পোস্টগুলি

জানুয়ারী, ২০১৮ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

শূন্যতাবোধের বৃত্তান্ত

ছবি
[ফারহার জন্য নিষিদ্ধ। আগে এসএসসি শেষ কর বাঁদর।] আমরা কেবল পূর্ণতাতেই ঋদ্ধ হই না, হই শূন্যতাতেও। আমার মনে পড়ে, আজ থেকে প্রায় বছর দেড়েক আগে এক শূন্যতাবোধ আমাকে আক্রান্ত করেছিল। জীবনে প্রথমবারের মত। এই বোধের সাথে আমার পূর্বপরিচয় ছিল না—আমি তখন মাত্র একুশ বছর বয়সে পা রেখেছি—ভার্সিটি, কংগ্রেসের কাজকর্ম, বইপত্র, গান, আঁকাআঁকি, এবং চারপাশের অসম্ভব সুন্দর কিছু মানুষকে নিয়ে একটা পূর্ণতা অনুভব করার চেষ্টা করছি—ঠিক সেই মুহূর্তেই পা হড়কে গেল। প্রপাত ধরণীতল হলে তবু সামলে নিতে পারতাম, আমি পড়লাম অতল জলে। গভীর সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার অনুভূতিটা খুব একটা সুখকর না। কাজেই আমি প্রচণ্ড অস্বস্তিতে ভুগতে শুরু করলাম। এক রাত উদ্‌ভ্রান্তের মত লিখলাম। পরক্ষণেই সব কেটে দিলাম। পরদিন খ্যাপার মত ক্লাসের পেছনের বেঞ্চে বসে থাকলাম। কখনো রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম, বৃষ্টিধোয়া বিকেলে ক্যাম্পাসজুড়ে অকারণেই হাঁটলাম। কাজকর্ম ছেড়ে দিতে ইচ্ছে হল, গল্পের বই ছুঁড়ে দিতে ইচ্ছে হল। সবকিছু হারানোর স্পষ্ট একটা অনুভূতি আমার ভেতরটা একেবারে ফাঁপা করে দিয়েছিল। আমার আশ্চর্য লাগে এই ভেবে যে, ঠিক সেই মুহূর্তে আমি কী মনে করে ভূমিকার অস...

গোর

ছবি
....পদ্মর নানাভাইয়ের কবরের পাশের গাছটা খুঁজে পেতেই কবরটাও সহজেই খুঁজে পেলাম।  এবং, সেই কবরের মাথায় দেখি একটা এপিটাফ, নানাভাইয়ের নাম লেখা। পাথরে খোদাই করা না হলে কি সেটাকে এপিটাফ বলে ডাকা যায়? হয়তোবা ওটাকে এপিটাফ বলে না, হয়তোবা ওটাকে সাইনবোর্ড বলেই ডাকে সবাই। আবার হয়তো ওটাকে কিছুই ডাকে না। আমি এপিটাফ বলেই ডাকবো। তো দেখি যে, এপিটাফটায় আনুষ্ঠানিক কিছু কথাবার্তা লেখা, কিছু দোয়া-দরুদ। এবং কিছুক্ষণের মাঝেই আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, এই গোরস্থানে এপিটাফের একটা ফরম্যাট আছে। দেখেই বোঝা যায়, কিছু আছে কমদামি এপিটাফ—ওগুলোতে এক ধরনের লেখা। আরেকটু দামি এপিটাফ হলে আরেক ধরনের লেখা। সবগুলোর ফরম্যাট একই, কেবল কেউ মারা গেলে সেখানে মৃত ব্যক্তির নাম আর তারিখ বসিয়ে দেয়া হয়। এবং এরও কিছুক্ষণ পর, আরও আশ্চর্যের একটা জিনিস খেয়াল করলাম। পদ্মর নানাভাইয়ের পাশে আরেকটা কবর—আমার ঝাপসা মনে আছে, যেই রাতে নানাভাইকে কবর দেই তখন এ জায়গাটা ফাঁকা ছিল। খেয়াল করে দেখলাম, মাত্র দিনদশেক আগে এক ব্যক্তি মারা গেছে, ওনাকে মাটি দেয়া হয়েছে এখানে। কিন্তু আশ্চর্য এই যে, দশ দিনেই সেই কবরের ওপরের ঘাস জীর্ণ হয়ে শুকিয়...

