পোস্টগুলি

রিটার্ন জার্নি: আইসিইউ টু দিনাজপুর

ছবি
ওরা ঠাট্টা করে নিজেদের DMC বলে ডাকে। দিনাজপুর ম্যাথ ক্লাব। দিনাজপুরে যাওয়ার আগেরদিন আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম। রুদ্রর সাথে হাটখোলায় গিয়ে গোটাদশেক থার্মো কিনলাম, এরপর যখন ক্যাম্পাসে ফিরছি, তখন মনে হল নওরীণটাকে ফোন দিই, অনেকদিন চেহারা দেখা হয় না। ফোন দিলাম, নওরীণ চেঁচামেচি করে বলল, হলের সামনে আয়! আমি যখন ওদের হলের দিকে আগাচ্ছি, তখন আকাশ অন্ধকার করে মেঘ জমছে। ঠিক যেই মুহূর্তে আমি হলের ভাস্কর্যটার পাশে দাঁড়ালাম, তখনই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো, তুমুল বৃষ্টি, আর সেই বৃষ্টির মধ্যে একটা আইসক্রিমের দোকানের ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে নওরীণ বলল, আব্বু একসিডেন্ট করসে। Period. একসিডেন্টের খবরটা কে দিয়েছিল? চাচী সম্ভবত, আমার ঠিক মনে নেই। উনি বিস্তারিত বলে নি, একসিডেন্টটা কতটা সিরিয়াস, নওরীণ তখনও বোঝেও নি। আমরা এসব বলি না, অন্তত ফোনে, সিরিয়াস একসিডেন্টের পরেও বলি, একটু আঘাত, অল্প একটু কষ্ট, আসছি, ঢাকায়, এ্যাম্বুলেন্স, না সিরিয়াস না— আমরা এভাবে বলি…. জানি না কেন। হয়তো কষ্টের ব্যাপারটা নিজের কাছেই লুকাতে চাই। অথবা, হয়তো ওপাশের মানুষটাকে শান্ত রাখতে চাই— যতটা বেশি সময় সম্ভব। এরপ...

শিউলী

ছবি
অনেকদিন বাদে অমলকান্তি ছেলেটার কথা মনে পড়লো। আচ্ছা ঐ প্রসঙ্গ নাহয় থাক। আম্মুর কথা বলি। ব্যাপারটা আমার নিজের কাছে চমৎকার লাগছে, আম্মুকে নিয়ে কথা বলতে গেলে সেখানে অবধারিতভবেই রবিবাবু চলে আসে। এসে গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে থাকে, মাঝেমধ্যে তার দাঁড়িগোঁফের আড়ালে মুচকি হাসিও দেখা যায়। আমি তো আধাপাগল, আর আম্মু ছিল সিকিপাগল। এই অল্প একটু। রংপুরে যখন মেডিকেল কলেজে পড়তো, পড়তে পড়তে হতাশ হয়ে আম্মু কাঁদতে কাঁদতে বাসায় চলে যেত। গিয়ে নানাভাইকে বলতো, আব্বা আমাকে দিয়ে আর পড়া হবে না। নানাভাইয়ের অনেকটা রবীন্দ্রনাথের মত চেহারা, সে হাসি আটকানোর চেষ্টা করতে করতে নির্বিকার মুখে বলতো, আচ্ছা সমস্যা নাই। আম্মু দুইদিন বাসায় বসে থাকতো, এরপর আবার কাঁদতে কাঁদতে মেডিকেলে ফিরে যেত, গিয়ে খালামণিদের সাথে (মানে, আম্মুর বান্ধবীদের সাথে) ঝগড়া করত, আমি বাসায় গেলাম আর তোরা সব পড়া পড়ে ফেললি!! নানাভাই ছিল জেলা স্কুলের শিক্ষক। হয়তো এই কারণেই, আম্মুর অসম্ভব চমৎকার একটা অভ্যাস ছিল— দিনরাত বই পড়া। মানিক-শরৎ থেকে শুরু করে আরো অনেকের বই, সবাইকে আমি চিনিও না। নানাভাই কিনে দিতো, আম্মু খালি পড়তো। একসময় বেচারা যখন বড় হল, তখন...

