পোস্টগুলি

দর্শন লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ভাষা এবং বোধ

ছবি
বোধ শব্দটা ব্যাখ্যা করিতে গিয়া আমরা সচরাচর জীবনবাবুকেই স্মরণ করিয়া থাকি। তিনি প্রসঙ্গটা তুলিয়াছিলেন এইভাবে—  আলো-অন্ধকারে যাই—মাথার ভিতরে  স্বপ্ন নয়,—কোন্‌ এক বোধ কাজ করে!  স্বপ্ন নয়—শান্তি নয়—ভালোবাসা নয়,  হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়!  অর্থাৎ প্রায়শই আমরা কিছু অনুভূতির দ্বারা তাড়িত হই—যাহাদিগকে আমরা আমাদের প্রচলিত ধারণা (স্বপ্ন, শান্তি, হয়তো ভালোবাসা) দিয়া সংজ্ঞায়িত করিতে পারি না। সেক্ষেত্রে আমরা বোধ শব্দটার আশ্রয় লই। অদ্য সন্ধ্যায় আমার অভ্যন্তরে এক ধরনের বোধ জন্ম নিয়াছে—এই কথাটার অর্থ হইল, অদ্য সন্ধ্যায় এমন কোনো অনুভূতি আমাকে তাড়িত করিয়াছে—যাহার সহিত আমার পূর্বপরিচয় ছিল না, কিংবা থাকিলেও উহাকে আমি ভাষার দ্বারা ব্যাখ্যা করিতে পারিতেছি না।  ইহা বোধের খুব গুরুত্বপূর্ণ একখানা বৈশিষ্ট্য—সচরাচর বোধের এই অনুভূতিগুলো অপার্থিব হইয়া থাকে, এবং আমরা ইহাকে সরাসরি ভাষার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করিতে পারি না।  উল্লেখ্য, অকারণ-দুঃখ, যাহাকে ইংরেজিতে ডাকা হয় melancholia —তাহার সহিত ইহার স্পষ্ট পার্থক্য রইয়াছে। সব মেলানকোলিয়াই বোধের জন্ম দেয় না, এবং প্র...

শূন্যতাবোধের বৃত্তান্ত

ছবি
[ফারহার জন্য নিষিদ্ধ। আগে এসএসসি শেষ কর বাঁদর।] আমরা কেবল পূর্ণতাতেই ঋদ্ধ হই না, হই শূন্যতাতেও। আমার মনে পড়ে, আজ থেকে প্রায় বছর দেড়েক আগে এক শূন্যতাবোধ আমাকে আক্রান্ত করেছিল। জীবনে প্রথমবারের মত। এই বোধের সাথে আমার পূর্বপরিচয় ছিল না—আমি তখন মাত্র একুশ বছর বয়সে পা রেখেছি—ভার্সিটি, কংগ্রেসের কাজকর্ম, বইপত্র, গান, আঁকাআঁকি, এবং চারপাশের অসম্ভব সুন্দর কিছু মানুষকে নিয়ে একটা পূর্ণতা অনুভব করার চেষ্টা করছি—ঠিক সেই মুহূর্তেই পা হড়কে গেল। প্রপাত ধরণীতল হলে তবু সামলে নিতে পারতাম, আমি পড়লাম অতল জলে। গভীর সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার অনুভূতিটা খুব একটা সুখকর না। কাজেই আমি প্রচণ্ড অস্বস্তিতে ভুগতে শুরু করলাম। এক রাত উদ্‌ভ্রান্তের মত লিখলাম। পরক্ষণেই সব কেটে দিলাম। পরদিন খ্যাপার মত ক্লাসের পেছনের বেঞ্চে বসে থাকলাম। কখনো রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম, বৃষ্টিধোয়া বিকেলে ক্যাম্পাসজুড়ে অকারণেই হাঁটলাম। কাজকর্ম ছেড়ে দিতে ইচ্ছে হল, গল্পের বই ছুঁড়ে দিতে ইচ্ছে হল। সবকিছু হারানোর স্পষ্ট একটা অনুভূতি আমার ভেতরটা একেবারে ফাঁপা করে দিয়েছিল। আমার আশ্চর্য লাগে এই ভেবে যে, ঠিক সেই মুহূর্তে আমি কী মনে করে ভূমিকার অস...

