নন হোমোজিনিটি ও আমাদের শহীদুল জহির

কিছুদিন আগে নন-হোমোজিনিটি নামটা প্রস্তাব করতে গিয়ে লিখসিলাম, এ পর্যন্ত যত বইপত্র পড়সি সবই হোমোজিনিয়াস ধরনের। এবং আশ্চর্য এই যে, এই কথাটুকু লেখার পরদিনই আবিষ্কার করলাম আমি আসলে নন-হোমোজিনিয়াস লেখা পড়সি, এবং সেটা খোদ শহীদুল জহিরের উপন্যাসে! 

শহীদুল মানুষটা মারা গেসেন অনেকটা অসময়েই, এবং লিখসেন সেই তুলনায় আরও সামান্য। বেঁচে থাকতে মোটে তিনটা উপন্যাস প্রকাশ করসিলেন, চতুর্থটা বের হয় উনি মারা যাবার পর। 

আমি দেখার চেষ্টা করসি তার এই চার উপন্যাসে নন-হোমোজিনিটি কীভাবে ধীরে ধীরে প্রবেশ করসে, কিংবা আদৌ করসে কিনা। 

১. জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা (১৯৮৮) 
এটা শহীদুলের লেখা প্রথম উপন্যাস। শাহাদুজ্জামান একবার জিজ্ঞেস করসিলেন তাকে, এত সুন্দর একটা উপন্যাসের এমন কাট্টাখোট্টা নাম কেন। শহীদুল এমন একটা উত্তর দিসিলেন—উপন্যাসটা যখন লেখা হয়, তখন দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি অত্যন্ত বিষণ্ন ও হতাশ ছিলেন, কাজেই উপন্যাসের নাম নিয়ে কাব্য করার মানসিকতা ছিল না। 

এটা কেবল প্রথম উপন্যাসই না, এটা প্রথম কোনো লেখা—যেখানে আমরা শহীদুলকে শহীদুল হয়ে উঠতে দেখি। এর আগে লেখা গল্পগুলো সুন্দর ছিল, কিন্তু শহীদুল জহিরের যে একটা নিজস্ব অবিশ্বাস্য লেখার ধরন আছে—তার সূত্রপাত ঘটসে এই উপন্যাসে। 

এবং এটা বেশ চমৎকার, এবং হোমোজিনিয়াস ভাষার একটা উপন্যাস—অর্থাৎ সংলাপে পুরোপুরি ঢাকাইয়া ভাষা, এবং নিজের বর্ণনা দেয়ার সময় শহীদুল পুরোপুরি প্রমিত ভাষায় লিখসেন। 

    “…তার ফলে সেদিন রাতে ইসমাইল হাজাম দেখে, প্রাইমারি স্কুলের আধো অন্ধকার ঘরে ছুরি হাতে অপেক্ষমাণ একজন মানুষ। সে, সেই অন্ধকারের ভেতর জবাইয়ের এই অস্ত্রের ঔজ্জ্বল্য দেখে বুঝতে পারে, গভীর নিষ্ঠার সঙ্গে এই অস্ত্রের ধাতুতে ধার তোলা হয়েছে এবং এই উন্মুখ অস্ত্র এবং অস্ত্রধারী রক্তপানবিনা তৃপ্ত হবে না। আবদুল গণির কাছ থেকে লোকেরা জানতে পারে যে, আজীবন ছেদন-অস্ত্রের ধাতব প্রবৃত্তির সঙ্গে বসবাস করে ইসমাইল হাজামের আপাত মূর্খতার ভেতর যে ব্যবহারিক প্রজ্ঞা গড়ে উঠেছিল, তার দ্বারা সে অপেক্ষমাণ কসাইজের ছুরি দেখে তার ঘৃণা এবং ভালোবাসার, দুঃখ এবং বিরল উল্লাসের এই জঞ্জর প্রান্ত শনাক্ত করতে পারে। জবাইয়ের সময় জোর করে শোয়ানোর জন্য সুস্থিত তিন জন রাজাকারের বলপ্রয়োগ ছাড়াই সিমেন্টের শীতল মেঝের উপর নিজেকে সমর্পণ করে। উপস্থিত জনতা আবদুল গণির বর্ণনা থেকে বিস্ময়ের সঙ্গে আবিষ্কার করে যে, তার অন্তিম মুহূর্তে ইসমাইল হাজাম একজন অভিযাত্রীর মতো অভিভূত হয়েছিল। যেমন, রৌদ্র এবং তুষারপাতের ভেতর দিয়ে উনত্রিশ হাজার আটাশ ফুট বেয়ে ওঠার পর শেষ পদপাত করে তেনজিং নোরগে হয়তো বলেছিল, এই-ই এভারেস্ট; তেমনি, আবদুল গণির কাছ থেকে জানা যায় যে, ছুরির নিচে মাথা রেখে ইসমাইল হাজাম একবার শুধু বলে, অ্যামনে এইটা শ্যাষ হইল।”

