এলোকথন (মৃগশিরা ১)

গতকাল শিল্পকলায় যেই প্রদর্শনীতে গিয়েছিলাম, তার নামটা বেশ গালভরা। দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ। পুরো প্রদর্শনীটা তিন তলা জুড়েই হচ্ছে—কাজেই বিশাল বড়! এবং এই তিন তলা ঘুরে মাত্র তিনটে জিনিস মনে ধরল, তবে সেটা পরের কথা। গতকালের সবচেয়ে চমৎকার অংশটা ছিল অন্য জায়গায়।

ধরে নিই, আমার সাথে যে গিয়েছিল তার নাম বৃশ্চিক।
কিংবা কৃত্তিকা।

অনেক্ষণ ঘোরাঘুরি করে ক্লান্ত ছিলাম, আমরা দুজনেই। ভাবলাম, গতবারের মত শিল্পকলার ছাদ থেকে ঘুরে আসি। চতুর্থ তলায় উঠে অবশ্য হতাশ হলাম, ছাদের দরজা বন্ধ। নিচে চলে যাবো—ঠিক তখনই খেয়াল করলাম, ছাদের উপরে আরেকটা ছাদ আছে, এবং একটা ভাঙা সিঁড়ি বেয়ে সেই ছাদে ওঠা যায়!

ভাগ্যিস খেয়াল করেছিলাম।

ফাঁকা একটা ছাদ। এবং ছাদটা আকাশের কাছাকাছি। পাঁচতলার একটা ছাদকে আকাশের কাছাকাছি মনে হওয়ার কথা না। শিল্পকলার ব্যাপারটা অবশ্য আলাদা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওদিকে যেহেতু খুব বেশি বাড়িঘর নেই, শিল্পকলার সেই ছাদই আকাশের কাছাকাছি।

আমরা যখন ছাদে পা রাখলাম, কালপুরুষ মাত্র আকাশে উঠেছে।

কিছুক্ষণ নক্ষত্র দেখে, এলোমেলো কথাবার্তা বলে ফেরার কথা ভাবছি। ঠিক সেই মুহূর্তে বৃশ্চিকের মাথা থেকে চমৎকার একটা আইডিয়া বের হল। ছাদের পাঁচিল ছিল কুল্লে দুই ইঞ্চি, সে জিজ্ঞেস করল, এখানে কি পা ঝুলিয়ে বসা যায় না!

যেকোন পাগলামিতে আমার সবসময়ই আগ্রহ আছে। মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম, অবশ্যই!

আকাশের কাছাকাছি ঐ ছাদটাতে বসলে পুরো শহরের অনেকখানিই দেখা যায়। নিজের শহর তো, মায়া লাগে দেখতে।

দূরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভটা দেখা যায়। অনেক কিছু মনে করিয়ে দেয় স্তম্ভটা, ভালো লাগে দেখতে।

আর একটা আকাশ দেখা যায়। বিশাল একটা আকাশ। নক্ষত্রে ভরা আকাশ। অসংখ্য নক্ষত্রে ছেয়ে যাওয়া আকাশ। আকাশের কাছাকাছি ছাদ থেকে দেখে মাথা এলোমেলো হয়ে যাওয়া আকাশ।

কিছু জিনিস হয়তো জীবনে দ্বিতীয়বার ফিরে আসবে না। শিল্পকলার ছাদের কিনারে পা ঝুলিয়ে আড্ডা দেয়া তেমন একটা জিনিস। এবং এজন্য যে আমার খুব একটা আফসোস আছে—এমনও না। দ্বিতীয়বার না পাওয়ার সম্ভাবনা আছে দেখেই এই পাওয়াগুলো অমূল্য।

আড্ডা দিতে দিতে খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম। ফেরার কথা মনে পড়ল, যখন লুব্ধকের দিকে তাকালাম। সেটা অবশ্য আরেক গল্প।

আমার আকাশ ভালো লাগে, আমার নক্ষত্র ভালো লাগে, আমার এই শহর ভালো লাগে, আর আমার মানুষগুলোকে ভালো লাগে। একসাথে এতগুলো ভালো লাগা পেয়ে একজন খেই হারিয়ে ফেলতেই পারে।

নিশ্চয়ই পারে!