বুড়ো

ছবি
ওদের দুজনের সাথে কবে পরিচয় হয় আমার মনে নেই। ভাইয়া আমার চেয়ে বয়সে পাঁচ মাসের বড়, জ্ঞান হওয়ার পর আবিষ্কার করেছি, আমি তাকে ভাইয়া বলে ডাকি। আর অলিন্দ আড়াই বছরের ছোট, জ্ঞান হওয়ার পর আবিষ্কার করলাম, আমি তাকে অলিন্দ বলে ডাকি (খুব একটা আশ্চর্যের ব্যাপার না এটা অবশ্য, স্বীকার করছি)। আমি যখন অনেক ছোট, আমরা একসাথে থাকতাম। ওদের আব্বু আবার সম্পর্কে আমার চাচা হয়। আপন চাচা। আমার আব্বু বড় ভাই, এরপর একজন সেকেন্ড হয়েছিল, আর ওদের আব্বু থার্ড হয়েছে। থার্ড হওয়ার কারণেই কিনা কে জানে, দাদু তার নাম রেখেছিল বাবু। তো, ধানমণ্ডির একটা দোতলা বাসায় বাবুচাচারা আর আমরা থাকতাম। সাথে থাকতো ভাড়াটিয়া, আর ভাড়াটিয়াদের বিশাল এক কুকুর। আমার জীবনটা শুরু হয়েছিল এভাবেই, ভাইয়া, অলিন্দ, আমাদের দুই পরিবার, বৃদ্ধা ভাড়াটিয়া, আর একটা কুকুর নিয়ে। তারপর, মনে হয় আমার বয়স তখন তিন বছর, আমরা বাসা পাল্টালাম। মোহাম্মাদপুরের এদিকে খুব শান্ত একটা জায়গা আছে। এখানে আমরা বাসা নিলাম, আর আমাদের দুই-এক বাসা পরেই বাসা নিল চাচারা। এরপর আমরা আরেকটু বড় হলাম, আমাদের আরেকটু জ্ঞান হল, আর আমরা তিন ভাই দিনরাত একসাথে হাউকাউ শুরু করলাম! সমবয়সী তিন ...

যারা বেঁচে আছে, যারা বেঁচে নেই

একগাদা কাজ ফেলে রেখে লিখতে বসলাম। এই ঘরে বসে লিখতে বড় ভালো লাগে। আমার ঘরটা বেশ ছোট, কিন্তু অনেক বছর ধরে অল্প অল্প করে গোছানো। দেয়াল থেকে ঘড়ি, ক্যালেন্ডার সবকিছু সরিয়ে দেয়াল সাদা করে ফেলেছি, বেশ ফাঁকা ফাঁকা লাগে। আপুর ঘরের বুকশেলফ থেকে ভালো ভালো বইগুলো এনে আমার বুকশেলফে রেখেছি, ছাদের সাথে লাগানো বুকশেলফজুড়ে শুধু বই আর বই, সেটাও দেখতে ভালো লাগে। স্ক্রু-ট্রু দিয়ে চেয়ারের হাতল খুলে ফেলেছি, চেয়ারে পা তুলে আরাম করে বসা যায়। আর আমার পড়ার টেবিলটা জানালার সাথে লাগানো, জানালার ওপাশে মোটামুটি বড় একটা ফাঁকা রাস্তা। তারও পরে একটা বিল্ডিং। আমার জানালা দিয়ে অনেকখানি আকাশ দেখা যায়। বৃষ্টি পড়লে বেশ ঠাণ্ডা বাতাসও আসে। আর দূরের বাসাটার কবুতরের মত খুপড়িগুলো দিয়ে দেখা যায়, ঢাকাশহরের দিবারাত্রির কাব্য। ও বাড়ির হাসিকান্না এ বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছায়। রাতে যখন সবকিছু চুপ হয়ে যায়, মেয়েটা মৃদু হাসলেও আমি শুনি, বুড়ো লোকটা হালকা কাশলেও আমি শুনি। আমার মাঝেমধ্যে বড় ভালো লাগে। এমন সময়, ওয়ারফেজের একটা পুরনো গান শুনতে শুনতে আমার মধ্যে নস্টালজিয়া ভর করল। কিংবা হিমশীতল বাতাসটাকেও এর দায় দেয়া যায়। আমার দাদু এখন...