গোর

ছবি
....পদ্মর নানাভাইয়ের কবরের পাশের গাছটা খুঁজে পেতেই কবরটাও সহজেই খুঁজে পেলাম।  এবং, সেই কবরের মাথায় দেখি একটা এপিটাফ, নানাভাইয়ের নাম লেখা। পাথরে খোদাই করা না হলে কি সেটাকে এপিটাফ বলে ডাকা যায়? হয়তোবা ওটাকে এপিটাফ বলে না, হয়তোবা ওটাকে সাইনবোর্ড বলেই ডাকে সবাই। আবার হয়তো ওটাকে কিছুই ডাকে না। আমি এপিটাফ বলেই ডাকবো। তো দেখি যে, এপিটাফটায় আনুষ্ঠানিক কিছু কথাবার্তা লেখা, কিছু দোয়া-দরুদ। এবং কিছুক্ষণের মাঝেই আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, এই গোরস্থানে এপিটাফের একটা ফরম্যাট আছে। দেখেই বোঝা যায়, কিছু আছে কমদামি এপিটাফ—ওগুলোতে এক ধরনের লেখা। আরেকটু দামি এপিটাফ হলে আরেক ধরনের লেখা। সবগুলোর ফরম্যাট একই, কেবল কেউ মারা গেলে সেখানে মৃত ব্যক্তির নাম আর তারিখ বসিয়ে দেয়া হয়। এবং এরও কিছুক্ষণ পর, আরও আশ্চর্যের একটা জিনিস খেয়াল করলাম। পদ্মর নানাভাইয়ের পাশে আরেকটা কবর—আমার ঝাপসা মনে আছে, যেই রাতে নানাভাইকে কবর দেই তখন এ জায়গাটা ফাঁকা ছিল। খেয়াল করে দেখলাম, মাত্র দিনদশেক আগে এক ব্যক্তি মারা গেছে, ওনাকে মাটি দেয়া হয়েছে এখানে। কিন্তু আশ্চর্য এই যে, দশ দিনেই সেই কবরের ওপরের ঘাস জীর্ণ হয়ে শুকিয়...

হার্ট অফ গোল্ড

ছবি
নিল ইয়াং-এর একটা গান ছিল, I was searching for a heart of gold, and I’m getting old. আচ্ছা, হার্ট অফ গোল্ড আদৌ কী? মানুষ কেন এটা খোঁজে? ওরা কি সেই হরিণের মত, যে নিজের কস্তুরীর ঘ্রাণে পাগল হয়ে যায়, বনে বনে সেই ঘ্রাণের উৎস খুঁজে বেড়ায়? কেনই বা মানুষ বৃদ্ধ হয়ে যায়? ওরা কি রবিবাবুর কবিতার সেই খ্যাপা, যে সারাজীবন পরশপাথরের খোঁজে ছুটে বেড়ায়? হয়তো…হয়তো। তৃতীয় চোখটা খুলে গেলেই মানুষগুলো হরিণ হয়ে যায়, ওরা খেপে যায়। হৃদয়ের শুদ্ধতম অংশটুকু খোঁজার জন্য ওরা গভীর থেকে গভীরে ডুব দেয়। ডিপ ইনসাইড, প্রতিটা মানুষই কি সুন্দর না? তবু কেন আরেক দল মানুষ খোলস নিয়ে ব্যস্ত থাকে? হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছোবার আগে খোলসটাই চোখে পড়ে—এজন্যই কি? আমার মন ভালো নেই। কাছের কিছু মানুষের খোলস-সাজানো দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত, এবং হতাশ। ওরা আগ্রহের সাথে ঘ্রাণ মাখে, তীব্র উৎসাহে রঙ লাগায়, চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে থাকে। আচ্ছা, আমার দাদুবাড়ির শিউলী গাছটা যদি ‘ইভনিং ইন প্যারিস’ মেখে বসে থাকতো, তবে ভালো হত না? শিউলীর হালকা ঘ্রাণ তো ভোরের বাতাসেই হারিয়ে যায়, কড়া সুগন্ধী মাখলে সবাই নিশ্চয়ই ঘুরে ...