আমি ধরে নিচ্ছি, ১৯৮৮ সালে শহীদুল নন-হোমোজিনিটি নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাননি। 

২. সে রাতে পূর্ণিমা ছিল (১৯৯৫) 
প্রথম উপন্যাসের সাত বছর পর প্রকাশিত এই উপন্যাসে ভাষাটা আরেকটু পরিণত কিনা—এসব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করা যায়, কিন্তু বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এই ভাষাও হোমোজিনিয়াস—প্রথম উপন্যাসটার মতই। 

    “গ্রামের লোকদের সে রাতের চাঁদের কথা মনে পড়ে এবং তারা সেই চাঁদের বর্ণনা দেয়। আততায়ীদের হাতে ভাদ্র মাসের এক মেঘহীন পূর্ণিমা রাতে সুহাসিনীর মফিজুদ্দিন মিয়া সপরিবারে নিহত হওয়ার পরদিন, গ্রামবাসীদের কেউ কেউ মহির সরকারের বাড়ির প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হয়। অনেকটা সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও তারা ঘটনার আকস্মিকতার বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারে না; মহির সরকারের বাড়ির বাইরের উঠোনে লম্বা বেঞ্চে গোবর এবং বিচালির গন্ধের ভেতর বাকরহিত হয়ে বসে থাকে এবং থেলো হুঁকোয় তামাক খায়। সেই ভোরের নরম শীতল আলোয় হুঁকো টানার জলজ শব্দে তাদের যে ইন্দ্রিয়াচ্ছন্নতা হয়, তার ভেতর পূর্বদিনের রাতের ঘটনা একটি দূরবর্তী দুঃস্বপ্নের মতো ভেসে থাকে এবং সবকিছুর ভেতর চাঁদের প্রসঙ্গটি যেন তাদের কাছে বড় হয়ে ওঠে। তারা স্মরণ করতে পারে যে, এক অতিকায় চাঁদ উঠেছিল আগের দিন সন্ধ্যায়। হয়তো বা চাঁদের এই জাগরণে ব্যতিক্রমী কিছু ছিল না; কিন্তু ভাদ্র মাসের এই পূর্ণিমা রাতে সুহাসিনী গ্রামে যে ঘটনা ঘটে যায়, সে ঘটনায় গ্রামের মানুষ স্তম্ভিত হয়; কিন্তু তারপর তারা যখন এই ঘটনাবলি ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণ করতে ব্যর্থ হয়, তখন মহির সরকারের বাড়ির উঠোনে তারা নির্বাক হয়ে হুঁকো টানে এবং তাদের শুধু পূর্ণিমার সেই চাঁদের কথা মনে পড়তে থাকে। তখন হুকোর গুড়গুড় শব্দ এবং খামিরা তামাকের গন্ধের ভেতর ডুবে থেকে তোরাপ আলি কথা বলে, সে বলে যে, আগের দিন সন্ধের সময় সে রাস্তার কিনারায় বেঁধে রাখা গরুর বাছুর ঘরে আনছিল; সে বলে, আমি পরথমে বুইজ্যার পারি নাই, শরীলের মইদ্দে কেমুন যানি ভাব হইবার নিছিল, কেমন যানি ঘোরঘোর নেশার নাহাল, চাইর দিকে কেমন যানি ধুলা ধুলা, কিন্তু ধুলার ভিতরে কেমন যানি ভাব, কেমন যানি রঙের নাহাল ছড়ায়া আছে; আমি তো বুজি না কি, খালি বুজি কিছু একটা; তার বাদে যহন ম্যাবাড়ির সামনে আইছি, তহন বুইজব্যার পারি আসলে কী; দেহি কি ম্যাবাড়ির মাথাভাঙ্গা আমগাছটার ডাইন পাশ দিয়্যা পুন্নিমার চান ভাইসা উইঠছে।”

