এলোকথন (চিত্রা ২৪:১)

চৈত্রের প্রাকমুহূর্তটা সময়ে সময়ে খুব নির্মম হয়ে দাঁড়ায়। হয়তো আমরা শহরের চেনা পথটা ধরে হাঁটি, হয়তো প্রেসক্লাবের সামনের একটা বাসে ঝুলতে থাকি, কিংবা ব্যস্ততম রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করি, এবং ঠিক তখনই চৈত্রের বাতাস এসে একটা ঝাপ্টা দিয়ে যায়। 

কখনো মুহূর্তের জন্য, কখনো দীর্ঘক্ষণের জন্য। 

এতে কিছু এসে যায় না, কারণ বাতাসের প্রথম স্পর্শেই আমরা আনমনা হয়ে যাই। পুরো পৃথিবীটা জলরঙে আঁকা একটা ছবির মত মনে হয়। আফ্রেমভের উজ্জ্বল রঙ না, তোহফার দুঃখ-মেশানো হালকা রঙ। 

হাতে থাকা বইটাতে চোখ বোলানোর চেষ্টা করি। শব্দগুলো আমাদের চোখ পর্যন্ত আসে, মর্মে পৌঁছে না। হেডফোনজুড়ে হ্যারিসন অলৌকিক কিছু কথা আওড়াতে থাকে। শব্দগুলো আমাদের কান পর্যন্ত আসে, মর্মে পৌঁছে না। 

অর্থাৎ আমরা একটু আনমনা হয়ে যাই। 

এবং এইসব মুহূর্তে আমার অনিকের কথা মনে পড়ে। কলেজ-পরবর্তী জীবনে তার প্রতি আমার নির্বিকারত্বের কথা আমার মনে পড়ে। 

এবং অমন নির্বিকারত্ব সন্দেহাতীতভাবে ছিল একটা পাপ। এই পাপের প্রতিফল কীভাবে আসবে—সে কথাও আমার ভাবতে ইচ্ছে করে। 

যদিও ভয় লাগে। ইচ্ছে করে, ছুটে যাই। 

জানি, যাবার জায়গা নেই। কাঁচের বয়ামের আটকে পড়া একটা পিঁপড়ের মতন। ছুটে ডানে যেতে পারবো, ছুটে বাঁয়ে যেতে পারবো, হয়তো যেতে পারবো ওপরেও, কিন্তু বের হতে পারবো না। 

কাজেই একটা সময় ক্লান্ত হয়ে ছুটোছুটি থামাই। অপেক্ষা করি। 

যেই নিয়তি আমার কপালে সিল মেরে লিখে দেয়া আছে—সেটা গ্রহণ করার জন্য চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি। 

সেই নিয়তি কখনো উটের গ্রীবার মত জানালা দিয়ে উঁকি মারে, দরজায় এসে তিনবার ঠক্‌ শব্দ করে, দেয়ালের গায়ে হঠাৎ তার ছায়া পড়ে—এবং…এবং, আমি আতঙ্কিত হয়ে তার মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষা করতে থাকি। 

শেষপর্যন্ত দেখা পাই না। 

পলকের জন্য আগমনবার্তা জানিয়ে নিয়তি আমাকে রেহাই দেয়। 

হয়তো, আরেকটা দিন দু’হাত ভরে দিবে বলে। অপেক্ষার যন্ত্রণাটুকু আরেকটু বাড়াবে বলে।