চেঁচামেচি দিবস

ছবি
অনেক অনেককাল আগে, একটা সুন্দর দিন ছিল। যেদিন কিছু হয়নি। যেদিন কেউ জানত না যে, দিনটা সুন্দর ছিল। অথচ দিনটা সুন্দর ছিল। অনেক অনেককাল আগে, এক বিকেলে আমি বসে ছিলাম। এমনিই বসে ছিলাম। সেই বিকেলে কিছু হয়নি। কিছু যে হয়নি তার প্রমাণ, সেই বিকেলের কথা কেউ জানে না। অসংখ্য শব্দেভর্তি আমার ডায়েরিটাও তার খোঁজ জানে না। বিকেলটা সুন্দর ছিল। আজ থেকে অন্তত এক কোটি বছর আগে, অচেনা নম্বর থেকে একটা ফোন এসেছিল। এমনিই ফোন এসেছিল, কোন কারণ ছিল না। কারণ যে ছিল না তার প্রমাণ, সেই যদি ফোন আমি না ধরতাম, তবে গোটা জীবনে দ্বিতীয়বার আর সেই ফোন আসত না। তাতে কিছু এসে যেত না, কারণ আমি কখনই জানতে পারতাম না সেই ফোনের কথা—যেটা জীবনে একবার আসে। কিছু এসে যেত না বটে। যেই মানুষটা সারাটা জীবন একটা অন্ধকার ঘরে কাটিয়ে দেয়, সে নিশ্চয়ই আলোর অভাবে হাঁসফাঁস করে মরবে না? সুতরাং, স্পষ্টতই আমি বেঁচে থাকতাম। জোর গলায় ঘোষণা দিতাম, আমি পৃথিবীর স্পর্শ চিনি। এবং প্রাণভরে শব্দগুলো শুনতাম। বলতাম, they slither while they pass, they slip away across the universe. অথচ আমি জানতে পারতাম না—ইউনিভার্স দেখা আমার বাকিই রয়ে গে...

অন্তর্গত বিস্ময় – ২

ছবি
“God is a concept—by which we measure our pain.” কথাটা জন লেনন বলেছিলেন, কোন এক গানে। থুড়ি, ঠিক ‘কোন এক গানে’ বলাটাও ঠিক হচ্ছে না, কারণ এটা যথেষ্ট বিখ্যাত একটা গান। সত্যি বলতে কী, এই গানের কথা যে আমি কতবার করে মানুষজনকে বলেছি, বলতে বলতে নিজেই আশ্চর্য হয়ে গেছি—কতবার এমন হয়েছে—আমি নিজেও জানি না। এবং ঠিক এই কথাটাই আমার লেখার কথা সপ্তাহদুয়েক আগে। আবারও রিয়ার বকা খেয়ে লিখতে বসলাম—এদ্দিন বাদে। ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত, কারণ যুক্তি বলে, রিয়ার বকায় কাজ হওয়ার কথা না। বিশেষ করে, নভেম্বরের এই ভুতুড়ে রাতে কোনক্রমেই হওয়ার কথা না। তবে কিনা, যুক্তির উপরে আরও কিছু একটা বাস করে, কাজেই যখন লিখতে বসার কথা না—ঠিক তখনই আমার মনে হয়, ঠিক সেই মুহূর্তেই আমার মনে পড়ে আরিফের অমর উক্তি—‘দামি লেখা পড়তে গেলে আমি নিশ্চয়ই পাবলিক লাইব্রেরিতেই যেতাম? আপনার কাছে সস্তা লেখাই পড়তে চাইসি, সুতরাং প্লিজ, লেখেন।’ আমি যে একেবারেই লিখছি না—ব্যাপারটা এমনও না। বছরের মাঝখানে ডায়েরি লেখা প্রায় ছেড়ে দিয়েও এই বছর প্রায় বিয়াল্লিশ হাজার শব্দের ডায়েরি লিখে ফেলেছি, ডিসেম্বর শেষ হতে হতে বোধকরি তা পঞ্চাশে গিয়েই ঠেকবে—এটাই...

