এলোকথন (শ্রবণা ৬)

আজ কি পূর্ণিমা? আজ সম্ভবত পূর্ণিমা।

তটিনীটা জেগে থাকলে জিজ্ঞেস করা যেতো। কোনদিন কৃষ্ণা দ্বাদশী কিংবা কবে শুক্লপক্ষ শুরু হচ্ছে—এইসব হিসাব মেয়েটা চোখের পলকে করে দিতে পারে।

অবশ্য মার্ফির ল থেকে সহজেই বলা যায়, রাতটা পেরোলেই যেহেতু আমার ডাটাকম পরীক্ষা—আজ পূর্ণিমা হতে বাধ্য। শুধু তাই না, আজকের পূর্ণিমাটা বেশ অনেকখানি সুন্দর হতেও বাধ্য। আম্মুর ঘর দিয়ে যেই আকাশটা দেখলাম, তাতে আর ছাদে যাওয়ার সাহস হল না। পরীক্ষার আগেরদিন মাথা এলোমেলো করতে নেই।

অবশ্য, আরেকটু এলোমেলো হলেই বা কী এসে যায়। ওয়ার্ডস আর ফ্লোয়িং আউট লাইক এন্ডলেস রেইন ইনটু আ পেইপার কাপ। মাথাটা আরেকটু এলোমেলো হলে কি খুব বেশি কিছু এসে যাবে?

মনে হয় না।

আশ্রয়, আশ্রয়।

আজ সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাত দুটো পর্যন্ত যা যা ঘটেছে—তা বোধহয় অতীতের সব অভিজ্ঞতাকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

অভিজ্ঞতা নতুনই বটে। একুশ বছরের জীবনের ঝুলিতে অনেককিছুই জমা হয়ে গেল। যা যা জীবনে দেখবো বলে স্বপ্নেও কল্পনা করিনি—তাও দেখতে হল।

বাইরের খোলসটা অবশ্য একেবারেই স্বাভাবিক আছে। আম্মু-আব্বুর সাথে রাতের খাবার খাচ্ছি। আব্বু গল্প করছে। শুনছি। রিয়াকে বকা দিচ্ছি। সুরভী আন্টিকে ‘আন্টিইইই আন্টিইইই’ লিখে টেক্সট পাঠাচ্ছি। সবকিছুই হিসাবমত চলছে।

সিম্পলি গোঁজামিল দিয়ে মেলানো হিসাব। আমার গোঁজামিল দিতে মোটেও ভালো লাগে না। কিন্তু উপন্যাসের লেখক তো আমি না। কাজেই পাঠক যেমন অপেক্ষা করে, তেমনি অপেক্ষা করি আমি নিজেও।

কেবল মৃত্যুর জন্যই না, আমরা তো আশ্রয়ের জন্যও অপেক্ষা করি। প্রতিনিয়ত পাথরগুলোতে ঠেকে গিয়ে বিড়বিড় করে বলি, ‘হেথা নয়, হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোনোখানে।’

অন্য কোথা?

গোঁজামিল দিতে দিতে আমি ক্লান্ত।

অসংখ্য কথা মাথায় নিয়ে ঘুরতেও আমি ক্লান্ত।

“বসে আছি হে কবে শুনিব তোমার বাণী।
কবে বাহির হইব জগতে মম জীবন ধন্য মানি॥”