পোস্টগুলি

যাকে আমি মেইল দেই না

ছবি
​​প্রিয় "ইয়ে", সম্বোধনটা যথেষ্ট গুরুতর হয়ে গেছে রে। "ইয়ে" বলে কাউকে ডাকাটা খুবই ইয়ে দেখায়। কিন্তু তোর নামটা না লিখে কী যে লেখা যায়—সেটা ভেবে পেলাম না। বল তো কী লেখা যায়? ​​ আমার সম্বোধনের মত তোর অভিযোগটাও গুরুতর, আমি আর মেইল দেই না। অভিযোগটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই, কারণ সেটা একশোভাগ সত্যি। মেইল দেয়ার প্রয়োজন ফুরিয়েছে না? আমরা আবারও সস্তা হয়ে যাওয়া শুরু করেছি। তুই একটুখানি, আর আমি অনেকখানি। আমি কিন্তু পারলে ফেসবুকটা বন্ধ করে দিতাম। আবারও মেইল-মেইল আর ফোন-ফোন খেলতাম। মাসকয়েক আগের ঐ দিনগুলো কী চমৎকার ছিল, জানিস? হাতে​​গোণা পাঁচ-সাতজনের সাথেই কথা হত কেবল। কিন্তু যাদের সাথে হত, একদম একশোভাগ খাঁটি কথা হত। মানে, অদ্ভুত ব্যাপারস্যাপার ছিল​​—​মনে কর, ​​অর্ণবের সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই, এবং নেই মানে একেবারেই নেই, শূন্য। আর পদ্মর সাথে যোগাযোগ আছে—সেটার ​অর্থ হল, ​কয়েকদিন পরপর​ বাসায়​ বসে​ আড্ডা, আর কয়েকবার করে ফোনে​ চেঁচামেচি।  প​দ্মদের বাসায় কতদিন যাই না জানিস? আবার ফেসবুকটা বন্ধ করে দিতে পারলে ভালো হত কিন্তু। সবার কাছ থেকে পাওয়া ছোট ছোট চ্যাটের পর...

এলোকথন (ফিরে আসা চৌদ্দ)

ছবি
“Lay her a-hold, a-hold! Set her two courses: off to sea again, lay her off.” মুশকিল, এই সময়ের বৃষ্টিটা বড় মুশকিলে ফেলে দিচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টিটা হয়েই যাচ্ছে। এই একটু আগে বিষম বেগে বৃষ্টি নামলো—পুরো পৃথিবীটা ভাসিয়ে নিয়ে যাবে যেন। আমার জন্য মুশকিল, কারণ বৃষ্টি হলে পড়াশোনা করতে ইচ্ছে হয় না। খুব, খুবই ইচ্ছে হয় লিখতে। অথচ একগাদা পড়া জমে আছে। নিলয়কে (আমাদের ক্লাসের নিলয়) কথা দিয়েছি, ঠিকমত পড়াশোনা করব। আগের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। চৌদ্দ সালে ঠিক এভাবেই বৃষ্টি হত। আমরা এইচএসসি দেই সে বছর। প্রত্যেকটা কথা যেন স্পষ্ট মনে পড়ে যাচ্ছে। ঠিক আমাদের প্র্যাকটিকাল পরীক্ষাটা শেষ হল, আর সেই বছরের বৃষ্টিটাও শুরু হল। এইচএসসির পরের সময়টুকু মানুষ একটা ঘোরের মধ্যে থাকে। এই যে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটা রেস, এই রেসটা মানুষকে অবিশ্বাস্য একটা ঘোরের জগতে নিয়ে যায়। আমরা সেই ঘোরের মধ্যে বাস করতাম। আহা! সেই দিনগুলো! মানে, কল্পনার বাইরে একেকটা দিন গেছে। তখন ছবিটবি আঁকতাম না, কিছুই করতাম না। শুধু পড়তাম, মন ভালো থাকলে পড়তাম, আর মন খারাপ থাকলে…হুম, তখনও পড়তাম। আর বৃষ্টি হত বাইরে। জানা...

