পোস্টগুলি

এলোকথন (কৃত্তিকা ২৪:২)

ছবি
এই পৃথিবীর কেবল দুটো মানুষের সাথে আমি ঝগড়া করি।  কিছুক্ষণ আগে ব্যাপারটা খেয়াল করলাম। এমনিই।  আবার হয়তোবা, এমনিই না। হয়তোবা কোন কারণ ছিল ব্যাপারটা খেয়াল করার পেছনে।  ক্লাস বন্ধ, বাসাতেই বসে ছিলাম সকাল থেকে। দুপুরে কী মনে করে শহীদুল জহিরের বইটা হাতে নিলাম।  এই বইটার কথা আমি প্রথম শুনি একটা ভুতুড়ে দিনে, ময়মনসিংহের একটা মানুষের কাছ থেকে। এবং আমি এই বইটা পড়া শুরু করি আরেক ভুতুড়ে দিনে, জ্বরের প্রবল ঘোরে বিভ্রান্ত হয়ে বসে থাকার দিনে।  এ কথাটা অদ্ভুত যে, আমি কেন আজকেই এই বইটা শুরু করলাম, একটা সাধারণ দিনেও এই বই অসাধারণ বিভ্রম তৈরি করতে পারত, আর আজকের দিনটা বেছে বেছে আলাদাভাবে সুররিয়েলিস্টিক একটা দিন।  এবং এ কথাটাও অদ্ভুত যে, বইয়ের প্রথম গল্পটাই শুরু হল ভূতের গলি থেকে, যে গলির একটা মানুষ ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য রীতিমত খেপে আছে।  হতে পারত না অন্যকিছু? হতে পারত গল্পটা শুরু হয়েছে একেবারেই নিরস কোন জায়গা থেকে, এই ধর, শ্যামলী থেকেই, আর এরপর, হতেই পারত, শ্যামলীর সেই মানুষটা খেপে আছে ততোধিক সাধারণ কোন জায়গায় যাওয়ার জন্য, হয়তোবা সেটা গাজীপুর—...

এলোকথন (কৃত্তিকা ২৪:১)

ছবি
এক. কিছুক্ষণ আগে একটা হুমকি পেয়েছি। চুপচাপ বসে ছিলাম। হঠাৎ করেই ধমকটা খেলাম। আজ রাতেই কিছু একটা না লিখলে আমি নাকি শেষ! শ’খানেক মাইল দূরে বসে এত সহজে হুমকি দেয়া যায়—কে জানতো। কী আর করা। যা মনে আসে, লিখে ফেলি। সমস্যাটা হল যে, মনে অনেক কিছুই আসে। সেই যে, words are flowing out like endless rain into a paper cup. কাজেই লিখতে গিয়ে বারবার দ্বিধায় পড়তে হয় আমাকে। গত কয়েক সপ্তাহে খুব অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমার আফসোস হচ্ছে যে, আবারও ডায়েরি লেখার অভ্যাসটা নষ্ট হয়ে গেছে আমার। যদি থাকতো, তবে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ভরে যেত। এমনও তো দিন গেছে, লেখার তোড়ে রীতিমত আমার হাত কাঁপতে শুরু করেছে—শব্দগুলো যেন মাথাতেও আনার দরকার হচ্ছে না—চিন্তা থেকে সরাসরি আমার আঙুলে চলে যাচ্ছে, আর আমি লিখে ফেলছি। কে জানে, হয়তো সামনেই অমন দিন আবার আসবে। আজ অথৈ ফোন দিয়েছিল, অনেকদিন পর। প্রায় প্রতিদিনই ভাবি, পিচ্চিটাকে ফোন দিব। সেই কবে একবার সঞ্জীবের একটা গান শুনতে বলেছিল, সেই কথাটুকুর উত্তর না দিয়ে আমি যে ডুব দিলাম, আর খোঁজ নেই। অথৈ ফোন দিয়ে প্রথমে এই কথাটাই জিজ্ঞেস করল, আমি কোথায় হারিয়ে গেছি। আম...