হার্ট অফ গোল্ড

ছবি
নিল ইয়াং-এর একটা গান ছিল, I was searching for a heart of gold, and I’m getting old. আচ্ছা, হার্ট অফ গোল্ড আদৌ কী? মানুষ কেন এটা খোঁজে? ওরা কি সেই হরিণের মত, যে নিজের কস্তুরীর ঘ্রাণে পাগল হয়ে যায়, বনে বনে সেই ঘ্রাণের উৎস খুঁজে বেড়ায়? কেনই বা মানুষ বৃদ্ধ হয়ে যায়? ওরা কি রবিবাবুর কবিতার সেই খ্যাপা, যে সারাজীবন পরশপাথরের খোঁজে ছুটে বেড়ায়? হয়তো…হয়তো। তৃতীয় চোখটা খুলে গেলেই মানুষগুলো হরিণ হয়ে যায়, ওরা খেপে যায়। হৃদয়ের শুদ্ধতম অংশটুকু খোঁজার জন্য ওরা গভীর থেকে গভীরে ডুব দেয়। ডিপ ইনসাইড, প্রতিটা মানুষই কি সুন্দর না? তবু কেন আরেক দল মানুষ খোলস নিয়ে ব্যস্ত থাকে? হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছোবার আগে খোলসটাই চোখে পড়ে—এজন্যই কি? আমার মন ভালো নেই। কাছের কিছু মানুষের খোলস-সাজানো দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত, এবং হতাশ। ওরা আগ্রহের সাথে ঘ্রাণ মাখে, তীব্র উৎসাহে রঙ লাগায়, চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে থাকে। আচ্ছা, আমার দাদুবাড়ির শিউলী গাছটা যদি ‘ইভনিং ইন প্যারিস’ মেখে বসে থাকতো, তবে ভালো হত না? শিউলীর হালকা ঘ্রাণ তো ভোরের বাতাসেই হারিয়ে যায়, কড়া সুগন্ধী মাখলে সবাই নিশ্চয়ই ঘুরে ...

চাঁদ নেমে আসে

ছবি
“Everybody had a hard year Everybody had a good time Everybody had a wet dream Everybody saw the sunshine Oh yeah, oh yeah, oh yeah!” গানটা হঠাৎ করে মাথায় ঢুকে গেছে। অবশ্য, গান মাথায় ঢোকে হঠাৎ করেই। অন্যদের ব্যাপারটা জানি না, আমার ক্ষেত্রে একেকটা গান মাথায় ঘুরতে শুরু করে, আর আশেপাশের সকল কিছুর সাথে সেটার একটা সম্পর্ক দাঁড়িয়ে যায়। যেমন, আজকে! আজ দুপুরে (কিংবা সকালেও হতে পারে) মাথায় একটা বাক্য এসেছিল। কোথাও লিখে রেখেছিলাম, ‘সেই জানালা দিয়ে রাত্রিবেলা চাঁদ নেমে আসতো।’ এই একটা বাক্যই। এবং কী সুন্দর, এই বাক্যটার সাথেই গানটার সম্পর্ক দাঁড়িয়ে গেল। Everybody had a hard year, everybody had a good time …। ধরো, জৈষ্ঠ্যের মাঝামাঝি কোনো এক সময়। বেশ গরম, মাথার ওপরে ঘোরলাগা বনবন শব্দে ফ্যানটা ঘুরছে। মাত্রই সন্ধ্যে পার হয়ে রাত নেমেছে। তুমি ঘুমিয়ে ছিলে, কিছুক্ষণ আগে জেগে উঠেছো। ঘুম ভেঙে দেখলে, ঘরটা এলোমেলো, ঘুটঘুটে অন্ধকার। খোলা জানালা দিয়ে চাঁদ নেমে আসছে। তার আলো পড়ছে তোমার চোখেমুখে, সারা বিছানায়… ঠিক সেই মুহূর্তে একটা মানুষের কেমন অনুভূতি হয়? আমি জানি না। তবে দ...

ব্রহ্মার পুত্র, ব্রহ্মার কন্যা

ছবি
[আরিফের জন্য মৃদু সতর্কবার্তা। ফারহার জন্য ছয় নম্বর বিপৎসংকেত। বাকিদের সমস্যা নেই।] গতকাল ময়মনসিংহ গিয়েছিলাম। গাধাটা ক’দিন ধরে বেশ মনটন খারাপ করে বসে আছে। ভাবলাম, আমরা দু-একজন আড্ডা দিয়ে আসলে ভালো কিছু হতে পারে। পরিকল্পনা ছিল যে, গতকাল আমি যাব, আর আজ-কাল আরেকজন যাবে। প্রায়ই পাগল দুটোকে যখন বিদায় দিয়ে বাসে তুলে দেই, তখন মনে হয়, দুম করে বাসে উঠে ময়মনসিংহ চলে যেতে পারলে মন্দ হত না। কে জানে, সেকারণেই গতকাল বাসে চড়ে বসতে এত বেশি ভালো লেগেছিল কিনা! এবং ময়মনসিংহ নেমেও কেন যেন বড় ভালো লাগলো। অটোতে করে নিজেই শহরের রাস্তাগুলো খুঁজতে গিয়ে পুরো শহরটাকে হঠাৎ করেই খুব বেশি আপন মনে হল—যতখানি আগে কখনই হয়নি। এবং ঠিক সেই মুহূর্তেই, অটোতে বসে ঠিক করলাম যে, রিয়াকে ফোন দিয়ে বলবো, খুব খিদে পেয়েছে, যেন দুপুরে একটু খেতে দেয়! টাউন হলে এসে নেমে পড়লাম। শীতের দুপুরে মোড়টা দেখতে বড় সুন্দর লাগছিল। ওপাশে একটা হলদে রঙের দোতলা বাড়ি আছে—সেটার গায়ে যখন রোদ পড়ে—মুগ্ধ হয়ে দেখতে হয়। আমি কলেজের পাশের রাস্তাটা ধরে হাঁটতে হাঁটতে রিয়াকে ফোন দিলাম। গাধাটা রীতিমত কানফাটানো একটা চেঁচানি দিল, ‘আল্লাহ, ভাইয়া ...