চেঁচামেচি দিবস

অনেক অনেককাল আগে, একটা সুন্দর দিন ছিল। যেদিন কিছু হয়নি। যেদিন কেউ জানত না যে, দিনটা সুন্দর ছিল।

অথচ দিনটা সুন্দর ছিল।

অনেক অনেককাল আগে, এক বিকেলে আমি বসে ছিলাম। এমনিই বসে ছিলাম। সেই বিকেলে কিছু হয়নি। কিছু যে হয়নি তার প্রমাণ, সেই বিকেলের কথা কেউ জানে না। অসংখ্য শব্দেভর্তি আমার ডায়েরিটাও তার খোঁজ জানে না।

বিকেলটা সুন্দর ছিল।

আজ থেকে অন্তত এক কোটি বছর আগে, অচেনা নম্বর থেকে একটা ফোন এসেছিল। এমনিই ফোন এসেছিল, কোন কারণ ছিল না। কারণ যে ছিল না তার প্রমাণ, সেই যদি ফোন আমি না ধরতাম, তবে গোটা জীবনে দ্বিতীয়বার আর সেই ফোন আসত না। তাতে কিছু এসে যেত না, কারণ আমি কখনই জানতে পারতাম না সেই ফোনের কথা—যেটা জীবনে একবার আসে।

কিছু এসে যেত না বটে। যেই মানুষটা সারাটা জীবন একটা অন্ধকার ঘরে কাটিয়ে দেয়, সে নিশ্চয়ই আলোর অভাবে হাঁসফাঁস করে মরবে না?

সুতরাং, স্পষ্টতই আমি বেঁচে থাকতাম। জোর গলায় ঘোষণা দিতাম, আমি পৃথিবীর স্পর্শ চিনি। এবং প্রাণভরে শব্দগুলো শুনতাম। বলতাম, they slither while they pass, they slip away across the universe.

অথচ আমি জানতে পারতাম না—ইউনিভার্স দেখা আমার বাকিই রয়ে গেছে।

আশ্চর্য এই যে, তবু আমি পকেটে করে ইউনিভার্স নিয়ে ঘুরতাম। যাকে ইচ্ছে হত, তাকেই ইউনিভার্সে ছেড়ে দিয়ে আসতাম। ওরা স্পর্শ করত, ওরা শুনত, এমনকি ওরা দেখত পর্যন্ত!

কে-ই বা জানত—কেউ কেউ চায়, দু’হাতে সমগ্র পৃথিবী পেতে, এবং দিনশেষে শূন্যমন্দিরে এসে বসে পড়তে।

অনেক আগে, কোনো এক প্রসঙ্গে বলেছিলাম, শূন্যমন্দিরে যে-ই বসে—তাকেই প্রণতি জানাতে হয়।

আজ আমার কী মনে হচ্ছে জানো? দু’হাতে সমগ্র পৃথিবী পেয়েও যে শূন্যমন্দিরে এসে বসে—তাকে গভীরতম প্রণতিটুকু জানাতে হয়।

কাজেই আমার খুব ইচ্ছে, একদিন সবচেয়ে গভীর শ্রদ্ধাটুকু প্রকাশ করার ক্ষমতা এই অক্ষমের হাতে আসবে।