এলোকথন (অশ্বিনী ২৪:৪)

ছবি
আজ বেশ ক’দিন হল, আব্বু বাসায় নেই। আব্বু বাইরে গেলে আমরা বড় একটা টের পাই না। ছোটবেলা থেকেই এমনটা হয়ে আসছে। ব্যাপারটা মোটেও আশ্চর্যের না, কারণ আব্বু যখন দেশে থাকে, তখনও তার সাথে খুব একটা দেখা হয়—এমনটা দাবি করা যাচ্ছে না। একই বাসায়, একইসাথে থেকে কেন আব্বুর সাথে নিয়মিত দেখা হয় না—এটাই বরং আশ্চর্যের। সেই ছোটবেলা থেকে দেখি, সকালবেলা উঠে আব্বু দৌঁড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়, অফিস আছে। কিছু মানুষ থাকে না, কাজপাগল ধরনের? অমন একটা মানুষ। অফিসে গিয়ে সে জ্যান্ত মানুষের মতই কাজ করতে থাকে, ঝিমায় না। বরং আমি আস্তে হাঁটলেই উল্টো ধমক দেয়, ‘আই এ্যাম সিক্সটি ইয়ার্স ওল্ড, আমি পারলে তুমি পারবা না কেন?’ সক্কালবেলা বেরিয়ে ফেরে বিকেলবেলা। (ঘুমটা কি বেশি পেয়েছে? আসলে আব্বু তো ফেরে রাত এগারোটায়। একটা ঘোরের মধ্যে লিখতে গিয়ে ‘বিকেল’ লিখে ফেললাম।) যাকগে, আব্বু ফেরে রাত এগারোটায়। এবং তখনও জ্যান্ত মানুষের মতই বাসায় ঢোকে, আর যদি বাসায় দাদু থাকে, তবে তো কথাই নেই, কে বলবে রাত এগারোটার বেশি বাজে, এবং এই বাসায় সবচেয়ে ছোট মানুষটার বয়স বাইশ? আব্বু আর দাদু মিলেই ছোটদের অভাব পূরণ করে দেয়—রীতিমত উৎফুল্ল ভঙ্গিতে দুজন...

এলোকথন (অশ্বিনী ২৪:৩)

ছবি
লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে আজ। আজকাল লেখার ইচ্ছেটা আসে ছাড়াছাড়াভাবে। ব্যাপারটা মোটেও অস্বাভাবিক না, কারণ আমি কাজ করতে করতে মারা যাচ্ছি। জানি না, হয়তো সাতসকালে উঠে দৌঁড়ে বাসা থেকে বের হই। ভার্সিটিতে যতক্ষণ পারি ক্লাসনোট তুলি। যেদিন টানা পাঁচটা ক্লাস থাকে সেদিন শেষ ক্লাসটুকুতে সবাই কলাপ্‌স করে। মাথা আছড়ে বেঞ্চে পড়ে যায়। আমি চারদিকে তাকাই, দেখি সবাই মরে যাচ্ছে, অথবা গেছে, সেই কবে! কনকের মত দু-একজন তবু বেঁচে থাকে, নিলয়ের মত দু-একটা পাগল এখনো স্বপ্ন দেখে, তবু বাকিরা তো মরে গেছে। আমি নিজেও কলাপ্‌স করি কখনো, বেঞ্চে মাথা রেখে আক্ষরিক অর্থেই স্বপ্ন দেখি। গত কিছুদিন যেসব স্বপ্ন দেখেছি—তার মাথামুণ্ডু কিছুই নেই। একদিন দেখলাম, মুনির স্যার এসে কংগ্রেসের এক্সপেরিমেন্টের জিনিসপত্র সব ফেলে দিয়েছেন। আমার বড় ভয় হয়, আমি একদিন এসব স্বপ্ন দেখে ক্লাসেই চিৎকার করে জেগে উঠবো। কায়কোবাদ স্যার এসে চশমার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে বলবেন, ‘ইউ আর সো স্মার্ট, ক্লাসে ঘুমোলেই তোমার পড়া হয়ে যায় তাই না?’ ক্লাস থেকে বেরিয়ে দৌঁড়ে অফিসে যাই, এবং আবারও কাজ শুরু করে দেই। আগ্রহের সাথেই করি, সুতরাং কাজের মাঝে ডুবে থাকলে টের পাই না চারপা...