এলোকথন (বিরলের ডায়েরি)

ছবি
[এলোকথন অর্থ কী? সম্ভবত, এলোমেলো কথাবার্তা। এই কথাগুলো কেবল নিজের ডায়েরিতেই লেখা উচিত, এর বাইরে না। তবে ভরসা এই যে, যেসব লেখা আমার নিজের জন্য, সেখানে আরও কয়েকজন মানুষের দাবি আছে।] ১৫ এপ্রিল, শনিবার বিকাল ৫:৩৭ ঘুমাইনি। ভাগ্যিস ঘুমাইনি! অথচ জেগে থাকার তেমন কোন কারণ ছিল না। সারারাত ট্রেনে এসে এবং সারাদিন ক্যাম্পে চেঁচামেচির পর একটা কথাই সত্য মনে হয়—ঘুম। সেই সাথে আজকে দিনাজপুরের আবহাওয়াটাও ঘুম ঘুম, চারিদিকে কেমন শান্তির একটা ভাব। সকালে অবশ্য ভালোই গরম ছিল। দুপুরে খাবার পর থেকে সবকিছু কেমন যেন দ্রুত পাল্টে যেতে শুরু করল। আমরা যখন সায়েন্টিফিক পেপারের লেকচারটা দিতে শুরু করেছি, আকাশটা একটু একটু করে কালো হচ্ছে। ঝড় আসার ঠিক আগে আগে বিদ্যুৎ চলে গেল, আর চারপাশ এমনই অন্ধকার হয়ে গেল, ক্লাসরুমে আর কাউকেই দেখা যায় না। খারাপ লাগছিল না ওভাবে ক্লাস নিতে। কারই বা খারাপ লাগে ওসব মুহূর্তে? ওদিকে বৃষ্টির ঝাপটা আসছে, আমি একবার করে ক্লাসের বাইরে যাচ্ছি, ফিরে এসে আবিরের কাছ থেকে ফ্লোর নিচ্ছি, তখন আবার আবির ক্লাসের বাইরে যাচ্ছে! Alternating lecture. পরে ঝড়টা যখন মোটামুটি প্রলয়ের র...

পেন্সিল

ছবি
এক. অরিত্র যখন তার ডিপার্টমেন্টের সিঁড়িতে এসে দাঁড়াল, তখন বিকেল প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। শেষ বিকেলে কার্জন হলে অসংখ্য ছেলেমেয়ে থাকার কথা। সত্যি বলতে কী, ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ তারিখে একটু বেশিই থাকার কথা। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রির সামনের রাস্তাটা পুরো ফাঁকা। অরিত্র একটু ভুরু কুঁচকে তাকাল। পৃথিবীর প্রচলিত নিয়মকানুনে তার কোন আস্থা নেই, কিন্তু নিয়মের বাইরে কিছু দেখলে একটু অস্বস্তি লাগে। সোমলতা এখনো আসেনি, সেটা নিয়েও একটু অস্বস্তি লাগছে। পকেট থেকে ফোনটা বের করে সময় দেখা যায়, কিন্তু বের করতে ইচ্ছে করছে না। সময়টা না দেখেও বলা যায়, এতক্ষণে সোমলতার চলে আসার কথা। সোমলতার সাথে দেখা হওয়ার আগের কিছুক্ষণ অরিত্র একটু অস্থিরতায় ভোগে। এই অস্থিরতা কীসের জন্য, সে নিজেও জানে না। যেই মানুষটার সাথে প্রতিদিন দু-তিনবার দেখা হয়, না চাইলেও জহিরের ক্যান্টিনে, পুকুরপাড়ে, কিংবা কার্জনের গেটে যার সাথে দেখা হতে বাধ্য, সেই মানুষটাকে ফোন দিয়ে ডেকে আনলে কেন এত অস্থির লাগে, অরিত্র ব্যাখ্যা করতে পারে না। ডিপার্টমেন্টের দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে অরিত্র সামনে তাকাল, এবং হঠাৎ করেই মুগ্ধ হল! এতক্ষণ এই দৃ...

