পোস্টগুলি

এলোকথন (অশ্বিনী ১)

মানুষজন এবার নির্ঘাৎ আমাকে মার দিবে। কয়েকদিন থেকে একই কথা শুনতে শুনতে সবার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু  এটা সত্যি যে, আমার জানালা দিয়ে কখনই জোছনা ঢুকে না। আমি ঈর্ষা নিয়ে, প্রবল ঈর্ষা নিয়ে পঞ্চাশ হাত সামনে থাকা বাড়িটাকে দেখি, বাড়ির বাসিন্দাগুলোকে দেখি। নিতান্ত মেঘ যদি বিশ্বাসঘাতকতা না করে, তারা প্রতিটা চাঁদের আলো স্পর্শ করতে পারে। মাত্র দাঁড়াতে শেখা বাচ্চাটা জানালার গ্রিল ধরে জোছনা দেখে। নিজের সবকয়টা স্বপ্ন কবর দিয়ে করে আসা প্রৌঢ় লোকটা বারান্দায় এসে থমকে যায়। অষ্টাদশী মেয়েটা শীতের রাতে একটা চাদর জড়িয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকে। ঐ বাড়ির ইঁদুরটা জোছনা দেখে, যেই তেলাপোকাটা দুদিন পরে স্যান্ডেলের নিচে চাপা পড়ে মরে যাবে, সেও জোছনা দেখে। চাঁদের আলোয় অদ্ভুত সব বিভ্রম হয়। কফিকে অ্যাবসিন্থ মনে হয়, আর মেয়েটাকে প্লিয়েডেসদের একজন মনে হয়। সাদাকালো বাড়িটার দিকে আমি তীব্র ঈর্ষা নিয়ে তাকিয়ে থাকি।

আমি

ছবি
বিশ বছর বয়সের একটা ছেলেকে কী বলা যায়? অবশ্যই পিচ্চি না। এবং কোনোভাবেই বৃদ্ধ না। আমি মাঝামাঝি কিছু একটা। একটা সময় মোটামুটি স্বাভাবিক ছেলে ছিলাম। প্রায় বছরখানেক হল, আমার মাথায় অদ্ভুত কিছু সমস্যা দেখা দিসে। যেসব সমস্যা থাকলে বিশ বছরের একটা ছেলেকে পাগল বলে ডাকা যায়— সেসব সমস্যা আমার ব্রেনের অলিতেগলিতে, নিউরনের ঘুপচিতে বাস করে। একসময় অবশ্য স্বাভাবিক ছিলাম। এখন বুঝতেসি, মানুষ পাল্টায়। আমি নিজেই সারাজীবনে কয়েক দফা পাল্টাইসি। শেষবার পাল্টানো শুরু হইসিল এরকম কোনো একটা সময়। আশ্বিনের প্রথম দিকে। নিতান্তই হঠাৎ করে, একদিন বসে বসে পড়তেসিলাম, হঠাৎ মনে হল—আমার এখন হুমায়ূন আহমেদের একটা ছবি আঁকা লাগবে। সাথে সাথে পেনসিল নিয়ে বসে গেলাম....এবং ছবি আঁকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। কিন্তু নেশাটা ধরে গেল। এরপর একটা বছর গেসে, আর আমি বহুদিন, বহুরাত এ্যামনে পার করসি। সামনে একটা সাদা কাগজ। হাতে কার্বনের টুকরা। এইসব এখন না বলি। আমি গরু, যথেষ্ট আগ্রহ নিয়েই ঘাস খাই, কিন্তু সেটাই হয়তো আমার একমাত্র পরিচয় না। কিংবা, খ্যাপার স্বভাবই হচ্ছে পরশপাথর খুঁজে ফেরা, কিন্তু তার জীবনেও একটা গল্প আছে, কেউ হয়তো ওট...