এলোকথন (অশ্বিনী ২৪:১)

ছবি
এক. আমার একটা ফ্যান্টাসি আছে। আমি মানুষজনকে পকেটে করে ঘুরি। মানে, আক্ষরিক অর্থে তো আর একটা মানুষকে পকেটে পুরে ফেলা যায় না, তবে কেউ যখন ফোনে খুদেবার্তা/মেইল দেয়, সেটা না পড়েই পকেটে নিয়ে ঘুরতে থাকি। ধর, সকালবেলা এ্যানি একটা মেইল দিল। ফোনের পর্দায় ওর একটা ছবি আসবে, মেইলের খানিকটা অংশ আসবে। আমি মেইলটা আর খুলি না, ওভাবেই ভার্সিটি চলে যাই। দু-এক ক্লাস পরে হয়তো কোন কাজে ফোনটা পকেট থেকে বের করি। আবার এ্যানির মুখ দেখা যায়, সেটাকে আনমনে একটু ঝাড়ি দিয়ে আবার পকেটে রেখে দেই। দুপুরে খাবার সময় হয়তো অকারণেই ফোনটা বের করি, এবং আবার অবাক হয়ে যাই, আরে, এ যে এ্যানির মুখ দেখা যাচ্ছে, মেইল এসেছে। আবার ফোনটা পকেটে রেখে দেই, মেইল না খুলেই। সে নাহয় খোলা যাবে এক সময়—অত তাড়াহুড়োর কী আছে। গত দুদিন ধরে রিয়াকে পকেটে নিয়ে ঘুরছি। এই উত্তর দিবো-দিবো করে খেয়াল করলাম, এখনও দেইনি। থাকগে। তাড়াহুড়োর তো কিছু নেই, একসময় ফোন দিয়ে বকে দিলেই হয়ে যাবে। অবশ্য, ছেলেদের সাথে এই ফ্যান্টাসিটুকু করা কঠিন। মেইল দেয়ার সাথে সাথে উত্তর না পেলে আরিফ-আকিবের মাথা এলোমেলো হয়ে যায়, বুক ধড়ফড় করতে থাকে। পানির পিপাসা পায়। মনে হয়, ...

এলোকথন (ভাদ্রপদ ২)

ছবি
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মানুষের সাথে আকাশের একটা সম্পর্ক আছে। সারা দুপুর বসার ঘরে কাজ করছিলাম। যেই ঘরের জানালাটা বহুকাল আগে মরে গেছে, খালা হয়তো মাসে একবার সবাইকে মনে করানোর চেষ্টা করে, জানালা মরে নাই, খালার অসামান্য চেষ্টার পর ফাঁকফোঁকর দিয়ে সামান্য একটু আলো ঢোকে, সেই আলোতে ঘর আলো হয় না, বরং অন্ধকারের কথাটাই নতুন করে মনে পড়ে যায়, খালা জোর গলায় দাবি করে, দু হাত তুলে চিৎকার করে, জানালা মরে নাই, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না, যে জানালা দিয়ে অন্ধকার আসে, সেটা আমার কাছে মরে গেছে, সেই বছর উনিশ আগে, সেই উনিশ বছর আগে যখন আপুর সাথে এই বাসায় ঢুকেছিলাম, তখন থেকেই… এইসব জানালা, ওরাও তো প্রতীকী বটে, কেন বসার ঘরের জানালাটাই অকালে মরে যাবে, কেনই বা আমার ঘরের জানালাটা অকালে বেঁচে থাকবে, জ্যান্ত জানালা, মৃত জানালা, সবাই মিলে আমার চিন্তাকে আক্রমণ করবে, বারবার করে বলবে, ওরাও নাকি প্রতীক, কী যেন ছাই, মেটাফোর, জানালাগুলো একেকটা মেটাফোর, শিকলদেবীর পূজার বেদী ভাঙতে আলোটুকু তো লাগবেই, ও-ঘরে দেবী জন্ম নেবে, আমার ঘরে এসে অপঘাতে মরে যাবে… কাজেই, চৌকো জানালার বাইরে যে চৌকো আকাশ, সেই আকাশের সাথে আমাদের সম্পর্ক...