কীর্তনখোলা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, রাত ১১ টা এই মুহূর্তে আমি বরিশালের গ্র্যান্ড পার্ক হোটেলের একটা বিছানায় পদ্মাসন গেড়ে বসে আছি। সারা ঘরে হলুদ আলো, যতটুকু আলো থাকলে সবকিছু স্পষ্ট দেখা যায়, অথচ একটুও চোখে লাগে না—ঠিক ততটুকুই আলো। যেহেতু জীবনানন্দের শহরে বসে আছি, কাজেই তার একটা কথা বলে ফেলা যায়, কথাটা আমার বারবার বলতে হয়েছে, বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন কারণে। এইসব ভালো লাগে। আজ দুপুরে এই শহরে নেমেছি। লঞ্চে করে। আমি একা না, আমার সাথে পরিবারের বাকি তিনজন, সত্যি বলতে কী— সব মিলিয়ে প্রায় একশোজন, আব্বু-আম্মুর অফিসের একটা প্রোগ্রাম, বুড়ো-বুড়ো রাগী-রাগী চেহারার ডাক্তাররা তাদের পরিবার নিয়ে বেড়াতে চলে এসেছে। সবাই মিলে বড় হইচই করছে, ডাক্তারদের আনন্দের উপলক্ষগুলো হয়তো এভাবেই আসে, কালেভদ্রে। আমি যেহেতু পাগল, আমি তাদের সাথে ঠিক নিজেকে মেলাতে পারি না। দূরে দূরে থাকি, একটু একা। লঞ্চে আসার সময় ছাদে উঠে নদী দেখছিলাম। লঞ্চ পানি কেটে এগিয়ে যাচ্ছে, আহা, কী চমৎকার একেকটা নদী, আর কী অপূর্ব একেকটা নাম, বুড়িগঙ্গা থেকে ধলেশ্বরী, তার সাথে শীতলক্ষ্যা এসে মিশলো, সেই নদী গিয়ে পড়লো মেঘনায়, মেঘনা নদী থেকে কীভাবে যেন কীর্...

এলোকথন (কিংবা, দিনাজপুরিয়ান নক্ষত্র)

হাজীপাড়া, ঠাকুরগাঁও ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫, রাত ৯টা ৩০ মিনিট: কী নিয়ে লিখতে বসলাম নিজেও জানি না। কিছু লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে, এই আরকি। আমাদের এদিকে একটা গোরস্থান আছে। গোরস্থানটা শহরের একটু বাইরে। চারপাশে বেশ ফাঁকা, আর আলো কম। আমি সন্ধ্যার পরে সেখানে গিয়েছিলাম, ভিতরে ঢুকতে তো সাহস হয় না, বাইরের অন্ধকার রাস্তাটাতেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। (কারো মনে এখনও সন্দেহ থাকলে বলে ফেলছি, হু, তারা দেখার জন্যে। এই পাগল রাতেরবেলা অন্ধকার একটা ফাঁকা জায়গা আর কেন খুঁজে বের করবে!) আমি যখন পৌঁছেছি, একপাশ থেকে আমার রিজেল উঁকি দিচ্ছে। মানুষ হয়ে জন্মানোর বেশ কিছু অদ্ভুত দিক আছে। ছাগল হয়ে জন্মালে জীবনের সমীকরণটা অনেক সহজ হয়ে যায়, ঘাস দেখলে খুশি হবে, দড়ি দেখলে মন খারাপ করবে। আর এই যে মানুষ, সে যে কীসে খুশি হয় আর কীসে মন খারাপ করে....আমি নিজেই নিজেকে এদ্দিনে বুঝলাম না। অন্ধকার আকাশ, পুরো আকাশ নক্ষত্রে ছেয়ে গেছে, আমার হয়তো খুশিই হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু আমার অদ্ভুত এক ধরনের মন খারাপ হল। নিজেও ঠিক জানি না কেন। হয়তো ফুপীর জন্য। ফুপীর আসলে মৃত্যুর বয়স ছিলো না। ও বয়সেও মানুষ নতুন স্বপ্ন দেখে। সায়েন্স ল্যাবের মোড়ের অন্ধ লোকটার হয়ত...