অন্তর্গত বিস্ময় – ১

ছবি
এক. হতে পারে, নভেম্বরের এই সময়টা মানুষের মধ্যে খানিকটা হলেও সাইকিডেলিয়া এনে দেয়। অবশ্য, ‘সাইকিডেলিয়া’ শব্দটা বলা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না, এটা অর্থ অনেকভাবেই করা যায়। এর চেয়ে অনুভূতিটাকে ‘পরাবাস্তব’ ডাকলেই বরং ভালো শোনায়। হেমন্তকাল না এটা? হেমন্তে যেই রহস্যময়তা আছে, এবং যেই রহস্যটুকু আছে হেমন্তকে পুনর্জন্ম দেয়া কবির ভেতরে—সেই রহস্য সম্ভবত আর কোথাও নেই। আমি মাঝেমধ্যেই ভাবি, জীবনানন্দ যদি এভাবে হেমন্তকে নতুন করে জন্ম দিয়ে না যেতেন, আমরা কীভাবে নিজেদেরকে ব্যাখ্যা করতাম? একটা ফর্সা চাদর, ফর্সা বিছানা, জানালার পাশের টেবিলটায় বসে, ঠিক রাত আটটায় দ্বাদশীর আলো দেখে যেই অনুভূতিটা হত—সেটার কারণ আমরা কীভাবে খুঁজে পেতাম? আমার ধারণা, আমরা বিভ্রান্ত হয়ে যেতাম, স্ট্যাটের মাঠে দিশেহারা হয়ে বসে থাকতাম, আমাদের হাত-পা কাঁপতে থাকত, আরও একবার মহাখালী থেকে বাসে উঠতে গিয়ে আমরা কেবল শূন্যতাই দেখতাম (অর্থাৎ ঢেউটুকু দেখতাম না)। এবং তিনি ছিলেন। তিনি ছিলেন, তাঁর ট্রাঙ্কটুকু ছিল—বড় সৌভাগ্য আমাদের—হেমন্তের মধ্যিখানে এসে আমরা আবিষ্কার করতে পারি যে, “জানি—তবু জানি নারীর হৃদয়—প্রেম—শি...

এলোকথন (ভাদ্রপদ ১)