এলোকথন (ভাদ্রপদ ১)

ছবি
গোল্লায় যাক সব কাজকর্ম! এই কাজগুলোকে আকিব ঠাট্টা করে ‘বানাবিস’—বা এমন কোনো একটা নামে ডাকে। তা, দিনরাত ‘বানাবিস’-এর কাজ করলে মাথা গরম হবে না কেন। ওহ, মাথাটা যেন বনবন করে ঘুরছে, ভীষ্মলোচন শর্মা গান গেলে বোধ করি এমনটাই হত। আজ রাতের মত কাজকর্মকে গোল্লায় যেতে বলার কারণটা ছোট এবং খানিকটা অদ্ভুত। ঘরের সাদা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে হঠাতই একটা পুরনো গান মনে পড়ে গেল। আম্মু ছোটবেলায় অনেক গান শুনতো। মানে, আমি যখন ছোট, তখন। আমাদের বাসায় একটা উদ্ভট যন্ত্র ছিল। বিশাল দেহ, আর দুপাশে দুটো বিশাল সাউন্ডবক্স। রেডিও থেকে শুরু করে ক্যাসেট—সবই শোনা যেত সেটাতে। আমার সকালে ঘুম ভাঙতো ওটার রেডিও শুনে। আব্বু সকাল সাতটায় বিবিসি বাংলার খবর শুনতো। খবরগুলো তো মনে নেই, তবে প্রতিটা খবরের মাঝে ছোট্ট একটা সলো বাজতো—বেশ মনে আছে! আর সন্ধ্যেবেলা আম্মু ওখানে ক্যাসেট বাজিয়ে গান শুনতো। খুব সুন্দর কিছু ক্যাসেট ছিল আমাদের—ওসব কোথায় যে গেছে, কে জানে। আমার ছোটবেলার যত স্মৃতি মনে পড়ে, তার অর্ধেকেই আম্মু গান গাচ্ছে বা শুনছে—এমন একটা দৃশ্য চোখে ভাসে। আম্মু গানটান কখনো শিখেছে বলে জানি না, তবে গুনগুন করে যখন গাইতো, শুনতে ব...

বৃত্তের ভেতরে

ছবি
“কোথাও নেই ঝুম ঝুম অন্ধকার, তক্ষক ডাকা নিশুতি রূপকথা শুনে শিউরে ওঠে না গা স্বপ্নে আমার শরীরে কেউ ছড়ায় না শিউলী ফুল আলোর আকাশ নুয়ে এসে ছোঁয় না কপাল; গোটা শহর বাতি জ্বেলে সতর্ক পায়ে পায়ে হারাবার জায়গা খুঁজে মরি…” আচ্ছা, এই শহরে কি হারানোর জায়গার সত্যিই অভাব? বেশ কিছুদিন হল, অলিগলিতে ঘুরতে ঘুরতে আমি হারিয়ে গেছি। এবং অবিশ্বাস্য লাগতে পারে, রাস্তা পাওয়ারও চেষ্টা করছি না আমি। কারণ আমার দৃঢ় বিশ্বাস, হারিয়ে যাওয়াই বরং কঠিন, আমি রাস্তা খুঁজে না পেলেও রাস্তা ঠিকই আমাকে খুঁজে নেবে। কাজেই সোডিয়াম আলোকে আড়ালে রেখে, একটা অন্ধকার গলিতে চুপ করে বসে আছি। মানুষের কণ্ঠ কানে এলে পালিয়ে অন্য একটা গলিতে ঢুকে পড়ছি। জানি, এভাবে খুব বেশিদিন চলবে না। কারো না কারো হাতে তো ধরা পড়তেই হবে, প্রজ্ঞা তো তাই বলে। দু-চারদিন আগে রিয়ার ব্লগে ঢুকে দেখি, পুঁচকে মেয়েটার বেশ উন্নতি হয়েছে। এদ্দিন আমিই কেবল একচেটিয়া নিষেধাজ্ঞা জারি করে যেতাম, আজকাল মেয়েটা উল্টো আমার জন্য লেখা নিষিদ্ধ করতে শুরু করেছে। কী আর করা। চোখ বড় বড় করে কিছুক্ষণ শিরোনামটা দেখে চলে এলাম। “বৃত্তের বাইরে”। মনে মনে বললাম, স...