উইন্টার স্কুল ২০১৫

এবার আমি শুরু করি! আমার এইটা প্রায় রীতিই হয়ে যাচ্ছে, ক্যাম্প শেষে সবার হাউকাউ থামার পর আমার বকবক করার ইচ্ছে হয়। যাকগে, ক্যাম্পের ভিতরের ঘটনা তো মোটামুটি সবাই জানিস, আমি একটু বাইরে দিয়ে, এদিক-ওদিক দিয়ে গল্পগুলো বলি। মাসদেড়েক আগে, কারওয়ান বাজারে একটা ভ্যানগাড়ির উপর বসে চা খেতে খেতে আমরা এই ক্যাম্পের একটা খসড়া পরিকল্পনা বানাচ্ছিলাম। তো, আমি তখন একটু হতাশ ছিলাম, যেহেতু আমরা এই ধরনের ক্যাম্প আগে করি নি। “এই ধরনের ক্যাম্প”! আমি ভেবেছিলাম, এই ক্যাম্পে আমাদের মত পিচ্চিগুলো আসবে না, যারা আসবে তাদের চোখ হবে মৃত, আর চুল হবে ধূসর। (আমার আশেপাশে যেসব পিচ্চি আছিস তোদের হয়তো ব্যাপারটা আশ্চর্য লাগতে পারে, কিন্তু সত্যি, আমি মাঝেমধ্যেই মৃত পিচ্চি দেখেছি। তাদের আত্মা মারা গেছে তো, ওরা তোদের মত এত হাসে না। নির্বিকার মুখে বসে থাকে। আমার মৃত পিচ্চি ভালো লাগে না।) তো, ক্যাম্পের প্রথমদিন আমি যখন ভার্সিটি থেকে এসে ক্যাম্পে ঢুকলাম, রীতিমত বেকুব হয়ে গেলাম! আরে জোস, এসব তো দেখি আমাদের পিচ্চি। এই যে এখানে অরিত্র হাত নাড়ছে, ওদিকে হৃদি বসে মুচকি হাসছে, পিছনে রাহাত বাচ্চা-বাচ্চা চেহারা করে বসে আছে...

আইজেএসও — ২

ভূমিকা বলতেসিল, ক্যাম্পটা শেষ না হলেও হত। আমিও ঠিক এই কথাটাই বলসিলাম মাসখানেক আগে, এইসবকিছুই তো চমৎকার, এসব যদি ঠিক এমনই থাকতো, ঠিক এভাবেই! কিন্তু সেটা আসলে হয় না, প্রথম ডিফারেন্সিয়াল কমতে কমতে শূন্য হয়ে যাওয়ার পর অবধারিতভাবেই ধাপাস করে নিচে পড়তে হয়, যতবার পথের পাঁচালী পড়ি, দুর্গাকে মরে যেতে হয়, যতবার স্পেস অডিটি শুনি, মেজর টমকে বিলীন হয়ে যেতে হয়, আর অমলকে বেঁচে থাকতে হয় ছাপাখানার অন্ধকারে, নিয়তি, হালকা নীল ফোঁটার মিলিয়ন বছরের খেলার এইসব অবধারিত নিয়তি। যাকগে, আমার পিচ্চিরা, আমার নার্ড পিচ্চিরা, অকারণেই হি হি করে হাসতে থাকা পিচ্চিরা, আইজেএসওর রঙ্গমঞ্চে আমার খেলাটুকু এখানেই শেষ। এবার দেখা যাক তোরা কী করিস। আর তোরা কিন্তু ইদানিং অনেক বাঁদর হইসিশ, সারাক্ষণ খালি হি হি। আমি মাইর দিবো সবাইকে। বেশি ঝাঁকালে এনট্রপি বেড়ে যাবে, মনে নাই? ঝাকানাকা কম। Oh, leaving on a jet plane, I really hate to let you go. #IJSO2015

