চৈত্রের কাফন


[তেরোই মে পর্যন্ত এই লেখাটা ময়মনসিংহ, আরামবাগ এবং জিগাতলার জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল।]

একদিক দিয়ে দেখলে অবশ্য, বৃশ্চিকের মৃত্যুটা অবশ্যম্ভাবী ছিল। ওকে শুধু মরতে হত না, ওকে মরতেই হত। লিগ্যাসি তাই বলে।

তবু, মরে যাওয়া মানে সবকিছুর শেষ তো, ওটা কষ্ট দেয়।

মৃত্যুর শঙ্কাটা প্রথমে আমিই করেছিলাম। এই ধরনের লিগ্যাসি প্রায় প্রফেসির মত। ছাই, স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে কিনা কে জানে, কবে প্রথম কথাটা বলেছিলাম—ঠিক মনে নেই। সেটা শিল্পকলাতেও হতে পারে, বইমেলার সময় মুক্তমঞ্চেও হতে পারে, আবার সাদাসিধে ফোনালাপের সময়েও হতে পারে। তবে বলেছিলাম, ঠিক মনে আছে।

ও ছিল আমার মতই। কিছুটা খ্যাপা, একটু আনমনা, কখনো দ্রোহী—এমনই। অনেকগুলো আমরা মিলে যখন একটা সত্তা ছিলাম, সেই সত্তার একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল বৃশ্চিক।

আজ থেকে প্রায় দুইশো বছর আগে, যে সময়টায় আমি জন্ম নেই, তখন মৃত্যুতে তেমন একটা বিশ্বাস করতাম না। অন্তত বৃশ্চিকের মত উজ্জ্বল মণ্ডলীর ক্ষেত্রে তো কখনই না। মনেপ্রাণে বিশ্বাস হত, ওটা অনন্তকাল ধরে জ্বলবে!

তবে…একটা খটকা ছিল বটে। লিগ্যাসি কি তবে টিকবে না? না টেকার মতও তো কিছু ঘটেনি!

প্রফেসি ভেঙে ফেলার জন্য সম্ভবত একটু বাম দিকে সরে দাঁড়াতে হত। বেশি না, সামান্য একটুই। আমরা সেই জন্ম থেকে বরাবরই বামে ঘেঁষে দাঁড়িয়েছি, কিন্তু বৃশ্চিক এমন কিছুর জন্য কখনই তৈরি ছিল না। সহজ রাস্তাটা দিয়ে যে একবার হাঁটতে শুরু করেছে তার কাছে বামদিকে সরে যাওয়া খুব একটা উপভোগ্য কিছু না।

আমি বৃশ্চিককে প্রফেসির কথা বলেছিলাম।

এবং ঠিক এভাবেই, আমিও একদিন প্রফেসি শুনেছিলাম।

সোহাগ ভাইয়া অবশ্য বলে, এসব শুনে তেমন লাভ নেই। তুমি যতদিন না জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে এগুলো দেখবে, ততদিন কেবল একটা বাক্য তোমার মধ্যে কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না। প্রফেসি তো শেষ পর্যন্ত একটা বাক্যই!

কাজেই প্রফেসিটা আমার উপর তখনই প্রভাব ফেলল, যখন কারও কাছে আমার মৃত্যু হল। পুরো ব্যাপারটাই আমার নিজের হাতে তৈরি করা, পুরো রাস্তাটাই আমার নিজের বানানো। কেবল জানতাম না, রাস্তার শেষে যেটা আছে সেটা মৃত্যু।

আমার ধারণা, বৃশ্চিকও জানত না।

নিয়তি।