তামান্না, তোমার জন্য

আমি রিকশা দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন রাস্তার পাশে একটা ছেলে হাঁটতেসিল। ছেলেটার বয়স বেশি না, এই...এইট নাইনে পড়ে হয়তোবা। চশমা পরা, বেশ বুদ্ধিজীবী-বুদ্ধিজীবী চেহারা। ছেলেটার সাথে সম্ভবত তার মা ছিলো ওটা। বেশ চমৎকার একটা দৃশ্য, খালি একটাই সমস্যা। ছেলেটার দুই হাতের কোনোটাই নাই। নাই বলতে, একেবারেই নাই, ঘাড় থেকেই দুই হাত নাই। আমি ক্যান যেন সেইটা দেখে বড় ধরনের একটা ধাক্কা খাইলাম। অনেকদিন আগের কথা...কিন্তু আমি এখনো ব্যাপারটা ঠিক নিতে পারি না...। মানে, ক্যামনে পসিবল...ছেলেটার প্রায় প্রত্যেকটা কাজ কাউকে করে দেয়া লাগবে...খাওয়ায় দেয়া লাগবে, জামা পরায় দেয়া লাগবে...এখন হিসাব করি, ছেলেটা যদি ৬০ বছর বাঁচে, ৬০টা বছরই সে এ্যামনে কাটাবে?? সে কখনো কোনো বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে হাঁটবে না?? খেপে গেলে হাত দিয়ে টেবিলে থাবড়া দিবে না?? গিটার বাজানোর শখ হলে গিটার ধরতে পারবে না?? আমাদের দুঃখগুলো আসলে নিতান্তই ছোট। অমুক ছেলেটা বা অমুক মেয়েটা আমার সাথে বিট্রে করসে। এই নিয়ে দুঃখ। রেজাল্ট খারাপ হইসে, বাসায় আম্মা ফায়ার হয়ে গেসে। এই নিয়ে দুঃখ। ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পাচ্ছি না। এই নিয়ে দুঃখ। এইসব আসলে কিচ্ছু না....নাথিং ম্যান, ...

সেই ভুলে ভরা গল্প

সারাদিন কেবল হি হি খিক খিক করি তো, মাঝেমধ্যে ভুলেই যাই, মন খারাপ বলে একটা ব্যাপার আছে। ছোটখাট মন খারাপ না, ভয়াবহ ধরনের মন খারাপ। ক্লাসের ছেলেমেয়েদের সামনে যখন থাকি তখন তো এই কথাগুলো খুব বেশি ওঠে না। তাই তাদেরকে বলাও হয় না...একটা ছোট্ট দুঃখের গল্প। দুঃখগুলো তো ছোট-ছোটই! কিন্তু সমস্যা হল, ছোট মরিচের ঝাল বেশি। আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি। পিচ্চি! তখনও এরকমই ছিলাম। দিনরাত খিক খিক করতাম। আর ব্লগিং করতাম। প্রথম-আলো ব্লগে। ঐ ব্লগে সব ছিল বিশাল বড়-বড় ভাইয়া আপু। মানে, আমার কাছে তখন এই ২০-২৫ বছরের মানুষকেই তো অনেক বড় মনে হত। এই বিশাল-বিশাল মানুষের মাঝে আমরা কয়েকজন পিচ্চি ছিলাম। আমি, আমার আপু, রূপ পিচ্চি, এ্যালানা পিচ্চি, ত্বাসিন পিচ্চি। আমরা বেশি ছোট ছিলাম দেখে বড় ভাইয়া-আপুগুলো দিনরাত আমাদের আদর করত! সুরভী আপু ছিল। একেকটা কথা বলত, ছন্দে ছন্দে। আমি অআই ছদ্মনামে লিখতাম। তো, আপু এসে আমাকে বলে, অ-আ-ই, পদ্য লিখি, ই-আ-অ, হয় না পদ্য! আমি তখন ছোট মানুষ, এটা শুনেই হেসে কুটিকুটি!! লুকিয়ে লুকিয়ে একদিন ব্লগিং করছিলাম, নাজলা আপা হুংকার দিল, আমার আম্মুকে বলে দিবে! আর দেবুদা! সৈকত ভাই!! আমি একেকটা পোস্ট দে...

কুটুস!!

হাই!! আমি একজন মশা। আমার নাম মিস পিনপিন। আজ রাতে আমি মুবিনের বাসায় যাচ্ছি। লোকমুখে শুনেছি তার রক্ত নাকি বড়ই সুস্বাদু। একবার না খেলে জীবনই বৃথা। তাই ভাবলাম, একবার খেয়েই আসা যাক মুবিনের রক্ত! শুরুতেই এই ছেলেটার পরিচয় দিয়ে নেই। ইয়াআআআ মোটা একটা ছেলে। মানে, একটা ছেলে যতটুকু মোটা হলে তাকে দেখে রাস্তায় মেয়েরা খিল খিল করে হাসতে শুরু করে— ঠিক ততটুকুই মোটা! মুবিন থাকে জাপান গার্ডেন সিটিতে। আমি আমার ছোট বোনের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে এসেছি। ও গত পরশু রাতেই মুবিনের রক্ত আস্বাদন করে এসেছে তার এক বান্ধবীকে নিয়ে। এখন দুই বান্ধবীই মুবিন বলতে অজ্ঞান! ছেলেটা নাকি পুরাই অস্থির। আমার তো একটু ভয়ই হচ্ছে, আমার ছোট বোনটা মুবিনের প্রেমে পড়ে গেল কিনা! ওর রুচি অবশ্য বরাবরই জঘন্য। যাই হোক, জাপান গার্ডেনের গেট দিয়ে ঢুকে আমি পুরাই থ! সারি সারি বাড়ি। ইঁটের পরে ইঁট, মাঝে মানুষ কীট। এখন মুবিনকে পাই ক্যামনে? এক গার্ড বসে ঝিমাচ্ছিল। ওকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, excuse me , রক্তে ভরপুর মুবিন মোটকুর বাসা কোনটা, একটু দেখিয়ে দিবেন? গার্ড ব্যাটা বড় বেয়াদব! বাসা তো দেখিয়ে দিলই না, উলটা বলল, শালার মশা বহুত জ্বালায়! সারারাত ধ...

অথবা...অলিম্পিয়াড!!

আমরা পাঁচজন। পাঁচটা পাগল। বাইরে থেকে অবশ্য বোঝা যায় না। কারণ আমরা সবসময় পাগলামো করি না। আমাদের মাথাটা বিগড়ে যায় শুধু তখনই, যখন...... বাতাসে অলিম্পিয়াডের গন্ধ ভাসে! যখন বর্ষণ ভাইয়া গভীর রাতে ফোন দিয়ে বলে, আমাকে একটা প্রাইজ এনে দে না ভাই! যখন চোখের সামনে দেখি কোন ম্যাথের প্রবলেম! খায়া ফালামু!! আমরাও হুমকি দিই। না, কোন মানুষকে না। প্রবলেমকে। পাঁচটা পাগল। কিংবা, অনেকের মতে, ছাগল। শাওন। boss  লেভেলের পাগল। একদিন পরপর তিনটা অলিম্পিয়াড দিয়ে সে মনমরা হয়ে বের হল। কী হয়েছে রে? আমরা জিজ্ঞেস করি। সে বলে, কিচ্ছু পারি নাই। আহারে। এত ভাল ছেলেটা অলিম্পিয়াডে গিয়ে কিছুই পারলো না। এরপর, একদিন প্রাইজ দিল। তিনটা অলিম্পিয়াডের দুটোতে শাওন ফার্স্ট, অন্যটায় সেকেন্ড। বিস্ময়ে মেসাল আর আজোয়াদের চোখ কপালে উঠেযায়! কপালে ওঠার কারণেই কিনা কে জানে, চোখ পড়ে আকাশের দিকে। গাঢ় নীল আকাশ। ঐদিনও এমনই নীল ছিল না আকাশটা? যেদিন এই আকাশের তলে দাঁড়িয়ে আজোয়াদ কঠিন চোখে তাকিয়ে ছিল নোবেলের দিকে? আর বলেছিল, আমরা জিতবো! নৈরাশ্যবাদীরা বলে, ত...

আষাঢ়ে!