আইজেএসও — ১

আমি ধুলায় বসে খেলেছিলেম তোমার দ্বারে। পিচ্চিরা চোখ বড় বড় করে শুনছে, আর ইবরাহিম ভাইয়া ব্যাপক উৎসাহের সাথে লেকচার দিচ্ছে। শাফিন ভাইয়া মেঝেতে হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে। খালিদ ভাইয়া কাগজপাতি নিয়ে কী যেন গবেষণা করছে। আর আমি একটা কোড লিখতে লিখতে মোটামুটি বিরক্ত হয়ে বসে আছি। মাথা নষ্ট, একটা কথাই মাথায় ঘোরে বারবার, এতখানি মুগ্ধতা নিয়ে কী করব বুঝতেসি না। #IJSO2015

এলোকথন (কৃত্তিকা ১)

যে অবস্থা দেখছি, কাউকে ভালো লাগলে আগে নক্ষত্র দেখার উপর একটা কোর্স নেয়া লাগবে। মাথা পুরো নষ্ট। কালকে বিশ নাম্বারের একটা সিটি, আর আমি ছাদে গিয়ে দেখি বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র। কোথায় বিশ, আর কোথায় বিলিয়ন। আমি কয়েকশো বিলিয়ন নক্ষত্রের মাঝে হারিয়ে গেলাম। উপরে কৃত্তিকা নিজেকে পুরো মেলে ধরেছে, জাদুর শহরের স্ট্রিটল্যাম্প-নিয়ন-ফ্লাডলাইটকে উপেক্ষা করে একপাশে কালপুরুষ জেগে আছে, মিলিয়ন মিলিয়ন বছর তাক করে থাকা তীর-ধনুক, মিলিয়নবর্ষী রিজেল, মিলিয়নবর্ষী আর্দ্রা, আমি চোখ বড় বড় করে খালি দেখি, কেন, সবকিছু এমন অবিশ্বাস্যরকম সুন্দর কেন! ওমর ছেলেটা ঠিকই বলেছিল। যেই মেয়েটা এইভাবে চোখ বড় বড় করে লুব্ধক দেখবে না, টরাস দেখতে দেখতে যার চোখে পানি আসবে না, কোনো একদিন পরিষ্কার আকাশে মিল্কিওয়ে দেখে যে দুই হাত তুলে চিৎকার করবে না— তাকে নিয়ে আমি কী করব! এরচেয়ে একটা কলাগাছ বিয়ে করলেই হয়।

আলপিন

বাবা-মা শুধু এটা বোঝে না যে, ভালোবাসা হচ্ছে একটা লাল বেলুনের মত। বেশি দিলে পটাশ করে ফেটে যায়। তো, তারা করে কী— তাদের বাচ্চাকে ইচ্ছামত ভালোবাসা দিতে থাকে, আর বেলুনটা ফুলতে থাকে, এবং অবধারিতভাবেই দুম! আমার এখনো কষ্ট হয়, যখন সারা বাংলাদেশে ফার্স্ট হওয়া মেয়েটা IJSO যেতে পারে না। যখন টিএসটি দিয়ে আসা মেয়েটা আফসোস করে— বাসা থেকে সাপোর্ট পেলে সে আইএমও টিমে থাকতো। যখন সদ্য ক্লাস ফাইভে ওঠা ছেলেটা বলে, ডিসেম্বরে পরীক্ষা দেখে সে গণিত অলিম্পিয়াড ছেড়ে দিচ্ছে। দোহাই লাগে, আপনারা বেলুনে বাতাস একটু কম ঢোকান, আমার অসম্ভব কষ্ট হয়।