সালভাদরের ভাঙতি

ছবি
[এই লেখাটা সুরভী আন্টির জন্য নিষিদ্ধ। দেখুন আন্টিই, আজকাল আপনার মত থুড়থুড়ে শতবর্ষী বুড়োদের জন্যও লেখা নিষিদ্ধ করা শুরু করেছি। দয়া করে এটা পড়বেন না, আমি সিরিয়াস। আপনাকে টনসিলের ঝুঁকি নিয়ে আইসক্রিম খাওয়াতে রাজি আছি আমি, এই যে লিখে দিলাম।] অন্ধ প্যাঁচা আর স্থবির ব্যাঙ ছাড়াও সুররিয়েলিজম হয় বটে। প্রায় দুদিন হল, আমার পৃথিবীটা সুররিয়েলিস্টিক হয়ে যেতে শুরু করেছে। পদ্মর নানাভাইকে মাটি দিয়ে আসার পর থেকেই এই অনুভূতিটা হচ্ছে। ওনাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম না, কাজেই খুব একটা মন খারাপ করার সুযোগও ছিল না। সেকারণেই কিনা কে জানে, অনুভূতিটা ‘মন খারাপ’ না হয়ে ‘সুররিয়েলিস্টিক’ হয়ে যাচ্ছে। এই যে লিখছি, মাথার ওপর যে ফ্যানটা ঘুরছে, সেই ফ্যানের শব্দেও একটা পরাবাস্তব টান পাওয়া যাচ্ছে। আমার একটা সমস্যা আছে, কেউ মারা গেলে আমি তার চেহারা দেখতে পারি না। বছর দেড়েক আগে ফুপী মারা গেল। মাটি দেয়ার আগে সবাই শেষবারের মত ফুপীকে দেখতে গেল। আমি গেলাম না। দীর্ঘ তিনমাস কোমায় থাকলে কি মানুষের চেহারা পাল্টে যায়? ভাইয়ার কাছে শুনেছি, মারা যাবার আগে ফুপীর চেহারা অনেক পাল্টে গিয়েছিল। বড় হওয়ার পর ভাইয়াকে ক...

এলোকথন (উলট-পুরাণ)

ছবি
প্রথমেই বলে নিতে হবে, এটা আকিবের গল্প না। গত এক মাসে আকিব ছেলেটার সাথে দীর্ঘ বকবক করতে হয়েছে। ছেলেটা পারে বটে, দীর্ঘসময় কাজ করেও সে প্রাণখুলে হাসতে থাকে, হুড়মুড় করে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে না। কিন্তু খোলসের বাইরের এবং ভেতরের গল্প—দুটোই আমার কানে আসে, কাজেই এই ছেলেটার সাথে কাজ করে আমি এক ধরনের শান্তি পাই। তবু, এই গল্পটা আকিবের না। অথবা, হতেই পারতো এটা রিয়ার গল্প। বেচারার জন্মদিন আজ। আমি বললাম, আমি যাবো না, ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্নাকাটি করতে। সেটাও শুনবে না, আমি না গেলে নাকি গুলিই করে দিবে। আচ্ছা দিক, তবু বেচারার জন্মদিন তো। হতেই পারতো এটা রিয়ার গল্প। তবু, এই গল্পটা রিয়ার না। এ্যানির সাথে গত কিছুদিন যথেষ্ট ঠাণ্ডা ব্যবহার করেছি, কিন্তু এই গল্পটা এ্যানিরও না। রিকশায় বসে দীর্ঘ আড্ডা দেয়ার পরেও এই গল্পটা ওমরের না, তামান্নার এক মাসের এক্সপেরিন্টের পরেও এই গল্পটা তামান্নার না। অথবা, আরেকটু স্পষ্ট করে বললে, এই গল্পটা নির্দিষ্ট কারো না। এই যেমন, এই গল্পটা নির্দিষ্টভাবে রিয়ার না। তবু, আমি যদি শপাঁচেক শব্দ লিখি, সেখানে কি দু-একবার রিয়ার নাম আসবে না? আসবে তো। কিংবা ধরো, আমি...

