, দায়িত্বটা আরেকজনের ঘাড়ে চাপানোর কাজটাও বোধহয় শেষ হবে না!
এ তো বড় মুশকিল হল দেখছি!
[যাদের জন্য প্রযোজ্য: সিরিয়াস হয়ে যাওয়ার কিছু নাই। টাইপিং প্র্যাকটিস করতেসিলাম। যা মনে আসচে টাইপ করে ফেলসি। এরপর সেটা ছাপা হয়ে গেসে—এর দায় নিশ্চয়ই কেবল সম্পাদকের।]