এলোকথন (আষাঢ়া ২৫:১)

আমি জানি, এইসব এলোকথন একদিন ছাই হয়ে উড়ে যাবে, আর সেই ছাই থেকে জন্মাবে আরো এক রাশ ছাই। ছাইয়ের ধুলা, আমার প্রতিটা দীর্ঘনিশ্বাসের ধুলা, চোখের অজান্তে ভেতরে ঢুকে যাওয়া ধুলা—সকল ধুলা উড়ে বেড়াবে ধুলাময় এই শহরের আকাশে। দেহহীন মাথাগুলো গোলটেবিলের দশপাশে জড় হয়ে ভাবতে বসবে এ থেকে মুক্তি কোথায়, অন্যদিকে মাথাহীন দেহগুলো ধুলারে মেরে মেরে কাদা করে দিতে থাকবে, প্যাঁচপেঁচে সেই কাদায় ডুবে দেহরা চিৎকার করবে, প্যাঁচপেঁচে সেই কাদায় না-ডুবে মাথারা চিৎকার করবে, ফলে নিশ্চিতভাবেই তারা কাদা-সমস্যায় আক্রান্ত হবে। 

কেননা এইসব এলোকথন একদিন ছাই হয়ে উড়ে যাবে, আর কে না জানে, ছাই থেকে কেবল ফিনিক্সই জন্মায় না, কখনো জন্মায় কেবল আরেক রাশ ছাই। 

তখন সেক্রেটারিয়েটে কার্পেট বিছানো অফিসে বসে দেহহীন মাথার মনে পড়বে, বস্তুত ছাই থেকে ফিনিক্স জন্মায় না, ফিনিক্সই খানিকক্ষণের জন্যে ছাই হয়ে যায়। এবং ক্রমান্বয়ে সে মাথা তুলে উঁকি দেয়, পাখা তুলে ঝাপটা দেয়, একসময় উড়ে যায়, পেছনে পড়ে থাকে তার ছাইটুকু। 

সেক্রেটারিয়েটের সুগন্ধ-কফিতে চুমুকের পর চুমুক দিয়ে দেহহীন মাথা হিসাব মিলাতে থাকবে, কিন্তু ধুলোময় শহরে উজ্জ্বল ডানা মেলে উড়তে থাকা ফিনিক্স সকল হিসাব এলোমেলো করে দিবে। শহরের অলিতে-গলিতে, অচেনা ড্রয়িংরুমে, অচেনা অন্দরে ক্রমাগত জন্ম নিতে থাকা ছাইয়ের কারণে এক ছাই থেকে অন্য ছাইকে সে আলাদা করতে পারবে না। 

তবু জানি, শনিবার-শনিবার সন্ধ্যেবেলা ছাদে উঠে আমি তাকিয়ে থাকবো, ছাই হতে চলা এই ছাই-আকাশের দিকেই। রাত নেমে এলে সড়কের টিমটিমে সাদা বাতিটার আশেপাশে উড়ে বেড়াবে গ্রেগর সামসারা। এবং কে জানে, হয়তো কোনো এক শনিবারে সিঁড়ি বেয়ে ছাদের ওঠার বদলে নিজেকে আবিষ্কার করবো গ্রেগর সামসাদের সাথে…