লক্ষ্যণীয়, প্রথম উপন্যাসের মতই বর্ণনায় প্রমিত ভাষা এবং সংলাপে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করা হইসে। 

৩. মুখের দিকে দেখি (২০০৬) 
এগারো বছর পর, তৃতীয় উপন্যাসটা যখন শহীদুল প্রকাশ করেন, আমরা এইখানে দেখি তার মাথা খারাপ হয়ে যেতে। কী অবিশ্বাস্য নন-হোমোজিনিয়াস ভাষা! 

    “…তারা বুঝতে পারে না যে, ব্যাপারটা কি, হারাইনা পোলার খবর শোনার পরেও পোলার মায়ের কোনো বিকার নাই; তারা এক অদ্ভুত সংকটে পড়ে চুপ মেরে থাকে, উপায় খুঁজে পায় না, তাদের মনে হয়, উপকার করতে আইসা কী যন্ত্রণায় পড়লাম, কিন্তু তখন তারা বলে যে, তারা যা বলে তা ঠিকই বলে। 

    : আপনে ভুসির চুলা জ্বালান না? 

    : জ্বালামুনা ক্যালা! 

   : আপনের পোলা পনেরো দিন কিংবা এক মাস আগে ভুসি আননের লাইগা নয়াবাজার গেছিল না? 

    : যায়া পারে, কাইলই তো ভুছি লায়া আইলো! 

    : আপনের পোলা আর ফিরা আসে নাই! 

    তখন জোবেদা বেগম বিচলিত হয়, তাহলে কাইল ভুসি নিয়া ফিরা আসলো কে? সে বলে, আপনেরা কন আমার পোলা মামুনে ভুছি লয়া ফিরা আহেনিকা? 

    তখন করাতকলের এই দুই শ্রমিক বলে যে মামুন মিঞার হারায়া না যাওয়ার কোনো কারণ নাই, সে অবশ্যই হারায়া গেছে, কারণ তারা তাদের কাস্টমারদের চেনে, তারা মামুন মিঞাকেও চেনে, এবং তারা জানে যে, মামুন পনেরো দিন কিংবা এক মাস আগে করাতকলের মালিকের টেরাকে কাঠের ভুসির লগে চলে গেছে। তারপর তারা যখন বলে যে, এখনো করাতকলে যায়া খুঁজলে হয়তো মামুন মিঞার খোঁজ তার মা জানতে পারবে, জোবেদা বেগমের মনে হয় আসলে হয়তো এই গাধা দুইটা কোথাও কিছু একটা প্যাঁচ খাওয়ায়া ফালাইছে; সে বলে, তাইলে ভুছি লয়া আইলো কেঠা? 

    : আপনের পোলা আসে নাই, তারে জলদি খুঁজেন! 

    : আপনারা কেঠা? 

    : আমরা কেউ না, মামুনরে অখনেই যায়া খুঁজেন, করাতকলের মালিকরে যায়া জিগান, পরে পাইবেন না। 