চৈত্রের কাফন

ছবি
[তেরোই মে পর্যন্ত এই লেখাটা ময়মনসিংহ, আরামবাগ এবং জিগাতলার জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল।] একদিক দিয়ে দেখলে অবশ্য, বৃশ্চিকের মৃত্যুটা অবশ্যম্ভাবী ছিল। ওকে শুধু মরতে হত না, ওকে মরতেই হত। লিগ্যাসি তাই বলে। তবু, মরে যাওয়া মানে সবকিছুর শেষ তো, ওটা কষ্ট দেয়। মৃত্যুর শঙ্কাটা প্রথমে আমিই করেছিলাম। এই ধরনের লিগ্যাসি প্রায় প্রফেসির মত। ছাই, স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে কিনা কে জানে, কবে প্রথম কথাটা বলেছিলাম—ঠিক মনে নেই। সেটা শিল্পকলাতেও হতে পারে, বইমেলার সময় মুক্তমঞ্চেও হতে পারে, আবার সাদাসিধে ফোনালাপের সময়েও হতে পারে। তবে বলেছিলাম, ঠিক মনে আছে। ও ছিল আমার মতই। কিছুটা খ্যাপা, একটু আনমনা, কখনো দ্রোহী—এমনই। অনেকগুলো আমরা মিলে যখন একটা সত্তা ছিলাম, সেই সত্তার একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল বৃশ্চিক। আজ থেকে প্রায় দুইশো বছর আগে, যে সময়টায় আমি জন্ম নেই, তখন মৃত্যুতে তেমন একটা বিশ্বাস করতাম না। অন্তত বৃশ্চিকের মত উজ্জ্বল মণ্ডলীর ক্ষেত্রে তো কখনই না। মনেপ্রাণে বিশ্বাস হত, ওটা অনন্তকাল ধরে জ্বলবে! তবে…একটা খটকা ছিল বটে। লিগ্যাসি কি তবে টিকবে না? না টেকার মতও তো কিছু ঘটেনি! প্রফেসি ভেঙে ফেলার...

অথৈ সমুদ্র

ছবি
এক. আঠারোই মার্চ নিয়ে যে লিখতে পারে—সে হয় দুঃসাহসী, নাহয় গাধা। নিঃসন্দেহে আমি দ্বিতীয় দলে। মেয়েটাকে আমি প্রথম দেখি বছর দুয়েক আগে। জগদীশ বসু ক্যাম্পে। তেমন কোন বিশেষভাবে না, যে মুহূর্তে সবাই প্রথমবারের মত তাকে খেয়াল করল, আমিও করলাম। (মুদ্দাসসেরকে কি এজন্য একটা সাধুবাদ জানানো উচিত? উচিত বোধহয়।) পনেরোর সেই সেপ্টেম্বরে আমি সমুদ্রের অনেক, অনেক উপর দিয়ে ঘুরে বেড়াতাম, সমুদ্রের গভীরে যে কিছু আছে—এই নিয়ে আমার ধারণা ছিল না। কাজেই আমার বিশ্বাস, মেয়েটার সাথে যদি প্রথমবার পরিচয় না হত, কখনই দ্বিতীয় পরিচয়টা হত না। এবং অবশ্যই তৃতীয়, চতুর্থ এবং অসংখ্যবারের মত পরিচয় হত না, অবশ্যই না। অনেক ওপর দিয়ে যারা উড়ে বেড়ায়, তাদের পক্ষে সমুদ্রের গভীরে থাকা মানুষগুলোর সাথে যোগাযোগ করা কঠিন। কাজেই মেয়েটার সাথে আমার কখনই কথা হয়নি। কেবল ক্যাম্পের শেষদিন, সেই ঘোরলাগা সকালে চলে আসার আগে বলে এসেছিলাম, ভালো থাকিস। এমনিই বলেছিলাম, সাদাসিধে ভদ্রতা যেটাকে বলে। সমস্যাটা শুরু হল… আগস্টে? সম্ভবত। পুরো একটা বছর পার করে, আগস্টের এক সকালে আমরা ক’জন একটা স্কুলের গেট পার করে ভেতরে ঢুকলাম, আর গেটের ঠিক সা...

