আশ্রয়

এটা খুবই আশ্চর্য, কেন কেবলমাত্র মেলানকোলিয়ায় ডুবে গেলেই ছবি আঁকতে ইচ্ছে করে। পৃথিবীর মানুষগুলো রুদ্ধশ্বাসে দৌঁড়াচ্ছে, এই সময়ে ফ্লয়েডেড অবস্থায় আরেকটা ছবি আঁকতে বসার অর্থ—সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখানো।

যে বুড়ো আঙুল দেখায়, সে বোকা। আর বোকারা সবসময়ই একা। রবির ভাষায়, সবার মাঝে আমি ফিরি একেলা। গিলমোরের ভাষায়, আর্থ বাউন্ড মিসফিট।

ঠিক এই মুহূর্তে এসে মানুষ কিছু একটা করে ফেলে। কেউ সিদ্ধার্থের মত গৃহত্যাগী হয়। কেউ জন লেননের মত অবিশ্বাস্য একটা গানের দল বানিয়ে ফেলে। কেউ জীবনের প্রথমবারের মত একটা ছবি আঁকতে পারে।

শেষ পর্যন্ত সবাই জীবনের অর্থটুকু খোঁজে।

সিদ্ধার্থ খুঁজেছিলেন সন্ন্যাসের মধ্য দিয়ে। জন লেনন খুঁজেছিলেন তাঁর লেখা অসাধারণ গানগুলোর মধ্য দিয়ে। কে জানে, হয়তো এর ভেতর দিয়েই চূড়ান্ত পরিত্রাণ আসে, তাই মানুষ অর্থটুকু খুঁজে বেড়ায়।

আর খুঁজে বেড়ায় আশ্রয়। দিনশেষে প্রতিটা মানুষই আশ্রয় খোঁজে। সাদাসিধে একজন মানুষ। দিনশেষে দুটো কথা। কেবল অকাজের কথা। এই কথায় শাহবাগের মিছিলের প্রসঙ্গ আসবে না। এই কথায় ইলেকট্রন-প্রোটনের গুরুতর রহস্য যাচাই করা হবে না। চুলোয় যাক ভয়েজার স্পেসশিপ, আকাশে দুবার উল্টেপাল্টে দুম করে ধাক্কা খাক কোন গ্রহের সাথে। আমার কী? দিনশেষে একটা আশ্রয় দরকার, যেখানে ভয়েজার ফুটো হয়ে গেলেও কিছু আসবে যাবে না।

লেনন কি এই আশ্রয়টুকুই খুঁজেছিলেন? ইয়োকো ওনো মেয়েটার উপর সবার অনেক রাগ, কিন্তু লেনন কি নিজেই আশ্রয়ের খোঁজ করেননি? অসাধারণ কয়েকটা গান, বিট্‌লসের অবিশ্বাস্য খ্যাতি—ওখানেই মনে হয় সবকিছুর শেষ না…নিশ্চয়ই জন লেননের কিছু একটা পাওয়া বাকি ছিল তখনও…

কিন্তু, জন লেননের খেলা তো শেষ হয়েছিল অন্যভাবে…

ঠিক জন লেননের মৃত্যুতে এসে আবারও ফ্লয়েডেড একটা অনুভূতি হচ্ছে…

এবং এটা খুবই আশ্চর্য, কেন কেবলমাত্র মেলানকোলিয়ায় ডুবে গেলেই অর্থটুকু খুঁজতে ইচ্ছে করে। পৃথিবীর মানুষগুলো রুদ্ধশ্বাসে দৌঁড়াচ্ছে, এই সময়ে ফ্লয়েডেড অবস্থায় জীবনের অনুসন্ধান করতে যাওয়ার অর্থ—সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখানো।

যে বুড়ো আঙুল দেখায়, সে বোকা।

আর বোকারা সবসময়ই একা।