    জোবেদা বেগমকে ভয় পাইতেই হয়, সে হইচই করে, কিন্তু কাউকে পায় না যে বলবে, দেখ তো মামুনে কই, অরে ডাইকা আন তো, ফলে বিষয়টা ছড়ায়া পড়ে, মহল্লার দুই-একজন মহিলা এসে জোটে, এবং তারা যখন জোবেদা বেগমের সমস্যার কথা শোনে, তারা বুঝতে পারে না যে, আসলে সমস্যাটা কী, জোবেদা বেগম তাদেরকে বলে যে, নয়াবাজারের দুই ব্যাটা এসে তাকে বলে গেল মামুন পনেরো-বিশ দিন কিংবা এক মাস আগে কাঠের ভুসি কিনা আনতে যায় আর ফিরা আসে নাই, এবং যে কাঠের ভুসি নিয়া ফিরা আসে সে মামুন না! মহল্লার এই মহিলারা তাজ্জব হয়া যায়, তারা জিন্দেগিতে এই রকম কথা শোনে নাই, তারা বলে, আপনে আফা চিনা পারলেন না, মামুনে যে মামুন না আপনে বুজা পারলেন না?”

এইখানে আমরা দেখি, সংলাপে আঞ্চলিক ভাষা তো বটেই, সেই সাথে বর্ণনার ক্ষেত্রে শহীদুল প্রমিত ভাষার ধার তো ধারেনইনি, ঢাকার আঞ্চলিক ভাষাও ইচ্ছেমত মেরে দিসেন। এই যেমন, “বিষয়টা ছড়ায়া পড়ে” লেখার পর একটা কমা দিয়েই তিনি লেখেন, “মহল্লার দুই-একজন মহিলা এসে জোটে”! 

হোমোজিনিয়াস ভাষারীতি অনুসরণ করতে চাইলে হয় ছড়ায়া, আইসা লিখতে হত, কিংবা লিখতে হত ছড়িয়ে, এসে। এই যে গল্পের বর্ণনায় একইসাথে প্রমিত আর আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার—এটা সারা উপন্যাসজুড়েই ঘটসে, এবং এই ব্যাপারটাকে নন-হোমোজিনিটির একটা সার্থক উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়। 

আবারও মনে করিয়ে দেই, আমাদের মুখের ভাষা নন-হোমোজিনিয়াস—প্রায়শই আমরা একইসাথে প্রমিত এবং আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করে থাকি। এই রীতিটাকে শহীদুলের আগে কেউ বাংলা সাহিত্যে তুলে আনসেন কিনা, জানি না। 

১৯৯৫ সালের হোমোজিনিয়াস রীতি থেকে ২০০৬ সালে নন-হোমোজিনিয়াসে চলে আসা—এর মাঝে শহীদুলের উত্তরণটা কীভাবে ঘটসিল, আমি একটু অনুমান করার চেষ্টা করসি। এই দুই উপন্যাসের মাঝে, ২০০৪ সালে বের হয় তার গল্পের বই ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প। সেই বইয়ে এক গল্পের বর্ণনার মাঝে শহীদুল বেশ কিছু আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করসেন—ইন্দুর, বিলাই, লৌড়ালৌড়ি, ভাড়াইটা, কাইজা। এই ব্যবহারকে চোখ বন্ধ করে নন-হোমোজিনিয়াসও বলা যাচ্ছে না, কেননা, ধরো, এই যে শহীদুল গল্পের শুরুতে যে একবার ভাড়াইটা লিখসেন—এরপর প্রতিবার ভাড়াইটা­-ই লিখে গেসেন, কখনও ভাড়াটিয়া লেখেননি। 

তবু, অনেকদিন আগে পড়া এসব বইয়ে আরেকবার চোখ বুলিয়ে যতটুকু মনে হল, এই গল্পেই শহীদুল প্রথমবারের মত বর্ণনার মাঝে আঞ্চলিক শব্দ ঢোকানোর চেষ্টা করসেন (সংলাপে অবশ্য বরাবরই আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করসিলেন)। 

যদ্দূর জানি, শহীদুল বেশ নিভৃতচারী মানুষ ছিলেন। ১৯৯৫ সাল থেকে কীভাবে ধীরে ধীরে ২০০৬ সালে নন-হোমোজিনিয়াস রীতিতে এসে ঢুকলেন—সেই তথ্য হয়তো আমাদের অজানাই থেকে যাবে। 