না পিচ্চি - না বুড়ো

ছবি
জগদীশ বসু একটা গল্পের ফ্যাক্টরি। প্রতিবছর একগাদা গল্পের জন্ম হয় এই ক্যাম্পে, আর জন্ম হয় কয়েকজন মানুষের। গত জগদীশ ক্যাম্পে যাদের জন্ম হয়েছে তাদের একজন আজরা। মেয়েদের বয়স জিজ্ঞেস করতে নেই, তাই পৃথিবীর সাতশো কোটি মানুষের কেউ বলতে পারে না আজরার বয়স কত। তবে মেয়েটার সাথে পাঁচ মিনিট কাটালেই যে কেউ বলে ফেলতে পারবে, আজরার বয়স কমবেশি একশো বছর, কিংবা তারও বেশি। ক্যাম্পের এমন কোন বুড়ো নেই যে আজরার কাছে বকা খায়নি। বকা খাওয়ার কারণগুলোও বড় গুরুতর। শাফিন ভাই বকা খেয়েছে, কারণ সে জলের গান শোনে না। আমি খেয়েছি, কারণ মেকানিক্সের লেকচারটা কঠিন হয়ে গেছে। ইবরাহিম ভাই খেয়েছে, কারণ সে আজরার খাতা লুকিয়ে রেখেছিল। আমার এই বুড়ো বোনটা অবশ্য পড়ে ক্লাস সেভেনে। গার্লস ক্যাম্পের শেষদিনের লেকচারগুলো যখন আধ্যাত্মিক পর্যায়ে চলে যেতে শুরু করল, তখন বুড়োটা হতাশ হয়ে ক্লাসের পেছনের বেঞ্চে বসে পড়ল। আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম, জগদীশ বসুর কল্যাণেই কিনা কে জানে, স্পষ্ট বুঝতে পারলাম কী ভাবছে পিচ্চিটা। তার পাশে বসে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম, ক্লাস কি কিছুই বুঝতেসিশ না? পিচ্চিটা বিশাল চশমার ভেতর দিয়ে বড় বড় করে তাকিয়ে বলল, ...

মিত্রশ্রীর তৃতীয় দিন

ছবি
আমার যে রাতে হার্ট ভেঙে গিয়েছিল তার পরেরদিন আমি সারাদিন ছবি এঁকেছিলাম। তার পরেরদিনও আমি সারাদিন ছবি এঁকেছিলাম। এবং তার পরেরদিনও আমি সারাদিন শুধু ছবিই এঁকেছিলাম। ভালো লাগছিল আঁকতে। স্কুলে যেতাম বটে, ক্লাস করতাম না। কী হবে ক্লাস করে? আমাদের স্কুলে খুব চমৎকার একটা জায়গা আছে। যেই ভবনে আমাদের ক্লাস হয়—সেটার ছাদ। ছাদের দরজা সবসময় বন্ধ থাকে তো, এখানে কেউ আসে না। আমরা কয়েক বন্ধু মিলে একদিন আবিষ্কার করলাম, দরজার একটা পাল্লা ভাঙা! সেটা সরিয়ে ছাদে উঠে আবার দরজাটা জায়গামত লাগিয়ে দেই, কাজেই বাইরে থেকে বোঝা যায় না ছাদে কেউ আছে। ছাদের ওপর উঠলে বিশাল একটা মাঠ দেখা যায়। আমাদের স্কুলের মাঠ। সবাই যখন ক্লাস করত, সেই ছাদটাতে উঠে আমি বসে থাকতাম। একাই। ফাঁকা মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকতেও ভালো লাগত। ছাদের দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে আমি একশোরকম চিন্তা করতাম। আর কী অদ্ভুত, আমি টানা তিনদিন ক্লাস না করে ছাদে বসে থাকলাম, আর সেই তিনদিন টানা বৃষ্টি হল। একটানা না অবশ্য, থেমে থেমে। যখন বৃষ্টি থামত, আমি ছাদের ঠিক মাঝখানটায় বসে ছবি আঁকা শুরু করতাম। আকাশ অবশ্য গুমগুম করে হুমকি দিত, যেকোনো মুহূর্তে বৃ...