ছবি
গোল্লায় যাক সব কাজকর্ম! এই কাজগুলোকে আকিব ঠাট্টা করে ‘বানাবিস’—বা এমন কোনো একটা নামে ডাকে। তা, দিনরাত ‘বানাবিস’-এর কাজ করলে মাথা গরম হবে না কেন। ওহ, মাথাটা যেন বনবন করে ঘুরছে, ভীষ্মলোচন শর্মা গান গেলে বোধ করি এমনটাই হত। আজ রাতের মত কাজকর্মকে গোল্লায় যেতে বলার কারণটা ছোট এবং খানিকটা অদ্ভুত। ঘরের সাদা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে হঠাতই একটা পুরনো গান মনে পড়ে গেল। আম্মু ছোটবেলায় অনেক গান শুনতো। মানে, আমি যখন ছোট, তখন। আমাদের বাসায় একটা উদ্ভট যন্ত্র ছিল। বিশাল দেহ, আর দুপাশে দুটো বিশাল সাউন্ডবক্স। রেডিও থেকে শুরু করে ক্যাসেট—সবই শোনা যেত সেটাতে। আমার সকালে ঘুম ভাঙতো ওটার রেডিও শুনে। আব্বু সকাল সাতটায় বিবিসি বাংলার খবর শুনতো। খবরগুলো তো মনে নেই, তবে প্রতিটা খবরের মাঝে ছোট্ট একটা সলো বাজতো—বেশ মনে আছে! আর সন্ধ্যেবেলা আম্মু ওখানে ক্যাসেট বাজিয়ে গান শুনতো। খুব সুন্দর কিছু ক্যাসেট ছিল আমাদের—ওসব কোথায় যে গেছে, কে জানে। আমার ছোটবেলার যত স্মৃতি মনে পড়ে, তার অর্ধেকেই আম্মু গান গাচ্ছে বা শুনছে—এমন একটা দৃশ্য চোখে ভাসে। আম্মু গানটান কখনো শিখেছে বলে জানি না, তবে গুনগুন করে যখন গাইতো, শুনতে ব...

বৃত্তের ভেতরে

ছবি
“কোথাও নেই ঝুম ঝুম অন্ধকার, তক্ষক ডাকা নিশুতি রূপকথা শুনে শিউরে ওঠে না গা স্বপ্নে আমার শরীরে কেউ ছড়ায় না শিউলী ফুল আলোর আকাশ নুয়ে এসে ছোঁয় না কপাল; গোটা শহর বাতি জ্বেলে সতর্ক পায়ে পায়ে হারাবার জায়গা খুঁজে মরি…” আচ্ছা, এই শহরে কি হারানোর জায়গার সত্যিই অভাব? বেশ কিছুদিন হল, অলিগলিতে ঘুরতে ঘুরতে আমি হারিয়ে গেছি। এবং অবিশ্বাস্য লাগতে পারে, রাস্তা পাওয়ারও চেষ্টা করছি না আমি। কারণ আমার দৃঢ় বিশ্বাস, হারিয়ে যাওয়াই বরং কঠিন, আমি রাস্তা খুঁজে না পেলেও রাস্তা ঠিকই আমাকে খুঁজে নেবে। কাজেই সোডিয়াম আলোকে আড়ালে রেখে, একটা অন্ধকার গলিতে চুপ করে বসে আছি। মানুষের কণ্ঠ কানে এলে পালিয়ে অন্য একটা গলিতে ঢুকে পড়ছি। জানি, এভাবে খুব বেশিদিন চলবে না। কারো না কারো হাতে তো ধরা পড়তেই হবে, প্রজ্ঞা তো তাই বলে। দু-চারদিন আগে রিয়ার ব্লগে ঢুকে দেখি, পুঁচকে মেয়েটার বেশ উন্নতি হয়েছে। এদ্দিন আমিই কেবল একচেটিয়া নিষেধাজ্ঞা জারি করে যেতাম, আজকাল মেয়েটা উল্টো আমার জন্য লেখা নিষিদ্ধ করতে শুরু করেছে। কী আর করা। চোখ বড় বড় করে কিছুক্ষণ শিরোনামটা দেখে চলে এলাম। “বৃত্তের বাইরে”। মনে মনে বললাম, স...

