এলোকথন (শ্রবণা ১)

[রিয়ার জন্য নিষিদ্ধ, খবরদার। আমি না বলা পর্যন্ত।]

ডাটাবেজ পড়তে পড়তে পাগল হয়ে যাচ্ছি। যদিও অস্বীকার করার উপায় নেই—জিনিসটা খুবই জোস। এই টার্মে কাজ করার জন্য কায়কোবাদরা প্রায় চারশো গিগাবাইট ডাটা খুঁজে বের করেছে। কোনো ছবি নেই, কিচ্ছু নেই, কেবল গুটিগুটি টেক্সট দিয়ে ভরা চারশো গিগাবাইট! ব্যাপারটা দেখে আমার আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড়।

একটা জিপ ফাইলে এই বিশাল দৈত্যকে আটকে রাখা হয়েছে। পুরোটা আনজিপ করলেই চারশো গিগা বের হয়ে আসবে, হাউমাউ করে কম্পিউটারের মেমোরি খেতে শুরু করবে। আমি ছোট্ট একটু অংশ আনজিপ করে দেখেছি, লেখাগুলো পড়লে আসলেই ফিল আসে। সিএসই-জাতীয় ফিল না, কাব্যিক ফিল।

সে যাক। কাল বিকালে ল্যাব ফাইনাল। রিয়াটা এসে ফোন দিচ্ছিল। সে যখন ফিরে যাবে তখন আমার পরীক্ষার হলে বসে কলম কামড়ানো লাগবে—কাজেই দেখাসাক্ষাত করার উপায় নেই। অবশ্য দেখা করারও তেমন কিছু নেই। পুতুল আমরা একেকজন, যেমনে নাচাও তেমনিই নাচি। রিয়া যে বলছে, ‘সবকিছু মিলায়ে জগাখিচুড়ি হয়ে গেসে’, তাতেই কি কিছু এসে যায়? ওটাও তো পুতুলনাচেরই অংশ।

একটাই সমস্যা, পুতুলগুলো সময়ে সময়ে হাসতে বা কাঁদতে পারে। সময়ে সময়ে নাচের দৃশ্যে ঢুকতেও চায় না। পা বাড়াতে বললে হাত নাড়ানোর চেষ্টা করে। অন্য পুতুলের কাছে আশ্রয় খোঁজে।

হাহ, পুতুলের কাছে আশ্রয়! সুতো তো ওপরে। তবু আমরা আশ্রয় নেই। এবং দেই।

আশ্রয়টুকুই বা মিথ্যে বলি কী করে। ওটা ছাড়া কি পৃথিবীটা এত সুন্দর হত? আমার মনে হয় না।

রিয়া যদি নাটকের তৃতীয় অঙ্কে থাকে, তাহলে আমার ক্ষেত্রে পঞ্চমাঙ্কের যবনিকাপতন হয়ে গেছে। রিয়ার মত মানুষের সুবিধা হচ্ছে, ওরা চট করে অনেককিছু বলে ফেলতে পারে। মন ভালো বা খারাপ থাকলে সেটা নিয়ে বড়সড় একটা মেইল লিখে ফেলতে পারে। আমি পারি না। ঝড় এসে সব এলোমেলো করে দিলেও আমি সরাসরি কিছু বলতে পারি না। চারদেয়াল আর অন্ধকারে গল্পগুলো বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।

রাত তিনটে ছাব্বিশ। বৃষ্টিটা এখনও অঝোর ধারায় পড়ছে। পাগল করে দিচ্ছে শব্দটা। স্বীকার করছি, এ বছরের বৃষ্টিটা চৌদ্দ সালকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে। ছাপিয়ে যাচ্ছে অনিশ্চয়তাগুলোও।

রিয়াটার জন্য বেশ খারাপ লাগছে। ইট নেভার রেইন্‌স বাট ইট পৌর্‌স। এসব ঘটনা যদি শীর্ষেন্দুর উপন্যাসে ঘটতো, নিশ্চিন্তে দু গ্যালন চোখের পানি ফেলে দেয়া যেতো। বাস্তবেও এত কষ্ট পেতে হয় মানুষকে? রিয়া অসাধারণ একটা মেয়ে, এখন পর্যন্ত খুব ভালোমতই সামলে নিচ্ছে। কিন্তু এরপর, আর কত?

জানি না, এই ডটগুলো পরে কোথায় গিয়ে জোড়া লাগবে।