দুর্বোধ্য

ছবি
হুশ করে গাড়িটা বেরিয়ে গেল! আমার গায়ে একরাশ কাদাপানি ছিটকে দিয়ে। আমি অবশ্য এমনিতেও ভিজে গেছি। আমার বয়সী একটা মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তায় একা একা হাঁটছে—এটা খুব একটা স্বাভাবিক দৃশ্য না। কাজেই লোকজন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাচ্ছে। আমি ভাব করছি, যেন তাদের তাকানোতে আমার কিছু এসে যায় না। আসলে এসে যায়, ছাতা নিয়ে বের হওয়া উচিত ছিল। বাড়ি থেকে বেরিয়েই অবশ্য ছাতার কথা মনে পড়েছিল। জুন মাসের আকাশের উপরে খুব একটা ভরসা করা যায় না। তবু, ফিরে গিয়ে আবার ছাতাটা আনতে ইচ্ছে হল না। যেই বাড়িতে আজ ভোরবেলা একটা মানুষ মারা গেছে—সেখানে ফিরে যেতে ইচ্ছে না করলে নিশ্চয়ই দোষ দেয়া যায় না?  আমার নাম রিচি। আর আজ ভোরবেলায় যেই মানুষটা মারা গেছেন, তিনি আমার আম্মু। তেমন কোন বিশেষভাবে ঘটনাটা ঘটে নি, এমনিই মারা গেছেন। গতকাল রাতে বেশ ভালো ছিলেন। খাওয়ার পর আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে যখন চাচা কাহিনী পড়ছিলাম, তখন আম্মু রান্নাঘরে কাজ করতে করতে গুনগুন করে একটা গান গাচ্ছিলেন। খুব চেনা একটা সুর, তখন অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারি নি। মনে পড়ল সকালবেলা। নাস্তা করছিলাম, রাফাত হঠাৎ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল, আম্মু মারা গেছে আপু, বলেই কান্নায় ...

এক-চতুর্থাংশ (রিয়া পাগলিনী এবং অন্যান্যরা)

ছবি
পড়ছিলাম। হঠাৎ একটা ফোন এসে সবকিছু এলোমেলো করে দিলো। আমি ঝড় আঁকতে পারি না, তবু ঝড় বয়ে যায়—অমন ঝড়ের মত সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল। কী আর করা। হিসেব করতে বসি! দুই হাজার ষোলো সালের হিসেব। এক. রিয়া গত জন্মে আমার মেয়ে ছিল। কথাটা মনে আসার সাথে সাথেই আমি ফিক করে হেসে ফেলেছিলাম। আর রিয়া রীতিমত হেসে কুটিকুটি হল। হাসতে হাসতেই কোনোমতে জিজ্ঞেস করলো, ক্যান ভাইয়া? স্বীকার করছি, বেশ লাগছে। রিয়ার লেখাগুলো, আঁকাগুলো দেখলে ভ্রম হয়, আগের জন্মে নির্ঘাত বাবার কাছ থেকে শিখে এসেছে। একইরকম ভুল আঁকে, আমার মত! আর একইভাবে লেখে, সেই ভুলে ভরা গল্প।  কথায় বলে, ষোড়শ বর্ষে পুত্র মিত্র বদাচরেৎ। কন্যার ক্ষেত্রেও এটা সত্যি হওয়ার কথা। আমি এই মিত্র কন্যাটির কাছ থেকে যেই চমৎকার স্বভাবটুকু শিখেছি, সেটা সে নিজেও জানে না। সবকিছু জেনে তো কাজ নেই। কিন্তু ভালো লাগে, চারপাশের এই পবিত্র মানুষগুলোর আলো যখন আমাকে স্পর্শ করে। সত্যজিৎ রায়ের লেখা গুপী বাঘা সিনেমাটার একটা দৃশ্য ছিল। ভোর হচ্ছে কেবল। গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে গুপী গান গাইছে। গান শেষ করার আগমুহূর্তে দুদিকে দুহাত ছড়িয়ে গুপী বলে,...