সংবিগ্ন মানুষজন ও আঁকাআঁকি বিষয়ক

ছবি
[আমি না বলা পর্যন্ত রিয়ার জন্য নিষিদ্ধ।] এক. তোহফার সাথে আমার প্রায়ই যে বিষয়টা নিয়ে তর্ক হয় সেটা হল, কে কাকে দেখে ইন্‌স্পায়ার্ড। ব্যক্তিগতভাবে আমার ধারণা, মেয়েটা অসাধারণ পেইন্টিং করে, কোন রঙটা কোথায় কতখানি গাঢ় করে মেরে দিলে কী ঘটে যেতে পারে—সেটা সে আসলেই ভালো বোঝে। আফ্রেমভের সাথে তুলনা করাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে নিশ্চয়ই, কিন্তু আমার আশেপাশের মানুষের মধ্যে যারা রঙ সবচেয়ে ভালো বোঝে—তোহফা নিঃসন্দেহে তাদের একজন। আমি মুখ্যুসুখ্যু মানুষ, পেনসিল দিয়ে নিরীহ শেড দেয়াতেই আমার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। এই শেডও আবার ইয়াফিজ সিদ্দিকীর হ্যাঁচকা টানের শেড না, অনেক সময় নিয়ে একের পর এক স্তরে দেয়া শেড। যেসব দিনে ভীষণ হাত কাঁপে, সেসব দিন সবচেয়ে গাঢ় অংশগুলোতেও আগে টু বি বসাই। এরপর একটু ভরসা পাই, তখন ফোর বি। হাত আরেকটু শান্ত হলে সিক্স বি, ভূমিকার চুল আঁকার সময় এভাবে নাইন বি পর্যন্ত উঠেছিলাম। (সেই দিনটা আবার বাড়াবাড়ি রকমের সুন্দর ছিল, ইসিই ভবনের বারান্দার গ্রিল খোলা থাকায় ক্লাসের সবাই মিলে জানালা দিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। সানশেডে লাইন দিয়ে বসে ছেলেমেয়েগুলো আড্ডা দিচ্ছিল। অন্তু খুব ভয় পাচ্ছিল—যদি নিচে পড়ে যায়! লাই...

আগুনের পরশমণি

ছবি
আমার ধারণা, পৃথিবীর প্রতিটা মহৎ কাজের জন্ম হয় গভীর দুঃখ থেকে। বছরদুয়েক আগে এই শহরটা ভুতুড়ে একটা সময় পার করছিল। রাজনীতির সবচেয়ে অন্ধকার অংশটুকু সেই সময় প্রথমবারের মত আমাকে সামনাসামনি দেখতে হয়েছে। মাত্রই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি তখন। ক্লাস শুরু হয়নি, কাজেই হাতে কাজকর্ম নেই। প্রচুর গান শুনতাম। আর দিনরাত ছবি আঁকতাম। প্রায় প্রতিদিনই মেসালদের সাথে আড্ডা দিতাম। আর প্রায় প্রতিদিনই এই শহরের মানুষেরা পুড়ে মরত। মানুষ বড় সস্তা ছিল তখন, চাইলেই একসাথে দু-দশজনকে পুড়িয়ে মারা যেত। আমার বয়সী একটা ছেলে একদিন তার বাবার ট্রাকে বসে ছিল। ঘুমাচ্ছিল। সেই বাসে আগুন দেয়া হল, ছেলেটার পঁচানব্বই ভাগ পুড়ে শেষ। সেই অবস্থায় সে দুদিন বাঁচলোও। কী কষ্ট! পোড়ার যে কষ্ট—সেটা যার কখনো হয়নি তার জন্য বোঝা কঠিন। (এই প্রসঙ্গে আরেকটা কথা বলে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে। এই ব্যাপারটা কিছুটা লিখেছিলেন নোবেলজয়ী স্ভেতলানা আলেক্সিয়েভিচ, তাঁর ভয়েসেস ফ্রম চেরনোবিল বইটাতে। চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর আশেপাশের অনেক লোক রেডিয়েশনে পুড়ে গিয়েছিল, মানুষগুলো কীভাবে হাসপাতালে ধীরে ধীরে মরে গেল—সেই ভয়ংকর কষ্টের বর্ণনা বইটাতে আছে। আমি যখন দিনাজপুরের স...