এলোকথন (অশ্বিনী ৩)

নাথিং এলস ম্যাটার্স। নাথিং এলস ম্যাটার্স। খালি ঐ একটা জিনিসই, মানুষজন যেই জিনিসটাকে আবেগ বলে ডাকে, ঐ একটা জিনিসই ম্যাটার করে।  মৃত্যুর ঘ্রাণ, শিউলি ফুলের ঘ্রাণ, সোডিয়াম আলোর ঘ্রাণ —  সবকিছু মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। দাদু বারবার করে একটা কথাই বলতেসে। জন লেনন যেমন বারবার করে, অক্লান্ত গলায় বারবার করে বলতেসিল, nothing's gonna change my world, nothing's gonna change my world, সেরকম দাদুও একই কথা বারবার করে বলে যাচ্ছে, যেই মানুষটা জীবনে কখনো পাপ করে নাই, কাউকে একটা ধমকও দেয় নাই, সেই মানুষটাকে কেন এ্যামনে কষ্ট পাওয়া লাগবে। আমরা মাথা নিচু করে বসে থাকি, আমরা জানি না কী বলব। আমি জানি না কী বলব। ধানমণ্ডি একের রাস্তাটা বেশ চমৎকার ফাঁকা থাকে। একা একা হাঁটতেসিলাম। হঠাৎ শিউলি ফুলের ঘ্রাণে পাগল হয়ে গেলাম। রাস্তার সেই জায়গায় পুরোপুরি শিউলি ফুল আর সোডিয়াম আলোর রাজত্ব। শিউলির ঘ্রাণে কী থাকে আমি জানি না, যেটাই থাকুক —  সেটা পুরো সাইকিডেলিক একটা অনুভূতি এনে দেয়। আমি গিলমোরকে মিস করি। ব্যারেটের জন্য লেখা গানটা মিস করি। অদ্ভুত সুন্দর ইনট্রোটা মিস করি। আর আমরা সবাই মৃত্যুর জন্য অপে...

এলোকথন (অশ্বিনী ২)

And it was all yellow. আমার চশমার পাওয়ার ভয়াবহ। আট সাড়ে আট বোধহয়। একটা সময় এই নিয়ে যথেষ্ট মনটন খারাপ হত। But.…now I see the funny side. বেশ কয়েকদিন আগে, বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। কার কাছ থেকে যেন কয়েকটা কাঠগোলাপ পেয়েছি, সেগুলো হাতে নিয়ে। শহীদ মিনারের সামনের রাস্তাটা যখন পার হচ্ছি, রাস্তার মাঝখানে এসে বুঝতে পারলাম, চশমা ভিজে পুরো ঝাপসা হয়ে গেছে, এটা এখন মোছা লাগবে। চশমা খুললাম, এবং সাথে সাথেই সেই অবিশ্বাস্য ব্যাপারটা বের করে ফেললাম— এই বিশাল রাস্তায় আমি একাই দাঁড়িয়ে আছি! মানে, উপরে ঝমঝম করে বৃষ্টি ঝরছে, আর নিচে আমি তিন-চারটা কাঠগোলাপ হাতে দাঁড়িয়ে। একা। কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মত। ক্লাস এইটের একটা ছেলে ভালোবাসার প্রস্তাব পেলে যেমন বোকার মত তাকিয়ে থাকে, সেরকম অদ্ভুত দৃষ্টিতে। বহুদিন, বহুদিন কারো মুখে একটা কথা শোনা হয় নি। শেষ পর্যন্ত আমাকে একজন গাঢ় আকাশটা দেখতে বলেছিল, বৃষ্টির অপেক্ষায় বসে থাকা গাঢ় ছাই রঙের আকাশ।

