হার্ট অফ গোল্ড

নিল ইয়াং-এর একটা গান ছিল, I was searching for a heart of gold, and I’m getting old.

আচ্ছা, হার্ট অফ গোল্ড আদৌ কী?

মানুষ কেন এটা খোঁজে? ওরা কি সেই হরিণের মত, যে নিজের কস্তুরীর ঘ্রাণে পাগল হয়ে যায়, বনে বনে সেই ঘ্রাণের উৎস খুঁজে বেড়ায়?

কেনই বা মানুষ বৃদ্ধ হয়ে যায়? ওরা কি রবিবাবুর কবিতার সেই খ্যাপা, যে সারাজীবন পরশপাথরের খোঁজে ছুটে বেড়ায়?

হয়তো…হয়তো।

তৃতীয় চোখটা খুলে গেলেই মানুষগুলো হরিণ হয়ে যায়, ওরা খেপে যায়।

হৃদয়ের শুদ্ধতম অংশটুকু খোঁজার জন্য ওরা গভীর থেকে গভীরে ডুব দেয়। ডিপ ইনসাইড, প্রতিটা মানুষই কি সুন্দর না?

তবু কেন আরেক দল মানুষ খোলস নিয়ে ব্যস্ত থাকে? হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছোবার আগে খোলসটাই চোখে পড়ে—এজন্যই কি?

আমার মন ভালো নেই। কাছের কিছু মানুষের খোলস-সাজানো দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত, এবং হতাশ।

ওরা আগ্রহের সাথে ঘ্রাণ মাখে, তীব্র উৎসাহে রঙ লাগায়, চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে থাকে।

আচ্ছা, আমার দাদুবাড়ির শিউলী গাছটা যদি ‘ইভনিং ইন প্যারিস’ মেখে বসে থাকতো, তবে ভালো হত না? শিউলীর হালকা ঘ্রাণ তো ভোরের বাতাসেই হারিয়ে যায়, কড়া সুগন্ধী মাখলে সবাই নিশ্চয়ই ঘুরে ঘুরে গাছটার দিকে তাকাতো?

কিংবা, এই শহরের চাঁদটা আরেকটু উজ্জ্বল হলে ভালো হত না? ও চাঁদের আলো তো চোখেই পড়ে না—যতক্ষণ না তুমি সবকিছু নিভিয়ে আঁধার রাজ্যে ঢুকে পড়ছো। যদি হাজার ওয়াটের ফ্লাডলাইটের আলো ছড়াতো, তবে সবাই হুট করে চাঁদটাকে একবার দেখে নিতো না?

কী এসে যেত, যদি বসন্তবৌরি অমন একঘেঁয়ে সুরে না ডেকে প্রচণ্ড সুরে সুইফ্‌ট ধরতো? সবাই চটজলদি কান পেতে দিতো না সেই সুর শুনতে?

আমি বোধহয় বোকা। কাজেই দিনশেষে আমি ইভনিং ইন প্যারিস, ফ্লাডলাইট এবং সুইফ্‌ট ছেড়ে ফিরে যাবার চেষ্টা করি আমার শিউলীর অস্পষ্ট ঘ্রাণের কাছে, চাঁদের হারানো আলোর কাছে, বসন্তবৌরীর মৃদু ডাকের কাছে।

আমি ফিরে যাই সেই গভীর মানুষগুলোর কাছে, যাদের বিবর্ণ খোলসের ভেতর উঁকি দিলে স্বর্ণহৃদয়ের পবিত্র আলোটুকু দেখা যায়।