বাক্‌সো

ছবি
প্রায় এক যুগ পর অথৈ পিচ্চিটা ফোন দিল। এটা আশ্চর্য না, তবে আশ্চর্য এই যে, কিছুদিন ধরে ঘুরেফিরে বারবার পিচ্চিটার কথা মনে পড়ছিল। মোটামুটি ছোটবেলা থেকেই কুইন শুনি, কিন্তু আজকাল কুইন শুনতে গেলে প্রায়ই অথৈয়ের কথা মনে পড়ে যায়। আমার ধারণা, এর পেছনে ফ্রেডি মার্কারির একটা বিশাল ভূমিকা আছে। গল্পটা বলে ফেলতে ইচ্ছে করছে। একটা ব্লকে আটকে ছিলাম, লিখতে গেলেই হাত আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। পিচ্চিটা ফোন দিয়ে এক ধাক্কায় ব্লক ভেঙে দিল! ফ্রেডি মারা যাবার আগের দিনগুলোতে বারবার করে বলছিল, “Write me more. Write me stuff. I want to just sing this and do it and when I am gone you can finish it off.” মৃত্যুর মাসকয়েক আগে ছেলেটা অসাধারণ কিছু গানও গেয়ে গেছে। সেই গানগুলো শুনলে মিশ্র একটা অনুভূতি হয়। একজন মানুষ যখন জানে যে সে মারা যাবে, আরেকটু স্পষ্ট করে বললে, রক ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ কিংবদন্তিদের একজন যখন জেনে ফেলে যে, সে কিছুদিনের মাঝেই মারা যাচ্ছে—তখন সে যা যা করতে পারে—সেটা আর দশটা মানুষের পক্ষে করা প্রায় অসম্ভব। গতকাল কুইনের শেষদিকের একটা গান হঠাৎ চোখে পড়লো, এদ্দিন পড়েনি। না পড়ে খুবই ভালো হয়েছে। গত কয়েক বছর ধর...

দেবতার গ্রাস

ছবি
এক. শেষবিকেল। এই সময়ে কার্জনের পুকুরপাড়ে অনেক ছেলেমেয়ে থাকার কথা। আজ বোধহয় রোদটা একটু চড়া দেখেই খুব বেশি মানুষ দেখা যাচ্ছে না। কেবল তিনটে ছেলেমেয়ে বিধ্বস্ত ভঙ্গিতে বসে আছে। বামদিকের ছেলেটার নাম শাফিন। বয়স বাইশ বছর হয়ে গেলেও তাকে দেখে সতেরোর বেশি মনে হয় না। বাইশ বছরের যেই ছেলেকে সতেরো বলে মনে হয়—তাকে সবাই খুব আদর করে। কাজেই শাফিন থার্ড ইয়ারে উঠেও ভার্সিটিতে আদুরে বেড়ালের মতই ঘুরে বেড়ায়। বড় ভাইদের সাথে দেখা হলে ম্যাঁও ম্যাঁও জাতীয় শব্দ করে আদর নেয়ার চেষ্টা করে। আদর সে পায়ও বটে। শোনা যায়, মাস্টার্সের কোন এক বড়ভাইয়ের সাথে তার খুবই খাতির। দুজন মিলে নাকি রাঙামাটির কোন এক জঙ্গলে…আচ্ছা, সে কথা থাক। সব রহস্য সবখানে ফাঁস করতে নেই। শাফিনের ডানদিকে নোবেল আর শাওন বসে আছে। নোবেল কিছুক্ষণ পরপর ফিক করে হেসে ফেলছে। হাসির শব্দ শুনে শাওন বারবার বিষদৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। মেয়েরা সাধারণত হাসিখুশি হয়। মোটা মেয়েরা আরও বেশি হাসিখুশি হয়। আর প্রস্তরযুগের হাতির মত মোটা মেয়েরা খুবইইই বেশি হাসিখুশি হয়। শাওন প্রস্তরযুগের হাতির মত মোটা। কাজেই সে খুবই হাসিখুশি থাকে। তবে আজ বোধহয় তার মন একটু খারাপ। চোখের দৃষ্টি...