৪. আবু ইব্রাহীমের মৃত্যু (২০০৯) 
এই উপন্যাস প্রকাশিত হয় শহীদুলের মৃত্যুর পরে। এটা আবার পুরোপুরি হোমোজিনিয়াস ধাঁচে লেখা। কিছু নিবন্ধ ঘেঁটে দেখলাম, কিন্তু বের করতে পারলাম না এই উপন্যাস আদৌ কত সালে লেখা হইসিল। যদি মুখের দিকে দেখি-র পরে লেখা হয়ে থাকে, তাহলে হয়তো নন-হোমোজিনিটিকে শহীদুলের উত্তরণের ক্ষেত্র না বলে একটা এক্সপেরিমেন্টই বলতে হবে। 

    “সিরাজগঞ্জ শহরের কালীবাড়ি রোডে, মমতাদের বাড়ির প্রাঙ্গণে, পেয়ারাগাছতলায় শববাহকেরা যখন আবু ইব্রাহীমের লাশসহ খাটিয়া কাঁধে তুলে নেয় এবং প্রাঙ্গন ত্যাগ করে জুমা মসজিদের দিকে যেতে থাকে তখন আবু ইব্রাহীমের পৃথুলা বিধবা স্ত্রী মমতার এই শোক এবং নির্মম বাস্তবতার ভেতর বহুদিন পূর্বের এক রাত্রির কথা মনে পড়ে। সেদিন গভীর রাত্রে ঢাকার বেইলি রোডের সরকারি কলোনিতে আবু ইব্রাহীম মমতাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে ব্যালকনিতে নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলেছিল সারস পাখির ঝাঁক উইড়া যাইতাছে, শোনো।”

এখানেও সেই পুরনো ধরনটা আমরা দেখি—বর্ণনায় প্রমিত ভাষা এবং সংলাপে আঞ্চলিক ভাষা। 

তবে, মাত্রই একটা জিনিস আবিষ্কার করে আনন্দ পেলাম—যেটা নিঃসন্দেহে শহীদুলের শক্তিমত্তার একটা উদাহরণ, এবং তিনি যে চাইলে অনায়াসে হোমোজিনিয়াস ভাষায় লিখতে পারতেন তার প্রমাণ—এই উপন্যাসে আবু ইব্রাহীম স্ত্রীর সাথে ঢাকাইয়া ভাষায় কথা বললেও, কর্মক্ষেত্রের লোক খালেদ জামিলের সাথে যখন কথা বলে—সেই কথা হয় ইংরেজি-বাংলা-মিশ্রিত প্রমিত ভাষায়। এই যে— 

    “আবু ইব্রাহীমের কথা শুনে খালেদ জামিল গম্ভীর হয়ে ওঠে এবং সিগারেট ধরায়, তারপর সে বলে, আপনি আমাকে বুঝতে পারেন নাই। … … …ইটস লাইক এ গেম, আপনার বিবেচনানুযায়ী আপনি খেলবেন, সেটা অ্যাগরিড। তবে কখনো কখনো, যেমন ধরেন ড্রিঙ্কসের টেবিলে সকলে যখন হার্ড ড্রিঙ্কস খাচ্ছে তখন একজন সফ্‌ট ড্রিঙ্ক নিয়ে বসলে যেমন হয়, তেমন এক ধরনের আন-এক্সপ্লেইনড অসুবিধা হয়। 

    আবু ইব্রাহীম বলে, আমি দুঃখিত। তবে আমার ব্যাপারে আপনি এক ধরনের সদিচ্ছা দেখান, যার পেছনে অবশ্যই কিছু কারণ থাকা উচিত বলে আমার মনে হয়। 

    ইয়েস, বিকজ উই ক্যান বি ফ্রেন্ডস। বাট উই ক্যান্ট বি ফ্রেন্ডস ইফ ইউ টেক এ ফানটা হোয়াইল আই টেক এ হুইস্কি। 

    হোয়াই ক্যান্ট ইউ অলসো টেক এ ফানটা? 

    আবু ইব্রাহীমের কথা শুনে খালেদ জামিল হাসে। তারা বুঝতে পারে যে, এসব প্রসঙ্গে ঐক্য হওয়ার সম্ভাবনা নাই…”