Eleanor Rigby

ছবি
আজকের রাতটা তাৎপর্যপূর্ণ একটা রাত। শেষ রাতের বৃষ্টিতে আমার শহরটা ভেসে যাচ্ছে। অথচ গতকাল ঠিক এই সময়ে বৃষ্টির কণামাত্রও ছিল না। আকাশজুড়ে খুব হালকা একটা আলো ছিল। কৃষ্ণা পঞ্চমীর চাঁদ কি অতক্ষণ থাকে? জানি না, কিন্তু একটা যে আলো ছিল—সেটা তো মিথ্যে না, আর সেই আলোয় আলাদা করে মেঘগুলো দেখা যাচ্ছিল। এত পবিত্র একটা দৃশ্য! গতকাল রাতে ঘুমোতে গিয়েছিলাম একটা মুগ্ধতা নিয়ে। কারণ কিছুক্ষণ আগে আমি একজন অসাধারণ মানুষকে আবিষ্কার করেছি। এমনিই নেটে ঘোরাঘুরি করছিলাম, হঠাৎ করেই আমার মনে হল, সে অদ্ভুত ভালো একজন মানুষ। চেনাজানা মানুষের ভেতর থেকে যখন অসাধারণ একজন বের হয়ে আসে—এর চেয়ে অদ্ভুত সুন্দর ব্যাপার আর কী হতে পারে? নাকি আমাদের ম্যাথ অলিম্পিয়াড করা ছেলেমেয়েগুলো—ওরা কি এমনিতেই এত চমৎকার একেকজন মানুষ হয়? কে জানে! কিন্তু আজকের রাতটা গতকালকেও ছাড়িয়ে যাবে দেখছি। শুরু হয়েছিল খুবই সাধারণভাবে। কাজ করছিলাম, এমন সময় তটিনী ফোন দিল। মানুষজনের যে বকা খাওয়ার এত আগ্রহ থাকতে পারে—সেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। টাকা খরচ করে কেন মেয়েটা বকা খায়, কে জানে। কিন্তু কোন কোন দিন একটু অন্যরকম হতে বাধ্য। আম...

ক্ষুদ্র পুরাতন প্রশ্ন

ছবি
জর্জ হ্যারিসনের একটা গান ছিল, হোয়াট আই ফিল, আই ক্যান্ট সেই। (জর্জ ছেলেটা না, বেড়ে গাইতো। একদিন ওকে নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে।) আজকাল এই অনুভূতিটা প্রায়শই হচ্ছে আমার। হোয়াট আই ফিল, আই ক্যান্ট সেই। এই মাস দেড়েক আগেও, এক রাতে আকিব ছেলেটা বিশাল বিশাল মেসেজ দিচ্ছিল। সে কী ভাষা, একেকটা মেসেজের মধ্যে নেলসন ম্যান্ডেলা থেকে শুরু করে বাংলাদেশে ইতিহাসে সমাজতন্ত্রের ভূমিকা পর্যন্ত সবকিছুই লিখে ফেলছে। আমি পড়ে শেষ করতে পারি না, একটা শেষ করার আগেই আরেকটা বিশাল মেসেজ চলে আসে। (আজকাল ছেলেটা বুর্জোয়াদের স্বর্গভূমির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লিস্টেড হয়েছে দেখে বিপ্লবের স্বর্ণক্ষেত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘোরাফেরা করা মানুষদের পাত্তা দেয় না। তাতে খুব সমস্যা হয় না অবশ্য, কারণ আরামবাগ কিংবা ময়মনসিংহ হয়ে তার খবর আমার কাছে আসে।) যাকগে, সে রাতে আকিবের দুঃখভরা কথাগুলো শুনে আমার আবারও একই অনুভূতি হচ্ছিল। জীবনের অর্থ কী? আমাদের কাজগুলো শেষপর্যন্ত কোথায় পূর্ণতা পাচ্ছে? কিংবা, আদৌ কি পাচ্ছে? প্রশ্নগুলো কি আরজ আলী সাহেবের মত হয়ে যাচ্ছে? হা হা! হয়তোবা। কিন্তু শেষপর্যন্ত এই প্রশ্নগুলোই আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি ...