পোস্টগুলি

সালভাদরের ভাঙতি

ছবি
[এই লেখাটা সুরভী আন্টির জন্য নিষিদ্ধ। দেখুন আন্টিই, আজকাল আপনার মত থুড়থুড়ে শতবর্ষী বুড়োদের জন্যও লেখা নিষিদ্ধ করা শুরু করেছি। দয়া করে এটা পড়বেন না, আমি সিরিয়াস। আপনাকে টনসিলের ঝুঁকি নিয়ে আইসক্রিম খাওয়াতে রাজি আছি আমি, এই যে লিখে দিলাম।] অন্ধ প্যাঁচা আর স্থবির ব্যাঙ ছাড়াও সুররিয়েলিজম হয় বটে। প্রায় দুদিন হল, আমার পৃথিবীটা সুররিয়েলিস্টিক হয়ে যেতে শুরু করেছে। পদ্মর নানাভাইকে মাটি দিয়ে আসার পর থেকেই এই অনুভূতিটা হচ্ছে। ওনাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম না, কাজেই খুব একটা মন খারাপ করার সুযোগও ছিল না। সেকারণেই কিনা কে জানে, অনুভূতিটা ‘মন খারাপ’ না হয়ে ‘সুররিয়েলিস্টিক’ হয়ে যাচ্ছে। এই যে লিখছি, মাথার ওপর যে ফ্যানটা ঘুরছে, সেই ফ্যানের শব্দেও একটা পরাবাস্তব টান পাওয়া যাচ্ছে। আমার একটা সমস্যা আছে, কেউ মারা গেলে আমি তার চেহারা দেখতে পারি না। বছর দেড়েক আগে ফুপী মারা গেল। মাটি দেয়ার আগে সবাই শেষবারের মত ফুপীকে দেখতে গেল। আমি গেলাম না। দীর্ঘ তিনমাস কোমায় থাকলে কি মানুষের চেহারা পাল্টে যায়? ভাইয়ার কাছে শুনেছি, মারা যাবার আগে ফুপীর চেহারা অনেক পাল্টে গিয়েছিল। বড় হওয়ার পর ভাইয়াকে ক...

এলোকথন (উলট-পুরাণ)

ছবি
প্রথমেই বলে নিতে হবে, এটা আকিবের গল্প না। গত এক মাসে আকিব ছেলেটার সাথে দীর্ঘ বকবক করতে হয়েছে। ছেলেটা পারে বটে, দীর্ঘসময় কাজ করেও সে প্রাণখুলে হাসতে থাকে, হুড়মুড় করে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে না। কিন্তু খোলসের বাইরের এবং ভেতরের গল্প—দুটোই আমার কানে আসে, কাজেই এই ছেলেটার সাথে কাজ করে আমি এক ধরনের শান্তি পাই। তবু, এই গল্পটা আকিবের না। অথবা, হতেই পারতো এটা রিয়ার গল্প। বেচারার জন্মদিন আজ। আমি বললাম, আমি যাবো না, ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্নাকাটি করতে। সেটাও শুনবে না, আমি না গেলে নাকি গুলিই করে দিবে। আচ্ছা দিক, তবু বেচারার জন্মদিন তো। হতেই পারতো এটা রিয়ার গল্প। তবু, এই গল্পটা রিয়ার না। এ্যানির সাথে গত কিছুদিন যথেষ্ট ঠাণ্ডা ব্যবহার করেছি, কিন্তু এই গল্পটা এ্যানিরও না। রিকশায় বসে দীর্ঘ আড্ডা দেয়ার পরেও এই গল্পটা ওমরের না, তামান্নার এক মাসের এক্সপেরিন্টের পরেও এই গল্পটা তামান্নার না। অথবা, আরেকটু স্পষ্ট করে বললে, এই গল্পটা নির্দিষ্ট কারো না। এই যেমন, এই গল্পটা নির্দিষ্টভাবে রিয়ার না। তবু, আমি যদি শপাঁচেক শব্দ লিখি, সেখানে কি দু-একবার রিয়ার নাম আসবে না? আসবে তো। কিংবা ধরো, আমি...

বাক্‌সো

ছবি
প্রায় এক যুগ পর অথৈ পিচ্চিটা ফোন দিল। এটা আশ্চর্য না, তবে আশ্চর্য এই যে, কিছুদিন ধরে ঘুরেফিরে বারবার পিচ্চিটার কথা মনে পড়ছিল। মোটামুটি ছোটবেলা থেকেই কুইন শুনি, কিন্তু আজকাল কুইন শুনতে গেলে প্রায়ই অথৈয়ের কথা মনে পড়ে যায়। আমার ধারণা, এর পেছনে ফ্রেডি মার্কারির একটা বিশাল ভূমিকা আছে। গল্পটা বলে ফেলতে ইচ্ছে করছে। একটা ব্লকে আটকে ছিলাম, লিখতে গেলেই হাত আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। পিচ্চিটা ফোন দিয়ে এক ধাক্কায় ব্লক ভেঙে দিল! ফ্রেডি মারা যাবার আগের দিনগুলোতে বারবার করে বলছিল, “Write me more. Write me stuff. I want to just sing this and do it and when I am gone you can finish it off.” মৃত্যুর মাসকয়েক আগে ছেলেটা অসাধারণ কিছু গানও গেয়ে গেছে। সেই গানগুলো শুনলে মিশ্র একটা অনুভূতি হয়। একজন মানুষ যখন জানে যে সে মারা যাবে, আরেকটু স্পষ্ট করে বললে, রক ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ কিংবদন্তিদের একজন যখন জেনে ফেলে যে, সে কিছুদিনের মাঝেই মারা যাচ্ছে—তখন সে যা যা করতে পারে—সেটা আর দশটা মানুষের পক্ষে করা প্রায় অসম্ভব। গতকাল কুইনের শেষদিকের একটা গান হঠাৎ চোখে পড়লো, এদ্দিন পড়েনি। না পড়ে খুবই ভালো হয়েছে। গত কয়েক বছর ধর...

দেবতার গ্রাস

ছবি
এক. শেষবিকেল। এই সময়ে কার্জনের পুকুরপাড়ে অনেক ছেলেমেয়ে থাকার কথা। আজ বোধহয় রোদটা একটু চড়া দেখেই খুব বেশি মানুষ দেখা যাচ্ছে না। কেবল তিনটে ছেলেমেয়ে বিধ্বস্ত ভঙ্গিতে বসে আছে। বামদিকের ছেলেটার নাম শাফিন। বয়স বাইশ বছর হয়ে গেলেও তাকে দেখে সতেরোর বেশি মনে হয় না। বাইশ বছরের যেই ছেলেকে সতেরো বলে মনে হয়—তাকে সবাই খুব আদর করে। কাজেই শাফিন থার্ড ইয়ারে উঠেও ভার্সিটিতে আদুরে বেড়ালের মতই ঘুরে বেড়ায়। বড় ভাইদের সাথে দেখা হলে ম্যাঁও ম্যাঁও জাতীয় শব্দ করে আদর নেয়ার চেষ্টা করে। আদর সে পায়ও বটে। শোনা যায়, মাস্টার্সের কোন এক বড়ভাইয়ের সাথে তার খুবই খাতির। দুজন মিলে নাকি রাঙামাটির কোন এক জঙ্গলে…আচ্ছা, সে কথা থাক। সব রহস্য সবখানে ফাঁস করতে নেই। শাফিনের ডানদিকে নোবেল আর শাওন বসে আছে। নোবেল কিছুক্ষণ পরপর ফিক করে হেসে ফেলছে। হাসির শব্দ শুনে শাওন বারবার বিষদৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। মেয়েরা সাধারণত হাসিখুশি হয়। মোটা মেয়েরা আরও বেশি হাসিখুশি হয়। আর প্রস্তরযুগের হাতির মত মোটা মেয়েরা খুবইইই বেশি হাসিখুশি হয়। শাওন প্রস্তরযুগের হাতির মত মোটা। কাজেই সে খুবই হাসিখুশি থাকে। তবে আজ বোধহয় তার মন একটু খারাপ। চোখের দৃষ্টি...

এলোকথন (শ্রবণা ৬)

ছবি
আজ কি পূর্ণিমা? আজ সম্ভবত পূর্ণিমা। তটিনীটা জেগে থাকলে জিজ্ঞেস করা যেতো। কোনদিন কৃষ্ণা দ্বাদশী কিংবা কবে শুক্লপক্ষ শুরু হচ্ছে—এইসব হিসাব মেয়েটা চোখের পলকে করে দিতে পারে। অবশ্য মার্ফির ল থেকে সহজেই বলা যায়, রাতটা পেরোলেই যেহেতু আমার ডাটাকম পরীক্ষা—আজ পূর্ণিমা হতে বাধ্য। শুধু তাই না, আজকের পূর্ণিমাটা বেশ অনেকখানি সুন্দর হতেও বাধ্য। আম্মুর ঘর দিয়ে যেই আকাশটা দেখলাম, তাতে আর ছাদে যাওয়ার সাহস হল না। পরীক্ষার আগেরদিন মাথা এলোমেলো করতে নেই। অবশ্য, আরেকটু এলোমেলো হলেই বা কী এসে যায়। ওয়ার্ডস আর ফ্লোয়িং আউট লাইক এন্ডলেস রেইন ইনটু আ পেইপার কাপ। মাথাটা আরেকটু এলোমেলো হলে কি খুব বেশি কিছু এসে যাবে? মনে হয় না। আশ্রয়, আশ্রয়। আজ সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাত দুটো পর্যন্ত যা যা ঘটেছে—তা বোধহয় অতীতের সব অভিজ্ঞতাকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অভিজ্ঞতা নতুনই বটে। একুশ বছরের জীবনের ঝুলিতে অনেককিছুই জমা হয়ে গেল। যা যা জীবনে দেখবো বলে স্বপ্নেও কল্পনা করিনি—তাও দেখতে হল। বাইরের খোলসটা অবশ্য একেবারেই স্বাভাবিক আছে। আম্মু-আব্বুর সাথে রাতের খাবার খাচ্ছি। আব্বু গল্প করছে। শুনছি। রিয়াকে বকা দিচ্ছ...

এলোকথন (শ্রবণা ৫)

ছবি
নাহ, কোনোভাবেই পড়ায় মন বসাতে পারছি না। আমার ধারণা, গত কিছুদিনে খানিকটা ওভারলোড হয়ে গেছে। কতখানিই বা ব্রেইন আমার মাথায়, বড়জোর সিকি চামচ হবে—ও বেচারার পক্ষেও তো এতখানি চাপ নেয়া কঠিন। কাল ডাটাকম পরীক্ষা আমার। কোর্সটার আসল নাম ডাটা কমিউনিকেশন ওয়ান। সবাই আদর করে ডাটাকম বলে ডাকে। যেই স্যার আমাদের ক্লাস নিতেন, ওনার সাথে আমার একটা মজার কাহিনী আছে। কোনো এক টার্মে ওনাকে অফলাইন দেখাতে গিয়েছি। স্যার কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমি ছবি আঁকো?’ আমি থতমত খেয়ে গেলাম। বললাম, ‘জ্বী স্যার।’ স্যার আমার কোড দেখতে দেখতে বিড়বিড় করে বললেন, ‘চুল দেখে বুঝছি। যারা ছবি আঁকে তারা সাধারণত কোডিং-এ ভালো করে না!’ মনে আছে, সেদিনের স্যারের সামনে অনেক কিছুই কনফেস করেছিলাম। আমি চলে আসার আগে স্যার বলেছিলেন, ছবি আঁকতে ভালো লাগলে অবশ্যই আঁকবা। কিন্তু পড়াশোনায় মন রেখো, একেবারে সন্ন্যাসী হয়ে যেয়ো না। জানি না কেন, একটু আশ্চর্যই বলতে হবে ব্যাপারটাকে, সেদিনের পর থেকে স্যাররা আমাকে খুব একটা বকাটকা দেননি। অন্তত সেই কোর্সের স্যাররা। তানভীর স্যার, খালেদ স্যার তো ইচ্ছেমত সবাইকে বাঁশ দিতেন। শুধু আমাক...

ছাদ

ছবি
এক. ফারহাদের বাসাটা তিনতলা। একতলাটা গত দু মাস ধরে ফাঁকা পড়ে আছে। আর দোতলায় গত বিশ বছর ধরে এক বুড়ো পড়ে আছে। রিটায়ার্ড বুড়ো। বিশ বছর আগে লোকটা যখন এই বাড়িতে উঠেছিল, তখনও নাকি এমনই বুড়ো-বুড়ো চেহারা ছিল। একহাতে ছেঁড়া সুটকেস, আর অন্য হাতে একটা ভাঙা গীটার নিয়ে উঠে এসেছিল এই বাড়িতে। তবে আশ্চর্য এই যে, গত বিশ বছরে কেউ এই বুড়োকে গীটার বাজাতে শোনেনি। বুড়ো চিৎকার করে বাড়িওয়ালার সাথে ঝগড়া করেছে, এলাকার ছোট বাচ্চাদের আদর করে চকলেট খাইয়েছে, রমজান মাসে সারারাত মসজিদে জেগে কেঁদেছে, শেষবিকেলে বাসার চারপাশে পায়চারী করেছে, কিন্তু কখনই তার গীটারটা বাজায়নি। অথবা, কেউ তাকে বাজাতে শোনেনি। ফারহার আম্মুর ধারণা, বুড়ো গীটার বাজাতে পারে না। কোথাও কুড়িয়ে পেয়েছে—তাই নিয়ে চলে এসেছে। চালচুলোহীন বুড়ো! ফারহার কেন যেন এটা বিশ্বাস হয় না। বুড়ো বড্ড গরীব—এটা ঠিক অবশ্য। তাই বলে খামোখা একটা ভাঙা গীটার নিয়ে বিশ বছর পার করে দিবে? সে মাঝেমধ্যেই ভাবে, একদিন সাহস করে বুড়োকে জিজ্ঞেস করবে, উনি গীটার বাজান না কেন। সাহস হয়ে ওঠে না। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় কখনো বুড়োর সাথে দেখা হয়ে যায়। বুড়ো গম্ভীর মুখে হুংকা...

এলোকথন (শ্রবণা ৪)

ছবি
আমার মনে হচ্ছে আমরা কিছু একটা হারাচ্ছি। আমি, তুমি, সে—আমরা সবাই। আজ থেকে প্রায় বাইশ বছর আগে বিটিভি অসাধারণ একটা অনুষ্ঠান প্রচার করেছিল। নাম ‘জলসা’। উপস্থাপক ছিলেন আনিসুল হক। মেয়র সাহেব যে একসময় উপস্থাপনা করতেন—আমি জানতাম না। আর অতিথিদের মধ্যে ছিলেন…এহ্‌ম, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, শ্রদ্ধেয় মুস্তাফা মনোয়ার, খান আতাউর রহমান, কলিম শরাফী, নীলুফার ইয়াসমিন, সোল্‌স, মাইল্‌স ব্যান্ডের সদস্যরা—সে এক দীর্ঘ তালিকা! অনুষ্ঠানটা দেখে আমার এত ভালো লাগলো, কী বলব। বাইশ বছর আগের মানুষগুলো এত ভালো ছিল? মাত্র বাইশ বছরেই এত পরিবর্তন হয়ে যায়? ওরা একেকজন কথাবার্তা বলছে, মুস্তাফা মনোয়ার স্যার থেকে শুরু করে সে সময়ের ‘পিচ্চি’ পার্থ বড়ুয়া পর্যন্ত—একেকজন কী গভীর থেকে একেকটা বাক্য উচ্চারণ করছে! বাইশ বছর আগে বোধহয় মানুষগুলোর মধ্যে অনেকখানি গভীরতা ছিল। সে সময়ের গানগুলোই দেখ, আজকের হৃদয় খানের ‘আমি যে তোমার, প্লিজ প্লিজ আমি তোমার, এখন দুইজন মিলে নাচি চলো’—এইসব গানের সাথে সেই সময়ের ‘নিউক্লিয়ার স্বাধীনতা’-র তুলনা হয়? গানের নামটাই তো অসম্ভম রকমের সুন্দর—নিউক্লিয়ার স্বাধীনতা! এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলে ফেলার লো...

এলোকথন (শ্রবণা ২)

ছবি
অল্প কিছুদিন হল, মাথায় নাইন্টিজের বাংলা ব্যান্ডগুলোর পোকা ঢুকেছে। এর দায় অবশ্য অনেকখানিই শাফিনের। আমি-শাফিন-খালিদব্রো-ইবরাহিম ভাই—আমরা চারজন লালবাগের একটা রেস্তোরাঁয় বসে ছিলাম। বসার কিছুক্ষণের মাঝেই নাটক নিয়ে আলোচনা শুরু হল, কাজেই আমি একেবারে চুপ মেরে গেলাম। নাটক-চলচ্চিত্র নিয়ে আমার যে জ্ঞান—তাতে মুখ খুললে আর মুখ লুকোনোর জায়গা পাবো না। আমি শুধু অপেক্ষা করছিলাম, কখন গানের প্রসঙ্গটা ওঠে! তখন ইবরাহিম ভাই মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকবে, আর আমি মঞ্চে নামবো! তা, প্রসঙ্গ উঠলো বটে। শাফিন একটা ভালো কাজ করেছে বোধহয়—নাইন্টিজের বাংলা ব্যান্ডগুলোর প্রায় সবই শুনে ফেলেছে। আমাদের দেশে পেপার রাইম কিংবা রকস্ট্রাটার মত এত অসাধারণ কিছু ব্যান্ড ছিল—আমি ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি আগে। গতকাল রাতে রকস্ট্রাটার প্রথম গানটা শুনতে গিয়ে রীতিমত বেকুব হয়ে গেলাম—১৯৯১ সালের ঢাকা শহরে বসে ছেলেগুলো এমন মেটাল গান গেয়েছে?! মাইরি, কী দুঃসাহস! [পরবর্তী অংশে অল্পকিছু সেন্টি আছে। ময়মনসিংহ এবং আরামবাগকে চার নম্বর মৃদুবিপদ্‌সংকেত দেখানো হচ্ছে। পরেরদিন ক্লাস বা পরীক্ষা থাকলে এখন ঘুমিয়ে পড়াটাই শ্রেয় হবে।] কিন্তু এদিকে আমি নিজে...

এলোকথন (শ্রবণা ১)

ছবি
[রিয়ার জন্য নিষিদ্ধ, খবরদার। আমি না বলা পর্যন্ত।] ডাটাবেজ পড়তে পড়তে পাগল হয়ে যাচ্ছি। যদিও অস্বীকার করার উপায় নেই—জিনিসটা খুবই জোস। এই টার্মে কাজ করার জন্য কায়কোবাদরা প্রায় চারশো গিগাবাইট ডাটা খুঁজে বের করেছে। কোনো ছবি নেই, কিচ্ছু নেই, কেবল গুটিগুটি টেক্সট দিয়ে ভরা চারশো গিগাবাইট! ব্যাপারটা দেখে আমার আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড়। একটা জিপ ফাইলে এই বিশাল দৈত্যকে আটকে রাখা হয়েছে। পুরোটা আনজিপ করলেই চারশো গিগা বের হয়ে আসবে, হাউমাউ করে কম্পিউটারের মেমোরি খেতে শুরু করবে। আমি ছোট্ট একটু অংশ আনজিপ করে দেখেছি, লেখাগুলো পড়লে আসলেই ফিল আসে। সিএসই-জাতীয় ফিল না, কাব্যিক ফিল। সে যাক। কাল বিকালে ল্যাব ফাইনাল। রিয়াটা এসে ফোন দিচ্ছিল। সে যখন ফিরে যাবে তখন আমার পরীক্ষার হলে বসে কলম কামড়ানো লাগবে—কাজেই দেখাসাক্ষাত করার উপায় নেই। অবশ্য দেখা করারও তেমন কিছু নেই। পুতুল আমরা একেকজন, যেমনে নাচাও তেমনিই নাচি। রিয়া যে বলছে, ‘সবকিছু মিলায়ে জগাখিচুড়ি হয়ে গেসে’, তাতেই কি কিছু এসে যায়? ওটাও তো পুতুলনাচেরই অংশ। একটাই সমস্যা, পুতুলগুলো সময়ে সময়ে হাসতে বা কাঁদতে পারে। সময়ে সময়ে নাচের দৃশ্যে ঢুকতেও ...

সংবিগ্ন মানুষজন ও আঁকাআঁকি বিষয়ক

ছবি
[আমি না বলা পর্যন্ত রিয়ার জন্য নিষিদ্ধ।] এক. তোহফার সাথে আমার প্রায়ই যে বিষয়টা নিয়ে তর্ক হয় সেটা হল, কে কাকে দেখে ইন্‌স্পায়ার্ড। ব্যক্তিগতভাবে আমার ধারণা, মেয়েটা অসাধারণ পেইন্টিং করে, কোন রঙটা কোথায় কতখানি গাঢ় করে মেরে দিলে কী ঘটে যেতে পারে—সেটা সে আসলেই ভালো বোঝে। আফ্রেমভের সাথে তুলনা করাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে নিশ্চয়ই, কিন্তু আমার আশেপাশের মানুষের মধ্যে যারা রঙ সবচেয়ে ভালো বোঝে—তোহফা নিঃসন্দেহে তাদের একজন। আমি মুখ্যুসুখ্যু মানুষ, পেনসিল দিয়ে নিরীহ শেড দেয়াতেই আমার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। এই শেডও আবার ইয়াফিজ সিদ্দিকীর হ্যাঁচকা টানের শেড না, অনেক সময় নিয়ে একের পর এক স্তরে দেয়া শেড। যেসব দিনে ভীষণ হাত কাঁপে, সেসব দিন সবচেয়ে গাঢ় অংশগুলোতেও আগে টু বি বসাই। এরপর একটু ভরসা পাই, তখন ফোর বি। হাত আরেকটু শান্ত হলে সিক্স বি, ভূমিকার চুল আঁকার সময় এভাবে নাইন বি পর্যন্ত উঠেছিলাম। (সেই দিনটা আবার বাড়াবাড়ি রকমের সুন্দর ছিল, ইসিই ভবনের বারান্দার গ্রিল খোলা থাকায় ক্লাসের সবাই মিলে জানালা দিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। সানশেডে লাইন দিয়ে বসে ছেলেমেয়েগুলো আড্ডা দিচ্ছিল। অন্তু খুব ভয় পাচ্ছিল—যদি নিচে পড়ে যায়! লাই...