এলোকথন (অশ্বিনী ১)

মানুষজন এবার নির্ঘাৎ আমাকে মার দিবে। কয়েকদিন থেকে একই কথা শুনতে শুনতে সবার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু  এটা সত্যি যে, আমার জানালা দিয়ে কখনই জোছনা ঢুকে না। আমি ঈর্ষা নিয়ে, প্রবল ঈর্ষা নিয়ে পঞ্চাশ হাত সামনে থাকা বাড়িটাকে দেখি, বাড়ির বাসিন্দাগুলোকে দেখি। নিতান্ত মেঘ যদি বিশ্বাসঘাতকতা না করে, তারা প্রতিটা চাঁদের আলো স্পর্শ করতে পারে। মাত্র দাঁড়াতে শেখা বাচ্চাটা জানালার গ্রিল ধরে জোছনা দেখে। নিজের সবকয়টা স্বপ্ন কবর দিয়ে করে আসা প্রৌঢ় লোকটা বারান্দায় এসে থমকে যায়। অষ্টাদশী মেয়েটা শীতের রাতে একটা চাদর জড়িয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকে। ঐ বাড়ির ইঁদুরটা জোছনা দেখে, যেই তেলাপোকাটা দুদিন পরে স্যান্ডেলের নিচে চাপা পড়ে মরে যাবে, সেও জোছনা দেখে। চাঁদের আলোয় অদ্ভুত সব বিভ্রম হয়। কফিকে অ্যাবসিন্থ মনে হয়, আর মেয়েটাকে প্লিয়েডেসদের একজন মনে হয়। সাদাকালো বাড়িটার দিকে আমি তীব্র ঈর্ষা নিয়ে তাকিয়ে থাকি।

আমি

ছবি
বিশ বছর বয়সের একটা ছেলেকে কী বলা যায়? অবশ্যই পিচ্চি না। এবং কোনোভাবেই বৃদ্ধ না। আমি মাঝামাঝি কিছু একটা। একটা সময় মোটামুটি স্বাভাবিক ছেলে ছিলাম। প্রায় বছরখানেক হল, আমার মাথায় অদ্ভুত কিছু সমস্যা দেখা দিসে। যেসব সমস্যা থাকলে বিশ বছরের একটা ছেলেকে পাগল বলে ডাকা যায়— সেসব সমস্যা আমার ব্রেনের অলিতেগলিতে, নিউরনের ঘুপচিতে বাস করে। একসময় অবশ্য স্বাভাবিক ছিলাম। এখন বুঝতেসি, মানুষ পাল্টায়। আমি নিজেই সারাজীবনে কয়েক দফা পাল্টাইসি। শেষবার পাল্টানো শুরু হইসিল এরকম কোনো একটা সময়। আশ্বিনের প্রথম দিকে। নিতান্তই হঠাৎ করে, একদিন বসে বসে পড়তেসিলাম, হঠাৎ মনে হল—আমার এখন হুমায়ূন আহমেদের একটা ছবি আঁকা লাগবে। সাথে সাথে পেনসিল নিয়ে বসে গেলাম....এবং ছবি আঁকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। কিন্তু নেশাটা ধরে গেল। এরপর একটা বছর গেসে, আর আমি বহুদিন, বহুরাত এ্যামনে পার করসি। সামনে একটা সাদা কাগজ। হাতে কার্বনের টুকরা। এইসব এখন না বলি। আমি গরু, যথেষ্ট আগ্রহ নিয়েই ঘাস খাই, কিন্তু সেটাই হয়তো আমার একমাত্র পরিচয় না। কিংবা, খ্যাপার স্বভাবই হচ্ছে পরশপাথর খুঁজে ফেরা, কিন্তু তার জীবনেও একটা গল্প আছে, কেউ হয়তো ওট...