এলোকথন (চিত্রা ২৪:২)

আমি আজকাল লিখতে পারি না। 

এতে আশ্চর্য হবার তেমন কিছু নেই। সত্যিকারের লেখক লিখবে, ভণ্ডরা লিখবে না—এটাই স্বাভাবিক। পুরো স্বাভাবিকতার মাঝে একমাত্র সমস্যা হল, আমার লিখতে না পারলে খারাপ লাগে। আর কিছু না হোক, পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ভরে আমার ডায়েরি লিখতে হয়। এলোকথন শিরোনামে এলোমেলো কথাবার্তা লিখতে হয়। কখনো হালকা গল্প, কখনো ভারী গল্প বানাতে হয়। তবেই আমি শান্ত থাকি। রাত্রিবেলা ঘুমোতে পারি, সারাদিন শরীরটা ঝরঝরে থাকে। 

ক’মাস হল, এর কোনোটাই ঠিকমত হচ্ছে না। খ্যাপার মত দিনরাত বই পড়ছি, শহরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি, আড্ডা দিচ্ছি—কিছুই কাজ করছে না। ঘুরছি শহরের বাইরেও। কেবল গত তিন মাসে যত ঘুরেছি—সারা জীবন অতখানি ঘুরেছি কিনা সন্দেহ আছে। কখনো মন ভালো করছি, হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দিচ্ছি, আবার তীব্র বিষাদে আক্রান্ত হয়ে চুপ করেও বসে থাকছি। 

কাজ হচ্ছে না কিছুতেই। 

অর্থাৎ আমি লিখতে পারছি না। অথচ এ ব্যাপারটা এখন সবচেয়ে বেশি ঘটার কথা। এই গত বছরেও, প্রতিটা নতুন বোধের সাথে কিছু না কিছু লিখে ফেলতাম—বাচ্চাদের মত করে হলেও। সে হিসেবে গত তিন মাসে যতখানি ঘাত-অভিঘাত পার করেছি—ওতে তো লিখে কূল পাবার কথা না! 

আচ্ছা, কারণ কি এটাই? প্রতিনিয়ত এত বেশি নতুন বোধ এসে ভর করছে দেখেই কি আমি কী লিখবো বুঝে উঠতে পারছি না? 

হয়তো, হয়তো…। 

আমি অ-লেখক—এতে আমার তেমন কোনো আফসোস নেই। 

কিন্তু…গান কি কেবল শচীন দেবেরই গাইতে ইচ্ছে করে? যেই লোকটা পাঁচটা পর্যন্ত অফিস করে মতিঝিল থেকে ফিরতি বাসে উঠলো—তারও কি গুনগুনিয়ে একটা গান ধরতে ইচ্ছে করে না? যদি কোনোদিন তাকে বলা হয়, তুমি আর গাইতে পারবে না, তোমার ভেতরে সুর উঠতে থাকবে, তোমার কানে সুর ঘুরতে থাকবে, কিন্তু তুমি গাইবে না—তাহলে লোকটা পাগল হয়ে যাবে না? 

আমার খুব একটা আফসোস নেই যে, আমি অ-লেখক। কিন্তু প্রতিনিয়ত যেই শব্দগুলো আমার ভেতরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, চিন্তাজুড়ে তিড়িং বিড়িং নেচে বেড়াচ্ছে, একের পর এক গল্প তৈরি করে যাচ্ছে—সেই শব্দগুলো লিখে ফেলতে খুব বেশি ইচ্ছে করে। 

এবং হুম, আমার বিশ্বাস আমি অচিরেই পাগল হয়ে যাবো—যদি না লিখতে পারি।