আদ্যিকালের বদ্যি বুড়ো

ছবি
আমি বুড়ো। আদ্যিকালের বদ্যি বুড়ো। এই কথাটা অবশ্য আমি প্রায়ই বলি। মজা করেই মানুষজনকে বলি, আমি কিন্তু বুড়ো হয়ে গেছি। তার বেশ কিছু লক্ষণও দেখা যাচ্ছে বটে। আজকাল বুড়োদের সাথে বড় বকবক করি। আগে যখন দেখা হত, নদীর সাথে দুষ্টুমি করতাম, চাচী বসে বসে হাসতো। আর এখন চাচীর সাথে তুমুল আড্ডা দেই, নদী বেচারা হতাশ চোখে তাকিয়ে থাকে। কী আর করা, আমি আদ্যিকালে ফিরে যাচ্ছি। ফেসবুক একাউন্ট বন্ধ করে ফেলাটা বড় কাজে দিয়েছে। কয়েকশো মানুষের খোঁজ রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না, ওটা মহামানবেরা পারেন। আমি নিতান্তই সাদাসিধে একটা মানুষ। আমি যেটা পারি সেটা হল, আমার আশেপাশের মানুষগুলোর খোঁজ রাখা। এই তো, অনিমেষ স্যার কেমন আছে সেটা একটু দেখা। তামান্নার সাথে একটা আইসক্রিম খাওয়া। আবির ভাইয়ের মাথার পোকাগুলো আবারও নড়েচড়ে বসলো কিনা, একটু খেয়াল রাখা। তটিনী পিচ্চিটাকে একটু বকা দেয়া, পড়াশোনার জন্য। পাশের বাসায় গিয়ে অলিন্দর সাথে গম্ভীর ফিজিক্সের তত্ত্ব আলোচনা করা। আর.... হুম, আর একটু মন খারাপ করা। বেশি না, অল্প কয়েকজনের কথা ভেবেই। যাকগে, একটু আগে এক পিচ্চির সাথে কথা বলছিলাম। আমাদের পিচ্চিগুলো ...

পেত্নী

ছবি
১০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ঢাকা, বাংলাদেশ। প্রিয় নিঝুম, থাপ্পড় দেয়া দরকার তোকে। চিঠিটা আরেকটু নরমভাবে শুরু করা যেত, স্বীকার করছি। সত্যি বলতে কী, প্রথমে ভেবেছিলাম তোকে কিছুই বলব না জন্মদিনে। রাত সাড়ে এগারোটায় এসে মনে হল, নাহ, কিছু বলে ফেলা যায়। মানুষ হয়ে জন্ম নেয়ার এটা একটা অসুবিধা। তুই নিজেও নিশ্চিতভাবে বলতে পারবি না তুই কী চাস। আচ্ছা, তুই কী চাস? মাসকয়েক আগে একটা কথা বলেছিলি। খুব সম্ভবত আর্ট সামিটের সময়। তুই নাকি সলিচিউডের ভেতরে পরম শান্তি খুঁজে পেয়েছিস, এবং শাফিন ভাই নাকি এই নিয়ে যথেষ্ট মনটন খারাপ করছে। কথাটা যদি সত্যি হয়, শাফিন ভাইকে ঠিক দোষ দিতে পারবো না। আবার তোকেও দোষ দিতে পারবো না। তুই যেমন টুইস্ট করে সলিচিউডে গেছিস, আমি ঠিক তেমনই টুইস্ট করে সলিচিউড থেকে বের হয়ে এসেছি। এটাকে তুই কী নামে ডাকিস? আমি এটাকে জন্ম বলি। আমার অসংখ্যবার জন্ম হয়েছে। জন্মের প্রক্রিয়াটা কখনই খুব একটা আনন্দদায়ক কোনো ব্যাপার না। অসম্ভব কষ্টের ভেতর দিয়ে একেকটা জন্ম হয় এই পৃথিবীতে—সেটা যে ধরনের জন্মের কথাই বলিস না কেন। কাজেই আমার প্রতিটা জন্মই হয়েছে একেকটা ধাক্কার মধ্য দিয়ে। সেই ধাক্কায় চারপাশের...