টুনিইইইই তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো নাআআআ!! পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত টুনিকে কথাটা বলেই ফেলল মন্তু। টুনি বিব্রত। হঠাৎ পুকুরপাড়ে মকবুল বুড়ার আবির্ভাব! দু হাত কোমরে দিয়ে কঠিন দৃষ্টিতে সে মন্তুর দিকে তাকিয়ে। মন্তুর আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার উপক্রম। আইজকা তরে মাইরাই ফালামু!! মকবুল হুংকার ছাড়ে। হুংকার দিতে দিতেই লুঙ্গির ভিতর থেকে বের করে আনে একটা বন্দুক! বন্দুকটা মন্তুর দিকে তাক করে বলে, ছেড়ে দে শয়তান, ছেড়ে দে আমার টুনিকে। তোর বাসায় মা বোন নেই? বউ নেই! মা বোন থাকলে কি আর টুনির সাথে ইটিস পিটিস করি? মন্তু মনে মনে ভাবে। আর মুখে বলে, ছরি ছার। আমার কুনো দোষ নাই। সব দোষ টুনির! এইবার মকবুলের বন্দুক তাক হয় টুনির দিকে! টুনিইইই খাইসি তোরে!! টুনির মুখটা করুণ হয়ে যায়। মকবুলের দিকে তাকিয়ে দুঃখভরা গলায় সে বলে, ওগো, গুলি করবা কর কিন্তু একটু আস্তে কর। বেশি জোরে করলে আমার ব্যথা লাগে। মকবুলের কি আর অত কথা শোনার সময় আছে! সে এর মধ্যেই বন্দুকের ট্রিগার টিপে দিয়েছে। কাজেই একটা গুলি বের হয়ে ছুটে যেতে শুরু করল টুনির দিকে। মন্তু বিস্ফোরিত চোখে টুনির দিকে তাকিয়ে। টুনি নির্বিক...

এবং আমাদের শেষ ম্যাচটি (যেটা আর দশটা ম্যাচের মতই সাধারণ!)

দীপ্ত দৌঁড়াচ্ছে, সর্বশক্তি দিয়ে, যতটা সম্ভব, যত দ্রুত সম্ভব সে দৌঁড়াচ্ছে, নিজের পুরো চেতনা সে তার দুই পায়ের বিক্ষেপের মাঝে কেন্দ্রীভূত করে, ঐ তো সামনেই তার লক্ষ্য, ঐ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলেই জয় তার সুনিশ্চিত, কিন্তু সে পারে না সেখানে পৌঁছাতে, দীপ্ত ব্যার্থ হয়, তার আগেই বিদ্যুৎবেগে ছুটে আসে একটা ছেলে, সেই ছেলের হাতের মুঠোর ভেতরে লুকিয়ে থাকা রক্তরাঙা টেনিস বলটা দীপ্তর চোখে পড়ে না, কিন্তু দীপ্ত জানে, ভালমতই জানে, তার ব্যার্থতাকে পরিপূর্ণতা দান করবে এই টেনিস বলটা, ভেঙে দেবে অদূরে থাকা স্ট্যাম্প, উল্লাসে মেতে উঠবে শাফিউল, রেদোয়ান, ফজলে, মোশফিকুর, সৃষ্টি, নাহিয়ান, স্বভাবসিদ্ধ গম্ভীরতায় নিজের আবেগটুকু আটকে রাখতে ব্যার্থ হবে টিমের ক্যাপ্টেন আজোয়াদ, সে নিজেও তার দলের বাকি ছয়জনের আনন্দে যোগ দিবে, আর দীপ্তের দল মুষড়ে পড়বে হতাশায়, আশাভঙ্গের বেদনা তাদেরকে ক্ষতবিক্ষত করবে, সেই ক্ষতে কিছুটা সোডিয়াম ক্লোরাইড ছিটিয়ে দেবে বিজয়ী দলের উল্লাস, দীপ্ত নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, কিন্তু সে আর কিছুই করতে পারবে না, কিছুই না !! শেষের আগে : দুপুরের প্রচন্ড উত্তাপকে বুড়ো আঙ্গুল...